পরাটা ও পুডিং … ডাইনিং হল সমাচার

তৌফিকের পরাটা আর পুডিং এর পোস্ট পড়ে রোজার অবস্থা টাইট। মন আনচান করছে কলেজের সেই শক্ত, চামড়ার মত অসীম স্থিতিস্হাপক পরাটাগুলার জন্য। ভেবেছিলাম পোস্টের কমেন্টে কিছু স্মৃতি যোগ করব। পরে স্মৃতির ভিড় এতই বেশি যে পুরো পোষ্টই অবতারনা করলাম ।

কলেজে ক্লাস সেভেনে এসে পরাটার পুরো মাহাত্ম বুঝতে পারিনি। কলেজে এসেই জানতে পারলাম এমন কিম্ভুত, ঠান্ডা, স্থিতিস্থাপক জিনিসটা যে পরাটার মত সুস্বাদু জিনিসটার নাম ধারন করে বসে আছে । ক্যাডেটের স্বভাবসুলভ রাক্ষুসে ক্ষুধা তখনও পেয়ে বসেনি।প্রথম দিকে তিনটা পরাটার জায়গায় একটা খেতেই খবর হয়ে যেত। সিনিয়ররা খুবই চাপাচাপি করতেন বাকিগুলো খাওয়ার জন্য। এখন বুঝতে পারি আসলে ঐ রাক্ষুসে ক্ষুধার যন্ত্রনায় সিনিয়ররা কষ্ট পেতেন যদি দেখতেন কারো প্লেটে দুইটা পরাটা পড়ে আছে আর তার নিজের পেটে ক্ষুধা। আমাদের সরকার ( ক্যাডেট সরকার ও-883 )একেবারেই পরাটা খেতে পারত না। তারপরও ওর টেবিল লীডার ওকে জোর করে পরাটা খাওয়াতো। আর সরকার পরাটা খেয়ে হাউসে এসে প্রায়ই পরাটা বমি করতো। কলেজ প্রিফেক্টের প্রিন্সিপাল ড্রিলের দিনে দেওয়া কমান্ড “মার্কার প্যারেডে মিল” অনুসরন করে সবাই ক্ষেপাত “সরকার পরাটা গিল” । এখনও এটা সরকারের গ্রুপ ইমেইল সিগনেচার।

ক্লাস ইলেভেন এ আইসিসি বাস্কেটবল কম্পিটিশনে প্রাকটিসের সময় পরাটার আসল মাহাত্ম টের পেলাম । প্রাকটিস শেষ করে এসে রাক্ষসের ক্ষুধা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তাম ডাইনিং হলে পরাটাগুলার উপর। একেকজন পাঁচটা ছয়টা পরাটা খেয়ে ফেলতাম। পরে যত প্রাকটিস বাড়তে লাগলো তারসাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগলো ক্ষুধাও। একসময় আমাদের জন্য আলাদা ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা করা হলো। একবার মনে আছে প্রাকটিসের পরে আমরা 10 জন মিলে 118 টা পরাটা খেয়ে ফেলেছিলাম। ঐদিন সারাদিন আর কিছু খেতে পারিনি । সারাদিন পেটফুলে ঢোল হয়ে ছিল।

কলেজের পুডিং ছিল অসাধারন একটা খাবার। আমাদের মধ্যে চ্যালেন্জের একটা বড় পুরস্কার ছিল পুডিং বিনিময়। কলেজের স্পেশাল ডিনার, ফেয়ারওয়েল ডিনারে স্যার/ম্যাডামরা যোগ দিতেন ক্যাডেটদের সাথে। স্যারেরা দখল করে নিতেন দুই হাইটেবিল। আর হাইটেবিলে পুডিং থাকতো বাটি ভরা। ক্যাডেটরা বড়ই লোভাতুর চোখে তাকিয়ে থাকত পুডিং এর বাটিটার দিকে। আমরা ইলেভেন এ থাকার সময়, এমন এক ফেয়ারওয়েল ডিনার শেষে স্যাররা সব বেরিয়ে যাওয়ার পরে ক্লাস ইলেভেন,টুয়েলভ সবাই ঝাপিয়ে পড়ল  হাইটেবিলে পড়ে থাকা পুডিংগুলোর উপর। সবাই টপাটপ একসাথে মুখে পুরে দিল গোটা কয়েক পুডিং। কিন্তু মুখে দিয়েই সবার চক্ষু ছানাবড়া। কেউ গিলতে পারছেনা পুডিংগুলো । সবাই থু থু করে ফেলে দিল মুখ থেকে। কারন আর কিছুই না, ওগুলো ছিল ডায়েবেটিকস পুডিং, কোন চিনি বা মিষ্টি ছাড়া !!!!!!

২,৫১০ বার দেখা হয়েছে

২৫ টি মন্তব্য : “পরাটা ও পুডিং … ডাইনিং হল সমাচার”

  1. জিহাদ (৯৯-০৫)

    কন্কি!! আপনি পরোটার মাহাত্ন্য বুঝছেন ইলেভেন এ এসে?? 😮

    আমি ক্লাস এইট থেকেই পরোটার ডাই হার্ড ফ্যান। অবশ্য কয়েকটা কলেজের ফ্রেন্ড এর কাছ থেকে শুনেছিলাম ওদের পরোটার মান তেমন একটা ভাল হতোনা। আমি অন্য কোন কলেজের কথা জানিনা। কিন্তু এম সি সি র পরোটার মত স্বাদ আমি বাইরের পরোটাতেও এখন আর পাইনা। 🙁

    ইয়াপ, পুডিং ও ছিল সেইরকম একটা জিনিস। 😀


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    কলেজের পরাটা'র স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে, তবে আমার breakfast এর থেকে dinner এর পরাটা বেশি ভাল লাগতো। তবে best ছিলো lunch এর টা,(obstacle course r cricket copmition এর দিন দিত।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. মেহেদী হাসান সুমন (৯৫-০১)

    আমি কলেজের শেফ দের নিয়ে ঢাকাতে একটা রেস্টুরেন্ট খুলতে চাই, নাম হবে “ ডাইনিং হল” ...। পরাটা, পুডিং, খাসির মাংস আর পেটিস এই সব পাওয়া যাবে । কি বলেন ভাই???

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আদনান (১৯৯৭-২০০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।