ক্রিকেটারের শাস্তি ……

( আমার হাউসের বন্ধুরা, এদের অনেকেই ক্রিকেট খেলার দায়ে দোষী)

.

.

.

ক্লাস সেভেনের প্রথম কয়েক মাস ছিল বড়ই ভয়ংকর। চারিদিকে সিনিয়র ভায়েরা। সদা সর্তক থাকতে হয়, কখন কি ভুল হয়ে যায় । দিনে ড্রিল আর রাতে বিরক্তিকর প্রেপ । এর মধ্যে মজার সময় হলো একটাই । সারাদিন ড্রিলের কারনে আমাদের নাইট প্রেপে শর্ট করে আধা ঘন্টা আগেই ছুটি দেয়া হতো । এই আধাঘন্টা আমরা হাউসে এসে রাজার মতো ঘোরাফেরা করতাম । যে যা খুশি করতো । বাথরুমে গান গাইতাম, খালি গায়ে ঘুরে বেড়াতাম , ইনডোর গেমস রুমে কেরাম খেলতাম। অবশ্য এই অবসর সময়ে মোরশেদ ফ্রন্টরোল প্রাকটিস করতো ড্রিল গ্রাউন্ডে আরো ভালো ফ্রন্টরোল দেয়ার জন্য । আধঘন্টা পরেই সিনিয়ররা হাউসে এসে সারাদিনের কৃতকর্মের বিচার শুরু করত। যা হোক, একবার একজনের মাথায় আইডিয়া এলো সিনিয়রদের মতো ড্রাইরুমে ক্রিকেট খেলার । কিন্তু এই প্ল্যানটা আমার জানা ছিল না। আমি প্রেপের শেষে যথারীতি বিশাল বেগে দৌড়ে এসে ক্যারম বোর্ডের দখল নিয়ে ক্যারম খেলায় মনোনিবেশ করলাম। ওদিকে ড্রাইরুমে সিনিয়রদের মত করে ধুন্ধুমার ক্রিকেট খেলা হলো । কিন্তু আনন্দের মাত্রা একটু বেশি হওয়াতে সিনিয়ররা একাডেমিক বিল্ডিং থেকেই ব্যাপারটা লক্ষ করল। সিনিয়রদের প্রেপ শেষ হতেই  তারা এসে সবাইকে ডাকল । আমারও ডাক পড়ল । আমি কিছু না জেনেই কাতারে শামিল হলাম। এবার শুরু হলো প্রশ্নোত্তরের পালা ।

আমি আসা মাত্রই ক্লাস এইটের ভাইয়ারা জিগ্ঞেস করল:  “তুমি কি ক্রিকেট খেলেছ ?”
আমি ভাবলাম নিশ্চয়ই কোন ক্রিকেট কম্পিটিশনের জন্য সিলেকশন চলছে ।
আমি বুক ফুলিয়ে বললাম, “হ্যাঁ ভাইয়া”।
সে গিয়ে অন্যান্য ভাইয়াদেরকেও বলল, “এইতো আরেকজন পাওয়া গেছে, ইনিও ক্রিকেটার” ।
আমিতো মহাখুশি । ভাবলাম এবার বুঝি ক্রিকেট টিমে চান্স পেয়েই যাব ।
সবাই আমাকে ঘিরে ধরে জিগ্ঙেস করলো, “এই বয়সেই ক্রিকেট খেলো ?”
আমি বুক চিতিয়ে উত্তর দিলাম, “জ্বী।”
সবাই আমার সত্যবাদিতায় মুগ্ধ ( আমার অন্যান্য ক্লাসমেটরা তখনও স্বীকার করেনি তারা কে কে ক্রিকেট খেলেছে , পরে জয়েন করায় আমি এসবের কিছুই জানিনা )
আবার জিগ্ঙেস করল, “কি দিয়ে ক্রিকেট খেলেছো ?”
আমি সমানে উত্তর দিয়ে চলেছি, “টেনিস বল দিয়ে”
সবাই অবাক , “টেনিস বল কিভাবে জোগাড় করেছো”
আমি উত্তর দিলাম, “টাকা দিয়ে কিনেছি”
সবাই এবার ভিরমি খাওয়ার জোগাড়। “এই বয়সেই টাকা নিয়ে টেনিস বল কিনেছো ? ” সবাই ভাবল আমি বুঝি টাকা দিয়ে বাইরে থেকে টেনিস বল আনিয়েছি ।

আমি একটু অবাক হলাম, ব্যাপার কি সবাই টেনিসবলের কথা শুনেই এত অবাক হচ্ছে কেন ? তবুও নিজেকে ক্রিকেটার প্রমান করতে আমি মরিয়া।

একজন আবার বলে উঠল, “একে দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন না করে হ্যান্ডসডাউন করে প্রশ্ন কর”।
এবার প্রশ্নোত্তর শুরু হলো আমাকে হ্যান্ডসডাউন করিয়েই ।
আমার প্রথমে মনে হলো এই বুঝি রীতি ( ফিটনেস টেস্ট হচ্ছে মনে হয় )। কিন্তু একটু খটকা লাগলো, ব্যাপার কি, সবাই এভাবে ক্ষেপে যাচ্ছে কেন ?
তারপর আমাকে জিগ্ঙেস করল, “তোমার সাথে কে কে খেলেছে ?”
আমি বললাম, ” আমার ফ্রেন্ডরা প্রায় সবাই ই ছিল” আমি আসলে আমার স্কুলের বন্ধুদের কথা বলছিলাম। ভাইয়ারা ভাবল বুঝি ক্যাডেট কলেজের বন্ধুদের কথা বলছি।
তারা আরো অবাক । একজন ক্ষেপে গিয়ে বলল, “আজ একটাকেও ছাড়বো না” ।
এবার মনে হলো, আসলেই কিছু গোলমাল আছে ।
এক সিনিয়র ভাই বলল, “আরে এ মনে হয় ক্রিকেটের ব্যাপারে কিছুই জানেনা”
আমি সাথে সাথে প্রতিবাদ করে বললাম, “না ভাইয়া, আমি অনেক ক্রিকেট খেলেছি, এমনকি কয়েকবার ডিউস বলেও খেলেছি, মাঠে অনেক বড় বড় স্কোরও করেছি”
এবার সবাই বুঝতে পেরে হো হো করে হেসে উঠলো । আমি কিছুই না বুঝে বোকার মত তাকিয়ে রইলাম । আর ভাবলাম এরা আমার ক্রিকেট খেলা না দেখেই আমাকে অবিশ্বাস করছে ।
একজন পরে আমাকে বুঝিয়ে জিগ্ঙেস করল, “তুমি কি আজ রাতে ড্রাই রুমে ক্রিকেট খেলেছো ?” আমার কাছে এতক্ষনে সব পরিষ্কার হলো………

ইতিমধ্যে হান্ডসডাউন হয়ে থাকায় শাস্তি যা হওয়ার হয়েই গেছে ……

২,০৩৫ বার দেখা হয়েছে

২২ টি মন্তব্য : “ক্রিকেটারের শাস্তি ……”

মওন্তব্য করুন : সামিয়া

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।