শিরোনামহীন দিনলিপি

উৎসবে পার্বণে দেশ থেকে উপহার পাঠানো বন্ধ হয়েছে বহুদিন। আধা জন্ম দেশের বাইরে থাকলে যা হয় আরকি। আমরা হচ্ছি প্রায় ভুলে যাওয়া প্রিয়মুখ যাদের না পারা যায় ভুলতে আবার মনে রাখাটাও বেশ কষ্টকর বৈকি। বহু বছর পূজার ঢাক বাজবার আগেই হাতে পৌঁছে গেছে পূজা সংখ্যা সানন্দা অথবা দেশ বা আনন্দবাজার! হারকিপ্টে হরির মতো একটু একটু করে পড়তাম প্রতিদিন, পাছে ফুরিয়ে না যায়! আমাদের নীচতলাতে তিনটে হিন্দু পরিবার থাকতো, সবার সাথেই আমাদের বেশ সদ্ভাব। পূজো এলেই ইয়া বড় থালা সাজিয়ে মাসিমারা লুচি, বেগুনভাজা, আলুর দম আর নারকোল নাড়ু পাঠাতেন। কখনো সখনো আমাদের বোনেদের জন্য কাঁচের চুড়ি অথবা লাল হলদে চুলের ফিতা। আটলান্টায় বসে আমি সেই সব পূজো সংখ্যার সাথে বরাবরই বেগুন ভাজার সুবাস পেয়েছি ফ্রী!

ঈদে শাড়ী, চুড়ি অথবা বাজুবন্দের সাথে পেটমোটা ঈদ সংখ্যাও এসেছে বহুদূর পথ পেরিয়ে। অমিত ঈদকার্ড বানিয়ে পাঠিয়েছে কাঁচা হাতের কবিতা সহ, মা আফসোস করে লিখেছেন কতদিন আমার কথা মনে করে উনি লাচ্ছি শেমাই খেতে পারেন না, হাড়িকাবাব বানালে এখনো সব্বাইকে ফেলে আমার কথাই মনে পরে। বোন তার চুড়িদার বা আনারকলি কামিজ অথবা নকশাদার জুতোর গল্প লিখেছে। সাথে পাঠিয়েছে আমার প্রিয় মান্না দে অথবা সাগর সেনের ফিতে আঁটা ক্যাসেট! বাবা লিখেছেন তুমি যেদিন আসবে সেদিনই আমাদের ঈদ হবে মাগো! তোমাকে ছাড়া আমাদের ঈদ পূর্ণ হয়না যে!

কবে ঈদ উদযাপন করেছি দেশে আমি মনে করতে পারিনা আর। আমার স্মৃতিতে ঈদ হলো সস্তা ইরেজারে পেনসিলের কাটাকুটি মোছার মত, ঝাপসা হয়ে এসেছে প্রায় কিন্তু আঁকিবুকির ক্ষতচিহ্ন রয়ে গেছে পাতার পর পাতা!

ছোটবেলায় আমাদের বিনোদন বলতে ছিল রোববারের সক্কালবেলার টিভির প্রোগ্রাম। সারা সপ্তাহ অপেক্ষা করে থাকতাম অই ঘণ্টা কয়েকের জন্য। আশেপাশের বাড়িতে তখনও ফিলিপ্সের জাদুর বাক্সটি আসে নাই। চব্বিশ ইঞ্চির এক পেটমোটা টিভি এসে আমাদের দোতলা বাড়িটির স্ট্যাটাস বাড়িয়ে দিল অনেকখানি। বোকা ছাত্রের গরু রচনার মত আমাদের সব গল্পও ফুরাতো টিভির গল্প করে। পাড়াতুতো বন্ধুদের অবাধ যাতায়াত ছিল বাড়িতে, স্কুলের দুচারটে বন্ধুও চলে আসতো সময়ে অসময়ে।

এ সপ্তাহের নাটক ছিল মায়ের বন্ধুদের আড্ডার জন্য। পাশের বাড়ীর দাদী তার কাঁসার পানের বাটা নিয়ে এসে বসতেন আয়েশী ভঙ্গিমায়। নিজে খেতেন দোক্তা দেয়া রঙবাহারী পান, সাথে খেজুর টুকরো, সুগন্ধি মশলা আর তর্জনীর আগায় চুন। মাকেও দিতেন একটা, এপিঠ ওপিঠে খয়ের লাগিয়ে। পানের সুগন্ধে আমরা তাদের আশেপাশে ঘুরঘুর করতাম। মা খানিক চিবিয়ে একটুখানি পান দিতেন খেতে, আর দাদীর মন খুব ভাল থাকলে আঁচলে বাঁধা যষ্টিমধু দিতেন চিবোতে। গাছের শেকড়ের মত কী একটা জিনিস ঐ যষ্টিমধু, চিবুতে গেলে মিষ্টি লাগে।

মাস শেষে বাংলা মুভি ছিল, সেদিন আমাদের ঈদের দিন। রাজ্জাক-কবরীর বই দেখতে ফুলবাড়িয়া থেকে দুই বিচ্ছু ছেলে নিয়ে খালা চলে আসতেন, মায়ের বন্ধুরা তো আসবেনই। আমরা মেঝেতে বসতাম বিছানার নকশা কাটা চাদর পেতে, মা-খালারা খাটের ওপর আসন ঘিরে, ছেলেরা বেতের চেয়ারে। বড়লোক শাশুড়ির শাসানিতে গরীবের মেয়ে শাবানার কান্নায় আমাদের চোখের কোনেও জল গরাত, অথবা জোরসে হাততালি জসিম আর ফারুকের ঢিশুম ঢুশুমে।

নিচতলায় লিভিং রুমে টিভি চলছে, দর্শক বলতে আছে ফ্লাফি আর স্কাই, আমার ককাটিএল পাখি আর পুচকে নিওন টেট্রা মাছ। ওপর তলায় মুভি চলছে একটানা, বোবা হয়ে আছে জিরো ফিগারের এলইডি এলসিডি টিভি! তারা সামার ক্যাম্পে শহরের বাইরে; স্কাইপে অন্য গ্রহে থাকা আমার মা, হলওয়েতে একা একাই লো ভলুমে বাজছে সে সামথিং আই এম গিভিং আপ অন ইউ!

আকাশ ফসর্া হতে শুরু করেছে আমার শহরে; কোথাও কেউ নেই!

৫,৪৩৫ বার দেখা হয়েছে

৬১ টি মন্তব্য : “শিরোনামহীন দিনলিপি”

  1. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    আপা, দেশে থেকেও ঈদ-পুজা'র সেই পুরনো আমেজ আর পাই না।
    আমরা পড়েছি মাঝামাঝি জেনারেশনে, না হতে পারি আমাদের আগের প্রজন্মের মতন অতি রক্ষণশীল...না পারি পরের প্রজন্মের মত অতি উদ্দাম! এখন সব উৎসব ঘরে শুয়ে বসেই কাটে! 🙁


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      🙂 🙂 🙂 🙂

      আগে সবাই সামিল হতো উৎসবে; হিন্দুর পুজোয় মন্ডপ জুড়ে ছিল অধর্েক মুসলিম। এখন বোধকরি উৎসব মানে প্রতিযোগিতা বৈ কিছু নয়। এখন প্রাণের যোগাযোগের চাইতে লোকে প্রাণপাত করে বৈভব প্রদর্শনের। নতুন প্রজন্মের সাথে পুজো বা ঈদ উদযাপন করা হয়নি আমার। ওরা কি করেগো? একখানা ব্লগ লিখো ভাইয়া, একটু জানাও আমাদের, প্লিজ। আমার তারাটিকে ঈদের কাপড়চোপড় সবই দিই বটে কিন্তু তার মাঝে ঈদ উৎসব নিয়ে কোন উচ্ছাস কাজ করে বলে মনে হয়না। বইপত্তর নিয়ে সে স্কুলের পথে হাঁটা দেয় ঈদের ভোরে। নতুন জামাটি লুকিয়ে রাখার গল্প শোনাই তাকে। মায়ের এসব ছেলেমানুষী গল্প শুনতে বড় ভালবাসে সে। ঈদের সালামি পাওয়াটা বেষ্ট পাটর্ অব ঈদ, তারা বলে।

      আমি এখন ঠাকুমার ঝুলির ঠাকুমা বটে জুনা, স্মৃতি হাতড়ে কেবল সময়ের সুগন্ধি খুঁজে ফিরি একা!

      জবাব দিন
      • জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

        আপা, এই ধরণের ব্লগ আমাকে দিয়ে হয় না। 🙁
        মানে বর্ণনামূলক বা নন-ফিকশন! অত ঝানু আমার লেখা না, পর্যবেক্ষণ শক্তিও দুর্বল!

        আমার কাছে মনে হয় এখন সব কিছুতেই সবাই খুব বেশি বাড়াবাড়ি করে! বিশেষ করে টিনএজার বা উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা।
        উৎসব হোক, আর যে কোন গ্যাদারিং হোক, সবকিছুই ফার্স্ট ফুড বা রেস্টুরেন্টকেন্দ্রীক। এক গাদা ছবি তোলা...খাওয়া...হৈ চৈ...ব্যাস!
        কিছু গ্রুপ গাড়ি করে হৈ-হুল্লোড় করতে করতে লং ড্রাইভে যায়...
        আগে যে কোন বড় সার্কেলের আন্তঃসদস্য সম্পর্কগুলো কত সহজ-সরল ছিল। এখনকার সম্পর্কগুলো অনেক বেশি জটিল হয়...

        তবে, মফস্বল শহর বা গ্রামের উৎসবগুলো এখনো কিছুটা আগের মতন আছে...

        বিঃদ্রঃ শিরোনাম বদলে ব্লগের আবহটাই কেমন জানি বদলে গেছে...আমার কাছে এখন আগের চেয়ে বেশি আপন আপন লাগছে! 😀


        ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

        জবাব দিন
        • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

          আমাদের সময়ে ঈদের আগে বরং রেস্টুরেন্ট গুলো খদ্দের পেতোনা। তখন অবশ্য তিন লাখ টাকায় চোলি ঘাগড়াও কিনতোনা কেউ! কত ফ্লাওয়ারি ভাষায় যে ঈদকার্ডের চালাচালি হতো বন্ধুদের সাথে! সবশেষে, ফেইসবুকের ডাক ফেইস অথবা পাউটি ফেইসের কথা আর নাইবা বলি!

          জবাব দিন
  2. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    পড়তে পড়তে যে ভাবনা এলো, তা অস্তিত্ববাদের সাথে যায়, যায় এবসার্ডিজমের সাথেও।

    বন্ধু মিল্টনের একটা উপন্যাসের নাম - মানুষ মূলত একা।
    এই নামে বোধহয় একটা কবিতাও আছে ওর।

    কবিতাটা পেলাম না কিন্তু এই পংক্তি গুলো পেলাম নেট ঘেটে.........
    "গোধুলী লগ্ন আস্তগামী সূর্য ;
    এভাবেই বছর চলে যায়,
    চলে যায় জীবন
    শুধু থেকে যায় অসমাপ্ত ভালবাসা
    তোমার আমার জীবনের অংক আসলেই অসমাপ্ত

    অবশেষে মানুষ একদিন আবিষ্কার করে
    পৃথিবীতে মানুষ মূলত একা।"

    আসলেই কি তাই???????????


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  3. ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

    লেখাটা খুব ভালো লাগলো! আপনার সাথে আমার বয়সের পার্থক্য মাত্র এক বৎসরের। তাই আপনার স্মৃতির সাথে আমার স্মৃতির অনেক কিছুই কমোন। 'রোজ রোজ' নামক ছোটদের ধারাবাহিক নাটকটি মনে পড়ে, যেখানে সাজিয়া আর শিপলু অভিনয় করতো? ক্যাসপার কার্টুন বা কুমকুম? আপনাদের মতো আমাদের বাড়ীতেও বাংলা সিনেমার দিন অনেক দর্শক আসতেন পঞ্চাশ পার্সেন্ট চেনা আর পঞ্চাশ পার্সেন্ট অচেনা। বিজ্ঞাপনের কল্যাণে তিন ঘন্টার ছবি দেখতে চার/সাড়ে চার ঘন্টা লাগতো। সবাই চলে যাওয়ার পর বাড়িটা ফাকা হয়ে যেত। অচেনা সাদাসিদা অনেক দরিদ্র মানুষও আসতো সিনেমা দেখতে কিন্তু কোনদিনও ঘরের একটআ জিনিস এদিক থেকে ওদিক হয়নি। হায় কোথায় গেলো আজ সেসব মোরালিটি!

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      🙂 🙂 🙂 🙂

      সাজিয়া শিপলুর কথা খুব মনে আছে আমার। সীল, মকর্ এন্ড মিন্ডি, আর লুসি দেখতে পেতাম রবিবারের সকালবেলা। মনে পড়ে? বায়োনিক ওমেন, সিকস মিলিয়ন ডলার ম্যান, চালর্িস এন্জেলস এলো আরো একটু পর। যে রোববার বাড়িতে কেউ আসতেন না সেদিন খুব ঘুমঘুম লাগতো। কারো অনুপস্থিতির ঘটনাটি পরপর দুবার ঘটলে আমার মা খুঁজে পেতে কুশল জানতে চাইতেন কারো কাছে।

      সিসিবিতে দেয়া তথ্য অনুযায়ী আমরা ইয়ারমেট রমিত, তোমার এই আপনি আজ্ঞেটা যদিত্ত উপভোগই করলাম।

      জবাব দিন
      • ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

        ও আমরা ইয়ারমেট। রাইট। ১৯৮৮ সালে এইচ. এস. সি. পাশ করলে তো আমরা ইয়ারমেটই। আমি আবার খেয়াল করছিলাম ১৯৮৩ ইনটেক-এর দিকে, ভুলটা ওখানেই হয়েছে।
        যাহোক, 'সিকস মিলিয়ন ডলার ম্যান' এসেছে প্রথম তারপর 'বায়োনিক ওমেন', একটি সিরিয়াল-এ বায়োনিক ম্যান ও ওমেন দুজনকেই দেখা গেলো। আমার অবশ্য আরো আগে থেকে কিছু মনে পড়ে, যেমন আবদুল্লাহ আবু সাঈদ স্যার উপস্থাপিত 'সপ্তবর্ণা' নামক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানটি। এটা ১৯৭৫-৭৬ সালের কথা। ঐ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানেই আজম খান গেয়েছিলেন তাঁর বিখ্যাত 'আলাল ও দুলাল' গানটি। আমেরিকান টেলি সিরিয়ালগুলোর মধ্যে ছিলো 'হাওয়াই ফাইভ ও', 'এ্যাভেঞ্জারস', 'জেসন কিং', 'ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড ওয়েস্ট'। কুকুর নিয়ে একটা সিরিয়ার ছিলো 'রান জো রান', আর ডলফিন নিয়ে ছিলো 'ফ্লিপারস', আরো ছিলো হাতি নিয়ে 'মায়া'। পরবর্তিতে এসেছিলো 'ডালাস', 'ওয়ালটমস' ইত্যাদি। এরপর এলো জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, প্রথিতযশা সাংবাদিক ফজলে লোহানীর 'যদি কিছু মনে না করেন', তারই আদলে এখন হচ্ছে 'ইত্যাদি'। একসময় টিভিতে সিরিয়াল ছিলো 'মেঘলা রাতের তারা' (বৃটিশ শাসনামলে আমাদের উপর বৃটিশদের নির্যাতন-নিপীড়ন নিয়ে ছিলো নাটকগুলো), এছাড়া ছিলো ইতিহাস বিষয়ক সিরিয়াল 'রাজা-রাজ্য-রাজধানী', ১৯৮২ সালের দিকে এলো জনপ্রিয় সিরিয়াল 'সকাল-সন্ধ্যা' (আমাদের ঘর-সংসারের দৈনন্দিন জীবন নিয়ে)। ঐ পথ ধরে এরপর অনেক সিরিয়ালই হতে থাকে। 'এ সপ্তাহের নাটক'-এর জন্য আমরা সারা সপ্তাহ অপেক্ষা করতাম। খুব আলাপ-আলোচনা হতো ঐ নিয়ে পরবর্তি এক সপ্তাহ। আতিকুল হক চৌধুরীর নাটকগুলো সাড়া জাগাতো। মাসিক সিনেমার কথা খুব মনে পড়ে, তবে ১৯৭৫-৭৬ সালে একসময় প্রতি সপ্তাহেই বাংলা সিনেমা দেখানো হতো, তবে সেটা বেশীদিন কন্টিনিউ করেনি। মাসিক সিনেমাগুলো আমরা কলেজেও আমরা বেশ উপভোগ করতাম। মাঝে মাঝে প্রিন্সিপালকে রিকোয়েস্ট করতে হতো। লেট নাইটে আমেরিকান ম্যুভিও দেখানো হতো বিটিভি-তে। মজার একটা বিষয় মনে পড়ে কিনা? নাটক, আমেরিকান সিরিয়াল এগুলো একসময় হতো রাত আটটায়, আটটা থেকে নয়টা তারপর আমরা ঘুমিয়ে যেতাম। এরপর সময়টা পরিবর্তন করে নয়টা থেকে দশটা করা হলো, সবার সে কি রাগ, এতো রাতে অনুষ্ঠান দেখবো কেমন করে! আরো উপভোগ করতাম সিনেমার গান নিয়ে অনুষ্ঠান 'ছায়া-ছন্দ'। আগে রবিবার ছিলো সাপ্তাহিক ছুটির দিন, এরশাদ এসে করলো শুক্রবার।

        তোমাদের ব্যাচের সাথে আমাদের ব্যাচের সাক্ষাৎ হয়েছিলো দুবার - এক্সকারসনের সময়, ফৌজদারহাটে ও পতেঙ্গা বীচে। মনে পড়ে?

        জবাব দিন
        • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

          🙂 🙂 🙂 🙂

          ওমা! এ যে দেখি বারো হাত কাঁকুড়ের তের হাত বিচি, রমিত!

          কী চমৎকার করেই না এক দশকের ইতিহাস লিখে ফেললে তুমি! এ যেন রেফারেন্স দিয়ে একখানা রিসাচর্ পেপার! এক একটা নাম পড়ছিলাম আর এক একটা ভুলে যাওয়া চরিত্র এসে দাঁড়াচ্ছিল সামনে, জানো। বায়োনিক ওম্যান দেখে আমার বন্ধু সুলতানা ওদের বাড়ির একতলার ওপর থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার ডান পাটি ভেঙে ফেললো একদিন। লাফটাফ দেবার মত সাহস আমার ছিলনা বটে; আমি লিন্ডসে ওয়াগনারের প্রেমে পড়ে গেলাম। তার পোষ্টার কিনে শোবার ঘরের দেয়াল টেয়াল ভরিয়ে ফেললাম। চালর্িস এন্জেলস কী যে মুগ্ধতায় ডুবিয়ে রাখতো এক সময়, আহ! ইনক্রেডিবল হাল্ককেই বা ভুলি কি করে!
          এফসিসির হাসপাতালে ছিল আমাদের ডেরা। আমাদের কলেজ বাসটি ছিল সবুজ পদর্াঘেরা কুঠুরিবিশেষ। তোমরা আমাদের বাসের ছবি যে তুললে কত, আমরা কুটিপাটি হাসতাম তোমাদের কান্ড কারখানা দেখে। এফসিসিতে তোমাদের দেখতে পাইনি; তোমাদের সাথে দেখা হলো পতেঙ্গা বিচে। তোমাদের কোন একজন বন্ধু ক্যাসেট প্লেয়ার নিয়ে এসেছিল কাঁধে করে। আমাদের উদ্দেশে কত প্রেমের গানই না বাজালে তোমরা সমুদ্রকে তোয়াক্কা না করে!

          নাইস টু মিট ইউ, রমিত!

          জবাব দিন
  4. মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

    বাংলা হরফে ইংরেজি টাইটেল দেখে লেখটি প্রথমে আমার একদম পড়তেই ইচ্ছে করছিল না। কবুল করতে দ্বিধা নেই, এমন না হক ইচ্ছা-অনিচ্ছা আমারই ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা ও কূপমণ্ডূকতা। কিন্তু পরে কি ভেবে যেন খুলেই ফেললাম এবং প্রথম অনুচ্ছেদ পড়েই বুঝে ফেললাম না খুললে কি অনাবিল আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতাম!

    আমার স্মৃতিতে ঈদ হলো সস্তা ইরেজারে পেনসিলের কাটাকুটি মোছার মত, ঝাপসা হয়ে এসেছে প্রায় কিন্তু আঁকিবুকির ক্ষতচিহ্ন রয়ে গেছে পাতার পর পাতা!

    খুব, খুব মনে গেঁথে গেছে কথাটি!

    পাশের বাড়ীর দাদী তার কাঁসার পানের বাটা নিয়ে এসে বসতেন আয়েশী ভঙ্গিমায়। নিজে খেতেন দোক্তা দেয়া রঙ বাহারী পান, সাথে খেজুর টুকরো, সুগন্ধি মশলা আর তর্জনীর আগায় চুন। মাকেও দিতেন একটা, এপিঠ ওপিঠে খয়ের লাগিয়ে। পানের সুগন্ধে আমরা তাদের আশেপাশে ঘুরঘুর করতাম। মা খানিক চিবিয়ে একটুখানি পান দিতেন খেতে, আর দাদীর মন খুব ভাল থাকলে আঁচলে বাঁধা যষ্টিমধু দিতেন চিবোতে। গাছের শেকড়ের মত কী একটা জিনিস ঐ যষ্টিমধু, চিবুতে গেলে মিষ্টি লাগে।

    আহা, সৌহার্দের কী আন্তরিক প্রাণবন্ততা!


    দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

    জবাব দিন
  5. সাইদুল (৭৬-৮২)

    মন খারাপ হয়ে গেলো । লেখাটাই মন খারাপ করা। তবে এই মন খারাপ করাই কী আমরা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করিনা?
    (বাংলাদেশে আমি একটা জিনিষ খুব লক্ষ করি, সেলিব্রিটিরা ঈদটাকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চাননা। ঈদে কি করেন? বেশির ভাগ উত্তর ' ঘুমাই'। যেন সারা বছর ওনারা ঘুমানোর সময় পান না।
    বিদেশে ক্রিস মাস নিয়ে কত ভালো ভালো সিনেমা দেখি, আমাদের কিছু টিভি নাটক ছাড়া আর কিছু নেই। )
    ব্র্যাকেটে দিলাম, কারণ একেকবার মনে হচ্ছিল, লেখার মেজাজের সাথে যাচ্ছে না।

    যাই হোক লেখাটা খুব ভালো হয়েছে। সব কিছু চোখের আমনে যেন দেখতে পাচ্ছিলাম


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      ভাবে ভংগীমায় কতভাবেই না আমরা দীনতা প্রকাশ করি, ভাইয়া। আমরা আন্চলিক হওয়ার আগে নিজেদের আন্তজর্াতিক বলে ভাবতে ভালবাসি। হলিউডের কথা বাদ দিন, বলিউডে কতভাবেই না উৎসবকে চিত্রিত করা হয়। গেল পুজোয় আমার বন্ধু পাথর্ ঋতুপণর্ের উৎসব মুভিটি পাঠিয়েছিলেন। মুভি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম বললে কম বলা হবে!

      অটঃ নিজেকে ব্যস্ত বলে প্রমাণ করতে না পারলে সেলিব্রিটি বলে তো জাতে ওঠা যাবেনা।

      ব্লগে আমার লেখায় আপনার উপস্থিতি আমায় একই সাথে সম্মানিত এবং আচ্ছন্ন করে!

      জবাব দিন
  6. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    শেষ কবে ঈদকে ঈদের মত উদযাপন করেছি মনে পড়ছে না, ঈদও কিভাবে জানি একটা রুটিনের অংশ হয়ে গিয়েছে। এবারের ঈদের দিকে তাই অনেক আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছি। ছেলেকে কেন্দ্র করে নতুন করে আবার ঈদ উপভোগ করা শুরু করতে চাই।

    লেখা সবসময়ের মতই দারুন হয়েছে। :hatsoff:

    (আগের শিরোনামটা দেখে একটু মন খচখচ করছিলো, বাংলা ব্লগে ইংরেজি শিরোনাম ঠিক নিতে পারি না। তখন পোস্ট পড়ার সময় পায়নি। এখন আবার এসে দেখি আপনি শিরোনাম বদলে ফেলেছেন। এ জন্য ধন্যবাদ 🙂 )


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  7. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    আমার মনে হয়, নিতান্ত ব্যক্তিগত মত অবশ্যই, তোমার আগের ক্যাপশনটাই বেটার ছিলো। আর এ শিরোনামটাতে “সূর্যর আগে” কথাটা সূর্যরাগে হবে কি?
    শেষ স্তবকের আগে পর্যন্ত লেখাটাতে এক ধরনের আমেজ, আর শেষে গিয়ে অন্য ধরনের। প্রথমাংশ পড়ে যেতে যেতে ছবি দেখার মত সবকিছু দেখছিলাম, কিন্তু শেষাংশে এসে শুনশান নিস্তব্ধতা অনুভব করলাম। গানটি ও গানের দৃশ্যকল্পও খুব ভালো লাগলো।
    তোমার আর সব লেখার মতই এটাও খুব সুন্দর হয়েছে।

    জবাব দিন
  8. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    আমাদের সেই সচিত্র সন্ধানীও নেই, বিচিত্রাও নেই, লেজটুকু যাও ছিলো সাপ্তাহিক ২০০০ সেটাও বন্ধ হয়েছে । ঈদসংখ্যা তো আর তাই থাকলোই না । (ম্যাগাজিন হয়তো আরো কিছু আছে তবে সেই পুরোনো, সনাতন, ঐতিহ্যের গন্ধ মাখা কিছু আর নেই ।
    নেই সেই উতসব পালা পার্বণ উদযাপনের শেকড় প্রোথিত কোনো বৃক্ষ । এখন যেনো গুল্মের যুগ ।
    আর সখ্য সান্নিধ্যের নৈকট্যগুলোও যেনো কার্বন পেপারের ছাপ । আসল কিছু নয় । এমনটা সব কিছুতে, সব মানুষে অল্প বিস্তর ছড়িয়েছে ।
    তাই চিবানো পানের ভাগ বা আঁচলের খুট থেকে জিষ্টিমধূ ! ইতিহাসের বইতে মাইগ্রেট করেছে ...
    অথচ বাস্তবতা হলো পৃথিবী এবং আমরা দিব্যি দিনাতিপাত করছি, হাসিতে দাঁতও দেখাচ্ছি এখন তখন ।
    বিবর্তনের নীতি বা রীতি যেটাই বলি ... সবাই তারই দাসানুদাস ।
    তাই দীর্ঘশ্বাস ফেলবার মতোন অতো কিছু আর যায়নি আলাদা করে প্রাপ্তির খাতা থেকে হারিয়ে ।
    সিলেবাসই পাল্টেছে ।

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      🙂 🙂 🙂 🙂

      সে কি? তার মানে এখন মানুষ আর ঈদ বা পূজোসংখ্যা পড়েন না? ঈদে, পূজোয় তাহলে আর আনন্দের কি রইল? সময়ের সাথে সাথে মানুষের পাঠাভ্যাস অনেক বদলেছে ঠিকই; আমরা কিন্তু এখনো নাকের ডগায় চশমা এঁটে ছাপানো একটি বই ; নিদেন পক্ষে একটি কিন্ডেল ঝুলিয়ে রাখি চোখের সামনে। বুকের ওপর একখানা মুজতবা আলি অথবা শিবরাম চক্কোত্তি নইলে তো ঘুমই আসেনা! আই এম সো স্পয়েল্ড! দেশে থাকতে দোতলা থেকে নেমে বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম যেন আগে সাহিত্য সাময়িকীগুলো হাতে পাই।

      আমি যষ্টিমধু খেয়েছি ছোটবেলায় এই সত্যটি আমায় একটানে প্রায় ডায়নোসর এরাতে নিয়ে গেল ভাবছিলাম! ঠিক দীর্ঘশ্বাস নয়গো ভাইয়া, শেকড়ের থেকে যতো দূরেই যাইনা কেন নিজের অজান্তে দিনশেষে সেই শেকড়েই আশ্রয় খুঁজি!

      জবাব দিন
    • ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

      এ বিষয়ে একজন সাংবাদিক বলেছিলেন যে, এখনকার দৈনিক পত্রিকাগুলো যে পরিমান তথ্য/লেখা দেয় তাতে আর সাপ্তাহিকী-র ভাত থাকেনা। তাই ওগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। তবে সাপ্তাহিক রোববার তো এখনো আছে। কদিন আগে আমার একটা লেখা গেলো ওখানে।

      জবাব দিন
  9. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    লেখাটাই ঈদ, দুর্গা পূজা।
    ঈদের নাটক, পুজোর ঢাক।
    সেমাই কিংবা প্রসাদ। মন্তব্যগুলোও তালে তাল মিলিয়ে সেই রকম!
    বারবার এখানে এসে একটা একটা করে সন্দেশ খেয়ে যেতে হবে।
    উৎসবের মানুষ আর মানুষের উৎসব --- এ সম্মিলনীর কথা ভেবে স্মৃতিকাতর হয়ে গেলাম আপা।
    নষ্টালজিক করে দিতে তোমার জুড়ি নাই।

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      🙂 🙂 🙂 🙂

      প্রিয় মানুষ অথবা প্রিয় একটি বস্তু হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখবার মাঝেও কী যে রোমান্টিসিজম কাজ করে, জানো! কিন্ডেল মিন্ডেলে এখন পড়ি বটে তাতে প্রয়োজন মিটলেও স্পশর্ সুখের আনন্দটুকু আর পাইনা।

      পিডিএফ খুঁজে পেলে roop9194@icloud.com এ পাঠিয়ে দিও, ভাইয়া। ভাল থেকো।

      জবাব দিন
  10. কাজী সাদিক (৮৪-৯০)

    পড়ার সময় তরতরিয়ে পড়ার মজা। আর শেষ হলে আপনার ভাষাতেই "হৃদয় খুঁড়িয়া" জাগানো বেদনা নিয়ে যায় অনেকটা সময়। মহা মুশকিল আপনার লিখা নিয়ে আপা!

    গতবছরের পূজার আনন্দমেলা পড়ে বিশাল হতাশ হয়েছি। হয় লিখার মানের বিসর্জন হয়ে গেছে, অথবা আমিই বুড়ো হয়ে গেছি (মনে হয় না!)।

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      🙂 🙂 🙂 🙂

      হায়! হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসলেও এডিটিং এর ক্যাচালে খুঁড়িয়াটিকে কিছুতেই বাগে আনতে পারলামনা কাল রাতে। ঈদে বা পূজোয় নতুন জামাটির মতই সাহিত্য সাময়িকীগুলো ছিল আমাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

      আমরা হারানোর বেদনায় কাতর থাকি সারাক্ষণ তাই বোধকরি প্রাপ্তির ঝলমলানি চোখে পড়ে কম।

      জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      🙂 🙂 🙂 🙂

      আমার ফৌজি ভাইটি সিসিবিতে কি করেন তাই ভাবছিলাম! সোশ্যাল মিডিয়াতে খুঁজে না পেয়ে তোর মত পাগল কেউ কেউ ঠিকই সিসিবিতে আমার কুশল জানতে আসেন; ভালবাসা বুঝি একেই বলে!
      তারা বন্ধুদের পেয়ে তার মা'টিকে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছেনা। কাল রাতে আমি বললাম, তোমাকে মিস করছি ভূতো, উত্তরে সে বললো, ডিনারে লন্ডন ব্রয়েল খেয়েছি, মা! আমি বললাম, কাল সারা রাত জেগেই কাটলো; উত্তরে সে বললো, ফ্লাফিকে খাবার দিয়েছোতো?

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।