রিইউনিয়নঃ সুন্দর তুমি চক্ষু ভরিয়া এনেছো অশ্রুজল

স্মৃতিরা হলো ঝুলিতে রাখা আহ্লাদী বেড়ালছানার মত; এমনিতে গুটিসুঁটি মেরে সুবোধ বালিকার মত চুপচাপ থাকে কিন্তু একটু নড়াচড়া করলেই আলতো করে সে মাথা উঁচিয়ে নিজের অবস্থান জানান দিয়ে বলে, মিঁয়াও মিঁয়াও! তারপর সেই মিঁয়াও ধ্বনির সাথে সকরুণ বিল্লি পিটপিট চোখে এমন করে তাকায় যে তখন সংসার সন্তান সব ফেলে তার মুখে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতে মন চায়! আমাদের কলেজের রিইউনিয়নের আলোচনা শুরু হতে আমার সেই তুলতুলে সাদা বেড়ালবাচ্চার কথাই মনে পড়লো!

বন্ধুদের মাঝে চাপা উচ্ছাস লক্ষ্য করি, কেউ হাউসের নীল রঙের সাথে ম্যাচ করে নীলাম্বরী শাড়ি আর টিপ কেনে আবার কেউবা পেডিকিউর করতে ছোটে পারসোনাতে। অনেকেই দেখি উপহার কিনছে পুরনো সারথির জন্য; অনেকের কেনাকাটার লিস্টিতে সুরাইয়া বুয়া আর অনুদিও আছেন দেখি। কেউ একজন আমাদের বাবুর্চি লিয়াকত ভায়ের পাত্তা লাগায় দেখতে পাই! জহির মামার সাথে যোগাযোগ করে কেউ কেউ। আমাদের প্রিয় হাফিজ স্যার আর ভাবী আসবেন তো আমাদের এই মিলনমেলায়; কত কী ভাবনা সবার! এদিকে লুবনা প্রথম থেকেই মোড়ামুড়ি শুরু করে ‘শরীর ভাল নয়’ এর অজুহাতে। ইতি আপা, নীরা আর আমি জোরসে উঠে পড়ে লাগি ওর পেছনে! ঢাকা থেকে একশ কুড়ি কিলোমিটার দূরের পথটি যে মাখন কোমল নয় সেটি কে না জানে।

চব্বিশ তারিখের কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে বাসে থিতু হয়ে বসেই লুবনা কল করে। একসাথে প্রায় সবাই কথা বলছিল বলে কারো কথা কেউ শুনছে বলে মনে হচ্ছিল না। এত হট্টগোলের মাঝে আবার অপ্সরা ছোট্ট করে বলে, তুমি কোথায় সাবিনা? মা বললো সাবিনাও যাবে সাথে। আমি চেঁচিয়ে বলি, তোমরা এগোও, আমিও আসছি! ঐ তো আমাদের সাদা রঙের একাডেমিক বিল্ডিং, স্পষ্ট দেখতে পাই আমার প্রিয় নুসরাত ম্যাডাম সমুদ্র স্রোত পড়াচ্ছেন। রাবেয়া ম্যাডামের সুরেলা কন্ঠে কালের যাত্রার ধ্বনি শুনতে পাই, রকিমুন্নেসা ম্যাডাম ঐ তো হেঁটে গেলেন করিডোর দিয়ে! দৃষ্টি প্রসারিত করতেই দেখি আকাশের চূড়োয় ঐ যে আমাদের নীল হাউস। আহ!

তের বছর বয়সে সজল চোখে একটি জলপাই সবুজ চত্বরে সেই যে প্রবেশ করেছিলাম আজ অবধি এমন একটি দিন যায় নাই যখন এর কথা মনে পড়ে নাই! একাডেমিক ব্লক পেরিয়ে ঐ যে ডাইনিং হল দেখা যাচ্ছে আর ঐ যে আমাদের প্যারেড গ্রাউন্ড! আমার বাড়ি ছিল সদাচার হাউসে, তিন তলায়। গেমস শেষে আমরা পড়িমরি করে ছুট লাগাতাম বাথরুম দখল করবো বলে। লুবনা রোগাপটকা টাইপের মানুষ, এর জুতো খুলে, ওকে পাশ কাটিয়ে ঠিকই সবার আগে বাথরুমের দখল নিতো প্রায় দিন। কদাচিৎ যদি দখলদারদের মালিকানা বদলে যেতো তবে লুবনা বাইরে থেকে বাথরুমের আলোটি নিভিয়ে দিয়ে ভাল মানুষের মত চুপচাপ বসে আকাশ দেখতো! মিলি আপার সব কিছুই ছিল শৈল্পিক। আহ্লাদের আতিশয্যে আমার দুই বছরের বড় আপাকে নাম ধরে ডাকতাম আমি। আপার কারণে আমাদের রুমটি কতবার যে হাউসের বেস্ট রুম হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে! হারিয়ে যাওয়া কত পরিচিত প্রিয় মুখ দেখতে পেলাম এই পূনর্মিলনী উপলক্ষে। ফিরতি পথে তাসকিনা আপা কথা বলতে বলতে আবেগতাড়িত হয়ে পড়লেন। সদ্য বিবাহিত সুমনা আপুর ঝলমলে মুখের ছবি দেখে কেমন যে নেশা লাগে চোখে! ছোট বোন সীমার সীমাহীন উদ্যমশীলতা, তানিয়ার কর্মকুশলতার সাথে বিনম্র সম্ভাষণ শুনে ভাল লাগে। ঐ তো নাজু বল ড্রিবলিং করছে গ্রাউন্ডে, ছিপছিপে চম্পা ছুটছে ওর পিছু পিছু। ডাইনিং হলে লুনা যথাসম্ভব গম্ভীর হয়ে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বলে খাবার খেতে আহ্বান করছে ক্যাডেটদের।

আমাদের বন্ধু দেলোয়ারা বেগম এখন এমজিসিসির শিক্ষক। রিইউনিয়নের প্রথম দিন ও ছিল ডিউটি মাস্টার। কলেজ অথরিটি হিসেবে বন্ধুদের সবার দেখভাল করেছে ও। রাতে আমরা আড্ডা দিয়েছিলাম স্কাইপে। সদাচার হাউসের কোণার রুমটি ছিল প্রিফেক্টদের; আমি আর কলেজ প্রিফেক্ট সোমা থাকতাম সেখানে। সোমা ছিল আমাদের সময়কার সেরা শিল্পী; কত রাতে শুয়ে শুয়ে ওর জাদুকরী কন্ঠের গান শুনেছি! আমার বিছানাপত্র যেখানে ছিল; সেখানে দেখি মস্ত বড় একখানা লোহার আলমারি রাখা। ক্যাডেটদের রুমে লোহার আলমারি কেনো তাই ভাবছিলাম। খাটটি লম্বালম্বি করে রাখা জানালার পাশে। এই জানালা দিয়ে আমি আর সোমা স্টার এনপি ২৬০৫ (নম্বরটি ভুল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল; কে না জানে স্মৃতির মত প্রতারক আর কেউ নয়!) এর সাথে কথা বলতাম। লুবনা আমার রুমে গিয়ে এইচপি’র সাথে গল্প করে ছবি তুলে নিয়ে এলো।

স্টার এনপি ২৬০৫ এর ব্যাপারটি খুলেই বলি তবে। মাসুমা, পপি, দীপা, অনু, অন্তরা আর টুম্পার বন্ধুতা ছিল খুবই। ওদের নামের আদ্যক্ষর আর ক্যাডেট নাম্বারের যোগফল হলো স্টার এনপি ২৬০৫। সামান্য কাজে বা অকাজে আমি বা সোমা ওদের ডেকে পাঠালে নিজেদের ধন্য মনে করতো ওরা। আমরা হাই টেবিল থেকে ওদের খাবার পাঠাতাম। পপি ছিল ওদের ব্যাচের শিল্পী মানুষ, দারুণ সব পোট্রেট আঁকতো ও। ওর হাতের লেখা ছিল মুক্তোদানার চাইতেও সুন্দর। কলেজের দেয়াল পত্রিকা কতবার যে ওর হস্তাক্ষর পেয়ে ধন্য হয়েছে। হিপ রিপলেসমেন্টের পর হাসপাতাল থেকে মাস দুই আগে অন্তরা কল করেছিল। ব্রেস্ট ক্যান্সারের আগ্রাসী ছোবলে ক্লান্ত আমার ডাক্তার বোনটি ম্রিয়মাণ কন্ঠে বলেছিল, বাইরের সব কোলাহল মিছে মনেহয়। সবই আছে আগের মত, কেবল আমার জীবনটাই বদলে গেল চিরকালের জন্য। অন্তরার কথা শুনে নিজেকে বড় অপরাধী মনেহলো। একই বাগানে আদরে সোহাগে জড়াজড়ি করে আমরা বেড়ে উঠেছিলাম এমজিসিসিতে। ফুলে ও ফসলে আমাদের অধিকাংশেই সুরভি ছড়ালেও সম্ভাবনাময় কত ফুল যে অকালে জরাগ্রস্ত হয়েছে তার হিসেব কেইবা রেখেছে! রিইউনিয়নের ডামাডোলে সবার অন্তরালের অন্তরাকে মনে পড়লো খুব। স্কাইপের পর্দাবিহীন থিয়েটারে যা দেখতে পাইনি তার চাইতে বহুগুণ বেশী ছবি দেখতে পেয়েছি মনের আরশীতে! এই জগত হলো মায়ার খেলা। অপ্সরা যখন পাউটি মুখে বলে তুমি কবে আসবা; তখন ওর চোখের তারায় যে ঝিলিক খেলা করে তার নাম মায়া। জলপৃষ্ঠ থেকে তারকাময় আকাশে যখন ভ্রমণ করেছি; নীচে ধানের শীষ যখন ক্ষুদ্রকায় হতে হতে বিন্দুরেখায় পরিনত হয়েছে তখন সীমাহীন শূণ্যতার মাঝে একমাত্রিক পূর্ণতা ছিল মানুষের শর্তবিহীন ভালবাসা। এমজিসিসির আমার সব বন্ধু, ছোটবোন ও প্রিয় আপা, ফ্যাকাল্টি কিংবা অনুদির জন্য সুদূরের এই মানুষটির চোখে তিরতির যে জলবিন্দু খেলেছে বিগত কয়েকদিন তার অপর নামও মায়া!

কান্তির প্রমিত বাংলায় কথোপকথন শুনতে পেলাম কতদিন পর। ও ছোটবেলা থেকেই আমাদের অঘোষিত অভিভাবক ছিল। ভার্চুয়াল গলা ধরে ও এমন ভালবেসে নিমন্ত্রণ করেছে যে কান্তির বাড়ি এবার যেতেই হবে! বুলার সাথে কলেজ থেকে বেরিয়ে কথা বলেছি বলে মনে পড়ে না। বুলা চুপচাপ ছিল কলেজে; বহুদিন পর ওর স্থিতধি কন্ঠের আন্তরিকতা টের পাই হাজার মাইল দূরে থেকেও। রিইউনিয়নের প্রথম দিন ছিল শিল্পীর জন্মদিন। আমরা হৈচৈ করে ওকে উইশ করছিলাম আর ও ঠিক আগের মত পাখির উষ্ণতায় গল্প করেছে সবার সাথে। লুনা আর ঝুমুর সাথেও হট্টগোলের ভীড়ে গল্প হয়েছে বাসে। সদাহাস্য বাবলির নজরকাড়া রূপসুধার সাথে ওর ভালবাসা আর আন্তরিকতার ছবিটি বেড়ে লাগে আমার।

লুবনা আমাদের পিড়াপিড়িতে রিইউনিয়নে গেল সতি্য কিন্তু ওর আচার আচরণ দেখে মনেহলো ওর রিইউনিয়নটা শেষমেশ আমার সাথেই হলো! কত বার যে কল করেছে ও! মাইলসের গান থেকে শুরু করে বাথরুমের নতুন কমোড সবই তো দেখা হলো ওর বদৌলতে! অডিটোরিয়ামে গিয়ে তার অডিটরি/ভি্যজুয়াল হ্যালুসিনেশন হতে লাগলো! বর্তমানের বাচ্চা ক্যাডেট থেকে শুরু করে প্রাচীনতম এক্স ক্যাডেট যার হাতেই মাইক্রোফোন থাকুক না কেন আমার বন্ধু তার কল্পনার মানসচোখে সেখানে আমাকে দেখতে লাগলো! শুধু দেখলে না হয় হতো; সে তো দেখে আর কাঁদে! আমাদের চোখ হলো মনের সবচাইতে বড় মোটিফ; অতি ক্ষুদ্রকায় এই মোটিফ ভালবাসার যে প্রকাশ ঘটায় অতি বৃহৎ তাজমহলও তার ধারে কাছে আসতে পারে বলে মনেহয় না!

৭,৬২৪ বার দেখা হয়েছে

৪৪ টি মন্তব্য : “রিইউনিয়নঃ সুন্দর তুমি চক্ষু ভরিয়া এনেছো অশ্রুজল”

  1. আতিক রহমান (১৯৮২-১৯৮৮)

    সুন্দর তুমি রেখেছো ধরিয়া
    তোমার ভক্তকূল দুনিয়া জুড়িয়া....

    এমন মায়ার ডাক, এমন বন্ধন অথবা এমন লেখা ছেড়ে কে কোথায় যাবে তুই বল? এই লেখা দেখতে পেলে তোর রবি ঠাকুরও মায়ায় মায়ায় সামনে এসে দাঁড়াতেন। অনেক শুভেচ্ছা রইল বন্ধু।

    জবাব দিন
  2. ব্লগ যখন হাতে পেলাম তখন আমি ছেলেকে নিয়ে স্কুলের মাঠে দাঁড়িয়ে। ওখানেই দাঁড়িয়ে পড়া শুরু করলাম। পড়ছি আর কাঁদছি। চোখে চশমা আর মাথায় ওড়না জড়িয়ে চোখের জল ঢাকার চেষ্টা করলাম। আমার ছেলে অবাক হয়ে আমাকে দেখছে। সাবিনার এই লেখাটা এতোটাই ভালো হয়েছে যে, যতই আমি পড়ছি ততই কাঁদছি। অন্তরার জন্যে বুকের ভেতরে কষ্ট পেতে শুরু করলাম। ওইটুকুন বয়সে ও কিভাবে জানি সব সামাল দিচ্ছে। ওর কষ্ট গুলো আমি ছাড়া কেউই ভালো করে বুঝবেনা। অন্তরার জন্যে আমাদের অনেক অনেক দোয়া রইল। কলেজের রিইউনিয়নে যেয়ে বুঝতে পারলাম এখানে আমরা কতই না মমতার বন্ধনে ছিলাম। সবাইকে আলিঙ্গন করার সময় হৃদয়স্পন্দন টের পাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম জীবন আসলেই মধুময়। কারণ আমাদের মনে আছে বিশাল এক ভালোবাসার ভান্ডার, যেখানে শুধুই মমতাভরা মানুষ গুলোর স্থান। আরো লেখা পড়তে চাই সাবিনা। তুই যা ই লিখিস তাই ই আমার ভীষণ প্রিয়। লেখাটা পড়ে আমি অভিভূত।

    জবাব দিন
  3. জিয়া হায়দার সোহেল (৮৯-৯৫)

    মগকক এর রিইউনিয়ন অসাধারন ছিল। সাবিনা আপুদের ব্যাচ বোধ হয় সবচেয়ে বেশী মজা করেছে। লুবনা আপুর কল্যাণে উনাদের ব্যাচের প্রত্যেকদিনের অনেক ছবি দেখেছি। লুবনার আপুর যাওয়াটা সত্যি অনেক বড় একটা ঘটনা ছিল আর সেটা সাবিনার আপুর চাপাচাপিতে হয়েছে তা পরে জানতে পেরেছি। জিও আপু।
    লিখা এবং ছবি অনেক সুন্দর হয়েছে। ভাল থেকো আপু। আগামী বছর যেন আমাদের মত করেই আমাদের কাছে আসে। আমরা সবাই যেন ভাল থাকি। হ্যাপি নিউইয়ার২০১৬।

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      🙂 🙂 🙂 🙂

      আমাদের ব্যাচের ছাব্বিশ জন এক্স ক্যাডেট রিইউনিয়নে যোগ দিয়েছিল বলে জানতে পেয়েছি, জিয়া। তিরাশিতে এমজিসিসির সূচনালগ্নে আমরা ছিলাম; কলেজের প্রতি আমাদের অন্য রকম একটা মমতা কাজ করে। লুবনা যদি প্রথম থেকে না যাবার প্ল্যান করতো তবে আমিও যোগ দিতে পারতাম সবার সাথে।
      ভাল আছো আশাকরি। আমার ভালবাসা জেনো, ভাইয়া।

      জবাব দিন
  4. খুব সুন্দর লেখা - পড়ে প্রাণ ভরে যায়।
    "তের বছর বয়সে সজল চোখে একটি জলপাই সবুজ চত্বরে সেই যে প্রবেশ করেছিলাম আজ অবধি এমন একটি দিন যায় নাই যখন এর কথা মনে পড়ে নাই! "-বিষয়টি জীবনভর একটি সুখকর অনুভূতি -- ছবিগুলো অসাধারণ!

    জবাব দিন
  5. মাহবুব (৭৮-৮৪)

    আমাদের চোখ হলো মনের সবচাইতে বড় মোটিফ; অতি ক্ষুদ্রকায় এই মোটিফ ভালবাসার যে প্রকাশ ঘটায় অতি বৃহৎ তাজমহলও তার ধারে কাছে আসতে পারে বলে মনেহয় না!
    অপূর্ব অপূর্ব :hatsoff: :hatsoff:

    জবাব দিন
  6. জিহাদ (৯৯-০৫)

    খুব চমৎকার লেখা! অনেক ভালো লাগলো পড়ে। দিনশেষে এই মায়াগুলো গুণে গুণে সযতনে জড়ো করে রাখার নামই বোধহয় জীবন 🙂

    ( পন্ডিতি করে ছবিগুলো একটু ঠিক করে দিলাম। )


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      🙂 🙂 🙂 🙂

      আমার ছোট ভাইয়াটার পন্ডিতি খুবই পছন্দ হয়েছে 😀 ব্লগটা দেখতে দারুণ লাগছে এখন 🙂
      অনেক ধন্যবাদ তোমাকে :boss: :boss:
      অনেকদিন পর তোমার দেখা পাওয়া গেল ব্লগে। ভাল আছো আশাকরি। আমার ভালবাসা জেনো।

      জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      জিহাদ, আমিও বেশ অবাক হয়েছিলাম এত সুন্দর করে ছবিগুলো সাজানো দেখে।
      ভাবছিলাম, সাবিনাকে জিজ্ঞাসা করবো, কিভাবে করলো সে এটা।
      যা হোক এখন জানলাম - কিভাবে এটা করা যায়।
      দেখি, কখনো দরকার হলে, হেলপ নেবো ক্ষণ.........


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  7. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    স্মৃতিরা হলো ঝুলিতে রাখা আহ্লাদী বেড়ালছানার মত; এমনিতে গুটিসুঁটি মেরে সুবোধ বালিকার মত চুপচাপ থাকে কিন্তু একটু নড়াচড়া করলেই আলতো করে সে মাথা উঁচিয়ে নিজের অবস্থান জানান দিয়ে বলে, মিঁয়াও মিঁয়াও! তারপর সেই মিঁয়াও ধ্বনির সাথে সকরুণ বিল্লি পিটপিট চোখে এমন করে তাকায় যে তখন সংসার সন্তান সব ফেলে তার মুখে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতে মন চায়! আমাদের কলেজের রিইউনিয়নের আলোচনা শুরু হতে আমার সেই তুলতুলে সাদা বেড়ালবাচ্চার কথাই মনে পড়লো!
    কি অসাধারণ তুলনা! খুব ভালো লাগলো।

    জবাব দিন
  8. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    এই ব্লগটির প্রশংসনীয় এত কিছু আছে, যে তা বলতে গেলে আরেকখানা ব্লগ নেমে যাবে।
    তাই ওদিকে পা না মাড়িয়ে ভিন্ন একটা বিষয়ের অবতারনাই করি বরং।

    কেবলই নিজেদের রিইউনিয়ন থেকে ফিরলাম।
    তাই না চাইলেও কিভাবে যেন একটা তুলনা নিজ থেকেই এসে যাচ্ছে মনের মধ্যে...

    গার্লস ক্যাডেট কলেজের রিইউনিয়নের যে জিনিষটা আমাকে চমকৃত করেছে, তা হলো - ঐ টু-প্লাস দিনে তাদের একসাথে থাকার সময়টাতে যা কিছু সামনে পেয়েছে, যা কিছু দেখেছে তা ই নিয়েই উচ্ছ্বাস দেখানো, আনন্দে বিহ্বল হয়ে ওঠা। সেটা বন্ধু হোক, অথবা কোনো আয়োজন কিংবা কোনো ফ্রীটাইম...
    এমনকি দেখলাম একটি আবৃত্তি অথবা একটি রবীন্দ্রসঙ্গীতও এই উচ্ছ্বাস থেকে, এই প্রশংসা থেকে বাদ পড়ে নাই।
    অথচ আমাদের সহ অন্যান্য বয়েজ ক্যাডেট কলেজগুলোর রিইউনিয়নে উচ্ছাসের পাশাপাশি সমালোচনার স্লাইটেষ্ট সুযোগও কেউ হাতছাড়া করতে নারাজ।
    সবচেয়ে মজা পেলাম, যখন দেখলাম আমারই কোনো কোনো বন্ধু জানতে চাইলো, "গার্লস ক্যাডেট কলেজের রিইউনিয়ন নিয়ে তোর এত আগ্রহ কেন?"
    স্মিতহাস্য দিয়ে "এমনি এমনিই..." বলা ছাড়া আর কোনো উপার ছিল না।
    কিন্তু তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো, ওটা আসলে সত্যভাষন ছিল না।
    আমি বয়েজ ক্যাডেট কলেজের এক্সক্যাডেটদের মাইন্ডসেট জানি তো তাই তোমাদের এই উদারতা, এই অল্পে তুষ্ট হওয়ার প্রবনতা দেখেই বুঝতে পারছিলাম, এখনো কত কিছুতে কত কত পিছিয়ে আছি আমরা। আর কত বেশি বেশি এগিয়ে তোমরা।

    বুঝলাম, যারা নারীদের খুতখুতে বা ছিদ্রান্বেশি বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে - তারা নারীদের সম্পর্কে কতটা কম জানে।
    আর নিজেদের সম্পর্কে কতটা ওভার-এস্টিমেট করে।

    কামনা করছি, বয়েজ ক্যাডেট কলেজগুলোর প্রাক্তন ক্যাডেটরাও তোমাদের কাছ থেকে সহনশিলতা ও প্রায়োরিটি সম্পর্কে লেসন নিক। বুঝুক ও শিখুক, কুয়ার বাইরেও এক বিশাল জগত আছে। আর সেটা সম্পর্কে না জানলে একদিন অন্যরা কিন্তু তাদের কুপমুন্ডুক বলে ডাকা শুরু করবেই করবে......


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      প্রিয় ভাইয়া, প্রথমেই বলি ওয়েলকাম ব্যাক টু রিয়েলিটি!

      এবার তোমার মন্তব্যের প্রতি উত্তরে কিছু কথা বলি, শোন। আমরা মেয়েরা অফিস, রসুইঘর, সন্তান এবং স্বামী নামক শিশুটির দেখভাল করে যে রিইউনিয়নের আয়োজন করেছিলাম তাকে ছোট করে দেখবার কোন অবকাশ নেই। প্রতি শুক্রবার এমেকের মিটিং থাকতো সিসিসিএল এ। ছুটির একটি দিন ঘন্টার পর ঘন্টা আমাদের বোনেরা পরিকল্পনা করেছেন, স্পন্সর যোগাড় করেছেন, কাজ করেছেন রিইউনিয়নটিকে স্বার্থক করে তুলতে। দামী পারফরমার আমরা নিয়ে আসতে পারিনি কথা সত্য; কিন্তু আমরা তো সোলস আর মাইলস শুনেই বড় হয়েছিলাম তাই ওদের গানই স্মৃতিকাতর মুগ্ধতায় ডুবিয়ে রেখেছিল। খাবার খেতে গিয়ে কিংবা ময়মনসিংহের হাড়কাঁপানো শীতে কমনরুমের মেঝেতে রাতে ঘুমোতে যাওয়া কিংবা বাথরুম সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে মেয়েদের খুনসুটি ছাড়া অন্য কিছু শোনা যায়নি। এক্স ক্যাডেটস, তাদের পরিজন এবং অতিথিদের নিয়ে যে বিশাল যজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছিল সেখানে অনিয়ম কিংবা অব্যবস্থাপনার কোন অভিযোগ আজো শুনতে পাইনি। ঠাসবুনোন ভালবাসায় অভিযোগের তীর থাকে না জানো, কারণ তার ভাঁজে ভাঁজে থাকে অতীতের সুখস্মৃতি।

      কৈশোরের নরম পেঁজা তুলোর মত মনে এমজিসিসি যে ভালবাসার বীজ বপণ করেছিল সেটি আমাদের মনে শিখা অনির্বাণের মত আলো ছড়ায় আজো।

      তোমাদের রিইউনিয়নের গল্প শুনবার অপেক্ষায় রইলাম।
      ভাল থেকো, ভাইয়া।

      জবাব দিন
      • পারভেজ (৭৮-৮৪)

        আমাদের রিইউনিয়নের গল্পটা তোমাদেরটার মত অতো মানবিক, অতো হৃদয়গ্রাহী নয়।
        কারনগুলো বলছি...
        ওখানে আমরা ১১ জন জড়ো হয়েছিলাম।
        এটা এমন কিছুই না কারন আমারা দু'তিন মাস পরপর যে সব সমাবেশ করি, প্রায় সময়ই তাতে ১৫-১৬ জন জুটে যায়।
        ওখানে ম্যারাথন আড্ডা বসেছিল।
        কিছুদিন আগে সদলবলে বরিশাল ভ্রমনেও তা হয়েছিল।
        ওখানে ক্যাডেট কলেজের আলো বাতাস ছিল।
        গত পাঁচ বছরে রিইউনিয়ন ছাড়াও আমি ও আমার বন্ধুরা সদলবলে ৫-৬ বার ক্যাডেট কলেজের আলো বাতাস গায়ে লাগিয়ে এসেছিলাম।

        তাই তোমাদের রিইউনিয়নটাকে যে গভীর আনন্দের, মমতার আঁধার বলে মনে হয়েছে, আমাদেরটাকে তেমন মনে হয় নাই।

        অথবা, কি জানি, হয়তো আমারই বোঝার ভুল।
        হতে পারে, মমতা আমাদেরও ছিল - কিন্তু সেটা প্রকাশিত হয় নাই, তোমাদের মতো করে......

        তবে একটা ব্যাপার আসলেই চোখে লেগেছে। আর তা হলো, তোমাদের মতো খুনসুটি না, বরং উচ্চকন্ঠ হয়ে অভিযোগ জানানোটা।
        আর তা যেকোনো ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য।
        সেটা যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, কোন ছাড়াছাড়ি নাই.........


        Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

        জবাব দিন
  9. সেলিনা (১৯৮৮-১৯৯৪)

    প্রিয় সাবিনা আপা,
    অনেক ধন্যবাদ মগকক'র রিইউনিয়ন নিয়ে লেখার জন্য। অনেক মিস করেছি এবারের রিইউনিয়ন। আপনার লেখায় আবার মনে মনে ঘুরে এলাম। এখনো পর্যন্ত আমার ফেসবুক ফিড রিইউনিয়নের ছবিতে রঙ্গীন।

    জবাব দিন
  10. অর্চি (1984-90)

    সাবিনা আপা আপনার লিখাটা পড়ে নিজেও চলে গিয়েছিলাম সেই সোনালি দিনগুলোতে।রিইউনিয়নে যোগ দিতে পারিনি, এ দুঃখ সবসময়ই থাকবে। তারপরও ডিজিটাল সময়ের কল্যাণে দেখলাম অনেক প্রিয়মুখ। অনেক ধন্যবাদ আপা এই অসাধারণ স্মৃতিচারণ উপহার দেবার জন্য। ২০১৬ এর অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।

    জবাব দিন
  11. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    স্মৃতির পোকারা খুবলে খায় মস্তিষ্কের সকল কোষ
    ফেলে আসা দিনের স্পর্শ মাখা দর দালান রুদ্ররোষ
    নিউরনে নিউরনে খেলা করে সময়ের খেয়ালী আক্রোশ
    ধূলা ও দুর্বা ঢাকা প্রতি ইঞ্চি প্রান্তর লহমায় প্রাণবান সরস
    ~ স্মৃতি জাগরুক থাকুক পুনর্মিলনীর দিনগুলো অনাগত কালাকাল।

    জবাব দিন
  12. তানভীর (২০০১-২০০৭)

    প্রায় তিন সপ্তাহান্তে এসে আজ নেটে আসলাম আপু।এসে তোমার লেখাপড়ে আমার ভীষণ মন খারাপ হলো এবারও রিউনিয়নে না থাকতে পারার কষ্টে...... :((
    স্মৃতিপটে ধরাদিলো, আমার কলেজ,বন্ধু, ছোট বড় ভাই,শিক্ষকেরা.....ধরাদিলো পরমপ্রিয় খেলার মাঠ, মঞ্চ, ধরাদিলো কিশোর বয়সের অপরিণত আবেগ.....
    মুগ্ধতা নিয়ে পড়লাম।


    তানভীর আহমেদ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।