প্র্যাকটিক্যাল জোক: ভাষা বিভ্রাট ( কিন্ঞ্চিত ১৮+ সতর্কতা) : একটা ছবি ফাও


প্যারিসে আসার পর কিছুদিন ফ্রেন্ঞ্চ ভাষা কোর্স করতাম। প্রথম ক্লাসে টিচার ( টিচার আবার সেই রকম ফ্রেন্ঞ্চ সুন্দরী ছিল !) সবার নাম ,দেশ ইত্যাদি জিজ্ঞাসা করছিল। সবাই এক এক করে পরিচয় দিচ্ছিল। আমার দেশ জিজ্ঞাসা করতে আমি বললাম বাংলাদেশ। উনি বললেন ‘দাকো’ ( ওকে)। তার মুখে ডাকো শুনতে কিছুটা ‘ঢাকা’ র মত মনে হলো। আমি ভাবলাম বুঝি উনি জানতে চাইছেন আমি ঢাকা থেকে কিনা। আমি তো ভাবলাম যাক টিচার বাংলাদেশ এবং ঢাকা দুটোই চিনে ফেলেছে একবারেই এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করছে আমি ঢাকা থেকে কিনা। আমি উত্তর দিলাম “ইয়েস” । টিচার আবার বলে ‘দাকো’ । আমি আবার বলি ইয়েস, ঢাকা। টিচার আবার বলে ‘দাকো’ । আমি আবার বলি ইয়েস ,ঢাকা। এবার ক্লাসে হাসাহাসি শুরু হলো। ডাকো- ঢাকা নিয়ে। পরে জানলাম french ” d’accord” মানে হলো ওকে।


এক ফ্রেন্ঞ্চ এর সাথে বসে লান্ঞ্চ খাচ্ছিলাম। খেতে খেতে সে হঠাৎ বলে, আজকের খাবারে কোন ‘গু’ নেই । আমার তো চোখ ছানাবড়া। এই ব্যাটা খাবারে গু চায় কেন ? আবার একটু পর বলে এমন গু ছাড়া খাবার খেতে একটুও ভালো লাগে না। এবার আমার তো ভিমরি খাওয়ার জোগাড়। কারো যে গু ছাড়া লান্ঞ্চ খেতে ভালো লাগেনা এই প্রথম শুনলাম। আবার সে এত আগ্রহ করে গু খেতে চাইছে। কৌতুহলী হয়ে গু কি জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম “goût(গু)” মানে taste।


মাস কয়েক হলো ফ্রেন্ঞ্চ একটা কোম্পানীর রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট এ কাজ করছি। একটা প্রজেক্ট মিটিং এ দক্ষিন ফ্রান্সের মোঁপলিয়ে শহরে যেতে হলো। আমরা কয়েক কলিগ একসাথে যাচ্ছি। ইউরোপের দ্রুততম ট্রেন ৩০০ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলেছে চমৎকার পর্বত দুপাশে ফেলে।৩ ঘন্টার জার্নি। আমার কলিগরা হঠাৎ তাস খেলতে চাইল সময় কাটানোর জন্য। আমি খুব একটা উৎসাহী ছিলাম না তাস খেলায়। কারন প্রথমত সাউথ ফ্রান্সের দম বন্ধ করা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, দ্বিতীয়ত তাস খেলায় আমি খুব একটা পারদর্শীও নই। তবু জনবল সংকটের কারনে না করার কোন উপায় নেই। কলিগরা আমাকে ‘পোকার’ খেলার নিয়মকানুন শিখিয়ে দিচ্ছিল।

এক পর্যায়ে একজন বলল: “ডু ইউ হ্যাভ অ্যাস ? ”

আমি তো ভাবি অ্যাস ছাড়া আবার মানুষ হয় নাকি ? আমি স্বীকার করলাম যে ” আ্ই হ্যাভ এ্যান অ্যাস”

সে আবার বলে ” শো মি ইউর আ্যস”

আমার তো আক্কেল গুড়ুম অবস্থা। আমি বললাম ” হোয়াই ডু ইউ ওয়ান্ট টু সি মাই অ্যাস?”

সে বলে ” আই ওয়ান্ট টু সি ইফ ইউ হ্যাভ রাইট অ্যাস অর নট ”

আমি বললাম ” আই কান্ট শো মাই অ্যাস টু এনিওয়ান”

সে আবার বলে ” পুট ইওর অ্যাস অন দা টেবিল অ্যান্ড শো এভরিওয়ান”

আমি তো ভাবি শালা দেখি ভালৈ মাল টেনেছে। এখন উল্টাপাল্টা বকছে।

সে বলে ” দিস ইজ দা রুল , ইফ ইউ হ্যাভ অ্যাস, ইউ হ্যাভ টু শো টু অল”

আমি একটু চড়া গলায় বললাম ” বুলশিট ইউর রুলস”

এবার সে আমার হাত থেকে তাস গুলো টেনে নিয়ে টিক্কা বের করে বললো ” দিস ইজ দা অ্যাস (ACE)” । :khekz: :khekz: :khekz: :khekz:

ছবি পরিচিতি: ছবিটা আমার অফিসের আইল্যান্ডের। আইল্যান্ডটার নাম “ile de impressionist”। প্যারিসের সিন নদীর এই আইল্যান্ডটা ইম্প্রেশনিষ্ট শিল্পীদের আনাগোনায় মুখর থাকত। এখনও এটা অন্যতম টুরিষ্ট স্পট। আইল্যান্ডটা ছবির মত সুন্দর। প্যারিস ঘুরতে এলে দেখে যেতে পারেন জায়গাটা।

৩,৭৯০ বার দেখা হয়েছে

২৭ টি মন্তব্য : “প্র্যাকটিক্যাল জোক: ভাষা বিভ্রাট ( কিন্ঞ্চিত ১৮+ সতর্কতা) : একটা ছবি ফাও”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    মান্নান,
    লেখা খুব ভালো লাগলো।
    সেই ছোটোবেলায় প্রথম প্রথম যখন হিন্দি ছবি দেখতাম; তখনও এই ভাষা সমস্যায় পড়তাম।
    রেখা, শ্রীদেবী এরা হিন্দি ভাষায় মাথার চুল নিয়ে কথা বলতেন, আর কান লাল হতে থাকতো।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  2. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    একদেশের বুলি আরেক দেশের গালি।
    আমেরিকায় বাচ্চারা যখন পটি করা শেখে তখন দুটোর শেখানো হয় পিপি, পুপু (বুঝে নিও)। আমার এক ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়ে দেখি ওর ছেলে খালি পিপি পুপু করছে কিন্তু ওর বৌ না শ্বশুর - শাশুরি কেউই বাচ্চাকে রেস্টরুমে নিচ্ছে না। পরে জানলাম নানা - নানির বার্মিজ ভার্সন পিপি-পুপু। সেই ফ্রেন্ডের বৌ ছিল বার্মিজ।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।