অণু ব্লগঃ দুই

ডুরাভিলে আমাদের বাড়ীতে একটা কাঁচের ছাদওয়ালা ঘর ছিল। আমি বলতাম আমার মেঘের বাড়ী। আবহাওয়ার খবর না শুনেও আমি সেই ঘরে বসে টের পেতাম মেঘের ডমরু অথবা মধ্য রাতের ঝুম বৃষ্টি। আকাশের রাগ, অভিমান, উল্লাস অথবা চীৎকারে বা শীৎকারে আমার আশ্রয় সেই কাঁচের ঘরটি। টিনের চালে বৃষ্টির কান্না শোনা মানুষ আমরা, আমাদের কি আর মন ভরে কাঁচের চালের বৃষ্টিতে? আমার কিন্তু মন ভরতো ঐ টুকুতেই। বৃষ্টি নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ভাবালুতা আমার কোন কালেই ছিল না। আমি বরং বৃষ্টি এলে কপালে তিন ভাঁজ ফেলে ভাবতাম ইশ! এই না পাস্তা বানালাম মোটে, এখনই খিচুরীর আয়োজনে নামতে হবে সব ফেলে! ইলিশ নামাও তো কালি জিরা চালের জোগাড় যন্তর করো এক হাতে। মায়ের বানানো আচার খুঁজে পেতে বের করতে হবে আর বাঘা বাড়ীর ঘি নইলে তো জীবন বৃথা! আর যদি বা অফিসে থাকি ভাবতে বসি, তারার স্কুল ব্যাগে পার্পল রঙা কুটিস মুটিস ছাতাটা আছেতো আজ? বাড়ী ফিরে ভেজা চুলে বসে নেইতো মেয়েটা?? নুয়ে পরা প্যানসি অথবা বহু কষ্টে বেড়ে ওঠা তিন হাতের বাগান বিলাসের কি হলো তাই ভাবতে থাকি।

আমার সেই মেঘের বাড়ী থেকে এন্ড্রোমিডা দূরত্বে থাকি আমরা এখন। আজ আধাবেলা রিমঝিম বৃষ্টিতে কাটালাম ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরিতে। বই হাতে বাইরে তাকিয়ে দেখি, দেয়ালের ঐ পাড়ে কে যেন হেঁটে গেল ধূসর হুডিতে মুখ ঢেকে…দুটো মেয়ে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে স্বাস্থ্য রক্ষার নিমিত্তে খুব দৌড়ুচ্ছে দেখি! ইউনিভার্সিটির একটা ছেলে বৃষ্টিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিব্বি ব্যাকপ্যাক নিয়ে পারকা চড়িয়ে হাঁটছে। রাস্তার ওপারে স্টারবাক্স থেকে একটা ফ্রাপাচিনো আনতে যেতে যেতে ভাবি, মেঘের বাড়ী না থাকুক এট লিস্ট মেঘ তো আছে আকাশ জুড়ে আর সেই মেঘের আড়ালে লুকিয়ে আছে ঝলমলে একটা দিন! 

৫,৮০৫ বার দেখা হয়েছে

৫৬ টি মন্তব্য : “অণু ব্লগঃ দুই”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    আমার এখন একটা কাঁচের ছাদওয়ালা ঘর লাগবে :((

    আপনার একের পর এক লেখায় বলতে বলতে প্রশংসা বাক্য সব শেষ হয়ে গেছে, এখন ডিকশনারি ছাড়া গতি নেই 😕

    বৃষ্টি আমি খুব ভাল পাই 🙂


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. সাবিনা, তোমাদের এত তাড়া কিসের বলোতো? কেবল এক্টু নড়েচড়ে বসলাম, শেষ করে দিলে! কাল এই কাজটা তাওসীফ করলো, আজ তুমি। এভাবে লেখাগুলোর সাথে অবিচার করা কি ঠিক?

    জবাব দিন
  3. Runa Shabnam (83-89)

    ইচ্ছে করে আকাশ বাড়ির ছাদ
    ভেঙ্গে বৃষ্টি আসুক; আসুক অবসাদ

    ইচ্ছে করে হাতের পাঁচিল দিয়ে
    তোকে জড়িয়ে থাকি সকাল থেকে রাত..........


    মানুষ এমনতয়, একবার পাইবার পর
    নিতান্তই মাটির মনে হয় তার সোনার মোহর.........

    জবাব দিন
  4. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    বাড়ির ছাদটা কাচের হবে - এরকম ইচ্ছে আছে বহুদিনের, রাতের আকাশ দেখব, বৃষ্টি দেখব, জ্যোস্না দেখব, তারা দেখব... :dreamy:

    পারভেজ ভাই এর রেকর্ডিংটা শুনলাম। অদ্ভূত সুন্দর লাগল। ব্যাক গ্রাউণ্ডে হালকা মিউজিক থাকলে এবং কয়েকবার প্র্যাকটিস করে রেকর্ডিং করলে মারাত্মক একটি গদ্য কবিতা হয়ে উঠবে। 🙂 🙂


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  5. মুজিব (১৯৮৬-৯২)
    সেই মেঘের বাড়ী থেকে এন্ড্রোমিডা দূরত্বে থাকি

    আমরাও!

    :boss: :boss: :boss:


    গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।

    জবাব দিন
  6. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    আপু, আগে যে বলছিলাম, তুমি সিসিবি-তে ঝড় তুলে দিয়েছো, ভুল বলেছি।
    তুমি আসলে সিসিবিতে আগুনই লাগিয়ে দিয়েছ।
    আর এই শীতের শুরুতে সেই আগুনের আঁচ নিতে দলে দলে সবাই হাজির হচ্ছে তোমার আচল তলে।
    একটা কথা প্রায়ই বলি, যে কোন কাজ যদি কেউ অনেস্টলি করে, কোন মতলব ছাড়া করে, কিভাবে যেন সবাই তা বুঝে যায়।
    আর তা যত তুচ্ছই হোক সেটা কে ঠিক ঠিকই সম্মান করে।
    সেইখানে তোমার এই বড় বড় অনেস্ট এফর্টগুলার সম্মান পাওয়াটাতো অতি সাধারন একটা ফলাফল।
    সিমপ্লী লাভিং দ্যা হোল স্টেট অব এফেয়ারস...


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  7. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    কমেন্ট করবো করবো করে করা হচ্ছিলো না। আজকের আবহাওয়ার পর ভাবলাম না বাসায় এসেই কমেন্টাইতে হবে। অনেক হইসে আর না। সন্ধ্যায় ৩৭ ডিগ্রী নিয়ে বের হলাম। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। আর চারটে সংখ্যা পরেই বরফের শুরু কিন্তু না সেটা কেন হবে!? এই এলাকার মানুষগুলো বছরের যেই সময়েই বৃষ্টি নামুক গালিগালাজ শুরু করে দেয়। প্রথমে বুঝতাম না কেন। এখন বুঝি কেন ওরা এমন করে। ৩৭ ফাঃ তে বৃষ্টিতে ভেজার চাইতে আমি ২০ফাঃ এর ঘরে তুষার ঝড়ে হাঁটতে রাজি আছি। অন্তত ভেজা লাগে না। 🙁 দেশে যেতে চাই। বৃষ্টিতে ভিজতে চাই। যেই বৃষ্টি স্বস্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। 🙁


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : পারভেজ (৭৮-৮৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।