অণু ব্লগঃ এক

আমার পড়শী শ্রীমতী ঊর্মিলা আর তার স্বামী শ্রীমান বলরাম সিং কে ছুটির দুপুরে দুটি ডাল ভাতের নিমন্ত্রন করেছিলাম। বিচিত্র কারণে এই দম্পতি আমাদের মা মেয়েকে খানিক স্নেহ করেন। উইকেন্ডে, জন্মদিনে অথবা পড়শীদের পটলাক পার্টিতে আমাদের কদাচিৎ দেখা সাক্ষাৎ ঘটে।

ওদের একমাত্র পুত্র অজয় আসে নাই সাথে, ও জর্জিয়া টেকে পড়ে। ছুটির দুপুরে ক্যাম্পাসে গেছে গ্রুপ স্টাডি করতে।

মোরগ পোলাউ, ভেড়ার রেজালা আর রায়তায় আমাদের সাদামাটা আয়োজন। ঊর্মিলার থেকে সদ্য শেখা কালাকান্দ বানিয়েছি ডেসার্টে। সবশেষে সুগন্ধি দার্জিলিং চা। গল্প জমে উঠেছে সবে। অপরাপর অনেক প্রবাসী মানুষের মত তাদেরও জমিদারী ছিল একদা। পাজেরোর শোফার, হেঁশেলে উর্দি পরা রাঁধুনি আর ধোপাদের ফেলে এসে তাদের কি কষ্ট হচ্ছে সেই গল্প শুনতে হচ্ছে আমাকে একাই অশেষ মনোযোগের সাথে!

এমন সময়ে অজয়ের ফোন কল এলো। পেনসিল বক্স ফেলে এসেছে বাড়ী। মাকে বলছে দিয়ে যেতে এখনই। আমাদের সুখের গল্পের মাঝে বান্দর পোলা বলেই চলেছে পেনসিল বক্সে তার ইরেজার আছে, আছে এইচবি পেন্সিল, চুইং গাম… সবই চাই এখন! আমি বলি, দিদি তুমি ওকে একটু হেঁটে বুক স্টোরে গিয়ে এক ডলারে হলদে রঙা ইরেজারওয়ালা পেন্সিল আর দুই ডলারে এক প্যাক চুইং গাম কিনতে বল। আর এই আমার কালাকান্দ খেয়ে দেখো কেমন ফাটাফাটি হয়েছে!

শোফার আর ধোপারা পরে রইল সুদূর গুজরাটে আর ঊর্মিলা তার স্বামীটিকে বগলদাবা করে শাটল বাসে জর্জিয়া টেকের দিকে ছুট লাগান দুই পিস কালাকান্দ ফয়েল পেপারে মুড়ে।।

৩,৪৬৪ বার দেখা হয়েছে

৩৯ টি মন্তব্য : “অণু ব্লগঃ এক”

  1. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    শেষ লাইনে একমুঠো দীর্ঘশ্বাস।

    পেন্সিলের বাক্সের জন্য বাবা-মাকে এভাবে ছুট লাগানোর দুঃসাহস দেখাতাম কিনা চিন্তা করছি। সাথে এটাও চিন্তা করছি পাজেরোর শোফার, হেঁশেলে উর্দি পরা বাবুর্চির সিস্টেমে বড় হয়ে উঠা সন্তানেরা অভ্যাসের ক্রীতদাস হয়ে বেড়ে উঠেছে কি?


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  2. সামিউল(২০০৪-১০)

    ভাল্লাগছে আপু। এখন তো দেখি সিসিবি আপনি একাই মাতিয়ে রেখেছেন। 😀 :clap: :clap:

    আইজকালকার পোলাপান 🙁 🙁
    কী আর কমু? একটু কষ্ট করে একটা পেন্সিল বক্সও কিনতে যেতে পারে না!!! এটা কি আলসেমি? নাকি অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা?


    ... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!

    জবাব দিন
  3. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)
    পোলাপান গুলার দোষ দেখি না আমি, জানো! সমস্যা হলো আমরা অভিভাবকের যারা বাচ্চাগুলাকে বড় হতে দেই না!

    এইটা ঠিক বলেছ সাবিনাপা, বাচ্চারা তো নরম কাদামাটির মতন। বাপ-মা যে শেপ দেবে (সাধারণত), তাই হবে... :-B


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  4. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    পড়লাম এবং অবাক হলাম।
    এটা কি অতিমাত্রায় নির্ভরশিলভাবে গড়ে তোলা সন্তানের জন্য মা-বাবাকে দেখতে চাওয়ার কোন সাংকেতিক সংকেত?
    নাকি ঐ নির্ভরশিলতার কারনে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা যা সমস্যা সমাধানের পথ চিন্তা করাটা থেকে বিরত রাখে?
    যেটাই হোক, ব্যাপারটা দুঃখজনক।


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  5. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    এধরনের বাচ্চাকাচ্চাদের জন্য আমাদের একটা কমন টার্ম আছে 'ফার্মের মুরগী'। আর এরজন্য আমার মতে পুরোপুরি অভিভাবকেরাই দায়ী।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  6. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    জমিদারির গল্প আর দুই ডলারের পেন্সিল বক্সের ও একটা যোগ সূত্র আছে মনে হয়।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  7. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    🙂 🙂 🙂 🙂

    অবসরে আপনার এই যে আমার ব্লগ বাড়িতে বেড়াতে আসা সেটি আমাকে সম্মানিত করে খুব, ভাইয়া! সেই কবেকার লেখাটি পড়ে গেছেন সবার অগোচরে এসে কিন্তু ঠিকই জানিয়ে গেছেন নিজের মুগ্ধতাটুকু।

    সিসিবি থেকে আমার প্রাপ্তির ঝুলিতে এই মুগ্ধতা সত্যি প্রাইসলেস! :boss: :boss:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাবিনা (৮৩-৮৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।