আমার ইমিগ্রেশন অভিজ্ঞটা (২)

বিভিন্ন দেশ ঘুরে ইমিগ্রেশনের ও এয়ারপোর্টের কিছু মজার মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে । এগুলো শেয়ার করার জন্যই লিখছি :
আগের পর্ব এখানে :

ইন্ডিয়া ইমিগ্রেশন :
সম্ভবত: চেকিং এর সবচাইতে বেশি বাড়াবাড়ি দিল্লী এয়ারপোর্টে। দিল্লী এয়ারপোর্টে চেকিং এর এতস্তর যে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। কমসে কম চার/পাঁচবার চেকপয়েন্ট পার হতে হয়। জামা,জুতা, বেল্ট সব খুলতে হয়। দিল্লী ইমিগ্রেশনে এক বাচাল অফিসারের পাল্লায় পড়েছিলাম। আসলে আমারই ভুল ছিল। সে আমার পাসপোর্ট না দেখেই আমাকে হিন্দি প্রশ্ন করল। আমার নিজের হিন্দি দখল ভালই। তাই হিন্দীতেই উত্তর দিলাম। ব্যস , পরে পাসপোর্টে যখন দেখল আমি বাংলাদেশী কিন্তু হিন্দি বলছি , অমনি তার মাথায় রাজ্যের গল্প ভর করল।গল্পের একটু উদাহরন দেই:

অফিসার: আপ কিধার সে আয়া ?
আমি: বাংলাদেশ সে ।
অফিসার: হররোজ বাংলাদেশ সে ইতনা লোক ইন্ডিয়ামে কিউ আতি হে ?
আমি : কাম কে লিয়ে, বিজনেস কে লিয়ে, ঘুমনে কে লিয়ে লোকতো হামেশা আতিহে
অফিসার : বিজনেস কে লিয়ে ইন্ডিয়ামে রাখ্খা কেয়া , বিজনেস তো ইধার হোতিই নেহী
আমি : কেয়া বাত কারতা হো, ইন্ডিয়া ইতনা বড়া ইকোনোমি
অফিসার: ইকোনমি ইতনা বড়া লাগতা হে মাগার স্যালারি তো মিলতাহি নেহি।
অফিসার: হর চিজকি কিমাত বাড়তি যাতি হে বাড়তি যাতি হে
আমি : এতো হর কান্ট্রি মে
অফিসার : তুম ইন্ডিয়ামে কিউ আয়া ?
আমি : ঘুমনে কে লিয়ে আয়া ।
অফিসার : ঘুমনে কে লিয়ে ইধার হে কেয়া ? জো চিজ বাঙ্গাল মে হে ওহি তো ইন্ডিয়ামে হে

আমি ব্যাটার সাথে সাথে তাল দিতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে গেসি। ব্যাটা তবু বকবক করেই যায় । এই করতে গিয়ে সে দুইবার আমার নাম ভুল করল, হাত থেকে পাসপোর্ট ফেলে দিল। আমি চরম বিরক্ত। নাম টাইপ করতে গিয়ে বলতে থাকল :

অফিসার : মেরা ইতনি গালতি কিউ হো রাহা হ্যায়
আমি : মেরা নাম ভি কম্প্লিকেটেড হে
অফিসার : নেহি , নেহি ও নেহি , মেরে হি গালতি হ্যায়। আজকাল মুঝে সাব কুছমে গালতি হো রাহা হ্যায়

আমার তো ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা, ব্যাটার বকর বকর শুনতে শুনতে আমার মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে।আবার ভদ্রতা করে মাঝে মাঝে সায়ও দিতে হচ্ছে।একসময় আমার পিছনে লম্বা লাইন দেখে সে আমার সাথে গল্প করা ক্ষান্ত দিল।


আলো ঝলমলে দুবাই এয়ারপোর্ট

দুবাই ইমিগ্রেশন :

দুবাই ইমিগ্রেশনে বাঙ্গালীদের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে। যেন সব বাঙ্গালীই চোর-ছ্যাছড় টাইপের। অথচ সাদা চামড়া দেখলে ইমিগ্রেশন অফিসার যেন গলে পড়ে। আমি এই আরবগুলাকে দুই চোখে দেখতে পারিনা। শালারা টাকার গরমে যেন আমাদের যেন মানুষই মনে করেনা। আমি পাসপোর্ট জমা দেয়ার পর ইমিগ্রেশন অফিসার আমাকে বলে “তোমার রিটার্ন ফ্লাইট কখন ?” আমি বললাম ,”রিটার্ন ফ্লাইট সকাল নটায়” । সে আমার টিকিট দেখে ধমকের সুরে বলে, “তোমার ফ্লাইট সাড়ে আটটায় লেখা, তুমি ন’টায় বললে কেন ?” আমি একটু কনফিউজড, কারন আমি টিকিট একবার দেখে একটা আইডিয়া রেখেছিলাম যে ফ্লাইট ন’টার আশেপাশে কোন একটা সময়। আমি টিকিট দেখে দেখি বোর্ডিং সাড়ে আটটায় । ফ্লাইট ন’টায় । এবার মহাঝাড়ি দিলাম আরব শালারে।”তুমি কি বোর্ডিং আর ফ্লাইটের মধ্যে পার্থক্য বোঝ ?” ঝাড়িশুনে আরেকজন এগিয়ে এল । আমি তখন মহা ফর্মে, ও ব্যাটাকেও ঝাড়ি দিলাম “তুমি কাকে ইমিগ্রেশনে বসিয়েছো ? যে বোর্ডিং আর ফ্লাইট টাইমের পার্থক্য বোঝে না ?” ব্যাটা তখন কাঁচুমাচু হয়ে তাড়াতাড়ি সিল মেরে ছেড়ে দিল। ঝাড়ি দিতে যে এত মজা , বিশেষ করে অশিক্ষিত আরব শালাগুলোরে , ঝানতাম না !!!!!!

বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন :
আমার সবচেয়ে মজার অভিজ্ঞতা হলো বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনে। সারা পৃথিবীতেই ইমিগ্রেশন অফিসারগুলো স্মার্ট, তরিৎকর্মা ও সাংঘাতিক চৌকষ হয় । একমাত্র বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনেই সবচেয়ে অথর্ব, বয়স্ক, চোখে দেখে না, কম্পিউটারের কিছুই জানেনা টাইপের অফিসারগুলোকে বসানো হয়। এরা আধাঘন্টা ধরে নাম টাইপ করে। চশমা উঁচু করে, তিনহাত দূরে নিয়ে পাসপোর্টের নাম পড়ে । যাইহোক, এক ইমিগ্রেশন অফিসারের কাছে পাসপোর্ট দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। সে অনেকক্ষন ধরে এক আঙ্গুলে কিবোর্ডে অক্ষর টাইপ করছে একটা একটা করে । হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে পাশের জনকে জিজ্ঞাসা করল, “খাদেম ভাই p অক্ষর কোথায় ? কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা তো।” পাশের জন মনে হয় এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় কম্পিউটার বিশারদ। কিন্তু তার উত্তর শুনে আমি কোন মতেই হাসি চেপে রাখতে পারলাম না। সে বেশ কনফিডেন্সের সাথে উত্তর দিল ,”আছে দেখেন, আমি একবার দেখছিলাম” !!!!!!!!!!!!!

১,৭৯৩ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “আমার ইমিগ্রেশন অভিজ্ঞটা (২)”

  1. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    ইন্ডিয়া যাবার সবচেয়ে ভাল উপায় হল কলকাতা হয়ে যাওয়া, ওদের ডোমেষ্টিক ফ্লাইট গুলা ফাটাফাটি, আর মাইয়াগুলাও বাইচ্ছা বাইচ্ছা সেই রকম, ডোমেষ্টিক যেহেতু, দিল্লি মুব্বাই কোথাও ইমিগ্রেশন এর ঝামেলা নাই।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  2. তাইফুর (৯২-৯৮)

    বাংলাদেশের 'সবুজ' পাঁচফুটেরও একটা মাইর আছে ভাই। আমাদের জাতি ভাইয়েরা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড যেই সুনাম কামাইছে ... অফিসিয়াল পাঁচফুট নিয়াও সুদান থেকে 'ওমরাহ্‌' করতে যাইতে পারতেছেনা লোকজন, এমনকি ইউএন-এর সার্টিফিকেট-এও কাজ হয় না। অগত্যা এই বছর অফিসিয়াল পাঁচফুটের কাভার চেঞ্জ করা হয়েছে।
    ইন্ডিয়া্নরাও অনেক দেশে সাবস্ট্যান্ডার্ড কাজ করলেও জাতিগত সম্মানটা ঠিকই ধরে রাখছে। আর আমাদের অবস্থা ?? ভাল ভাল অবস্থানে থেকেও আমরা সম্মান পাচ্ছি কই ??


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  3. হাসনাইন (৯৯-০৫)
    “খাদেম ভাই p অক্ষর কোথায় ? কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা তো।” পাশের জন মনে হয় এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় কম্পিউটার বিশারদ। কিন্তু তার উত্তর শুনে আমি কোন মতেই হাসি চেপে রাখতে পারলাম না। সে বেশ কনফিডেন্সের সাথে উত্তর দিল ,”আছে দেখেন, আমি একবার দেখছিলাম” !!!!!!!!!!!!!

    :khekz: :khekz: :khekz: :khekz:
    ভাই কি পড়াইলেন এইডা...। সিরুম... সিরুম... :boss:

    জবাব দিন
  4. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)
    আমি তখন মহা ফর্মে, ও ব্যাটাকেও ঝাড়ি দিলাম “তুমি কাকে ইমিগ্রেশনে বসিয়েছো ? যে বোর্ডিং আর ফ্লাইট টাইমের পার্থক্য বোঝে না ?” ব্যাটা তখন কাঁচুমাচু হয়ে তাড়াতাড়ি সিল মেরে ছেড়ে দিল।

    শাবাস... :clap: :clap: ।


    Life is Mad.

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : হাসনাইন (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।