অডিও ব্লগঃ ক্রোধ অথবা অভিমানের সুর

বাড়ির মোড়ে একাকী দাঁড়ানো ম্যাগনোলিয়া ফুলের সাথে তার অভিমান হয়েছিল বড়। ছড়ানো ছিটানো খয়েরী পাইন কোনে পা মাড়িয়ে চলে এসেছে একাকী। সুগারবেরীর বাকলে চিবোনো সাদা চুইং গামের শব অথবা সিকামোর গাছের ডাল জ্বলন্ত সিগারেটের আগুনে পুড়েছে আক্রোশে।

লাল বুকের কাঠঠোকরা কাঁচের ভারী জানালায় ঠুকরে গেছে নিয়ম করে, চারদিকে তাকিয়ে বাদামী থ্রেশার চকিতে ডুব দিয়েছে নালার জলে। ক্লান্ত দিনের শেষে রাত নেমে এলে শোবার ঘরের একলা আকাশ আর নিভু নিভু তারার সাথেও অভিমানে ঠোঁট ফুলিয়েছে কিশোরী বালিকা।

কোথাও কেউ নেই। অথবা কোথাও তো কারোর থাকবারও কথা নয় এই অবেলায়!

ভোর রাতে ঘুম ভাঙতেই মনে হলো অনেকদিন সে বাজায়নি কিছুই। পা টিপেটিপে নিচতলায় নেমে পিয়ানোতে টুংটাং চলে অবহেলায়। রাগ আর খেয়ালের মিশেলে ব্যাকরণ না মেনে কত কী বাজায় সে আবোলতাবোল।

অর্বাচীন বালিকার অভিমান সুরের ধারা হয়ে, না বলা কথা হয়ে, অদেখা আলো হয়ে, অথবা অচিন পাখি হয়ে ছড়িয়ে পরে ভোরের নিস্তব্ধতায়!

প্রভাত

আমার জানালায় প্রভাত

ফটো ক্রেডিটঃ লেখক

৩,২৬৯ বার দেখা হয়েছে

২০ টি মন্তব্য : “অডিও ব্লগঃ ক্রোধ অথবা অভিমানের সুর”

  1. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    না শুনে, আগে পড়ে নিলাম। এবং আন্দোলিত হলাম ভীষণভাবেই -- অভিমানের পত্রপাঠে। সব শেষের দৃশ্যে পৌঁছে দেখি ছবিও অপেক্ষা করে আছে ভোরের আলো হয়ে, পাখির কলতান হয়ে।
    শেষে,
    বালিকার সুতীব্র অভিমান বুঝি
    আলোয় গিয়েছে ভেসে?

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      বালিকা একটা গ্রাউচি লিটল মনস্টার হয়ে বসেছিল বিকেল থেকে, তারই ফলাফল এই আবোলতাবোল সংলাপ, নূপুর!

      তোমার মুগ্ধ চোখ দেখে মনে হচ্ছে মাঝেমধ্যে উরাধুরা টাইপ মন খারাপ হওয়াটা খুব একটা মন্দ নয়কো!

      বাজনা শুনলে শেষ অবধি?

      জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      🙂 🙂 🙂 🙂

      ওরে ওরে আমাদের ফটোগ্রাফার বলছেন ছবি ভালো হয়েছে! তোমার কথা শুনে এবার আমার ছবি ব্লগ নামাতে মন চাইছে, সাদিক! ডিএসএলআর আসার আগে আমি ছবি নিয়ে মেতেছিলাম কিছুদিন, জানো। দুটো চারটে ক্লাসও করেছিলাম ইশকুলে গিয়ে। ছত্রিশের একটা ফিল্মে যদি একটা ছবিও ভাল আসতো খুশিতে খলবল করতাম। আমার কন্যা আর তার বন্ধুদের ছবি তুলেছি অজস্র। হার্ডকপি ছবিগুলো রয়ে গেছে বাক্সবন্দী হয়ে। সেগুলো নিয়েও কাজ করা যেতে পারে মনে হচ্ছে।

      এই দুটো ছবিই আমার জানালা থেকে তোলা। অনেক ধন্যবাদ আমার ব্লগ বাড়িতে ঢু দেবার জন্য।

      জবাব দিন
  2. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    আমিও না নূপুরের মতই টেক্সটা আগে পড়ে নিলাম।
    শুধু "অডিও ব্লগ" দেখে, একটা পাঠ শোনার প্রস্তুতি ছিল। শুনতে গিয়ে দেখি, একি?
    এ দেখি বেদনার অভিমানের সুর!!!
    এই ভেবে ভাল লাগলো যে তুমি বাজাতে পারো বলেই না বাজিয়ে হলেও ঐসব বেদনা ও অভিমান কিছুটা হলেও ভেন্টিলেট করতে পারো।
    যারা তা পারে না, তাঁদের জন্য কি সিচুয়েশন আরও কঠিন হয়ে যায়?
    কি জানি?
    পুরো প্রযোজনাটা দারুন একটা ব্লগ হিসাবে নেমে গেল কিন্তু, লক্ষ্য করেছো?
    তাই অনেকগুলো তালি শোনার পর.........
    :clap: :clap: :clap: :clap: :clap: :clap: :clap: :clap:


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      মন খারাপ হলে হয় আমি একাকী থাকতে পছন্দ করি। কারো সাথে কথা বলতে ভাল লাগেনা অথবা কারো সাথে শেয়ারও করতে মন চায়না আমার উচাটন হবার কাহিনী। চুপ হয়ে যাই, মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকি। বাজনা বাজাই দুমদুমিয়ে অথবা হাঁটতে বেড়ুই একা একা। নিজের সাথে কথা বলি। দুটো চারটে বস্তা পচা কবিতা লিখবার চেষ্টাও যে চলে না তা নয়!

      আমি গলা উঁচু করে কথা বলতে শিখিনি। চিৎকার চেঁচামেচি আমার ধাতে নেই, ভাইয়া! আমার নীরবতাই আমার প্রতিবাদ এটি আমার বন্ধু অথবা স্বজনেরা জানেন। তাই আমি চুপ হয়ে গেলে তারা বড় বিপদে পরে যান।

      তুমি কি কর, ভাইয়া?

      দশ মিনিটের বাজনা শুনবার জন্য ধন্যবাদ তো দিতেই হয় তোমাকে। :boss: :boss:

      জবাব দিন
      • পারভেজ (৭৮-৮৪)

        "তুমি কি কর, ভাইয়া?"

        আগে তো কখনো মন খারাপ হতো না, অনেক কিছুতে নিজেকে ঢুবিয়ে রেখে মন খারাপ হবার কোন সুযোগই দিতাম না।
        এই কিছুদিন হলো, দেখি, মাঝে মাঝে মন খারাপ হয়।
        খুবই খারাপ, যাকে বলে: আকাশ-পাতল খারাপ।
        আজকাল, মন খারাপ হলে লিখি আর সশব্দে কবিতা আওড়াই। যে খান দশেক কবিতা মুখস্ত আছে, ঐগুলো বার বার আওরাতে থাকি - যতক্ষন না ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে যাচ্ছি.........


        Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

        জবাব দিন
  3. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    ভোরের নিস্তব্ধতা যদি ভাঙ্গে এভাবে তো ভাঙ্গুক নিত্য ।
    এমনটা যে মনে হলো তা শতভাগ নিরেট সত্য ।

    আর হ্যা আমার কাছেও মন খারাপ বা সংকটে শ্রেষ্ঠ আমারই একান্ত "সলিটেয়ার্স কেজ" ।
    নিজের মুখোমুখি থাকার চেয়ে আর বড় কিছু নেই । ইচ্ছে হলো তো নিজের দুই স্বত্তা মুখোমুখি হলো দর্পণে কিংবা ইচ্ছে হলে তা হলো দেয়াল বিভেদ-বিচ্ছেদ ।

    কিঞ্চিত থিতু হলে কাগজ কলম তো আছেই ।

    তা এমন মন খারাপ মাঝে মধ্যে হওয়া দেখছি মন্দ না ।
    এই ব্লগের পাঠক-শ্রোতাদের জন্য তো নয়ই ।

    সেই সাথে এক জোড়া ছবি যখন অমন করে ধরে রাখে অবেলার সবটুকু রঙ ।

    🙂

    জবাব দিন
  4. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    সুর, তাল, লয়, রাগ-রাগিণী ইত্যাদি বিষয়ে আমি এক নীরেট মূর্খ। তবে যে বাজনা শুনলাম, সেটাকে কখনো বোবাকান্না আবার কখনো বা একটানা বৃষ্টির ঝনঝনিয়ে ওঠা গান বলেই মনে হলো। থেমে যাবার পর মনে হলো আকাশটা যেন ফর্সা হয়ে গেছে। আর পরে ছবিগুলো দেখে মনে হলো, এখনই পাখী ডাকবে, ঝলমলে রোদ হাসবে।
    তোমার জানালা থেকে তোলা আরও কিছু ছবি দেখার ইচ্ছেটা তোলা রইলো।

    জবাব দিন
  5. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    ডো-রে-মি-ফা আমিও যে বুঝি খুব তা' নয়গো, ভাইয়া! রাগ রাগিনী অতোটা না বুঝলেও বুকের ভেতর সুরের নিত্য আসা যাওয়া!

    কী ভীষণ ছন্দ-কাব্যময় কথা বলেন আপনি! মন জুড়িয়ে গেলো আমার! 🙂 🙂 🙂 🙂

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাবিনা (৮৩-৮৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।