ক্যাডেট কথিকাঃ পর্ব ১

নুসরাত ম্যাডাম পাটভাঙা সুতির শাড়ি পরতেন টানটান করে, সাথে ম্যাচিং লাল রঙের ব্লাউজ। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিকের রেখা, কপালে উদীয়মান সূর্যের মত একখানা টিপ গোটা মুখটি উজ্জ্বল করে রেখেছে। সাজপোশাক বলতে ঐটুকুনই। কলেজ চলাকালীন সময় ম্যাডামদের লালপেড়ে সাদা শাড়ি পরবার চল ছিল, অন্য সময়ে তাঁরা সিভিল জামাকাপড় পরতে পারতেন। ছিপছিপে পাতলা গড়নের ম্যাডাম হাঁটতেন ঝড়কে পেছন ফেলে, ঈষৎ ভেজা কন্ঠে তিনি কথা বলতেন স্পষ্ট উচ্চারণে। কাঁধ অব্দি লম্বা চুল টেনে বাঁধতেন পেছনে। তখন কতই বা বয়েস ছিল তাঁর; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বের হওয়ার পর উনি আমাদের কলেজে যোগদান করেন। আমাদের সামনে কথা বলতেন কম; হাসতেন অংক কষে! নুসরাত ম্যাডাম শাড়ি পরার ব্যাপারটিকে একেবারে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। ধোপাখানা থেকে আনা কড়কড়ে শাড়ি পরতেন; মনে হতো শাড়িটি তার গায়ে জড়িয়ে নেবার পর হয়তো ইস্ত্রি করা হয়েছে। আমরা তাকে ভয় পেতাম, ক্লাসে তিনি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে রীতিমত তোতলানো শুরু করে দিয়ে জানা উত্তরটিও গুবলেট পাকিয়ে ফেলতাম। ম্যাডামের ডাক নাম ছিল পান্না। আড়ালে আবডালে আমরা লুকিয়ে লুকিয়ে ছড়া কাটতাম,
আমাদের পান্না,
সুন্দরী কন্যা!
গাও তুমি গান না?
খাও তুমি পান না?
যার মুখোমুখি দাঁড়ালে শিরদাড়া বেয়ে একটি শীতল অনুভূতি হয়, তাকে নিয়ে আমাদের পর্দাহীন ঘরে আলোচনা চলে বেশ। ভয় আর তার রাশভারী ব্যক্তিত্ব সত্ত্বেও আমরা ছোটবড় প্রায় সবাই একযোগে ম্যাডামের প্রেমে পরে গেলাম!

নুসরাত ম্যাডাম আমাদের ভূগোল পড়াতেন। শিক্ষক হিসেবে তিনি ছিলেন প্রথম শ্রেণীর। ভূগোলের মত বিদঘুটে একটি বিষয়কে তিনি জলবৎ তরলং করে ফেললেন। সমুদ্র স্রোতের ছবি এঁকে গল্পের ছলে কত কিছু যে আমাদের বলতেন তার ইয়াত্তা নাই। ভূগোলের পাকে চক্করে পড়ে অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে কলেজের ছোট পুকুর পাড়ে দাঁড়ালেও আমাদের হামেশাই আটলান্টিক সমুদ্রস্রোতের কথা মনে পড়ে যায়।

উনিশে মার্চ, উনিশশো তিরাশি সালে আমরা অষ্টম, নবম আর দশম শ্রেণীর ক্যাডেটরা ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রথম দিন উপস্থিত হয়েছিলাম ইতিহাসের অংশীদার হতে। শুভানুধ্যায়ীরা কলেজের প্রথম দিন সম্পর্কে নানান ভয় ভীতি দেখিয়েছিল আমাদের। র্যাগিং এর কথাও শুনতে পেয়েছি কারো কারো মুখে। র্যাগিং এর ব্যাপারটি আমার কাছে অচেনা। বিদ্যাময়ী স্কুলে আমরা বছর বছর নবীন বরণ উৎসব করতাম নাচ গান করে। এর আগে র্যাগিং এর নামও শুনি নাই কারো মুখে, দেখবার তো প্রশ্নই আসেনা। বড়দের এসব কথাবার্তা শুনে আমার যে খানিক ভয় লাগেনা তা নয়। আমি গোবেচারা টাইপের মানুষ, নিজে কাউকে যন্ত্রনা দেই না বটে কিন্তু গায়ে পরে ঢিলটি ছুঁড়লে খুঁজে পেতে একখানা পাটকেল জোগাড় করতে মন চায় সাহস করে। শুভার্থীদের কারোর মাথায় আসে নাই যে র্যাগিং হবে কার সাথে অথবা কারাই বা র্যাগিং করবে! আমরা নবাগত ক্যাডেটরা বৈ তো আর কেউ নেই সেখানে। আমার কল্পনার ঢাল তরোয়াল শিকেয় তুলে রাখলাম আপাতত এবং শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে আমাদের কিছুই হলো না।

আমাদের অধ্যক্ষ করিমউদ্দীন আহমদ স্যার অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা। তিনি দেখতে সাক্ষাত রবীন্দ্রনাথ, মেধা ও মননে রবি ঠাকুর উচ্চতায় আসীন স্যারের ভূবনে। বয়োঃবৃদ্ধ এই মানুষটি এমজিসিসির সূচনালগ্নে নিজের সবটুকু অভিজ্ঞতা আর ভালবাসা ঢেলে আমাদের নতুন দিনের পথ দেখাতে এলেন। মাঝেমধ্যেই আজানুলম্বিত আচকান পরে হাজির হতেন আমাদের মাঝে। চোস্ত ইংরেজীতে ঠাকুরের আদর্শের ওপর স্যার দুই ঘন্টার একটি বক্তৃতা দিয়ে ফেলতেন অনায়াসেই। আমাদের তের বছরের অপরিপক্ব মগজে সেই জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতার কিছুই ঢুকতো না। আমরা অপেক্ষা করতাম কখন মিল্কব্রেকের ঘন্টা বাজবে আর আমাদের ছুটি মিলবে। ফৌজদারহাট, রাজশাহী আর মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে কয়েকজন অভিজ্ঞ শিক্ষক যোগ দিলেন আমাদের কলেজে, সেই সাথে নতুন কিছু শিক্ষকও এলেন আমাদের ‘মানুষ’ করতে।

সদ্য যোগদান করা দশম শ্রেণীর আপারা সিনিয়র মোস্ট ক্যাডেট, কাজেই তাঁদের কন্ঠস্বর খানিক উঁচু লয়ের। কলেজে সবার ছোট বিধায় আমরা প্রায় নমঃশুদ্র শ্রেণীভুক্ত; আমাদের অস্তিত্ব দৃশ্যমান বটে, কিন্তু আমাদের নিজেদের কোন ইচ্ছা অনিচ্ছা নাই। আমরা কল দেয়া পুতুলের মত বড়দের নির্দেশ পালন করি। অচিরেই অষ্টম শ্রেণীর ক্যাডেটরা মূর্তিমান সমস্যা রূপে আবির্ভূত হলো; তারা ডানে গেলেও বিড়ম্বনা, বাঁয়ে তাকালেও বড়দের হাঁকডাকে টেকা দায়।

কলেজে আমরা তিন বোন একযোগে তিন ক্লাসে ভর্তি হয়েছি। আমাদের মায়েরা পিঠেপিঠি বোন হলেও আমাদের পিতারা নীতি ও আদর্শে পরষ্পর বিপরিতমেরুর বাসিন্দা। তিন কন্যার মাঝে আমি সবার ছোট। কলেজ শুরুর প্রথমদিন আমরা তিনজন প্রায় অশ্রুবিহীন চোখে কলেজে এলাম। বাড়ির সবার জন্য যে মন কেমন করছেনা তা নয়। কৈশোরের সূচনালগ্নে মানুষ বোধকরি হঠাৎ নিজেকে বড় ভাবতে শুরু করে। চোখে যেন কোনভাবেই পানি না আসে তার জন্য প্রাণপনে চেষ্টা চালাই কিন্তু আমার মায়ের কারণে তা আর সম্ভব হয়নি শেষ অবধি। বাবা মা ভাইবোনের বহরের সাথে এলেন আত্মীয় পরিজনদের অনেকেই। সবাই না হলেও অনেকে ভাবছেন, মেয়েরা ‘অক্সফোর্ড’ নামের জুতা পরে কেমন করে চলাফেরা করে দেখতে হবে। অক্সফোর্ড শুয়ের গল্পটি পরে বলছি। আপাতত প্রথম দিনে ফিরে যাই। উর্দি পরা পাহারাওয়ালার ঘর পেরিয়ে কলেজে ঢুকতেই চোখ জুড়িয়ে গেল। কী সুন্দর ধবধবে সাদা দালানকোঠা, দেয়ালে কোন শ্লোগান লেখা নাই, কোন দলের পোস্টারও সাঁটা নাই। রাস্তার দুই পাশে গাছপালার গোড়ায় সাদা রঙের চুন পালিশ করা। একাডেমিক ব্লকের সামনের গোল চত্বরটি জুড়ে কেয়ারি করা ফুলের বাগান। নানা রঙের কসমস আর হলুদ গাঁদা ফুলের সমাহার সেখানে। চারদিকে বেশ একটা শান্ত সমাহিত ভাব। আমাদের কলেজটি শহরের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হলেও নগরীর কোলাহল থেকে মুক্ত।

বিদ্যাময়ী স্কুল থেকে আমরা তিনজন ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এসেছিলাম। এর মাঝে উর্মি আমার বন্ধু ছিল খুব। ও আমাদের ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল, আমার রোল নম্বর তিন হলেও আমাদের বন্ধুতা ছিল মজবুত। ওর বাবা ডাঃ আমির হোসেন আমাদের শহরের খ্যাতিমান চিকিৎসক। কলেজের রকম সকম দেখে উর্মি ব্যাপক কান্নাকাটি করতো। কাঁদতে কাঁদতে ওর ধবধবে ফর্সা নাক পাকাপাকিভাবে লাল হয়ে গেল। আমির চাচা তাঁর কন্যাটিকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাখার অনুরোধ জানিয়ে প্রায়শ চিঠি লিখতেন আমাকে। উর্মি থাকলে আমার নিজের দলটি ভারী হয় তাই আমারও চেষ্টার অন্ত ছিল না তাকে’দেখভাল’করে রাখার। শেষ অবধি উর্মির কান্নাকাটিতে চাচা ওকে বাড়ি নিয়ে যান। সে যাই হোক, নামধাম রেজিস্ট্রেশনের দীর্ঘ পালা শেষ হলে আমাদের হাউসে পাঠিয়ে দেয়া হলো। আমার স্থান হলো তিনতলার পেছনের ব্লকে; হাউসের নাম সদাচার।

আমাদের তিনটি হাউস। তিন হাউসের তিন রং। সদাচার হাউসের রং নীল, সত্য হাউসের সবুজ আর শান্তি হাউসের রং হলো লাল। বাড়ি থেকে আমরা সাদা সালোয়ার কামিজ আর ভাঁজ করা ওড়নার সাথে কাপড়ের সরু বেল্ট পরে এসেছিলাম কলেজে। পায়ে ক্যানভাস শু। আমাদের সময়ে মেয়েরা এমনিতেই কিশোর বয়সে সাজপোশাক করতো না। কলেজ থেকে বেশ কড়া ভাষাতে কোন প্রকার প্রসাধনসামগ্রী সাথে না রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল শুরুতেই। ক্লাস টেনের মিঠু আপা কেবল কাজল পরতো চোখে, কী সুন্দর দেখাতো আপাকে। এই নিয়ে এ্যাডজুটেন্ট স্যার একদিন খুব হৈচৈ করলেন; মিঠু আপা কান্না করলো খুব। আমাদের প্রায় সবার প্রসাধন বলতে ছিল ঠোঁটে মাখার হলুদ রঙের পমেটম আর দুধসাদা নিভিয়া অথবা পন্ডস কিংবা কারো কারো ছিল দেশী তিব্বত স্নো। আমি স্নো-পাউডারের খুব একটা পরোয়া করি না। আমার বিলাসিতা বলতে ছিল সুগন্ধী একখানা বিলাতী সাবান; ইয়ার্ডলী তার নাম।

লিখিত, মৌখিক এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার বৈতরণী পার হওয়ার পর আমাদের অভিভাবকদের কাছে বিশাল একখানা ফর্দ পাঠানো হয়েছিল কলেজ থেকে। সেখানে স্যানিটারী ন্যাপকিন থেকে শুরু করে বিছানার তোষকেরও উল্লেখ ছিল। ছিল ক্যানভাস শু রঙ করার সাদা চক, জুতাপালিশ, বালিশের কভার আর কাপড়কাচা সাবানও। বাবা স্বদেশী বাজারে গিয়ে তোষকের অর্ডার দিয়ে এলো জরুরী ভিত্তিতে। আগেই বলেছি, প্রস্তাবিত জিনিসপত্রের তালিকায় কালো রঙের অক্সফোর্ড শু ছিল। আমাদের ময়মনসিংহ শহরের সব ক’খানা দোকানপাট খুঁজেও এই বস্তুর সন্ধান পাওয়া গেল না। একজন দোকানদার উল্টো ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো, আম্মা এই জুতা পইরা কৈ যাইবো ভাইসাব? উপায়ান্তর না দেখে আমরা জুতসই জুতা কিনতে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করলাম। বলির পাঠা তিনবোন যাচ্ছি একসাথে; সংগে যাচ্ছে আমাদের বড় ভাই বাদল। যাবার আগে ভাইকে ডেকে বাবা বললো, তোষক ছাড়া ময়মনসিংহ থেকে আর কিছু কিনবো না, যত টাকা লাগে নিয়া যাও কিন্তু বাজারের সেরা জিনিসটা কিনো বোনের জন্য। আমরা ঢাকা থেকে ফিরলাম এক গাড়ী বোঝাই জিনিসপত্র নিয়ে।

খালা-চাচীরা দলবেঁধে ‘সদাইপাতি’ দেখতে বাসায় চলে এলো। বেশ একটা ঈদ ঈদ ভাব চারদিকে। বাড়িতে যখন তখন লোকজন আসছে, তাদের জন্য সাহারা বুয়া ট্রে সাজিয়ে চা নাস্তা পাঠাচ্ছে একের পর এক। এরই মাঝে শহরতলী থেকে খালু চলে এলো চটজলদি। অন্যদিনের মত আজ আমাকে দেখেই বললো না, আমার ধনু তো এইবার অংকে নব্বই পাইছে গো আম্মা; আপনে পাশ করবাইন তো? আজ খালুজানকে খানিকটা বিচলিত মনে হলো। ছোট একটি বালিকার সামান্য সাফল্য মেনে নিতে গিয়ে তিনি ভেতরে ভেতরে যে নিদারূণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন সেটি তার কালো মুখ আর ধূর্ত চোখে সুস্পষ্ট!

বড় আপা পৃথিবীর সবচাইতে রুপসী মানুষ। সুন্দরীদের মগজের গ্রে ম্যাটার সম্পর্কে জগতের অনেকে সন্দিগ্ধতা প্রকাশ করলেও আমার বোনের মেধার খ্যাতি শিশুকাল থেকেই সর্বজনবিদিত। রুপ আর গুণের মাত্রাতিরিক্ত সমন্বয়ের কারণে আত্মীয় মহলে তার বাড়তি খাতির আমাদের ছোটদের ঈর্ষার বস্তু ছিল। এখন ক্যাডেট কলেজে যাওয়া উপলক্ষে স্বজনেরা আমাকে গোণাগুন্তির মাঝে না ধরলেও টুপ করে ফেলে দিতে পারছেন না। ওস্তাদজী সুনীল ধরের থেকে খানিক আগে ছুটি নিয়ে আপা ব্যতিব্যস্ত হয়ে আমার ব্যাগপত্র গুছিয়ে দিচ্ছে। লাল মোড়কের তোষক যেদিন বাড়ি এলো সেদিন কলেজে যাবার প্রস্তুতি শেষ হলো। মা কেবল কয়েকদিন ধরে অকারণে প্রতিবেলা মুখে তুলে জোর করে খাইয়ে দেয়। মায়ের ধারণা, আমার পাখীর আহার। মা তার পাখীকে ভুলভুলাইয়া গল্প বলে ঠেসে খাওয়াচ্ছে মওকা পেয়ে। এমনিতেই খেতে আমার ভাল লাগেনা; এখন আরো অসহ্য লাগছে বাড়তি আদর!

আমাদের ডাইনিং হলটি তখনো তৈরী করা হয়নি। শুরুর দিনগুলোতে আমরা হাউসের নীচতলায় অস্থায়ী খাবার ঘরে খেতে যেতাম। পিঁপড়ের মত সারি বেঁধে খেতে এসে দেখি রুমমেট মিলি আপা আমার টেবিলে বসেছেন। বয়সে আপা আমাদের বড় তাই তিনি হলেন আমাদের টেবিল লিডার। একজন সিনিয়র আপা চেঁচিয়ে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বললে আমাদেরও বলতে হলো, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আমরা মুসলমান ক্যাডেটরা যখন খাওয়ার আগে আল্লা-খোদার নাম নিচ্ছি সশব্দে তখন আমার ময়মনসিংহের বন্ধু কাকলী সরকার কিংবা ডর্মমেট সংগীতা বড়ুয়া আপা কি বলছে মনেমনে? সে যা’ই হোক, আমি ছোট মানুষ, আমার চুপচাপ থাকাই শ্রেয়। এখানে ছোটরা কেবল শুনবে; বলবার অধিকার কেবল বড়দের। টেবিল লিডার আপা খাওয়া শুরু করলে আমরা খেতে পাই। বড় ডিশে মুরগীর ঝোল থাকে টেবিলে; উনি আমাদের পাতে মাংস তুলে দেন। আপার কড়া নজর চারদিকে। সবাইকে দিয়ে থুয়ে নিজে খাবার নেন প্লেটে। আমাদের সবার জন্য আলাদা আলাদা সব্জীর বাটি থাকে খাবার প্লেটের পাশে। খানাপিনায় আমার মন নাই কোন কালে; বাড়িতে আমার খানা বলতে ছিল আধা টুকরা মুরগীর মাংস আর খানিক সাদা ভাত, শাক লতাতন্তুর আশেপাশে ছিলাম না আমি। কলেজে এসে অবধি আধা সেদ্ধ সব্জীর অত্যাচারে জীবন অতীষ্ঠ হয়ে উঠলো। অনেক টেবিলে দেখি টেবিল কর্তা আপা নিজেরা শাকসবজি খান না, ছোটরা কে কি খেলো তা নিয়েও তাদের মাথা ব্যথা নাই। আমার ‘ছিষ্টিছারা’ মিলি আপা শাকপাতা খাওয়া নিয়ে আতংকগ্রস্ত করে রাখে সবাইকে। এমনিতে তিনি নিপাট ভাল মানুষ। রুমে আমরা বাড়ি থেকে লুকিয়ে আনা চানাচুর ভাগাভাগি করে খাই, পাশপাশি বিছানায় শুয়ে কুটুরকুটুর গল্প করি রাত জেগে কিন্তু ডাইনিং হলে গেলে আপার অন্য রূপ, ভাবখানা এমন যে আমাকে চেনে না। আপা ভাঙা রেকর্ডের মত বলে, গাজর খেলে গাজরের মত সুন্দর হবে, বাধাকপিতে ক্ষুরধার হবে বুদ্ধি আর তেতো করলা খেলে অসুখবিসুখ দৌড়ে পালাবে। আপার কোন কথা আমার কানে যায় না, আপাকে আমার বিষাক্ত মানুষ মনেহয়।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন আমাদের জন্য পরোটা আর ডিম ভাজা বরাদ্দ ছিল। মাঝেমধ্যে বাড়িতে ঘিয়ে ভাজা পরোটা আমার বেশ লাগতো খেতে। মেঘ মেঘ ছুটির দিনে বেশ ফুরফুরে মনে ব্রেকফাস্টে গেলাম। আজ পরোটার সাথে ডিম পোচ দিয়েছে, সাথে চা তো আছেই। আমি দুই হাতে মাখামাখি করে পরোটা ছিঁড়ে মুখে চালান করছি, সাথে ঠান্ডা ডিম। মিলি আপার সাথে চোখাচোখি হতেই আপা চোখ গোল গোল করে বললো, এই মেয়ে তোমার খাওয়ায় কোন আর্ট নাই দেখি; এইভাবে কেউ খায়?

৮,০১২ বার দেখা হয়েছে

৩৩ টি মন্তব্য : “ক্যাডেট কথিকাঃ পর্ব ১”

  1. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    চাকুরী জীবনের শেষের দিকে ময়মনসিংহে তিন বছর ছিলাম। সে সময়ে একবার এমজিসিসি'র বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখি তখনকার অধ্যক্ষ ছিলেন এমএনবি জামালী ভাই, যিনি আমাদের কলেজে আমাদের হাউজে আমারই পাশের রুমে একসময় থাকতেন। খুবই নিরীহ গোবেচারা মানুষ ছিলেন। তখন তার মানসিক অবস্থা ভাল ছিলনা, কারণ তার স্ত্রী কিছুদিন আগে ক্যান্সারাক্রান্ত বলে সনাক্ত হয়েছিলেন।
    অনেকদিন পর একটা পোস্ট দিলে। বরাবরের মতই পড়ে খুব আনন্দ পেলাম। এটা কি সিরিজ আকারে চলবে?
    ভালো লাগা কিছু কথাঃ
    *ছিপছিপে পাতলা গড়নের ম্যাডাম হাঁটতেন ঝড়কে পেছন ফেলে
    *আমাদের সামনে কথা বলতেন কম; হাসতেন অংক কষে!
    *ভূগোলের পাকে চক্করে পড়ে অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে কলেজের ছোট পুকুর পাড়ে দাঁড়ালেও আমাদের হামেশাই আটলান্টিক সমুদ্রস্রোতের কথা মনে পড়ে যায়। (এখানে এসে আমার মাসুদ হাসান স্যারের "কামচাটকা কারেন্ট" কথাটা মনে পড়ে গেল)।
    *মা কেবল কয়েকদিন ধরে অকারণে প্রতিবেলা মুখে তুলে জোর করে খাইয়ে দেয়। (আমি প্রথম ক্যাডেট কলেজে যাবার দিন আমার গলা দিয়ে কিছুই যেন নামছিল না)।
    *এই মেয়ে তোমার খাওয়ায় কোন আর্ট নাই দেখি; এইভাবে কেউ খায়? (আমার প্রথম টেবিল ক্যাপ্টেন ছিলেন জি এম ফাহিম হোসেন ভাই। সেই তখন থেকেই একজন পারফেক্ট জেন্টেলম্যান)
    এলবাম ঘেঁটে সে সময়কার কিছু ছবি দিতে পারলে ভাল হতো।
    তোমরা যখন পড়েছো, তখন পড়ানোর মাধ্যম কি ইংরেজী ছিল, না বাংলা?

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂

      দুই মহাদেশে বসে আমি আর লুবনা হামেশাই কলেজের নানা কথা মনে করে হাসাহাসি করি। কত হারিয়ে যাওয়া মুখ আমাদের গল্পে ফিরে ফিরে আসে! লুবনা ফোন রাখার আগে গতকাল পিড়াপিড়ি করলো লিখবার জন্য। অবশেষে লিখেই ফেললাম। পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি না ঘটলে এটি ধারাবাহিক ভাবে লেখার পরিকল্পনা আছে আপাতত।

      ফোনে টেপাটিপি করে লিখে ফোনে ফোনেই পোস্ট করা হলো বলে ছবি দিতে পারিনি। আমার গুপ্ত কুঠরিতে এখনো অনেক ছবি জমা আছে। সেখান থেকে পরবর্তী লেখাগুলোতে ছবি জুড়ে দিবো অবশ্যই।

      বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করেছি। ওস্তাদজীরা বাংলাতেই কম্যান্ড দিতেন। 'ডাইনে ঘুর', 'সামনে দেখ' এর পাকেচক্করে যে জীবন শুরু হয়েছিল তাতে নিয়মানুবর্তিতা শিখবার চাইতে অজানা কিছু জানবার, এক্সপ্লোর করবার আনন্দও কম ছিল না!

      সিসিবিতে লিখি বা না লিখি 'আমি তোমাদেরই লোক', কবি। দিনশেষে সিসিবিতে ঢু না দিলে ঘুম আসে না।

      আপনার মন্তব্য বরাবরের মত উৎসাহব্যন্জক। অনেক ধন্যবাদ আমার লেখাটি পড়বার জন্য।

      জবাব দিন
  2. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    আর্ট নাই দেখি সেই ছোটবেলা থেকেই। তাইতো বলি এমন ঝরঝরে টানা গদ্যে সেইসব সুবর্ণ অতীত খোঁড়াখুঁড়ি করাটা নাহয় করা হলো কেমন করে !
    আর্ট টার্ট তো দূর, মনে হচ্ছে কলমে ছুরি টুরি কিছু লাগানো .....
    😀 😀 😀

    জবাব দিন
  3. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    এর আগে খাবার দাবার নিয়ে তোমার লেখা বেশ কয়েকটা সুপাঠ্য পোস্ট পড়েছিলাম বলে মনে পড়ে। সেগুলো পড়ে একটা ধারণা পেয়েছিলাম, যে মেয়ের সেই সে দিনে খাওয়ায় কোন আর্ট ছিল না, খাবার পরিবেশনা আর মানুষকে খাওয়ানোর ব্যাপারে তার অসাধারণ শৈলী ও রুচিবোধ অনেকের ঈর্ষার কারণ হতে পারে।

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂

      শৈশবে, কৈশোরে এমনকি যৌবনের বহুদিন পর্যন্ত আমি স্বল্পাহারী মানুষ ছিলাম। দেশে থাকাকালীন সময়ে মা খালাদের প্রশ্রয় পেয়ে নষ্টমতি ছিলাম; আমি না খেলে তাঁরাই নানা বাহানায় মুখে তুলে খাইয়ে দিতেন। প্রবাসে এসে সব আহ্লাদীপনা চুকলো। এখানে খেতে হলে আগে বাজার করতে হয়, তারপর রাঁধতে হয়, তবেই না আহার জোটে টেবিলে। এখন আমার মুখে রুচির কমতি নেই; ক্যালরীর যোগ বিয়োগের হিসাব করতে করতে সময় কাটে। তবে বন্ধুদের খাওয়াতে ভালবাসি খুব।

      জবাব দিন
  4. আপা দারুন লিখেছেন , আমি তো আপনার লেখার ভক্ত . পড়ার সময় বার বার স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ছিলাম . ধন্যবাদ আমাকে স্মৃতির গলি থেকে ঘুরিয়ে আনার জন্য . পরবর্তী লেখার জন্য অপেক্ষা করছি .

    জবাব দিন
  5. ঝর্ণা ম্যাডামের লম্বা ছিপ ছিপে গড়ন ...পাট ভাঙা লাল সাদা শাড়ি , লম্বা বেণী .... কত কথা মনে করে দিলেন ... একরাতে সবাইকে নিচে নামিয়ে আনা হলো ডিউটি ক্যাডেট কে দেয়া নাইট কুইন দেখানোর জন্য ...সেই প্রথম জেনেছিলাম এই ফুল টার কথা....ধুলো জমা স্মৃতিতে একটু ঘষা মাজা করে দিলেন .....love it!

    জবাব দিন
  6. প্রথমে এক নিশ্বাসে পড়ে নিলাম। দ্বিতীয়বার ধীরেসুস্থে পড়লাম। নিচে চলবে লিখতে হবে,কারণ আমাদের কলেজ জীবন ছিলো ৫ বছরের,সবকিছু আবার মনে করিয়ে দিয়ে একবারের এই লেখাতে থেমে থাকলে চলবে না। আমাদের সবার ভালো লাগবে জানি এই লেখাটা পড়ে। নুসরাত ম্যাডাম এখনো সেই ডিসেণ্ট টাইপের আর মমতাময়ী আছেন। কলেজের রিইউনিয়নে অনেক বছর বাদে দেখা হলে উনি আমাদের জড়িয়ে ধরে আদর করতে কার্পণ্য বোধ করেন নাই। ম্যাডামের সংস্পর্শে থাকতে আমরাও ভূগোল ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। আমাদের ইট সিমেণ্ট দিয়ে তৈরিকৃত বাংলাদেশের ম্যাপটা এখনো কলেজে আছে দেখে খুবই ভালো লেগেছে। মফস্বল শহরে অক্সফোর্ড শু আমার পায়ের মাপে পাওয়াই যায়নাই। পরে মুচিকে দিয়ে ওই টাইপের জুতা আমাকে বানিয়ে দিলেন আমার বাবা। আমিও প্রথম কদিন লুকায়ে লুকায়ে অনেক কেঁদেছি। তবে পরে হাউজের অনেকের সাথে,রুমমেটদের সাথে মিশে গেলাম। আমরা জুনিয়র ছিলাম বলে ভয়ে ভয়েই থাকতাম। করলা ভাজি,শাক খাওয়া কলেজ জীবনে শিখেছি। কলেজ আমাদের অন্যপ্রকার জীবন দিয়েছে। তখন ওই জীবনটা দুঃসহ মনে হলেও আজ মনে হচ্ছে ওই জীবনটা মন্দ ছিলোনা। সাবিনা তুই অনেক সুন্দরতম উপায়ে আবার আমাদের ওই জীবনে ক্ষনিক সময়ে জন্যে হলেও নিয়ে গেলি। আরো পড়ার জন্যে অপেক্ষায় রইলাম বন্ধু।

    জবাব দিন
  7. সবে মাত্র ডিল্পোমা শেষ করেছি, জ্ঞানের পরিধি নিতান্তই ছোট। জ্ঞান আহরনের ইস্পিহা অত্যাথিক থাকলেও এর জন্য বিন্দু মাত্র কর্ম করিনা। দিবা-রাত্রির অবশিষ্ট সময় (অফিস টাইম বাদ দিয়ে) প্রযুক্তির আবিষ্কার ইমো,ফেসবুক,ম্যান্সেজারে কথোপকথন আর কিছু ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখে পার করি। ভাল কিছু কথা ভাল কিছু গল্প দেখা হয়না কখনো । আজ আনলাইন পত্রিকা পড়তে এসে ক্যাডেট কলেজ ব্লগ এ ঢুকে আপনার পোষ্টটি পড়ে খুব ভাল লাগলো আর আমার জ্ঞান আহরনের যাত্রাও শুরু হলো । আর এই যাত্রার প্রথম কর্ম হলো ধোর্য্য ধারণ করে আপনার পোষ্টে আমার উক্তিটি লেখা...!!
    জ্ঞান আহরনের জন্য আমি প্রতিদিন “ক্যাডেট কলেজ ব্লগ” এ যথাসম্ভব বিচরণ করব।

    জবাব দিন
  8. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    আশরাফ আলী স্যার যখন বদলি হয়ে তোমাদের ওখানে যাচ্ছেন, দেশের প্রথম গার্লস ক্যাডেট কলেজটি স্থাপন করতে, আমরা তখন বোধহয় টেনে।
    ফেয়ারওয়েল ডিনার শেষ স্যারের সাথে হালকা আলাপ হচ্ছিলো।
    জানতে চাইলাম, "আমাদের তো আর্মির উপযুক্ত করে তৈরী করা হয়, ওদের কি করা হবে?"
    স্যার বললেন, "গার্লস ক্যাডেট কলেজ করা হচ্ছে জ্ঞানী ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারি মা তৈরী করার জন্য"।
    সেই থেকে কোনো গার্ল ক্যাডেট দেখলেই আমি তাঁর মধ্যে একজন জ্ঞানী ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারি মাকে খুজি।
    কাজটা কি ঠিক???


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      জ্ঞানী ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী মা খালা তৈরীর উদ্দেশে গার্লস ক্যাডেট কলেজ স্থাপন করা হয়েছে এমন উদ্ভট কথা এই প্রথমবারের মতো শুনলাম!

      কেবল মাত্র মা খালা তৈরী করবার জন্য বাংলাদেশ সরকার কেন এতো টাকা পয়সা ব্যয় করবে সেটি বোধগম্য হলোনা। কলেজে অবস্থানকালীন সময়ে এমন আজগুবি ধ্যান ধারণার কথা কেবল আশরাফ আলী স্যার নয় অন্য কারো মুখেও শুনেছি বলে মনে করতে পারিনা। উপযুক্ত মা খালা তৈরির জন্য আমাদের কোন কারিকুলাম ছিল না। আমরা রবি ঠাকুরের আদর্শের ওপর ঘন্টার পর ঘন্টা বক্তৃতা শুনেছি, গান শিখেছি, ফটোগ্রাফি করেছি, পড়াশোনা করেছি, ব্যান্ড বাজিয়েছি, প্যারেড করেছি, নানারকম খেলাধূলা করেছি, ডিবেট করেছি, সাহিত্য চর্চা করেছি, হাতে লিখে পত্রিকা বের করেছি, লিডারশীপের দীক্ষা নিয়েছি কিন্তু সন্তানপালন কিংবা ঘর গৃহস্থালির কোন শিক্ষা ক্যাডেট কলেজ থেকে পেয়েছি বলে জানা নাই।

      মাতৃত্ব মেয়েদের সহজাত বৈশিষ্ট্য। কে কেমন মা হবে কিংবা সে আদৌ মা হবে কিনা সেটি একান্ত ব্যক্তিগত রুচি ও পছন্দের ওপর নির্ভর করে। ইনফ্যাক্ট আমাদের মা খালারা ক্যাডেট কলেজে না পড়েই সারা জীবন যে কর্মকুশলতা দেখিয়েছেন তার তুলনায় আমরা নস্যি!

      আমি ধরে নিচ্ছি এটি স্যারের একান্ত নিজস্ব অনুভব। আশরাফ আলী স্যারের কন্যা কলেজে আমাদের দুই বছরের সিনিয়র ছিলেন।

      ভাইয়া, অনেক ধন্যবাদ আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য। ভাল আছো আশাকরি।

      জবাব দিন
        • পারভেজ (৭৮-৮৪)

          আগেও দুঃখ প্রকাশ করেছি। আবারো করছি।
          এখন উদ্ভট শোনালেও করার কিছু নাই।
          এটা যদি ঘটেও থাকে, তা ঘটে গেছে গার্লস ক্যাডেট কলেজ শুরু হবারও আগে।
          একটা জিনিষ ঘটবার আগে এরকম উদ্ভট ঘটনা ঘটাটা অস্বাভাবিক কিছু না।
          কিন্তু সেটা ক্যারি ফরওয়ার্ড করাটা ভুল।
          সেই ভুলটা যে করা হয় নাই, সেটাই বড় কথা।


          Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

          জবাব দিন
      • পারভেজ (৭৮-৮৪)

        ক্রোধের কারন হবার জন্য দুঃখিত।
        কিশোর বয়সে শোনা সেই "হেলদি এন্ড ওয়াইজ মাদার"-এর ঘটনাটা তখন খুব থ্রিলিং মনে হয়েছিল।
        কিন্তু পরবর্তিকালে বুঝেছিলাম, সেটা ছিল একটা জেন্ডার স্টেরিওটাইপিং।
        আর তা নিয়ে একটা মন খচখচ করা অনুভুতি দীর্ঘদিন ধরেই ছিল।
        আজ জানলাম, সেরকম কোনো কিছুর বাস্তব প্রয়োগ আসলে হয় নাই।
        ডিস্টার্বেন্স ক্রিয়েট করার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
        আবার মনের খচখচানিটা দূর করে দেবার জন্য কৃতজ্ঞতায় আপ্লুত।

        লিখাটা চমৎকার হয়েছে।
        পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম.........


        Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

        জবাব দিন
        • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

          হায়! হায়!! বলো কী ভাইয়া! ক্রোধপূর্ণ কোন আলোচনা তো হয় নাই এখানে! আর তোমার প্রতি রাগ টাগের তো প্রশ্নই ওঠে না। তোমার মত উদারচেতা মানুষ এমন ভাবনাশূন্য কথাবার্তা যে বলবেন না সেটি আমি নিশ্চিত। তোমার একজন শিক্ষকের কথা তুমি কোট করেছো, এখানে তোমার তো কোন ভূমিকা নাই। আমি খানিকটা অবাক হয়েছিলাম স্যারের অভিমত জানতে পেরে।

          এই লেখাটি চলবে আরো কিছুদিন। ভাল থেকো। পড়বার জন্য আবারও ধন্যবাদ।

          জবাব দিন
          • পারভেজ (৭৮-৮৪)

            আমার উপর রাগান্বিত হয়েছো, সেটা বলতে চাই নাই।
            কিন্তু আমার কথাগুলা যথেষ্ট বিরক্তির উদ্রেক যে করেছে, সেটা বুঝেই ক্ষমা চেয়ে নিলাম।
            তুমি খুব ভাল মানুষতো, তাই আবার এত দ্রুত সহজ হতে পেরেছো।
            অনেকেই কিন্তু এটা মনে পুষে রেখে দীর্ঘদিন জ্বালাতন করে যেত...
            সহজ হতে পারায় ধন্যবাদ।
            যা বলেছি, একটা চ্যাপ্টার বন্ধ করার জন্য।
            এই বিষয়টা আর কখনো আমাকে জ্বালাবে না।
            অন্য কাউকেও আর এই বিষয়টা নিয়ে জ্বালাতন করবো না।
            :boss: :boss: :boss:


            Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

            জবাব দিন
  9. মাহমুদুল (২০০০-০৬)

    অনেকদিন পর ব্লগে ঢুকলাম। ভোর ৪.২৮। মনে হচ্ছে বাকী পর্বগুলো শেষ না করে উঠতে পারবো না। কি চমৎকার করে লিখে ফেলেন। আগেও আপনাকে বলেছি, আপনার লেখা দেখে আমার ঈর্ষা হয়। লেখা পড়ে কেমন জানি একটা ঝরঝরে অনুভূতি হয়। শুরু করলে ফুড়ুৎ করে শেষ হয়ে যায়। আরো বড় লেখা চাই আপু।

    একটা ক্যাডেট কলেজের জন্মলগ্নের স্বাক্ষী হয়েছি মনে হচ্ছে। 🙂 যাই পরের গুলো পড়ি।


    মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।