অডিও ব্লগঃ দূর হতে আমি তারে সাধিব

– আহা! তবুও তো

– তবুও কি বলো?

– তবুও হাসলে তুমি! এই ভূখন্ডে দিনের আলোতেও খসে পড়লো কয়েক লক্ষ তারা

– ঠোঁটের কোণে ঝুলানো এই হাসি ছাড়া আমার কি আর আছে, বলো? তাই সুখেও হাসি, কষ্টেও

– কষ্টকে আড়াল করে রাখতে হয় মানুষের থেকে, অধরা! পাছে কেউ আহা উঁহু করে, অথবা উস্কে দেয় বারুদের মত, অনাহুত সহমর্মিতায় সেটি তো আর লাঘব হয় না। বরং নিজের কাছে নিজেকেই ম্রিয়মান মনে হয়। কষ্ট পুষে রাখতে হয় বুকের ভেতর, মেয়ে। চারপাশ নিঃস্তব্ধ হয়ে এলে সেই কষ্টের কাছে মুখ নামিয়ে হুহু করে কাঁদতে হয়। তারপর চোখ মুছে বলতে হয়, যাক! তবুও তো তুমি আছ। না হয় কষ্ট হয়েই আছ! আছোতো!

– কষ্টের কাফনে মোড়া তোমার আনন্দময়ীর এই হলো ভবিতব্য!

– আমার সদা আনন্দময়ীর নয় অধরা, আমার মত নমঃশুদ্রের ভবিতব্য এটি

– আমার তো নমঃশুদ্রও সইল না কপালে

– তুমি তো রাজকন্যা! রাজকন্যার জন্য নম:শুদ্র অস্পৃশ্য, সদা পরিত্যাজ্য

– পরজন্মে রাজার ঘরে জন্ম নিও, দীপ। নয়তো আমিই হবো নমঃশুদ্র কন্যা

– তুমি রাজকন্যাই থেকো। আমি বড়জোর বাঁশিওয়ালা হবো তোমার গলির মোড়ে

– বাঁশীর সুরে বুঝি রাজকন্যাকে ভোলাবে তুমি?

– দুপুর রোদে উদাস করা বাঁশীর সুর নয়, আমি হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মত তোমাকে সহ তোমার নগরবাসীকে ফুসলিয়ে নিয়ে যাবো অচিনপুরের দেশে। জাতিস্মরের দিব্যি দিয়ে বলছি অধরা, এই জন্মের শোধ নেবো আমি ঐ জন্মের আগেই!

৩,৮৫৩ বার দেখা হয়েছে

২৭ টি মন্তব্য : “অডিও ব্লগঃ দূর হতে আমি তারে সাধিব”

  1. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    যাকে ধরা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না,
    যার কাছে পৌছুনো যাবে না
    তাঁকে ধরতে, ছুতে -
    তার কাছে পৌছুতে
    সারাক্ষন মন করবে আকুলি বিকুলি
    এ আর এমন নতুন কি???

    বরাবরের মতই চমৎকার প্রযোজনা। মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করে গেলাম.........
    :clap: :clap: :clap:


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  2. মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

    ভাবছিলাম, কী অদ্ভুতই না সাহিত্যের স্বত্বাধিকার! যতক্ষণ তুমি প্রকাশ করছো না, ততক্ষণ তা একান্তই তোমার। আর যখনি ছাপা হলো তখন তা সকল পাঠকের। তাই বুঝি অধরার ব্যক্তিগত ব্যথা আমাদের সবার বুকে টুকরো টুকরো ব্যথা হয়ে বাজে। এতদিন ছিল একান্ত ব্যক্তিগত শিশিতে যত্ন করে রাখা দামী এশেন্সের মতো, আর এখন যেন চুপি চুপি ছিপি খুলে হাওয়ায় হাওয়ায় ভেসে এলো। করুন কান্নার ঘ্রাণ হয়ে আমাদের অধিকার করে নিল। পাঠ ও শ্রবণের পর সুধীনবাবুর চারটে লাইন মাথায় সেই যে মাথায় এলো, আর বেরুচ্ছে না,

    স্মৃতিপিপিলিকা তাই পুঞ্জিত করে
    অমার রন্ধ্রে মৃত মাধুরীর কণা;
    সে ভুলে ভুলুক, কোটি মন্বন্তরে
    আমি ভুলিব না, আমি কভু ভুলিবো না||


    দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

    জবাব দিন
  3. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    কি এক অভিমান, ছাইচাপা ক্ষোভ যেনো খেলা করে গেলো কথাগুলোর অলি-গলি ধরে ।
    অবশ্য কথার গলি ঘুপচির খেদগুলো যেনোবা গলে গেলো সুরের মূর্ছনায় এসে।
    আবারো অনন্য । আবারো মনকাড়া !
    :clap: :clap:

    জবাব দিন
  4. জিয়া হায়দার সোহেল (৮৯-৯৫)

    ''জাতিস্মরের দিব্যি দিয়ে বলছি অধরা, এই জন্মের শোধ নেবো আমি ঐ জন্মের আগেই!''

    বাহ, কি চমৎকার কথা। এই মিউজিকটাতে অন্যরকম টেস্ট পেলাম, মন উচাটন হয়ে গেছে। দিয়াও বলল এটা অনেক সুন্দর হইছে। :clap: :clap:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।