ভালবাসার সুরভী

তুমি আমার সবুজ চায়ে সোনালী মধু
শীতের ভোরে পথের মোড়ে ভাঁপা পিঠা, তিলের নাড়ু 
তুমি আমার হারিয়ে যাওয়া চুলের ফিতা
নাকছাবি আর আলতা চুড়ি, নখের পালিশ 
তুমি আমার মেঘের দুপুর, সবুজ পিরান, কাজলদানি 
পথ হারিয়ে আবার পাওয়া অচিনপুরে
তুমি আমার দুরন্ত চিল, এক লহমায় কোন সুদূর
তুমি আমার শুন্য ঘরে একলা থাকা ঝিম দুপুর
তুমি আমার ঘুঘুর ডাকে মন উদাসী, সুতোয় বোনা নকশী কাঁথা
ঈদের ভোরে শেমাই, জামা, আতর বিলাস
নূপুর বাজে, মেঘ মাতাল
তুমি আমার রথের মেলায় কুড়িয়ে পাওয়া পাতার বাঁশী
ভৈরবী রাগ, হলুদ লাটিম, নাটাই ঘুড়ি
সাঁঝের আলোয় চমকে যাওয়া, গুড় মুড়ি আর বাদাম ছোলা
তুমি আমার মেঘ মল্লার, চন্দ্রকোষ, কেবল বিভোর মদির নেশায়
এক লহমায় পুণ্যভরা
তুমি আমার করতলে হাত, লাজুক মুখে
নাকের ডগায় এক ফোঁটা ঘাম, চুপিসারে,
তুমি আমার মন ভুলানো, ঘর পালানো মেঘের বাড়ী
পায়েল বাজে চড়ক পূজার সেই মেলাতে, কড়কড়ে নোট
তুমি আমার সাতনরি হার, ময়ুর পেখম বাদলা দিনে
আধ ফোঁটা ফুল রইলে পরে পথের বাঁকে
তুমি আমার ক্লান্ত দুপুর, একটু খানি শীতল ছায়া
কোন সুদূরের হাতছানি আর না পাওয়া সেই একটু মায়া
তুমি আমার দমকা হাওয়ায় এলো চুলে রূপের ঝলক
তুমি আমার শুন্য ঘরে আলোর ধারা চোখের পলক
সেই পলকে পাথর হওয়া
চুলের ভাঁজে হারিয়ে যাওয়া
শীতের ভোরে তুমি আমার মাটির ভাঁড়ে চায়ের চুমুক
তুমি আমার ভোরের পাখি
কেবলি সেই ডাকাডাকি
তুমি আমার দুপুর বিকেল, সাঁঝ আকাশে সন্ধ্যাতারা
অচেনা এক ইষ্টিশনে হঠাৎ করেই নেমে যাওয়া
কিসের টানে, কোন সে নেশায়! হরিণ চোখের অবাক চাওয়া
পথের বাঁকে চুপিসারে সেই হারানো মুখের মায়া
মায়ার লোভে নুলো ফকির
হাত পেতে দেয়, একটু খানি জল বাতাসা
তুমি আমার ঝড়ের রাতে বাবার আজান, ঝাপসা ছবি
চোখ কুঁচকে রূপের আড়াল
তুমি আমার সব হারানো হাহাকারে মন উচাটন
চাঁদনি রাতের মাতাল মাদল
দূর থেকে ওই, কেবল নেশায় গড়িয়ে যাওয়া
তুমি আমার হার মানা হার, আরেক জীবন অহংকারের
তুমি আমার মোহন বাঁশী, ধূপছায়া এক সন্ধ্যাবেলা
প্রহর শেষের রাগ রাগিণী, একতলা ঘর, বাউল মেলা
একটু খানি দমকা হাওয়া, চোখের চাওয়া, কাশের বন
তুমি আমার দিনশেষে ঐ
ঘরে ফেরা, কড়া নাড়া
একটু খানি উষ্ণতা আর ভালোবাসায় থুবড়ে পড়া
তুমি আমার মেঘ ডমরু, বৃষ্টিভেজা দুপুর বেলা
তুমি আমার দীর্ঘপথে একলা হাঁটা
আর কতকাল দিনমান এই গড়িয়ে যাওয়া
এবার তবে আগল খুলে, একটু খানি
পান্তা ভাতে লংকা পোড়া, জলের গেলাস
তালের পাখা, অাঁচল পেতে বলবে না কেউ
ঘুমাও পথিক, শেষ যে বেলা!

৩,৫০০ বার দেখা হয়েছে

৩৭ টি মন্তব্য : “ভালবাসার সুরভী”

  1. দিবস (২০০২-২০০৮)

    সাবিনাপ্পি এটা কি ছিল? প্রতিটা উপমা শুধু মাত্র সুন্দরই না শ্রুতিমধুর। :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:

    ফিলিং বুকের মাঝে শূন্য হাহাকার! =((


    হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি

    জবাব দিন
  2. সামিউল(২০০৪-১০)

    বেশি মাত্রায় সুন্দর কবিতা আপু। প্রতিটা উপমাই একেবারে বুকের মধ্যে চেপে বসে।
    মন ভাল থাকলে হাসায়, আর খারাপ থাকলে মানে বিরহে থাকলে চোখের পানি আটাকানো মুশকিল।

    আর কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছি।


    ... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!

    জবাব দিন
  3. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    শিওর ছিলাম এতকিছুর ভিড়ে নিজের নামটা খুঁজে পাবো। পাইসি।
    মাঝে বেশ কিছুদিন এখানে আসতে পারিনাই ঠিকমত। এসে দেখি আপনি প্রেমে প্রেমে ডুবুডুবু অবস্থা। এখন উপায়?

    জবাব দিন
  4. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    মুগ্ধ হয়েও শেষ করতে পারছি না। :boss: প্রেমিকাকে এখান থেকে রেফারেন্স সহকারে লাইন লিখে পাঠাবো। 😛 😀


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  5. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    পুরনো বকুলের মত তোমার এই পুরনো কবিতাটা একরাশ সুরভি ছড়িয়ে গেলো। এক কথায় অসাধারণ!
    পুরো কবিতাটাই খুব সুন্দর হয়েছে, তবে তার মধ্য থেকে এ চারটি পংক্তি স্পর্শ করে। মুগ্ধ হ'লাম।
    "তুমি আমার ক্লান্ত দুপুর, একটু খানি শীতল ছায়া
    কোন সুদূরের হাতছানি আর না পাওয়া সেই একটু মায়া
    তুমি আমার দমকা হাওয়ায় এলো চুলে রূপের ঝলক
    তুমি আমার শুন্য ঘরে আলোর ধারা চোখের পলক"
    এসব অনিন্দ্যসুন্দর পংক্তি যার কলম থেকে ঝরে, তার কাছ থেকে আরও বেশী কবিতা প্রত্যাশা করছি।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাহেদ (৮৯-৯৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।