অডিও ব্লগঃ বাংলা গানের বুলবুলি

ক্যাডেট কলেজে বাংলা সংবাদ শোনাটা আমাদের বাধ্যতামূলক ছিল। “সব ক’টা জানালা খুলে দাও না” শুরু হলেই টিভির ভলিউম বাড়ানো হতো আর আমরা পড়িমরি করে ছুট লাগাতাম টিভি রুমের দিকে। দেশের খবর শোনাতে আমাদের আগ্রহ ছিল না মোটে, আমরা বরং এই গানের টানে যেতাম সেখানে। “ওরা আসবে চুপিচুপি যারা এই দেশটাকে ভালবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ” শুনলেই দিন শেষের ঝিমিয়ে পরা রক্ত উত্তাপ ছড়াতো সেই কৈশোরে!

যে মানুষটির গান শুনে দেশ আর মাটির প্রতি আমাদের প্রজন্মের ভালবাসা জন্মেছে তাঁর নাম আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল।

তাঁর নাম আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল

তাঁর নাম আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল

অসংখ্য কালজয়ী গানের গীতিকার, সুরকার আর সঙ্গীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৫৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। মা ইফাত আরা এবং বাবা ওয়াফিজ আহমেদের সংসারে গানের পাখী বুলবুল ছোটবেলা থেকেই মুখে মুখে গান রচনা করতেন। ১৯৭১ সালে কিশোর বুলবুল দেশ মাতৃকার টানে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং একাধিকবার শত্রুসেনাদের হাতে বন্দী হন। সত্তুরের দশকের শেষ দিকে তিনি বাংলা ছায়াছবির সাথে যুক্ত হন এবং এরপর তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় নাই।

কেরিয়ার এর শুরুতে বুলবুল গিটার এবং পরে কীবোর্ড বাজাতেন। এখন তিনি বেহালার সুরে মোহিত হয়ে সুর তুলছেন তাতে। পনের শতাধিক ছায়াছবির গান, দুই শতাধিক আধুনিক গান এবং এক শতাধিক দেশাত্মবোধক গানের স্রষ্টা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের নাম এদেশের মানুষের মনে লেখা থাকবে চিরকাল। তিন শতাধিক বাংলা ছায়াছবিতে বুলবুল সঙ্গীত পরিচালনা করেন।

তিনি রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক, শিখা অনির্বাণ পদক, এবং রাষ্ট্রপতির পুরষ্কার সহ অন্যান্য অসংখ্য পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। ছায়াছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করে পেয়েছেন দুই বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার এবং এগারো বার বাচসাস পুরষ্কার।

চারণ কবি আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সাথে তাঁর সাম্প্রতিক কাজ নিয়ে কথা হচ্ছিল। তিনি জানান, গত সাড়ে আট বছরের সাধনালব্ধ গবেষণা কর্ম “The Circle of Sixteenths” নামক বইটির লেখা সম্প্রতি শেষ করেছেন তিনি। সঙ্গীত যে কেবল কথা ও সুরের খেলা নয় বরং সঙ্গীতেরও একটা নিয়ম নীতি আছে, আছে কিছু গণিতের মত সুত্র এসব নিয়েই লেখা হয়েছে এই বইটি। “The Circle of Sixteenths” নামক বইটি ভবিষ্যতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্গীতে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণকারী ছাত্রছাত্রী এবং গবেষকদের কাজে আসবে বলে আশা করা যায়।

কথায় কথায় গান করেন এই অসামান্য মানুষটি! তাঁর উচ্চারিত প্রতিটি শব্দই গান হয়ে অনুরণিত হয় মনে। আমার এলেবেলে সাদামাটা লেখা গান আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুরে মূর্ছনা ছড়াবে অচিরেই এটা ভাবতেই মূর্ছা যাচ্ছি প্রতি মুহূর্তে!

নিরহংকারী, বিনয়ী এই গুণী শিল্পীর দীর্ঘ সুস্থ জীবন কামনা করছি যেন তিনি আমাদের আরো অনেক গান উপহার দিতে পারেন।

৩,৩৬৩ বার দেখা হয়েছে

২৮ টি মন্তব্য : “অডিও ব্লগঃ বাংলা গানের বুলবুলি”

  1. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    "নিরহংকারী, বিনয়ী এই গুণী শিল্পীর দীর্ঘ সুস্থ জীবন কামনা করছি যেন তিনি আমাদের আরো অনেক গান উপহার দিতে পারেন।"
    এটা আমাদের সবারই কামনা।
    একটা কথা ভেবে খুবই অবাক হই। আমাদের চেয়ে উনি সামান্য বয়োজ্যেষ্ঠ। মাত্র ৭-৮ বছরের। অথচ অভিজ্ঞতায়, অর্জনে কি যোজন যোজন এগিয়ে।
    আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি আর উনি তাতে অংশ নিয়েছেন।
    মাত্র ১৮-১৯ বছর বয়স থেকেই উনি গান বানাচ্ছেন। অথচ এই বয়সের অনেক ছেলে মেয়েকে এখনো বাবা-মা সাথে করে কলেজে পৌছে দেয়।
    আমাদের অনেকেই আছে, ক্যাডেট কলেজে পড়াশুনা করার কারনে নিজেদের বিশাল কিছু একটা কেউকেটা ভাবি। কিন্তু সেটা যে কত বড় ভুল, তা এই লোকটির জীবনের দিকে তাকালেই বোঝা যায়।
    অনেক শুভ কামনা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের জন্য


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  2. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    :boss: :boss: :boss: :boss:

    সব কটা জানালা খুলে দাও না, ও মাঝি নাও ছাইড়া দে, সেই রেল লাইনের ধারে, সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য, মাগো আর তোমাকে ঘুম পাড়ানি গান... এই সব কালজয়ী গান যিনি রচনা করেছেন তিনি জাগতিক সব অহংকারের ওপরে!

    অনেক ধন্যবাদ, ভাইয়া!

    জবাব দিন
  3. একজন অসাধারণ মানুষকে নিয়ে এই লেখাটা অসাধারণ হয়েছে।উনি একজন মহৎ মানুষ।উনার গুণগান এতো অলপ কথায় বলে শেষ করা যাবেনা।রীতিমত গবেষণামূলক টাইপের লেখা হয়েছে।খুব ভালো লাগল। :boss: :boss:

    জবাব দিন
  4. জিয়া হায়দার সোহেল (৮৯-৯৫)

    এই মানুষটি সত্যি অসাধারন। তার কাজ যেমন ভাবে নতুনদের মাঝে ছড়ানোর কথা ছিল তেমন ভাবে হয়নি, সেটা নতুনদের গানের ধরনই আমাদের জানিয়ে দে। তারপরেও এই বাংলাদেশ যতদিন বাঁচবে ততদিন বুলবুল ভাইয়ের গানগুলি বেঁচে থাকবে কারন শ্রেণীবিন্যাসে গানগুলি সত্যি উচুস্তরের এবং মানুষের ভিতরকার গান। আল্লাহর কাছে উনার সুস্থতা কামনা করি। ভালবাসা মানুষটির জন্য।

    আপু তুমি অসাধারন করে লিখছ। এমন কি উইকপেডিইয়াতেও এত সুন্দর করে গুছিয়ে বলে নাই। শুভকামনা রইল অফুরান। (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
  5. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    এখন আর ৮ টার সংবাদ দেখানো হয় না। ঐ সময় প্রেপ চলে। রাত ১০ টায় প্রেপ শেষে হাউজে এসে মনে হয় না ইংরেজি সংবাদ টাও দেখা হতো।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  6. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    ৭১ এর পর বাঙলাদেশে একটাই হিরো ছিলো, সেটা জাফর ইকবাল। সত্যিকার নায়োকচিত বলতে যা বুঝায় আর কি


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  7. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    সত্যি কথা বলতে ওনার সম্পর্কে একটা সময় পর্যন্ত তেমন কিছুই জানতাম না, ক্লোজ আপ ওয়ানে বিচারক হিসেবে মজার মজার কমেন্ট করতেন সেটা দেখে মজা পেতাম। এর মাঝে ওখানে একটা পর্ব করলো শুধু ওনার করা গান নিয়ে, অবাক হয়ে দেখলাম আমার প্রায় সব প্রিয় দেশাত্মবোধক গানই ওনার করা। এর পর ওনার সম্পর্কে আরো যত জানলাম ততই শ্রদ্ধা বাড়লো।

    ধন্যবাদ আপু ওনাকে নিয়ে লেখার জন্য।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  8. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    নিরহংকারী, বিনয়ী এবং কৃতি সুরকার, গীতিকার ও শিল্পী আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল এর উপর লেখা এ ব্লগটা পড়ে মুগ্ধ হ'লাম।
    আমার এলেবেলে সাদামাটা লেখা গান আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুরে মূর্ছনা ছড়াবে অচিরেই এটা ভাবতেই মূর্ছা যাচ্ছি প্রতি মুহূর্তে! - গানটার লিঙ্ক দেয়া যাবে কি?

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাবিনা (৮৩-৮৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।