অডিও ব্লগঃ পথ ছিল যত জুড়িয়া জগত

প্রথমে ভাবলাম এপ্রিল শাওয়ার বুঝি ছলনাময়ী নারীর মত তার ষোলকলার একটি দেখাতে ব্যস্ত। দুপুর থেকেই লেকপাড়ের এই শহর জুড়ে ঘনঘোর আঁধার। যদিত্ত ন’আনা ছ’আনা বৃষ্টির অধিক কিছুই ছিলনা আকাশের ঝুলিতে। বাদলাদিনের শোধ তুলতে দিনশেষে মৃতপ্রায় ফিকে রোদ এসে জানিয়ে গেছে স্বীয় অধিকার। তারপর আবারও রথের মেলায় হারিয়ে যাওয়া ক্রন্দসী বালিকার মত অবিরাম রিমঝিম। লাল ঝুঁটির একটা কাডর্িনাল তার চিলেকোঠার রাজবাড়িতে ঘোরলাগা মানুষের মত তাকিয়ে আছে দূরে কোথাও। উল্টোদিকে সাদা বাড়ির কালো মেয়েটি চেলোতে কী একটা সুর বাজাচ্ছে জানালার পাশে বসে যেনবা আহার শেষে মাগর্ারিটার গেলাস হাতে মেঘদূতমের আগমনী সেলিব্রেশন!

সামনে সিকামোর বুলোভাডর্ জুড়ে লাল, সাদা, আর কমলাসুন্দরীর রঙে ফোডর্, টয়োটা আর ক্রাইসলারের সারি। শ্রান্ত মানুষেরা বাবুইপাখির তৃষ্ণা নিয়ে ফিরছে তাদের ঝুল বারান্দাওয়ালা বাড়িতে! মেঘমেদুর এই সন্ধে্যবেলা এক কাজলনয়না হরিণী এসটে লডারে লুকোয় তার হেজেলরঙা চোখের দু্যতি। হঠাৎ দমকা হাওয়া এসে বাইরের ঝরাপাতার সাথে উড়িয়ে দিল ঘরের মেয়ের বুকের আঁচল, শ্যানেল নাম্বার ফাইভ উল্টে গেল সিনামন এ্যাপেল মোমবাতির পাশে; নখের পালিশ, ঠোঁটের রং আর জলের বোতলে বেশ খানিকটা জড়াজড়ি ড্রেসিং টেবিল। ঝড়ো হাওয়ার চুম্বনে ডেকের কোণে সবুজ উইন্ড চাইমে উদ্দাম নৃত্য! সবশেষে, লাল কুমকুমে কপালে একখানা সূর্যোদয়ের ছবি আঁকতেই ডিংডং কলিং বেল বাজে খিড়কির দুয়ারে।
হাওয়াই মিঠাইত্তয়ালার মত সুর করে কে ডাকে এই অবেলায়?

২,৯২০ বার দেখা হয়েছে

২৭ টি মন্তব্য : “অডিও ব্লগঃ পথ ছিল যত জুড়িয়া জগত”

  1. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    আজ ব্লগটা পড়লাম, মিউজিক শুনলাম আর অভিভূত হলাম। অবাক হই,কী করে ভাবনা, বাজনা আর লেখার মধ্যে এত অনুপম সমন্বয় ঘটানো যায়। খুব সুন্দর হয়েছে। এত ছোট লেখা, তবুও কতটা পরিপূর্ণ!

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      🙁 🙁 🙁 🙁

      আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা সমস্যাটি কোথায়, সাহেদ। এই অডিও লিংকটি দুবার আপলোড করা হয়েছে সিসিবিতে। আমাদের এখানে, ইউরোপে এমনকি দেশেই তো অনেকে শুনতে পেয়েছেন আমার উরাধুরা বাজনাটি। তোর কি হলোরে? তুই বরং বেড়াতে চলে আয় এখানে; আড্ডার মাঝে বাজিয়ে শুনাবো!

      খুবই দুঃখিত, ভাইয়া। 🙁

      জবাব দিন
  2. সাহেদ (৮৯-৯৫)

    ফাইনালি সেল ফোনে শোনা গেল। আমার অত্যন্ত প্রিয় গান, বাজনাটাও অসাধারন। কান ও মন দুটোই জুড়িয়ে গেল আপু। টুউউউউউউ গুড :clap:


    সাহেদ (৬০৫) ১২ তম ব্যাচ পিসিসি

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      🙂 🙂 🙂 🙂

      আহ! ফাইনালি!
      কাল জানিস কিছুতেই আমি মিউজিক আপলোড করতে পারছিলাম না ব্লগে। অথচ দেশে বন্ধুর কাছে সাহায্য চাইতেই তিনি করতে পারলেন সাকসেসফুলি। সব ঠিকঠাক! কিন্তু কিছুক্ষণের মাঝেই আহসান ভাইয়া জানালেন অডিওটি কাজ করছে না। আমি শুনতে পারছিলাম যদিত্ত ঠিকই; একই সময়ে ব্লগে ইউরোপ থেকে একজন জানালেন তার ভাল লেগেছে বাজনাটি! একটু পরই দেশ থেকে আবারও অনুযোগ লিংক কাজ করছে না। হায়! পোষ্ট ডিলিট করতেও পারছিনা না। কানাডায় বাতর্া পাঠিয়ে আইটির মহাপন্ডিত বন্ধুর সাহায্য চাইলাম এবার। তিনি পোকিমন খেলা ফেলে ভুরুতে তিন ভাঁজ ফেলে আমার উরাধুরা বাজনাটি শুনতে শুনতে বললেন, তোমারে রোজায় ধরছে নাকিগো? সমস্যা তো দেখিনা! আমার কোঁকানো শুনে তিনি দয়াপরবশ হয়ে নতুন একটি লিংক সংযোজন করে দিলেন ব্লগে। এর মাঝে সহৃদয় দুই একজন জানালেন তাদের ভাললাগার কথা। ফের তুই বললি, ক্যান্ট ওপেন! আমি সব ডিভাইস অফ করে চুপচাপ বালির মাঝে মুখ লুকিয়ে ঘুমোবার আয়োজন করলাম।
      ওম শান্তি!

      জবাব দিন
  3. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    একজন নীরব সিসিবিয়ানের ফোন কলে আজ ঘুম ভাংলো। অতি বিনয়ের সাথে বললেন আপা, যে 'দুইটা' গান বাজাইছেন যদি ইকটু লিখা দিতেন ব্লগে আমার মত মানুষের বড় উপকার হইতো! বুঝলাম ছাইপাশ বাজাই আমি। তবুত্ত ফ্লাফিকে চমকে দিয়ে হাসতে হাসতে বললাম, ক্লু আছে ব্লগেই, দেখি খুঁজে পাও কিনা। খানিক আগে তিনি জানালেন, পাইছি আপা, 'আমাকে আমার মত থাকতে দাও'!

    নীরব সিসিবিয়ান আপু-ভাইয়ারা, আমায় সতি্যই আমার মত থাকতে দাও! B-)

    জবাব দিন
  4. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    " তারপর আবারও রথের মেলায় হারিয়ে যাওয়া ক্রন্দসী বালিকার মত অবিরাম রিমঝিম। লাল ঝুঁটির একটা কাডর্িনাল তার চিলেকোঠার রাজবাড়িতে ঘোরলাগা মানুষের মত তাকিয়ে আছে দূরে কোথাও। উল্টোদিকে সাদা বাড়ির কালো মেয়েটি চেলোতে কী একটা সুর বাজাচ্ছে জানালার পাশে বসে যেনবা আহার শেষে মাগর্ারিটার গেলাস হাতে মেঘদূতমের আগমনী সেলিব্রেশন! "
    পুরো লেখাটাই কোট করা যেতো। সমীচীন হতো না। এই যা।
    গানটায় সেই প্রথম, কৈশোরের হারমোনিয়ামে সুর তোলার স্মৃতি ফিরে এলো যেনো ঘটা করে।

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      🙂 🙂 🙂 🙂

      জগতে সিনেস্থেটিক মানুষ কম আছেন; মিলিয়নে দশজনের বেশী নয় বলে পড়লাম কোথাও। আপনার প্রেমিক মন ভাইয়া, তাই আপনার বিনয় বিগলিত ভাবনা আর ভালবাসায় নিমজ্জিত করে রাখেন প্রিয় মানুষদের। সেই ভাবনায় অবগাহন করে কার না মন আদ্র্র হয়!

      :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:

      জবাব দিন
  5. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    চাইলেই কি আর দ্বার খোলে সবাই?

    তবে এইভাবে বললে বোধহয় খুব বেশীক্ষন দুয়ার বন্ধ করে রাখাটা সম্ভব হয় না কারোর জন্যই।
    আমিও দুয়ার দিলাম খুলে -
    মুগ্ধতা ছুঁয়ে যাওয়া হৃদয়ের দুয়ার.........


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রিজভী (১৯৯২-১৯৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।