আবোল তাবোল দিনলিপি

একঃ
বিগত কয়েকদিনের বিক্ষিপ্ত ভাবনায় তারার প্রি-কে স্কুলের একটি গল্প মনে পড়ে গেল আজ!

প্রাচীন চীনে পরিবারের বড় সন্তানের নাম রাখা হতো খুব ঘটাপটা করে। প্রথমটির পরে একটা দুটো বাচ্চা হলে চং, মং, চিয়াং, মিয়ান কিছু একটা রাখলেই হলো কিন্তু বড়জন ভবিষ্যতে পরিবারের ত্রানকর্তার ভূমিকা পালন করবে তাই তার নামের গুরুত্ব অনেক। আমরা যেমন মোমেনা কে আদর করে মুমু বলি, হোসনে আরা কে হাসু অথবা ক্যাটরিনাকে ক্যাট বলি ওদের নিয়ম ছিল ভিন্ন। সন্তানের নামের আগে, পিছে, মাঝে, নিজেদের বংশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানুষের নামের খানিক অংশ দেবার চল ছিল তখন, তাছাড়া প্রথম সন্তানের পুরো নাম ধরেই ডাকতে হবে, নইলে বড় হলে কাঙ্ক্ষিত সম্মান সে পাবেনা।

ওয়াং পরিবারে প্রথম পুত্র সন্তানের জন্ম হলে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। সবাই মিলে তার নাম রাখেন,
টিকি-টিকি-টিমবো-নো-সারিমবো-চারি-বারি-রোচি-পিপ-পারি-পিমবো!

মা হয়তো লো মেইন খাবার জন্য ডাকছেন, তাকে সেই পুরো নাম ধরেই ডাকতে হবে,
ও আমার সোনা টিকি-টিকি-টিমবো-নো-সারিমবো-চারি-বারি-রোচি-পিপ-পারি-পিমবো, এসো চারটে লো মেইন খেয়ে যাওগো, বাছা!

বাবা হয়তো স্কুলের পড়ার জন্য বকছেন, ওরে হাড়বজ্জাত টিকি-টিকি-টিমবো-নো-সারিমবো-চারি-বারি-রোচি-পিপ-পারি-পিমবো, আজ তোর একদিন কি আমার একদিন বলে দিল দু’ঘা বসিয়ে!

প্রেমিকা হয়তো আদর করে বলছে, ও আমার জান পাখি, ও আমার টিকি-টিকি-টিমবো-নো-সারিমবো-চারি-বারি-রোচি-পিপ-পারি-পিমবো, তোমার পায়ের একখানা ছবি তুলে এখুনি পাঠাও না, প্লিজ!

তো, একদিন আমাদের টিকি-টিকি-টিমবো-নো-সারিমবো-চারি-বারি-রোচি-পিপ-পারি-পিমবো খেলতে গিয়ে অসাবধানতায় কুয়োর মাঝে পড়ে গেল। ছোটভাই হং সাথেই ছিল। ছুটতে ছুটতে সে বাড়ি এসে বলছে, আমার টিকি-টিকি-টিমবো-নো-সারিমবো-চারি-বারি-রোচি-পিপ-পারি-পিমবো ভাইয়া কুয়োতে পড়ে গেছে। বাঁচাও, আমার টিকি-টিকি-টিমবো-নো-সারিমবো-চারি-বারি-রোচি-পিপ-পারি-পিমবো ভাইয়াকে বাঁচাও। মা সেটা শুনে ছুটলো পড়শীর সাহায্য চাইতে, ওরে আমার টিকি-টিকি-টিমবো-নো-সারিমবো-চারি-বারি-রোচি-পিপ-পারি-পিমবো জলে পড়ি গেছেগো। আছোনি গো কেউ, বাঁচাওওও!

পড়শী তার ছেলেকে বলতে বলতে মই নিয়ে ছুটছেন, সর্বনাশ! আমরার টিকি-টিকি-টিমবো-নো-সারিমবো-চারি-বারি-রোচি-পিপ-পারি-পিমবো কুয়োয় পড়ে গেছে…

হতভাগ্য শিশুটিকে বাঁচানো যায়নি আর। টিকি টিকিকে ‘মরিয়া প্রমাণ করিতে হইল’ যে সামাজিক বা প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মনীতির চাইতে মানুষের জীবনের মূল্য অনেক বেশী!

দুইঃ
আজ টরন্টোতে অফিসে যাওয়ার পথে এলিভেটরে আটকে যাবার পর সাহায্য চেয়ে লাল কল বাটনে টেপাটেপি শেষে আমায় ফোন করলো বাবলি। এলিভেটরে আটকে যাওয়াটা যেন পিস অব কেক আরকি!

গুড মর্নিং!
রাতে ঘুম হয়েছে রাজকন্যার?
তারা, ফ্লাফি ভাল আছেতো?
তোমার নিয়ন টেটরা দুটোকে খাবার দিয়েছো সকালে?

বাবলি নামের সাথে বাবলির চরিত্রের যে কোন মিল নেই সেটি বাবা মা শৈশবেই ঠাহর করতে পেরেছিলেন। সাত চড়ে কথা না বলা মানুষ সে। আমরা মনের ভাব প্রকাশ করতে দশটি বাক্য ব্যয় করলে বাবলি পারলে একটিমাত্র শব্দে কথা বলে। নিজে কথা বলার চাইতে অন্যের কথা শুনতেই আগ্রহ তার। সেই স্থিতধি বাবলি দিনের শুরুতে কল করে আমার সাথে খেজুরে গল্প জুড়ে দিয়েছে দেখে আমার কপালে তিন ভাঁজ পড়ে।

হেই, আর ইউ ওকে?
আমি ঠিক আছি। স্ক্রাম্বেলড এগ খেয়ে বেড়িয়েছি বাড়ি থেকে। সাথে এক টুকরো ব্যাগেটও ছিল। কফিটা ফেলে এসেছি টেবিলের ওপর, বাবলি বলে।
স্ক্রাম্বেলড এগ খেয়েছতো বুঝতে পারছি কিন্তু এখন তুমি কোথায়?
আমি অফিসের এলিভেটরে কিন্তু এলিভেটরটা বারো তলায় এসে আটকে গেছে এই যা!

বাবলির কথা শুনে দিশেহারা বোধ করি। আমি ক্লাস্ট্রোফোবিক মানুষ, নিজেকে বাবলির জায়গায় কল্পনা করতেই নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট শুরু হয় আমার। অথচ বাবলি এই প্রথম তার নামের সার্থকতা অক্ষুণ্ণ রাখতে কথা বলে চলে একটানা।

ফিশ বোলে গোল্ড ফিশ চারটে শেষমেশ মরে গেল, বুঝলে! কত গান শুনাতাম ওদের!
কাল শনিবার নিরার সাথে এস্কারগো খেতে যাবো টিউলিপকে নিয়ে! তুমি থাকলে কি ভালোই না হত!
ইউনিভার্সিটির দেড় মিলিয়ন ডলারের একটা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি মাত্রই, এটি শেষ না হওয়া অবধি নড়তে পারবো না টরন্টো থেকে, জানো!
সাত ফুট বাই সাত ফুট এলিভেটরে দাঁড়িয়ে একা একাই কত কথা বলে যায় ও!

দীর্ঘ চল্লিশ মিনিট বাবলি আটকে রইল এলিভেটরে। বাইরে কাজকর্ম শুরু করে দিয়েছে লোকজন। আমি ঘটাং মটাং শব্দ শুনতে পারছি পাশের দেশ থেকেও।
আর ইউ ওকে? কেউ একজন চেঁচিয়ে জানতে চাইল বাইরে থেকে।
ডুইং পারফেক্টলি ফাইন, স্যার। উই আর ডিসকাসিং উইকেন্ড প্রোগ্রামস দো মাই ফ্রেন্ড ইন আটলান্টা ইজ কাইন্ড অব নার্ভাস!

ও বলছে, এতো মানুষ আছে এখানে অথচ জানো, লাল বোতামে চাপ দেবার পর তোমাকে ছাড়া আমার আর কারো কথাই মনে পড়েনি, বন্ধু। বাবলির কথা শুনে আমার মন আদ্র হয়, চোখে জল আসে। ইউনুস নবী মাছের পেটে আটকে গেলে যে দোয়া পড়ছিলেন আমিও সেটি পড়া শুরু করলাম নিঃশব্দে। নিয়মিত নামাজ পড়িনা তাতে কি, বিপদে দোয়া পড়তে অসুবিধে নেই। আল্লাহ সব বুঝেন।

লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ জোয়ালেমিন!

তিনঃ
কানাডা থেকে আমার বন্ধু সিমিন এসেছিল ঝটিকা সফরে। বলা নেই কওয়া নেই টাইপ অতিথিদের জন্য আমার বাড়ি খুব একটা জুতের কিছু নয়। নিজেদের খাবার অভ্যাস বদলে গেছে বহু বছর আগে। দুপুরে টুনা সালাদের সাথে সেলারি উইথ হামাস খেলে রাতে মা মেয়ের জন্য বরাদ্দ থাকে তাজা ফলের সাথে সামান্য সুপ বা আধখানা স্যান্ডউইচ। সপ্তাহান্তে মুরগির সুরুয়ার সাথে সাদা ভাত অথবা ডালকারি পাউডারে রাঁধা মুসুরের ডালে ভোজ চলে মাঝেমধ্যে। সিমিন আটলান্টায় পৌঁছে টেক্সট পাঠিয়ে বলল, তোমার সবুজ শহরে আমি পৌঁছে গেছি, বন্ধু!

আমি ভাবলাম, শুক্রবার সন্ধ্যেয় স্কচ হাতে রসিকতা করবার অধিকারতো সিমিনের আছেই। স্টাডি টেবিলটা গুছাতে গুছাতে ফোনে রুমির বোকা বোকা গল্পটি মনোযোগের সাথে শুনতে থাকি সিমিনকে পাত্তা না দিয়ে।

ডিং ডং ম্যাসেজ আসে আবার, রুম নম্বর ২২২, হলিডে ইন, নরক্রস!

আর ইউ কিডিং? সর্বনাশ! রুমিকে ছেড়ে দৌড়ে নিচতলায় গিয়ে দেখি রেফ্রিজারেটরে এক বাটি টরটেলিনি, আধা পাউন্ড সুইস চিজ, সামান্য কিনওয়া আর চুলোয় পেঁয়াজের সুপ ছাড়া খাবার যোগ্য কিছুই নেই! তাজা ফলমূল আছে প্রচুর কিন্তু সেসবে বাঙ্গালী অতিথি আপ্যায়নের কথা চিন্তাও করা যায়না। তারা আমার সদা উস্কুমুস্কু চুলে হাত বুলিয়ে হেসে বল্লো, ইউ আর ডুমড, মামা!

শুক্রবারের সন্ধ্যেয় এসে সোমবার ভোরে চলে গেল সিমিন। ওর যাবার পথে কাক ডাকা ভোরে আমরা স্টারবাক্সে নেমেছিলাম কাপাচিনো খাবার উসিলায়। সকালবেলায় এমনিতেই গলা দিয়ে কিছু নামেনা আমার, ঝটিতে সফরে এসেও এতো আড্ডা হলো যে এখন ওর যাবার বেলায় চোখে জল না এলেও বুক যে জ্বলছে খানিক সেটি টের পাই! ভোরের আলো না ফুটলেও সিমিন ওর কালো রোদ চশমা পরে নিয়েছে এর মাঝেই। বুক জ্বলে জ্বলুক না, সেটিতো কেউ আর দেখছে না, চোখের জলে নিজের দুর্বলতা ঢাকতেই তো আধুনিক মানুষ অসময়ে কালো চশমা পরে।

এয়ারপোর্টে ফুল হাতে কাউকে রিসিভ করতে যেতে আমার খুব ভাল লাগে। কপালে নীল টিপ আর রুনঝুন চুড়ি পরে হাসতে হাসতে অতিথিকে বুকে জড়িয়ে নেবার মত আনন্দের আর কী আছে! কিন্তু কাউকে সি-অফ করতে গেলে বরাবরই এয়ারপোর্ট থেকে ফিরতি পথে আমাদের টিস্যুর বাক্সে টান পড়ে।

ঐ যে চোখের জল আর এই যে বুকের জ্বলুনি এটুকুর জন্যই জাগতিক সব অপ্রাপ্তি আর অন্ধকারকে ক্ষমা করে দেয় মানুষ। ব্যাকইয়ার্ডে গাড়ি পার্ক করে দরোজার নব ঘুরাতেই খাঁ খাঁ শুন্যতা গ্রাস করে। ছুটির আড়াইটে দিন কী আনন্দেই না কাটলো আমাদের। দুটি আধ খাওয়া জিনজার এইল আর কানাডা ড্রাইয়ের বোতল টেবিলের ওপর, নিচতলায় লিভিং রুমে ছড়ানো ছিটোনো বই, টাইম ম্যাগাজিন, অথবা বোবা টেলিভিশনে বারবারা ওয়াল্টারসের লাল লিপস্টিকে আঁকা ঠোঁট সবই ম্রিয়মাণ মনে হয়। আমাকে ঘরে ঢুকতে দেখে ফ্লাফি টুইট করে স্বাগত জানায় তারপর আমার মাথায় চড়ে ওপরতলায় আসে। তারা ওর ঘরে ঘুমোচ্ছে এখনো। আমিও দুয়োর এঁটে শুয়ে থাকি একা, এখন আর কোন রোদ চশমা অথবা টিস্যু পেপারের দরকার নেই আমার।

ভালবাসি বলিনি কেউ, চোখের তারায় বিরহ শতদল!

১৬,১৬৮ বার দেখা হয়েছে

৪৪ টি মন্তব্য : “আবোল তাবোল দিনলিপি”

  1. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    "তোমার পায়ের একখানা ছবি তুলে এখুনি পাঠাও না, প্লিজ!" 🙂 🙂 -এত কিছু থাকতে পায়ের ছবি? মজা পেলাম!
    "ইউ আর ডুমড, মামা!" - 😀
    তবে শেষাংশের ভারী অনুভূতিটুকু একটু রেশ রেখে গেলো।

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      🙂 🙂 🙂 🙂

      বন্ধুর জন্য কাঁদতে গিয়ে চোখের কালো কাজল মুছে গেছে তাতে ক্ষতি কী, পরদিন আবারও শ্যাম্পেন অথবা টেরাকোটা রঙের লাইনার আঁকিবুকি করি। লাইফ গোস অন। শুদ্ধমতি মন নিয়ে আবার পরিকল্পনা করি এগিয়ে যাবার। আমি কঠিনপ্রাণ টাইপের মানুষ। তবে ইমোশনাল তো হই হামেশাই! কিন্তু দিনশেষে ঐ বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনী!

      জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      🙂 🙂 🙂 🙂

      আমার একটি নাকউঁচু বন্ধু সতি্য তার প্রেমিক টু বি'র পায়ের ছবি দেখতে চেয়েছিল। সে বলতো, যে ছেলে নিজের পায়ের যত্ন নেয় না, নখ ট্রিম করতে পারেনা ভাল করে তার সাথে জীবন কাটানো চলেনা। ছেলেটি সাথে সাথেই ছবি পাঠিয়েছিলো, এবং আমার বন্ধু নিরাশ হয়নি। ফলাফলঃ হ্যাপিলি এভার আফটার!

      হিমু টাইপের ছেলেদের বাজার ফুরালো বলে!

      জবাব দিন
  2. সাইদুল (৭৬-৮২)

    ডুইং পারফেক্টলি ফাইন, স্যার। উই আর ডিসকাসিং উইকেন্ড প্রোগ্রামস দো মাই ফ্রেন্ড ইন আটলান্টা ইজ কাইন্ড অব নার্ভাস!

    এই বাব্লিটাকে দেখতে ইচ্ছে করছে, আমার মেয়েদের আমি বরাবর ওরকম দেখতে চাই


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      🙂 🙂 🙂 🙂

      আমরা বন্ধুরা মোটমুটি কঠিন টাইপের চরিত্র, ভাইয়া। বাবলি ক্যাডেট কলেজে পড়েনি, কিন্তু যাপিত জীবনে ওর মত ফাইটার ক'জন আছে! ও সিদ্ধান্ত নিতে সময় নেবে কিন্তু যখন একটি সিদ্ধান্ত নেবে তখন প্ল্যান এবিসিডি করবে একসাথে। স্ট্রেস হ্যান্ডেল করাতে ওস্তাদ সে। ওর মাঝে স্থিতধি যে ভাবটি আছে তা বিরল।

      আগামী বছর আমরা একসাথে দেশে যাবার পরিকল্পনা করছি, সবাই মিলে একদিন আড্ডা হলেও হতে পারে। 😀

      জবাব দিন
  3. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    এয়ারপোর্টে রিসিভ করতে যাওয়া কখনো হয়নি। মানে বিদেশের মাটিতে। সবসময় রিসিভড হয়েছি। এরমাঝে একবার ছিল রেলস্টেশানে। রিসিভড হতেও কি যে মজা! 🙂 পুরোনো বন্ধুকে ব্যথা দেয়ার মত করে পিঠ চাপড়ে দিয়ে আলিঙ্গন। হাহাহাহাহাহা! দেশে এলিভেটরে সাড়ে নয় তলায় একবার আটকে গিয়েছিলাম আমরা গোটা পাঁচেক বন্ধু। পরে জোরপূর্বক দরজা খুলে সাড়ে নয়-এর অর্ধেক বেয়ে বের হয়ে এলাম আমরা সবাই। সাথের মোটাসোটা বন্ধুকে বের করে আনতে একটু কষ্ট হয়েছিল এই আরকি। উন্নত বিশ্বে যদি ঠাট্টা করে মানুষজন বলে ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড প্রবলেমস। আমরা না হয় বলি সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড মানডেইনিটি 😀 😀

    পূনশ্চঃ থার্ড ওয়ার্ল্ড বললাম না কারণ আমরা কিন্তু এখন মধ্যম আয়ের দেশ। 😛


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      গেলবার দেশে গেলে দেখি এয়ারপোটর্ে আমার পরিবারের মানুষ ছাড়াও বন্ধুরাও এসেছেন রিসিভ করতে। মা এয়ারপোটর্ে এসেছেন ছোট ভাইকে নিয়ে, সাথে উপলা। আমার বন্ধু লুবনা কত যে জামাকাপড় কিনে নিয়ে চলে এসেছে সকাল সকাল। সাথে ওর বিচ্ছু বাচ্চারা। হটপটে সদ্য রান্না করা খাবার। ক্যাডেট কলেজের ছোট ভাইয়া শাহেদ ওর বউ বাচ্চা সবাই সহ এসেছে। তারা মুগ্ধ হয়ে রইল সবার ভালবাসায়। আমাদের হইচই কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠলো চারপাশ।

      দেশে একবার এলিভেটরে আমিও আটকে পড়েছিলাম, জানো! ছোট একটি এলিভেটরে অনেক মানুষ ছিল। তাদের চেঁচানো শুনে আমার প্যানিক এ্যাটাক করেছিল। বিপদে মাথাটি ঠান্ডা রাখা খুব জরুরী। কিছুক্ষণের মাঝেই পাওয়ার চলে আসে বলে রক্ষা!

      জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      দেশে গেলে আমার হৃদয়বান বন্ধুরা সকাল বিকেল যে ভাবে পাজেরো পাঠিয়ে দিয়েছিলেন আমার যাতায়াতের সুবিধার জন্য, আমি তো প্রায় ভড়কেই গিয়েছিলাম, মোকা। কত কিছু দেখে ফার্স্ট ওয়াল্ডর্ কান্ট্রি বলে ভুল হয়েছে কতবার। আমার চারটে সপ্তাহের ছুটিতে যে দেশ আমি দেখে এসেছিলাম তাতে তো আমার ডুগডুগি বাজাতে মন চেয়েছে অনেকবারই! আমরা যারা দুইদিনের বৈরাগী হয়ে দেশে যাই তারা বোধকরি দেশের আসল চেহারাটি দেখতে পাইনা; অথবা অন্য ভাবে বললে আমাদের দেখতে দেয়া হয়না।

      স্বপ্নবাজ মানুষ আমি। ঘনঘোর অন্ধকার শেষে আলোর দু্যতি দেখবোই একদিন। Hope is the only bee that makes honey without flowers! 🙂

      জবাব দিন
      • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

        দেশের আসল চেহারা! হুম! দেশের আসল চেহারাটা কিছুটা হলেও সেই রকম যেই রকম আপনি দেখতে চান। আমি ভালই দেখতাম। গত কয়েক মাসে দুই চারটা ধপাস-টাইপের আছাড় খাবার পরে মনে হলো, উঁহু। এতটা সুন্দর লাগছে না! 😛


        \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
        অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

        জবাব দিন
        • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

          খুব ভাল কথা বলেছো মোকা, যেমন আমি দেখতে চাই, তেমনিই তো দেখতে পাই! বিগত কয়েকটি বছর আমি ফেইসবুকের আয়নায় স্বদেশের মুখটি দেখছিলাম। আমার সেই দেখাটি যে কত বড় ভুল ছিল সেটি এয়ারপোটর্ে নেমেই টের পেয়েছিলাম। ফেইসবুকের এডিট করা ছবির মত দেশটিও যদি এক ক্লিকে এডিট করা যেত, হায়!

          দেশে আমি আমার নানুর বাড়ি গিয়েছিলাম মাকে নিয়ে। সাথে ভাইবোনেরাও। গ্রামের নাম রাধাকানাই, জেলা ময়মনসিংহ। পঁচিশ বছর হয়ে গেল নানা, নানু চলে গেছেন। মাও বহুদিন বাপের বাড়ি যাননি। শূন্য ভিটেবাড়ি। মূল বাড়িটির পলেস্তারা খসে পড়েছে। শ্যাওলা-ধরা উঠোন। ছাগল, হাঁস মুরগির বিচরণ যত্রতত্র। দুটো ঘর নিয়ে কেবল একজন কেয়ারটেকার থাকেন। সেখানে দুপুরের আভিজাত্যহীন সাদামাটা খাবারে যে উপচানো ভালবাসা ছিল তা অনেক 'মি' 'মি' বলা বহু মানুষের বাড়ি পাইনি। সবচেয়ে বড় চমক ছিল ওদের ঘরের কোণে রাখা কম্পিউটারটি যেখানে একটি শিশু গেইম নিয়ে ব্যস্ত ছিল। সবার হাতে হাতে ফোন। আমার আমেরিকান কন্যারত্নের সাথে কি ভাবে কথা বলবে এ নিয়ে তাদের দ্বিধার অন্ত ছিলনা। তারা হাসিমুখে সালাম দিয়ে বললো, আমার নাম তারা। তুমি কি আমার খালা হও? ভালবাসা মুহুর্তেই ঘুচিয়ে দিল ভাষার ব্যবধান। তারার ফেইসবুকে এখনো ওরা অনেকেই বন্ধু হয়ে আছেন।

          আমি হয়তো অজ পাড়াগাঁয়ের এই রূপটিই দেখতে চেয়েছিলাম মনে মনে। দেখতে তো চাই কত কিছুই, মোকা। প্রবাসীদের আমার কাছে মাঝেমধ্যেই পলায়নপর মানুষ বলে মনেহয়। জেনারালাইজ করতে চাইনা, তবুত্ত এট লিস্ট নিজেকে স্বার্থপর মনেহয় আমার!

          চিনি, মধু, ঝোলাগুড়, স্প্লেনডা, ব্রাউন সুগার, অথবা আখের রস যা মন চায় তা দিয়ে কোট করে লিখো। কলম যেন থেমে না যায়, জীবনের জয় হবেই। দুই চারটে ধপাসে ভয় পেওনা, মোকা। তবে চিনে রাখো মুখ ও মুখোশটি।

          ভাল থেকো, ভাইয়া। আমার ভালবাসা জেনো!

          জবাব দিন
  4. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    আহ দিনলিপি! 😀

    বিদায় জানাতে এগিয়ে দেবার প্রসেসটা আমার অসহ্য লাগে।
    বিদায় দিতে এগিয়ে গেলাম, এরপর বাস-ট্রেন-প্ল্রেন আসল।
    যাকে বিদায় দিলাম ভুস করে সে চলে গেল, আমি বেকুব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম!
    কেন বাপু? এর চেয়ে বাসা থেকে বিদায় দিলাম, তুমি এবার যাও...হুহু!


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  5. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    ধীরস্থির দিনলিপি আপনার। বান্ধবীরা আসছে, ফোনে কথা হচ্ছে। মনে হচ্ছে আপনার বাড়ির সামনে জসিমুদ্দিনের নিমন্ত্রণ কবিতাটি ঝুলছে।
    অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমার বিদায় নেওয়া হয়, বিদায় জানানো হয় খুব কম - এজন্য নিজেকে বড় স্বার্থপর বলে মনে হয়। হয়তো আসলেই তাই।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  6. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    অন্যভাবে বলতে গেলে আমার ধীরস্থির দিনলিপিটি নিয়েই আমি সিসিবিতে আসি বলতে গেলে; অস্থির দিনলিপিটি লিখে রাখি কেবল নিজের জন্য, শান্তা! নিজের আলো টুকু, আনন্দটুকুই ছড়িয়ে দিই সবার মাঝে, দীর্ঘশ্বাসটুকু নাহয় শিকেয় তোলা থাকুক!

    জবাব দিন
  7. মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

    লেখা পড়ে মনে হলো লেপ্টে থাকা কিছু ক্লান্তি, কিছু অবসাদ ঝেড়ে চনমনিয়ে উঠতে চাইছ চটুল কোন গানের শিস তুলে। মাঝে মাঝে এমনটি করা ভালো। মনে আলো জ্বালাবার জন্য দেশলাই এসব। শেষ চরণটিতে কি বলতে চাইলে?


    দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

    জবাব দিন
  8. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    একবার আটকাইছিলাম বউ বাচ্চা সমেত।
    ২০ মিনিটের কিছু বেশি সময় ছিলাম।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  9. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    কি দারুন যে লিখো তুমি???

    সেই যে ঈদে বেড়াতে গেলাম সিসিবি ছেড়ে, আর ফেরা হচ্ছিলো না।
    কেন জানো?
    ফিরে এসে দেখলাম, কবিতা আমাকে ছেড়ে গেছে।
    অনেক বার বসেও কিচ্ছু বেরুচ্ছে না কি-বোর্ড গলে...

    লিখার মত বেশ কিছু গদ্য আছে মাথার ভিতরে কিন্তু কবিতা লিখার এই অক্ষমতাটা বড়ই জ্বালাচ্ছে, জানো?

    তবে আজ ফিরতেই হতো, অন্য এক কারনে।
    সেই গল্পটাই বলি...
    পরিবার ছেড়ে কর্তব্যের টানে ঘটাইল পরে থাকা উচ্চ পদস্থ এক সেনা কর্মকর্তা বন্ধুর সাথে গল্প করছিলাম আজ সন্ধ্যায়।
    ও যে সিসিবির আরেক নিশব্দ পাঠক, জানা ছিল না।
    কথা শুরু করলো আমার কোন কোন লিখা নিয়ে।
    হঠাৎ সব ছেড়েছুড়ে তোমার লিখার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠলো......
    আমি বলি "কম্মো কাবার"। লেটেস্ট লিখাগুলা তো পড়া হয় নাই। তখনি ঠিক করলাম, "ফিরতে হবে। দ্রুত ফিরতে হবে - এ ধরনের আলোচনায় কিছু যেন কন্ট্রিবিউট করতে পারি, সে জন্য।"
    ও হ্যাঁ, বন্ধু আরও যাঁর যাঁর লিখার প্রশংসা করলো তারা হলেন: খায়রুল ভাই, সাইদুল ভাই।
    তবে সাবিনার লিখার প্রতি তার উচ্ছাস ও পক্ষপাত মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো.........


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      🙂 🙂 🙂 🙂

      কবিতা তোমাকে ছেড়ে গেছে মানে কি হে বলতো, ভাইয়া? কলম তো কেড়ে নেয়নি কেউ। বাতাসে নতুন কন্ডিশনারের সুবাস, সেফোরার কোকো ব্রাউন কাজল, রেড রিভাইভাল অধর রঞ্জনী, সবই তো রইল তোমার! শহরতলীর খড়কুটো, ধোঁয়াটে সন্ধ্যা, ভুরুর ধনু, কপট খুনসুটি, গুণগুণ ভোমরা অথবা তার গানের কলি সবই আগের মতই আছে!

      সহজেই যারে পাওয়া যায়,
      পথের বাঁকে সে হারায় সহজেই!

      এক ঈদের ভ্যাকেশনে গিয়ে তুমি তো আরেক ঈদের কাছে চলে এসেছো! সুতরাং, গদগদ একখানা প্রেমের কবিতা দিয়ে শুরু করো জলদি। পারলে একটা অডিও ব্লগ নামাও, প্লিজ। চিয়ার আপ, ডিয়ার ভাইয়া!:D

      সিসিবিতে নিরব, সরব সব পাঠকের থেকে যে ভালবাসা আমি পাই সেটি আমার কাছে নওলখা হারের চাইতেও মূল্যবান!

      ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute::

      জবাব দিন
  10. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    পারভেজ, যাক শেষ পর্যন্ত তোমাকে এখানে সশব্দে পাওয়া গেলো, নইলে তোমাকে নিয়ে একটু চিন্তাই হচ্ছিলো, যে হলো কী? মাঝে মাঝে অবশ্য লক্ষ্য করেছি যে তুমি "অন প্যারেড" হয়েও প্যারেড করছো না, ফল ইন হয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁঁড়িয়ে থেকে কেটে পড়ছো। তাই ভেবেছিলাম, হয়তো অতি ব্যস্ত। কিন্তু যখন অনুপস্থিতিটা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছিলো, তখন একটু চিন্তাই হচ্ছিলো। যেমন এখন হচ্ছে অরূপের জন্য। ওর কী হলো বলতে পারো কি? সে অনেকদিন ধরে এখানে অনুপস্থিত।
    ঘাটাইলে এখন জিওসি বা কম্পোজিট ব্রিগেড কমান্ডার কে আছেন? তিনি তো কোন নিন্দা করেন নাই, প্রশসংসাই করেছেন। আর নীরব প্রশংসাকারীকে কার না জানতে ইচ্ছে হয়, আজকের এই হিংসা বিদ্বেষের জগতে? তাই নামটা বলে দিলেই পারতে।
    সাবিনার লেখার প্রতি তাঁর উচ্ছ্বাসটা পক্ষপাত নয়, ওর প্রতিভার স্বীকৃ্তি।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।