ছোট্ট অনুরোধঃ – দয়াকরে বাচ্চাদেরকে তেলাপোকা দেখিয়ে কখনই ভয় দেখাবেন না।
রাত ১০ টা। বিছানায় চুপচাপ বসে আছি, ভার্সিটির হলে। রুমমেটদের গল্প শুনছি, আর মনে-মনে কিছু একটা ভাবছি। এমন সময়, হটাৎ দেখি রুমের মেঝের উপর একটা তেলাপোকা হাঁটা-হাঁটি করছে। এই প্রাণীটিকে আমি মোটেও সহ্য করতে পারি না। রাতে মশারি না টাঙিয়ে শুলে পরদিন সকালে আমার পায়ের বুড়আঙ্গুলের উপরের যে লোমগুলো ঊধাও হয়ে যায়, সেটা আমার ধারণা যে এই তেলাপোকাই সাবাড়ের কাজটা করেছে।
তাই প্রাণীটিকে মেরে ফেলার জন্যে ব্যস্ত হয়ে বসি। এমন সময় দেখি সেটা আমার পানির বোতলের পাশে পড়ে থাকা কয়েকফোঁটা পানিতে মুখ লাগিয়ে পানি পান করছে। আমার মনে হাল্কা দয়া জন্মে। হাজার হোক না সে আমার জন্যে ক্ষতিকর – কিন্তু আল্লাহ্ তাআলার সৃষ্টি এই সুস্বাদু পানি পান করার সময় এটাকে স্যান্ডেল দিয়ে পিটিয়ে এর সাদাচর্বি বের করে দেয়াটা মোটেও উচিত হবে না। তাই তেলাপোকাটির পানি পান শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপচাপ অপেক্ষা করতে লাগলাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে, আমি ফার্মগেটের তেঁজকুনি পাড়ার হোন্ডায় গোলির কুখ্যাত রতনের মেসের ডাইনিংএ প্রায় দু-তিন মাস ছিলাম। সে সময় এক এলাকার বড় ভাই মাঝেমধ্যে আমাদের সদরদরজা দিয়ে ভেতরে উঁকি দিতেন। আমার সাথে চোখা-চোখি হলেই উনি পানি পান করতে চেতেন। আমি সেই পানি পিপাসু বড় ভাইকে ঢাকার বুকে মূল্যবান পানি পান করিয়ে পাপের রাজ্যে স্বর্গীয় সুখ অনুভব করতাম। এরপর একদিন আমার সাওয়াবের খনি পানিভাই মানে সেই বড় ভাই পানি পান করতে এসে আমার মোবাইলটা চুপকরে ঊধাও করে দিলেন। আমার বাবার কিনে দেয়া, প্রথম একমাস বয়সের নোকিয়া মোবাইল সেটটি হারানোর ব্যথাটা আজও কোনো অপরিচিত ব্যক্তি পানি পান করতে চাইলে ভেতর-ভেতর অনুভূত হয়।
যাইহোক, তারপর সেই তেলাপোকাটির পানি পান শেষ হলো অবশেষে। মারবার জন্য আমি প্রস্তুত। এমন সময় লক্ষ্য করলাম যে, তেলাপোকাটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। ট্যাং লম্বা করে উঁচু হয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ভালোভাবে খেয়াল করে দেখি বেচারার পেছনে অর্ধেক ডিম বেরিয়ে আছে। সে প্রেগন্যান্ট। আবার আমার চোখে-মুখে দয়া জেগে উঠলো। এখন ইচ্ছে করছে নিজের পায়ের কয়েকটি লোম কেটে তেলাপোকাটাকে খেতে দি। বেচারা।
ডাইনোসরের আমলের এই প্রাণীটি উড়তে এবং জোরে দৌড়াতে দারুন পারদর্শী। সুরের ন্যায় এন্টেনা আর উন্নত ইন্দ্রিয় ক্ষমতা সম্পন্ন সাহসী প্রাণীটি তাঁর ডিমটাকে দারুনভাবে লুকিয়ে পাড়তে পারে।
ছোট থাকতে আমার জন্য তেলাপোকাকে ভয়ের এক সহজলভ্য প্রাণী হিসেবে বিবেচিত করে আমাকে আমার যাবতীয় দুষ্টামি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হতো। আমার আম্মু আমাকে এই প্রাণী থেকে বাঁচাতেন। আর আমি আম্মুকে কেল্লু, চেলাসাপ আর সুয়োপোকা থেকে বাঁচাতাম। একদিকে বীর অন্যদিকে ভীতুও হতে পারে।
যাইহোক, মেসের বা হলের বাথরুমে, টয়লেটে বা নিজের রুমে সকল প্রকারের পোকা-মাকড়ের সাথে বসবাসটা এখন মেনে নিয়েছি। আমার মৃত্যুর পর হয়তো তারাই আমার কবর ঘরে যাতায়াত করবে। আবার তারা আমার জন্যে শাস্তির একটি উপকরণও হতে পারে।
আর, ঐ তেলাপোকাটা শেষমেশ খোঁড়াতে খোঁড়াতে খাটের নিচে অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো। ওর বংশবৃদ্ধি অচিরেই হয়তো আমার মশারি খাটানোর জন্যে একটি উত্তম কারণ হয়ে উঠবে।
তেলাপোকার সাথে কয়েকটি মজা –
– রাতে টয়লেটে টর্চলাইটের আলোয় তাকে দেখে হাত থেকে টর্চলাইট পড়ে ভেঙে যেয়ে বাবার কাছে বকা খাওয়া।
– একটিকে মেরে গু বার করে দেবার পর আর একটি দেখে প্রতিশোধ গ্রহণকারী ভেবে নিজের রুম থেকে দৌড়ে পলায়ন।
– বাথরুমে তীক্ষ্ণ নজর ব্যবহার করে তাঁকে খুঁজেবার করার ক্ষেত্রে গোয়েন্দা পদ্ধতির ব্যবহার।
– মাঝে মাঝে তারা মানুষকে তাড়া করতে পারে এই বিশ্বাস অর্জন।
– তাদের মানব লোম খাবার ঘটনাটি কিন্তু সত্য।
– আচার করে খাইবার ইচ্ছা এবং রোগের ওষধ হিসেবে ব্যবহারের চিন্তা-ভাবনা।
– একটিকে মেরে চর্বি বার করে দিয়ে নিজেকে বীর ভাববার সাথে সাথে নিজের আত্মবিশ্বাসটাকেও সাংঘাতিক পরিমানে বাড়িয়ে তোলা।
:))
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
🙂 ... ধন্যবাদ ...
ভালো থাকা অনেক সহজ।
মজা পেলাম।
তেলাপোকা একটি বিচ্ছিরি প্রাণী।
ধন্যবাদ দাদা ... 🙂
ভালো থাকা অনেক সহজ।
'দৌড়াতে' বানানে চন্দ্রবিন্দু নেই।
দ্রষ্টব্যঃ আমি এখন থেকে সিসিবির বাংলা বানান থেকে অপ্রয়োজনীয় চন্দ্রবিন্দু ঝেঁটিয়ে বিদায় করার মিশনে নামলাম।
নূপুরদা আপনার সিগনেচারে "সিসিবি চন্দ্রবিন্দু নিরীক্ষক" লিখে দেন! প্রচুর শব্দে চন্দ্রবিন্দু বসানো একটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। দৌড়ানোতে আমিও চন্দ্রবিন্দু দিতাম! 🙁
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
:)) :)) :))
হুম, তুমিও আছো এই দলে।
নূপুর দা এই মিশন টা কিন্তু ভালো হচ্ছে। আশা করি আপনি সফল হবেন। 😀
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
অনেক ভালো উদ্যোগ। নূপুর দা।
'দৌড়াতে' বানানে চন্দ্রবিন্দু তুলে নিয়েছি। 🙂
আশাকরি এইভাবে আমরা সবাই আমাদের প্রাণের ভাষাকে শুদ্ধভাবে চর্চা করতে পারবো।
ভালো থাকা অনেক সহজ।
তেলাপোকা নিয়েও পোষ্ট হয় এইটা সিসিবি ছাড়া আর কোথাও হবে কিনা সন্দেহ আছে। মজা পেয়েছি।
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
ধন্যবাদ, মাহমুদুল ভাই ... 🙂
ভালো থাকা অনেক সহজ।
🙂 🙂
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
ধন্যবাদ ... ওয়াহিদা নূর আফজা আপু... 🙂
ভালো থাকা অনেক সহজ।
:khekz: :khekz: :khekz:
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
ধন্যবাদ ... মোস্তাফিজ ভাই ... 🙂
ভালো থাকা অনেক সহজ।
কলেজে প্র্যাকটিক্যালের সময় খুব বাজে একটা গন্ধ নাকে আসত। 🙁
তেলাপোকার জন্য কোন সহানুভূতি নেই... :thumbdown:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
একটি ধন্যবাদ নিয়েন ভাই ... :frontroll:
ভালো থাকা অনেক সহজ।
কোন এক সময় বিটিভি একটা বিজ্ঞাপন দেখাতো, যার শুরুতে এক মেয়ে আঃ তেলাপোকা বলে আৎকে উঠতো, পোসটা পড়ে কেন জানি এতদিন পরে ঐ বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়ে গেল 😛
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
:)) ... ধন্যবাদ ভাই ...
ভালো থাকা অনেক সহজ।