বৃষ্টি ভেজার দিন

আমার খুব বৃষ্টি ভেজার শখ। ঝুম বৃষ্টিতে দাঁড়ালে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো কেমন যেন আশীর্বাদের মত গায়ে এসে পড়ে। শেষ কবে বৃষ্টি ভিজেছিলাম মনে নেই, তবে সংসদ ভবন চত্বরে সেই ভেজার পরে ভীষণ জ্বর হয়েছিল আমার। প্রায় দুই সপ্তাহ হাসপাতালে কাটাতে হয়েছিল। ডাক্তাররা নানান রকমের পরীক্ষা করে কিছুই ধরতে পারেননি, পূর্বে ম্যালেরিয়ার ইতিহাস থাকায় পুনরায় মুঠো মুঠো জেসোকুইন গিলতে হয়েছিল।

আজ সকালবেলায় ঝুম বৃষ্টি, আজ অফিসও নেই। বৃষ্টি ভেজার একটা বাহানা খুঁজছিলাম। স্ত্রী-সন্তান তখনও ঘুমে, ভাবলাম এটাই সুযোগ। কিন্তু সাঁইত্রিশ বছর বয়সে ১৩ তলা এপার্টমেন্ট বিল্ডিং এর সামনে তো আর বৃষ্টিতে নেমে ধেই ধেই করে লাফানো যায় না, অগত্যা একটা ছুতা খুঁজে বের করতে হল। এক সপ্তাহ হয়ে গেছে গাড়িটা পরিষ্কার করা হয়নি। গরীব মানুষ, ড্রাইভার রাখার সামর্থ্য নেই, এর চেয়ে বড় মওকা তো আর হতেই পারে না। উপযুক্ত ছুতো এবং উপযুক্ত সময় পাওয়া গিয়েছে, আমি তো খুশিতে একেবারে বাকবাকুম।সুতরাং, আল্লাহ্‌র নাম নিয়ে নেমে পড়লাম। সিকিউরিটি গার্ড মিটিমিটি হাসছিল, এই দালানের কোন ‘স্যার’ কে মনে হয় সে কখনও এভাবে দেখেনি। আমিও হাসছিলাম, কারণ ততক্ষনে বৃষ্টির আশীর্বাদ আমার গায়ে ঝরে পড়তে শুরু করেছে। এতো অনাবিল আনন্দে আর কখনও গাড়ি ধুয়েছি বলে মনে পড়ল না। বাড়তি পাওনা হল, শ্যাম্পু দিয়ে ধোয়ার পরে আমার আর পানি খরচ করতে হল না। সবকিছুর মত গাড়ি ধোয়ার কাজও একটা সময় শেষ হল। বৃষ্টি তখনও শেষ হয়নি, তবু আর তো বাহানা চলে না। ভেজা শরীর আর ভেজা মন নিয়ে বাসার ফিরে এলাম। এই বৃষ্টি ভেজার আধাঘণ্টা হয়ত এই বছরে আমার নিজের মত করে কাটানো শ্রেষ্ঠ সময়।

বাসায় ফেরার পর কি ঘটবে জানতাম। স্ত্রীর রক্তচক্ষু (কারণ সে আমাকে অনেক ভালবাসে এবং বৃষ্টি ভিজলে আমার জ্বর আসবে এটা সে জানে) উপেক্ষা করে ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে’ গুনগুন করতে করতে গোসলে ঢুকে গেলাম। একটু না হয় জ্বর আসলই, জ্বরের ভয়ে সামান্য বৃষ্টি ভেজার সাধ যদি অপূর্ণ থেকে যায়? গোসল থেকে বেরুলে আমার চার বছর বয়সী ছেলের জিজ্ঞাসা “তুমি কেন বৃষ্টিতে ভিজলে বাবা?”। কি উত্তর দেব তার প্রশ্নের? সস্নেহে তার মাথার চুল এলোমেলো করে দিলাম। মনে মনে বললাম, “ সে তুই বড় হলে বুঝবি খোকা, তুই তো আমারই সন্তান।”

২,২১৭ বার দেখা হয়েছে

১৫ টি মন্তব্য : “বৃষ্টি ভেজার দিন”

  1. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    আনন্দের সাথে বৃষ্টিতে ভিজলে বেশিরভাগ সময়েই অসুখ-বিসুখ করে না।
    সমস্যা হয় অকারণে ভিজলে বা ভেজা কাপড়ে অনেকক্ষণ থাকলে।

    একদিন ভাবি, ভাতিজাসহ সবাই মিলে বৃষ্টিতে ভিজুন।
    অসুখ হলে হোক না, একটি দারুণ অভিজ্ঞতা তো হবে... 😀


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  2. সাদাত (৯১-৯৭)

    আমার ছেলেটা মাত্রই গত সপ্তাহে ভাইরাল ফিভার থেকে ভাল হয়ে উঠেছে, অতি সম্প্রতি তাই সেই চেষ্টার সাহস না দেখাই............ তবে ব্যপারটা মাথায় থাকল............ জুনায়েদ......... 🙂

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাদাত (৯১-৯৭)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।