হারিয়ে খুজি তারে

কলেজ লাইফের কথা আমার খুব মনে পড়ে।মনে পড়ে কলেজ জীবনের প্রথম দিনটির কথা,কয়েকটি মাসের কঠোর পরিশ্রমের সুখময় পরিসমাপ্তি।আসলে ক্যাডেট কলেজে যদি আমি না যেতাম তাহলে হয়ত জীবনে বোঝাই হতনা বন্ধুত্ব কি?আমার ড্রমলিডার ছিল মাহফুজ ভাই একটু কড়া প্রকৃতির ছিল।আর আমাদের মিফতাহ ছিল একটু আদুরে প্রকৃতির।প্রতি রাতে ও বাসার জন্য কাদত,আর আমি ওর সঙ্গী।
কলেজে সেভেনে শান্তির সময় বলতে ছিল ব্লকে যতটুকু সময় থাকতাম।তাও যদি প্রেপ গার্ড ভাল হয়।আমার বরাবরই মুখচোরা অভ্যাস।আর কলেজ আমার এত খারাপ লাগত যে কারোর সাথে কথাও বলতে ইচ্ছা করত না।প্রেপে সবাই একটু কথা বলত কারণ প্রেপ গার্ড আদনান ভাই খুব ভালো ছিল।তখনও আমি চুপচাপ বসে থাকতাম।আর করতাম কি বাথরূমে যেয়ে কান্নাকাটি।একদিনের কথা আমার টেবিলের সিনিয়র ভাই নকীব ভাই আমাকে কি কারণে খুব বকাঝকা করছে,আমি চুপচাপ কাদছি।হঠাৎ কে যেন পিঠে হাত দিল।
ঘুরে দেখি আমারই ব্যাচের একটা ছেলে।আশ্চর্য হলাম আমারই বন্ধু কিন্তু আমি নাম জানিনা।ওই বলল কাদছ কেন?আর এই ফাকে আমি ওর নেম ট্যাগ থেকে নাম জেনে নিলাম।আরেফিন হুনাইন হাউস।
এভাবেই শুরু হল আমাদের বন্ধুত্বের পথচলা।আমরা ক্যাডেট যারা তারা জানি ক্লাস সেভেন লাইফটা খুবই কষ্টের।আমি জানি আমার বন্ধুরা আমাকে কত সাহায্য করেছে।
আরেফিন হল এমন একটা ছেলে যার মুখে সবসময় হাসি লেগে থাকত।আর ওকে দেখলেই মনটা ভাল হয়ে যেত।আমি বদর হাউসে ছিলাম আর ও হুনাইনে।প্রেপ আর ব্লক টাইম ছাড়া দেখা হতনা।তাও কত গল্প আসলে ও একটা জিনিষ আমার মধ্যে ঢুকিয়ে দিল সেটা হল বন্ধুত্ব।আজও আমার বন্ধুরা বলে আচ্ছা তুই এত সহজে মানুষের সাথে কি ভাবে মিশিস?আমার তখন আরেফিনের কথা মনে পড়ে।
আমার গল্প,কবিতা পড়ে মনে হতে পারে আমি খুব হতাশ।আসলেই আমি হতাশ।আমি জীবেন যাকে খুব ভালবাসি তারাই আমার কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যাই।
এখন সম্পর্ক করতেই ভয় লাগে।
আরেফিনও চলে গেল ক্যান্সারের কাছে পরাজিত হয়ে।কলেজে ছিলাম তখন শেষ দেখাটাও দেখতে পারিনি।আমি মাঝে মাঝে ভাবি কত খারাপ মানুষ আমাদের মাঝে বেচে আছে।
তাহরে আল্লাহ কেন আরেফিন কে নিয়ে গেল।
আসলে অনেক কিছু লিখব বলে বসেছিলাম কিন্তু এত কান্না পাচ্ছে,কম্পিউটারের স্কিন ঝাপসা হয়ে গেছে।
আরেফিন আমি আজও আছি জেগে আর ফার্মেসি পড়ছি আমি আমার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়ে যাব।জানি না তুই কোথায় আছিস।তবে ওটুকু জানি যেখানেই আছিস ভাল আছিস।

১,৪১৮ বার দেখা হয়েছে

১৮ টি মন্তব্য : “হারিয়ে খুজি তারে”

  1. আব্দুল্লাহ্‌ আল ইমরান (৯৩-৯৯)
    আরেফিনও চলে গেল ক্যান্সারের কাছে পরাজিত হয়ে।কলেজে ছিলাম তখন শেষ দেখাটাও দেখতে পারিনি।আমি মাঝে মাঝে ভাবি কত খারাপ মানুষ আমাদের মাঝে বেচে আছে।
    তাহরে আল্লাহ কেন আরেফিন কে নিয়ে গেল।

    সাদিক তুমি আর আমি এক বিন্দুতে।এখন আবার কাঁদলাম তোমার পোষ্ট পড়ে।আমি ত ছিচকাঁদুনে না।তবে কেন বার বার কন্ট্রোল লুজ করছি। :((
    এই আবেগ চাপিয়ে রাখার জন্যই এতদিন সাকুর পোষ্ট দেয়া হয়নি।বাট ফ্রেন্ডশিপ ডে'র মত পারফেক্ট ডে মনে হয় ছিলনা ব্লগানোর জন্য।তা না হলে যে আমার বন্ধুর প্রতি অবিচার করা হতো। 🙁

    জবাব দিন
  2. মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)

    খুব খারাপ লাগলো আরেফিনের জন্য। প্রতিটি মৃত্যুই কষ্টাদায়ক। আল্লাহ ওর আত্মাকে শান্তিতে রাখুক এই কামনা করি।

    আরেফিন হুনাইন হাউজে ছিল। চেহারাটা আফসা আফসা মনে পড়ছে, তবে সিওর হতে পারছি না। ঘটনাটা কবে হয়েছিল......???

    জবাব দিন
  3. আন্দালিব (৯৬-০২)

    আমার আরেফিনের কথা মনে আছে। ওকে আমি চিনতাম ক্যাডেটে আসারও আগে থেকে। ওর বাবা আর্মি অফিসার ছিলেন, আমি যখন এইটে বা নাইনে পড়ি, ওদের বাসায় গিয়েছিলাম। তখন আমার কাছে তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন ক্যাডেট কলেজের খুঁটিনাটি।

    পরে আরেফিন ভর্তি হলে আমার খুবই ভালো লেগেছিল। প্রায়ই ওকে ডেকে খোঁজখবর নিতাম। কোন সমস্যা হচ্ছে কী না। কেউ বেশি পানিশ করলো কী না এগুলো জিজ্ঞেসও করতাম... আমার কোন আপন ছোটভাই নাই। কলেজের জুনিয়রদের মাঝে এক আরেফিনই ছিলো, যাকে কলেজের বাইরে থেকে ছোটভাইয়ের মতোনই চিনতাম আমি...

    আরেফিনের যখন অসুখ ধরা পড়লো, আমি প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারিনি। তারই দুয়েক মাস আগে ও সিক রিপোর্ট করেছিল বলে আমি ডেকে বলেছিলাম বেশি বেশি সিক রিপোর্ট করলে অনেক সময় লকার পার্টনাররা ডিসিপ্লিনের দোহাই দিয়ে পানিশ করতো। তাই একটু রেগুলার থাকতে বলেছিলাম...

    আজকে এই পোস্ট পড়ে এসব টুকরো টুকরো কথা মনে পড়ে গেল সাদিক...

    জবাব দিন
  4. রকিব (০১-০৭)

    ধুরু সাদিক ভাই, দিলেন তো মন খারাপ করিয়ে।
    আরেফীন ভাই ছিলেন আমাদের তানভীরের লকার পার্টনার। আমাদের কলেজ লাইফের শুরু থেকেই উনি সিএম এইচে ছিলেন। মাঝে মাঝেই দেখতাম ওর প্রচন্ড মন খারাপ, জিজ্ঞেস করলে বলতো তোদের সবার গাইড আছে, আমার নেই। যেদিন ভাইয়ার মারা যাবার সংবাদ কলেজে আসে ব্লক টয়লেটে দাঁড়িয়ে ওর নীরব কান্না দেখে খুব খারাপ লেগেছিল, অদেখা, পায় অচেনা একজন মানুষের জন্য ভালোবাসাটা কোন বাধ মানে নি।
    আল্লাহ আরেফীন ভাইকে জান্নাতবাসী করুন।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  5. আদনান (১৯৯৪-২০০০)

    আরেফিন তোর জন্য অনেক ভালবাসা । তুই যেখানেই আছিস আমি জানি আল্লাহ তোকে অনেক ভাল রেখেছে । তুই কিছু মিস করছিস না । আমরাই তোকে মিস করছি । আজকে আবার রনন এর কথা মনে পড়ে গেল । দোস্ত ভাল থাকিস ।

    জবাব দিন
  6. আরেফিন আমি আজও আছি জেগে আর ফার্মেসি পড়ছি আমি আমার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়ে যাব

    এ লড়াইয়ে তুই জয়ী হ সাদিক।জানি অনেক বড় স্বপ্ন-কিন্তু দেশের(কোন কোন ক্ষেত্রে পৃথিবীর) সেরা প্রশিক্ষণ পাওয়া ছেলেরা যদি বড় স্বপ্ন না দেখে তবে কারা দেখবে?

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।