আলাপনঃ এক

– এই চুপ! কথা নয় একটিও! শুষে নিতে দাও তোমার গোলাপ ঠোঁটের রঙ

– আহা! যেন খাও নি কখনো! আজই যেন তোমার প্রথম পাঠ?

– খেয়েছি, কিন্তু প্রতিবারই তোমার ঠোঁট নতুন মনে হয়। কখনো শ্রীমঙ্গলের কমলালেবুর মত রসে ভরা, আবার কখনোবা ক্লেমেন্টাইনের মত, আলাদা এক একটা কোষ যেন সযত্নে মোড়া সোনালী রাংতায়। মাধুরী, কী আছে বলো তোমার ঐ ট্যাঞ্জারিন ঠোঁটে?

– তোমার কাছে এলে আমার সব কিছুই ওলট পালট হয়ে যায়, দীপ! সস্তা জরডানা মাখা বাঁকা ঠোঁট তোমার মহিমায় গী্তিকবিতা হয়ে যায়। তুমি তো কবিয়াল এক এই নগরের। চোখে চোখে লিখে যাও এক সামান্য নারীর অসামান্য কথকতা।

– আমার কাছে তুমি রূপের ওপারের অপরূপা একজন মাধুরী। আমার অপ্সরা তুমি। আমার কিন্নরী তুমি। তুমি অনন্যা হয়ে ওঠো প্রতিক্ষণে ঐ ভুরুর ভঙ্গিমায়। আমি খুন হয়ে যাই প্রতি মুহূর্তে যতক্ষণ তুমি পাশে থাকো, মন মাধুরী! কেন জানো? অতি পুরাতন অস্ত্র তোমার, ভুরুর ধনু আর চোখের তীর!

– বেঁচে থাকবার সুখ যদি কিছু থাকে দীপ, সেতো তুমিই আমার। পূবের আকাশ রাঙা হবার আগে, পাখ পাখালিও যখন ঘুমে বিভোর ঐ যে বাঁশী বাজে দীপ, সে যে শ্যামের বাঁশী আমার। অন্য কেউ না জানুক, আমি নিশ্চিত জানি সে বাঁশী এই সোমেশ্বরী পাড়ের মেয়েটির জন্য বাজে। আজ আমার সব টুকু জুড়ে শুন্যতা কেবলই। এই পোড়া শরীর আর মন জুড়ে হাহাকারের চাষবাস, দীপ। এর নামই কি বেঁচে থাকা, বলো?

– আর আমার আছে কেবলই দীর্ঘশ্বাস, মাধুরী! বুকের জমিন জুড়ে ঝরা পাতার ওড়াওড়ি। দিন শেষে রোদে পোড়া ডাহুকের মত আমিও আশ্রয় খুঁজি তোমার কবোষ্ণ বুকে। চঞ্চুতে তৃষ্ণা যত, মনে ভয় আবার নিঃস্ব হবার!

৩,৪১৩ বার দেখা হয়েছে

৪১ টি মন্তব্য : “আলাপনঃ এক”

  1. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    সাবিনাপা, নামের সাথে সাল দিচ্ছেন না কেন?
    জলদি সাল দেন, নাইলে এডু স্যারের কাছে রিপোর্ট করে আপনারে রগড়ানি খাওয়াবো... :grr:
    তাছাড়া, ইশ্মার্ট কোন জুনিয়র এসে যখন 'তুমি' 'তুমি' শুরু করবে সেদিন বুঝবেন... 😛


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  2. সামিউল(২০০৪-১০)

    লেখা অসম্ভব ভাল লাগছে আপু। আগের লেখাটাও পড়ছি। মাশাল্লাহ!!!!!

    তুমি ভাল লেখো, চালিয়ে যাও.... 😛 😛

    আপু, নামের পাশে সাল না দিলে কিন্তু আমার মত ফাজিল পোলাপান এভাবেই জালাবে.... 😛


    ... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!

    জবাব দিন
  3. মোকাররম আহমেদ (৮৫-৯১)

    আপু,
    সমরেশ মজুমদারের “কালবেলা “(অনিমেষ দ্বিতীয় খণ্ড) উপন্যাস এর নায়িকা “মাধবীলতা” আমার স্বপ্নের নারী। এর পরের খণ্ড কালপুরুষ(অনিমেষ#৩) যারা পড়েছে তারা সেই “মাধবীলতা”কে খুঁজে পাই নাই। তাই যত বার “কালপুরুষ(অনিমেষ#৩)” আমি হাতে নিয়েছি ততবারই আমি শুধু “মাধবীলতা”কে হারানোর ভয়ে কালপুরুষ উপন্যাসটি পড়ি নাই। হয়ত কখনও পড়ব না।
    মাধুরী পড়ে হঠাৎ সেই “মাধবীলতা” আমার ভিতরে কাঠবিড়ালির মত লাফিয়ে উঠল।
    খুবই ভালো লাগল। Keep Rolling.

    জবাব দিন
  4. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    লুবনা তুই আমার প্রোফাইল বানিয়েছিস এবার আমার প্রোফাইল এডিট করে দে... নামের পাশে বয়েস লিখে দিস B-) আমি মিন সাল টা লিখে দিস, প্লিজ!

    বাচ্চারা খুবই জ্বালাচ্ছে দেখ... না হয় একটু বুড়োই হলাম তাই বলে কি ক্যাডেট (পড় মানুষ নই) নই?? 😛

    জবাব দিন
  5. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    ভরপুর প্রেম ভালো লাগছে।

    ভরপুর শব্দটা আমার এক ছতভাই ইউজ করে, খুলনার।

    প্রেম চলুক।
    যদিও অনেকে এতে পূর্নেন্দু পত্রীর টাচ পাবে।
    তাতে কি?
    শুভঙ্কর একলাই প্রেম করবে; তা হয় নাকি!

    ভালো লাগছে লেখা।
    সিসিবি তে প্রেমের বড্ড অভাব।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      ভরপুর প্রেমই তো চাই এই আকালে... 😛

      শুভঙ্কর আর নন্দিনীর বুড়ি ছুঁয়ে এসেই এই আলাপনের শুরু! নমো নমো পূর্নেন্দু!! 🙂

      শুভঙ্কর একা কেন প্রেম করবেন, বলো? নন্দিনীরা এখনো বেঁচে বর্তে আছেন বৈকি 😡

      সিসিবি তে প্রেমের আকাল?? কেন, বলোতো? আমাদের ভাইয়া, আপুদের রক্তে কি আগুন ঝরে না আর??

      😛 😛 😛 😛

      জবাব দিন
  6. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    আহ, সে কি প্রেম!

    দূর্দান্ত লাগলো আপু, আপনি কিন্তু প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিচ্ছেন 🙂 ভাল কথা, লুবনা আপু আপনাকে এখানে হাজির করে নিজে মন্তব্যের আড়ালে পালিয়ে থাকছেন কেন? ওনাকেও লেখা নিয়ে হাজির করেন 😛


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  7. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    কেমন যেন স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হয়।
    বাস্তবে কি আসলেই ঘটে এতটা?
    তবে যে শুনতাম "বুক ফাটে তো মুখ ফোটেনা..." বা ঐ জাতীয় কিছু একটা?
    সেই সব দিন কি তাহলে হয়েছে গত?

    ফিলিং "আমি ও ভিকিরি হলাম, দেশেও আকাল নামলো..."
    😛 😛 😛


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  8. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    "অতি পুরাতন অস্ত্র তোমার, ভুরুর ধনু আর চোখের তীর!" - ঐ অস্ত্রেই তো কত বড় বড় রথী মহারথী কুপোকাৎ হয়ে যায়!
    "বুকের জমিন জুড়ে ঝরা পাতার ওড়াওড়ি। দিন শেষে রোদে পোড়া ডাহুকের মত আমিও আশ্রয় খুঁজি তোমার কবোষ্ণ বুকে। চঞ্চুতে তৃষ্ণা যত, মনে ভয় আবার নিঃস্ব হবার!" - এর চেয়ে ভালো সমাপ্তি হতে পারেনা।
    খুবই অল্প কথায় এক অসামান্য চিত্র আঁকা হয়েছে। পড়ে মুগ্ধ হ'লাম।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।