জাহেল,আনপড়াহ……

আমাদের ইসলামিয়াতের টিচার আনিস স্যার। সদ্যই ইউনিভার্সিটি থেকে পাস করেছেন। প্রথম ক্লাস নিতে এসেছেন আমাদের ক্লাসে। স্যার পড়াতে পড়াতে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে যান। স্যার পড়াচ্ছিলেন জিহাদ নিয়ে । “জিহাদ হলো রিপুর সাথে। জিহাদ হলো নিজের নফসের সাথে। (স্যার অলরেডি জিহাদী জোসে উত্তেজিত ও বলার সাথে সাথে নিজের বুকে দুম দুম করে কিল দিতে থাকলেন) “জিহাদ ইন মাই চেস্ট ( দুম করে বুকে কিল) , জিহাদ ইন মাই মাইন্ড (আবার বুকে কিল) “। এবার বুঝুন স্যার কিরকম উত্তেজিত।

একবার আমাদের খন্দকের যুদ্ধ পড়াচ্ছিলেন। খন্দকের যুদ্ধে মুসলমানরা পরিখা খনন করল কুরাঈশদের হাত থেকে বাঁচার জন্য । স্যার পড়াতে পড়াতে যথারীতি উত্তেজিত। “মুসনমানরা খন্দকের যুদ্ধে পরিখা খনন করল, (উত্তেজিতভাবে) কুরাঈশরা আসলে তাদের কচুকাটা করে ফেলবে।” স্যার যেন নিজেই কুরাঈশদের চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলেন। এর মাঝে আমি উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলাম “স্যার মরুভূমিতে কি কচু হয় ?” আর যায় কোথায়। স্যার উত্তেজিতভাবে সমানে বকলেন আমাকে “ওরে জাহেল, ওরে আনপড়াহ, ওরে নমরুদ, ওরে ইবলিশ ……..তোর দোজখেও জায়গা হবে না”।

আরেকবার আমাদের “মৃনাল কান্তি কুরী” স্যার কৃষি বিজ্ঞান পড়ান। স্যারের নামটিই ছিল এক মজার ব্যাপার। কেউ বোর্ডে স্যারের নাম লিখত “মৃনাল কান্তি কুড়ি”, কেউ লিখত “মৃনাল কান্তি 20″। স্যার আমাদের বিভিন্ন রকম সার নিয়ে পড়াচ্ছিলেন। স্যার ক্লাসে জিজ্ঞাসা করলেন, “এমপি সারের পুরো অর্থ কি ?” এমপি সার মানে “মিউরেট অব পটাশ”। ক্লাসে এক এক করে ধরে আমার কাছে আসলেন। আমি বলে ফেললাম, “মেম্বার অব পার্লামেন্ট”। আর যায় কোথায়, স্যার ক্ষেপে গিয়ে আমার দুই কান নিয়ে কিছুক্ষন তার মটর সাইকেল চালনা প্রাকটিস করলেন।

আবার আসি আনিস স্যারের গল্পে। স্যার মাঝে মাঝে আমাদেরকে তিরস্কার করতেন যে ক্যাডেট নাকি খুবই চাপাবাজ। তবে স্যারের কাছে চাপা মেরে কেউ পার পায় না। স্যার নাকি চাপা শুনলেই ধরে ফেলেন। একদিন স্যার প্রেপে খাতা দেখছিলেন পিছনে বসে। হঠাৎ বলে উঠলেন, “বয়েজ তোমাদেরকে একটা চাপার নমুনা দেখাই, তোমরা যে কি পরিমান চাপাবাজ তা নিজেরাই দেখ। একজন পরীক্ষার খাতায় লিখেছে ” মহামানব ব্রায়ান লারা বলেছেন, “নামাজ পড়া ভাল কাজ”। তোমরা চাপা মারবা মার কিন্তু ব্রায়ান লারার মতো একজন মহা মনীষীর নামে কেন চাপা মার ?” উল্লেখ্য মহামনীষী ব্রায়ান লারা যে কে তার কোন আইডিয়াই ছিল না স্যারের ।

বছর খানেক আগে শুনেছিলাম আনিস স্যার নাকি ক্যাডেট নিয়ে শিক্ষাসফরে কক্সবাজার গিয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা গিয়েছেন। স্যার খুবই অল্প বয়েসেই চলে গেছেন। স্যারের কাছে হয়ত অনেক বেয়াদবি করেছি কিন্তু স্যার ক্ষমা চাওয়ার সুযোগটুকুও দিলেন না। হয়ত স্যার আমাদেরকে আদর করে অনেক আগেই ক্ষমা করেছেন। স্যারের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

১,৭৫১ বার দেখা হয়েছে

১৫ টি মন্তব্য : “জাহেল,আনপড়াহ……”

  1. জিহাদ ইন মাই চেস্ট....
    জিহাদ ইন মাই মাইন্ড....

    এইটা তো জিহাদের গার্লফ্রেন্ডের কথা... মেয়েটা ওই দিন জিহাদরে মেসেঞ্জারে এই কথা লিখতেছিল, আমি পইড়া ফালাইছি। 😀

    জিহাদ সাব্বাস।

    জবাব দিন
    • মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

      হুম মানে কি জাপানী ভাষায় ? ভালো না খারাপ ?

      আপনার জাপানী নাম দেখে আমাদের মধ্যে কিছু জনপ্রিয় জাপানী নাম মনে পড়ল। আমাদের যারা জাপান গিয়েছিল স্কলারশীপ নিয়ে তাদের নাম দেয়া হয়েছিল 'হাগামুতু' , 'তাকিওনা মুতেআসি' 'পানিপানিমুতু' ।

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মান্নান (ও-৮৮৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।