মাহমুদ ভাইয়ের সাথে কয়েকদিন

এই ব্লগটা লিখছি কারন হাসান মাহমুদ ভাইকে (ককর) কথা দিয়েছিলাম।
উনি সবসময় আমাকে ব্লগ লিখতে বলতেন। উনার লস আঞ্জেলেস থেকে জাপান যাওয়ার আগে আমি বললাম
“ভাই,আমি ব্লগের মাধ্যমে আপনার সাথে যোগাযোগ রাখবো, আপডেট জানাবো।”
আমার মতো অলসের ঐ কথাতেই শেষ। চেয়েছিলাম ফোন করবো কিংবা স্কাইপে কথা বলবো,প্রবাস জীবনের নানা বাস্তততার কারনে ওইগুলোও হচ্ছে না। এদিকে বাঁচাল এ ছোটভাই প্রিয় ভাই-ভাবির সাথে কথা না বলতে পেরে পেট ফেটে যেন মরেই যাচ্ছে। শেষে পর্যন্ত আজ হাতে ল্যাপটপ তুলে নিলাম , ব্লগ লিখবো । মাহমুদ ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করবো।
আসলে কখনও কখনও আমি নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি। ডিভি লটারি জিতে আমেরিকা এসেছি, এটার জন্য না। তাঁর চেয়ে বেশী মনে করি ,আমি ভাগ্যবান কারন কিছু ভাই পেয়েছি যারা আমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে আদর করে, ভালবাসে। চিন্তা করি, কেন ? আমি তো এতো ভালো না, ভালো ছাত্র ও না , দেখতে ভালো? তাও না। ( আয়নায় নিজের চেহারা দেখি, মাঝে মাঝে নিজেরেই পুঁতা দিয়া ছেঁচতে মুন চায়) তবে কি ? এটা ক্যাডেট ভ্রাতৃত্ববোধ। এই ভ্রাতৃত্ববোধ দেখে আমি অবাক হই। উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। পরে ভাইদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা অনুভব করি। ছোটভাইদেরকে এভাবে আগলে রাখার দায়িত্বো যেন পেয়ে যাই। ক্যাডেট কলেজ কমিউনিটির একজন সদস্য হয়ে আমি ভিতর থেকে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।

মাহমুদ ভাইয়ের সাথে পরিচয় ,সাকেব ভাইয়ের (মকক) বাসায়। সাকেব ভাইকে খুঁজে পেয়েছি ফেসবুকের মাধ্যমে।( এর জন্য ফেসবুককে ছাড়তে পারি না , ফেসবুকে যে অনেক দারুন মানুষ খুঁজে পাই ),প্রথম পরিচয়ে জানতে পারলাম ভাইয়ের বাসা আমার মেসের দুপা সামনে। ভাবি তখন দেশে বেড়াতে গিয়েছে । ভাই তাঁর বাসায় খেতে বলল। আমি বরাবরই রান্নাবারা থেকে ১০০ হাত দূরে । ভাবলাম, কি আর ভাই মনে হয় এরকম , বাঙালি দোকান থেকে কিছু কিনে খাওয়াবে। ডিনারে যেয়ে আমি হতোবাক । ভাই দারুন রান্না করেছে , শর্তঃ ভাইয়ের এই গুপ্ত- প্রতিভা ভাবি জানে না সুতরাং ভাবিকে জানান যাবে না, উল্টো ভাইয়ের রান্না অখাদ্য বলে চালাতে হবে। ফ্রি খাবার , আমি সব শর্তে রাজি। খুব মজা করে খেলাম ।ভাইও যেন ” ক্ষুদার্তকে অন্ন দান করিয়া ” তৃপ্ত হলেন । সারাদিন কলেজ-কাজ করে আমার রান্নার টাইম হয় না , তারপর আর রান্না পারি না ( আগ্রহ ও পাই না) , নুডূলস, হাবিজাবি খেয়ে থাকি , সেখানে ভাইয়ের রান্নাকে খুব ভালো লাগলো।
এরপর থেকে ভাই কল করে যেতে বল্লেই, বান্দা হাজির। আমি যাই ,আড্ডা দেই, ডিনার অথবা লাঞ্চ সেরে আসি । লজ্জা পাই না , ” আমার বড়ভাই – তাঁর কাছে আবার লজ্জা কিসের !” বিষয়টা এমন হলো ভাবি বাংলাদেশে যাওয়ার আগে ভাইয়ের জন্য যা রান্না করে ফ্রিজে রেখে গিয়েছে তা আমি ই সাবাড় করেছি।

ভাবি আসলো। আমার আড্ডা দেওয়া বন্ধ হলো না। আর বাড়লো । ক্লাস হোমওয়ার্ক শেষ তো দৌড় মাহমুদ ভাইয়ের বাসা। মন খুলে কথা বলতাম। কি হচ্ছে আমার কলেজে , কি করলাম আমার কাজে । প্রবাস জীবনের খুঁটিনাটি অভিজ্ঞতা। ভাই ও ভাবি শুনতো , আমার পাগলামির গল্প শুনে হাসতো , তারাও অবশ্য বলতো।
কোথাও যেতে ইচ্ছা হচ্ছে , ভাবিকে রাজি করালাম , ভাই আর কি বলবে। ভাই-ভাবি কোথাও যাবে , আমাকে কল দিতো। ফ্রি থাকলে গাড়ি করে নিয়ে যেতো।
না, শুধু মজা না, ভাই ইউনিভারসিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া লস আঞ্জেলেস আর ভাবি ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভারসিটি লস আঞ্জেলেস ।তাদের পড়া দেখে উৎসাহিত হতাম। বাসায় ফিরে পরতে বসতাম ।আপন ভাইয়ের মতো পড়ালেখার খুঁটিনাটি বিষয় ,ট্রিক্স শিখিয়ে দিতো। আমেরিকাতে এসে পড়াশুনা ঢিলা দিয়েছিলাম , এটা ভাই দের সাথে মিশে ঠিক হয়ে গেলো।
মাহমুদ ভাইয়ের দুইজনের সংসারে এই ছোটভাই হয়ে গিয়েছিলো তৃতীয় সদস্য।
“হ্যালো, ভাই ,মনটা খুব খারাপ , …”
“কেনও? আবার কি হলো?”
” ম্যাথের রেজাল্ট টা ভালো হয়নি>>> আমি আপনার বাসায় আসতেছি”
” আসো”
অনেক অজুহাত । আসা যাওয়া । আড্ডা। বেরানো।
সুন্দর সময় যেন তাড়াতাড়ি চলে যায়। তেমনি ভাইয়ের জাপানের ফেলোশিপের টাইমটাও যেন খুব তাড়াতাড়ি এসে পড়লো। আমি বাসা বদল করলাম। লস আঞ্জেলেস ছেড়ে সান্টা মনিকাতে। ভাই- ভাবি জাপানে।
এখনো বিকালে মাহমুদ ভাইয়ের বাসায় চলে যেতে ইচ্ছা করে। মনে থাকে না উনারা জাপানে। সে দিন মাহমুদ ভাইয়ের বাসার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আনমনে চলে গিয়েছিলাম। পরে মনে হলো উনারা নেই। কিছুক্ষণ বাইরে দাড়িয়ে থাকলাম । মনে হলেই ফেসবুকে আপডেট চেক করি । কথা হয়েছে দু বার । সময়ের ব্যাবধানের কারণে উনাকে সহজে নেটে পাই না । ফ্রি থাকলে খুব মিস করি।
ইন-শা-আল্লাহ । আবার দেখা হবে এই মার্কিন মুল্লুকে।হয়তো ও রকম মজা হবে না কিন্তু বরাবরই আমার জীবনেরর একটা দারুন সময়ের জন্য ভাই -ভাবির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ । উনাদের জন্য সব সময় আমার শুভ কামনা।
আর শেষে বলি আমার ভাগ্যবান , ক্যাডেট হতে পেরে।

১,৩৩৬ বার দেখা হয়েছে

১০ টি মন্তব্য : “মাহমুদ ভাইয়ের সাথে কয়েকদিন”

  1. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    সিসিবি দেখি এক্কেরে সিভিলিয়ান হয়ে গেছে, এই পুলা প্রথম ব্লগ পোষ্ট করল, আর কেউ তাকে সিসিবি'র প্রথামত 'সাইজ' করল না। আফসোস! এডজুটেন্ট স্যার ফাঁকিবাজ হয়ে গেছে।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।