বুঝলাম না

সেদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার অন্য কোনো উপায় না পেয়ে স্কুলের মাইক্রবাস, যেটিতে করে স্কুলের বাচ্চাদের নামানো হয় সেটাতে উঠে পড়লাম। শিশুদেরকে খুবই ভালো পাই এবং তাদের সাথে ভালো যাই বলে শিশু মহলে মোটামোটি পপুলার এই “জিতু মিস”। আমাকে তাদের গাড়ীতে পেয়ে সবাই উচ্চস্বরে স্বাগত জানাল। অনেক মজার মজার জ্ঞ্যানগর্ভ বিষয়ে গল্প করছিল তারা নিজেদের মধ্যে, ভালই মজা পাচ্ছিলাম শিশুতোষ আলোচনায় অংশ নিয়ে। আমার ভূমিকা মুলতঃ নীরবশ্রোতা। গল্পের একপর্যায়ের কথোপকথন্টা তুলে ধরলামঃ

: তুমি আমার কথা শুনছ না কেন?জানো আমার কত্ত পাওয়ার?
: আমারও অনেক পাওয়ার, বেন টেনের মত।
: বেন টেন তো কিছুই না, জানো আমার আব্বু কে? আমার আব্বু আর্মির মেজর, অন্নেক পাওয়ার…
: আমার আব্বুরও অনেক পাও…
: আমার আব্বুর কাছে বন্দুক আছে, তোমার আব্বু কে গুল্লি করে মেরে ফেলবে।
:আমার আব্বুর কাছে অন্নেক টাকা আছে, তোমার আব্বুর সব বন্দুক কিনে ফেলবে।

দুঃখিত হওয়া উচিত” নাকি মজা পাওয়া উচিত” বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আপনারা বুঝলে জানাবেন প্লীজ!

১,৬২২ বার দেখা হয়েছে

২৬ টি মন্তব্য : “বুঝলাম না”

  1. তৌফিক (৯৬-০২)

    বাচ্চারা তো এইসব নিজেরা শিখে না। আমরাই শেখাই।

    তবে ঘটনা শুনে একটু ভয় পেলাম। এতো অল্প বয়েসেই যদি বন্দুক, টাকা -এসবের পাওয়ার বুঝে যায় তাইলে তো মুশকিল।

    জবাব দিন
  2. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    ছোট ছোট শিশুদের কলুষিত করতে আমরা যারা বড় মানুষ তাদের মনে হয় জুড়ি নেই...কি দুঃখজনক,কতগুলো বাচ্চা ছেলেমেয়ে বন্দুক,টাকার "পাওয়ার" নিয়ে কথা বলছে!

    জবাব দিন
  3. আয়েশা ( মগকক) আয়েশা

    আহমদ ভাই এর মত আমারও বাচ্চাগুলোর জন্য মায়া হচ্ছে।তুই এমন একটা লিখা দিয়ে আমার অনেক স্মৃতির কথা মনে করিয়ে দিলি।
    এরকম কিছু বাচ্চা আমার নিজের ছোটবেলার বন্ধু ছিল।আমার নিজের জীবনেও এমনটি ঘটেছে।যেমন -- "আমার বাবা অমুক ...আমাদের বাসায় এইটা নেই কিন্তু তোমার বাবা তমুক হয়ে কিভাবে এটা আছে?" বলা বাহুল্য মেয়েটির বাবার পজিশন আমার বাবার চেয়ে উপরে ছিল তখন।
    আমার দশ বছরের জন্মদিনে আমার প্রায় সব স্কুল বান্ধবীদের দাওয়াত দিয়েছিলাম। তখন আমার দুই বান্ধবী ( আর্মি
    অফিসারের মেয়ে) বলল, "ছি তোমার জন্মদিনে হাসিনা আর সুমি কে আসতে বলেছ? তুমি জাননা ওরা সিপাইর মেয়ে।" অনেক ছোট ছিলাম আমি , তারপরেও একই স্কুলে পড়া সত্তেও ওদেরকে দাওয়াত করে আমি কাজটা খারাপ করে ফেলেছি -- এমন ভুল ধারণার তীব্র প্রতিবাদ করেছিলাম সেদিন।
    আবার বাবার পজিশনের জন্য একটু সমস্যাও হয়েছে জীবনে.....যেমন ধর-- "ও তো উইন করবেই ও হলো ......................-র মেয়ে." জীবনে যা কিছু এচিভ করেছি তার অনেক কিছুই বাবার জন্য করতে পেরেছি ব'লে অনেকে পেছনে কথা বলেছে।
    বাচ্চাদের সাইকোলজি টা অদ্ভুত। ওরা শুধু ওদের অভিভাবক ই না গোটা পরিবেশ থেকে শিখে। অভিভাবকদের অজান্তেই ওরা অনেক কিছু শিখে ফেলে। তারপরও বাবা-মা দের সতর্ক থাকা উচিত যেন বাচ্চাটি নিজেই BULLY কিংবা কারো দ্বারা মেন্টালি bullied না হয়। .
    আমার ছেলেটিকে কখনো খেলনা বন্দুক কিনে দেইনি কিন্তু সে একদিন বাসায় গান দেখে ফেলেছিল, বাসায় বন্দুক রাখার কারণ জানতে চাইলে বলেছি এটি শুধু আত্নরক্ষার জন্য ব্যবহার করা যাবে, কাউকে মেরে ফেলতে নয়। ব্যাপারটি ও বুঝতে পেরে বলল, "ভালো হয়েছে হোম এ্যালন ছবির মত কেউ আমাকে এসে কিদ্নাপ করতে পারবেনা।"
    আশা করছি, সে বন্ধুদের কখনই বন্দুক নিয়ে নিজের বাবা মা এর পাওয়ারের গল্পটি করবেনা। (সম্পাদিত) (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
    • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

      আপা, ক্যাডেট কলেজে আমরা কিন্তু এই সাম্যের শিক্ষাটা পাই-অন্ততঃ কিছুটা হলেও।আমার নিজের ব্যাচেই এরকম দেখেছি-আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল ছেলেটিকে ক্যাডেট কলেজ যেমন হীনমন্যতার হাত থেকে বাঁচিয়েছে,ঠিক তেমনি স্বচ্ছল পরিবারের ছেলেটিকে শিখিয়েছে অহঙ্কারমুক্ত হতে।অবশ্য অনেক নোংরা ঘটনাও যে ঘটেনা তা বলছিনা-তবে মোটামুটি একটা বেসিক শিক্ষা হিসেবে কলেজের প্ল্যাটফর্মটা খারাপ নয় যেখানে মেজর আর মেজর জেনারেলের ছেলে পাশাপাশি বেডে ঘুমায়,একসাথে খায়,একসাথে খেলা করে।

      জবাব দিন
      • সামিয়া (৯৯-০৫)
        অবশ্য অনেক নোংরা ঘটনাও যে ঘটেনা তা বলছিনা-তবে মোটামুটি একটা বেসিক শিক্ষা হিসেবে কলেজের প্ল্যাটফর্মটা খারাপ নয় যেখানে মেজর আর মেজর জেনারেলের ছেলে পাশাপাশি বেডে ঘুমায়,একসাথে খায়,একসাথে খেলা করে।

        কঠিন ভাবে সহমত।
        কলেজে প্রিন্সিপাল স্যারের নিজস্ব দু'তলা বাংলো ছিল, আর আরেকটি দুইতলা বাংলোর উপর নিচে থাকতেন এডজুটেন্ট আর মেডিকেল অফিসার।
        আর্মি অফিসারের মেয়ে, আমারই এক ক্লাসমেট একবার বলেছিল, "কিরকম না? এডজুটেন্ট আর মেডিকেল অফিসার আর্মি, অথচ উনারা একতলা নিয়ে থাকে, আর প্রিন্সিপাল স্যার থাকে দুইতলা নিয়ে..."
        ...লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছিল প্রায়, লজ্জা এজন্য যে আমারই ক্লাসমেট, প্রফেসর আর মেজর পদমর্যাদার পার্থক্য বোঝে না...প্রতিবাদ করেছিলাম, এই হেবলু আমি, তবে তাতে তার মানসিকতার কোন পরিবর্তন আনতে বোধহয় সক্ষম হইনি।

        তবে সুখের বিষয় এরকম ঘটনা একটাই, বাদবাকি সবই পার্থক্য ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকার কাহিনী...

        জবাব দিন
  4. সাইফ শহীদ (১৯৬১-১৯৬৫)

    চিন্তা জাগানোর মত 'গল্প'। কত পরিবর্তন আমার ছোটবেলার অভিজ্ঞতার সাথে।

    ক্যাডেট কলেজে আমাদের এক ক্লাশমেট বেল্ট পড়েছিল তার সাদা পান্টের সাথে। নিজের কেনা বেল্ট। সীজ করা হল। সবার পোষাকের মধ্যে সব সময় সমতা রাখা হতো।

    আরো আগে। স্কুলে পড়ি। একজন এসে জানালো যে এক ক্লাশমেটের বাবার চাকরী চলে গেছে ঘুষ নেবার অপরাধে। সেই ক্লাশমেটের সাথে আর খেলা করা যাবে না - সবাই এই সিদ্ধান্ত নিলাম।

    সামাজিক সচেনতা ছোটবেলা থেকে সৃষ্টি করা না গেলে - বড় হয়ে এভাবেই তাদের মানসিকতা গড়ে উঠবে।

    [এর জন্যে টিভিও দায়ী হতে পারে। কোথায় যেন এরকম একটা বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম - কার বাবা কত শক্তিশালী]

    জবাব দিন
  5. আব্দুল্লাহ্‌ আল ইমরান (৯৩-৯৯)

    এত ছোট পোষ্টের জন্য ভাবছিলাম তোর ব্যাঞ্চাই কিন্তু বিষয়বস্তু দেখে পারলাম না।অনেক গুরুত্বপূর্ন বিষয় যা নিয়ে আমাদের গভীর ভাবে ভাবার আছে।

    এই ধরনের বাচ্চাদের জন্য আমার মায়া হয়।
    আর তাদের অভিভাবকদের জন্য আমার করুনা হয়।

    অবশ্যই বাচ্চাদের এই বেসিক এটিচ্যুডের(নেগেটিভ/পজিটিভ)জন্য পরিবার/পরিবেশ দায়ী।
    অনেক কথা মনে পড়ে গেল।আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা লিখতে গেলে এই পোষ্টের চেয়ে অনেক বড় হয়ে যাবে।ক্যাডেট কলেজ এই সাম্যের ব্যাপারে অনেক বড় ভূমিকা রাখে।জেনারেলের ছেলেই হোক আর জেসিওর ছেলেই হোক সবার লাইফস্টাইল সেইম।সবাইকে লংক্লথের কাপড়ের পাঞ্জাবী, ৬৫/৩৫ শার্টই পড়তে হয়।কিছু লেঃ কর্নেলের ছেলের মাঝে অহমিকা দেখেছি আবার মেজর জেনারেলের ছেলের মাঝে দেখিনি।আর্মির উদাহরণ দেয়ার কারন সামরিক পরিবেশ।সিভিল পরিবেশে হয়ত সচিব/এমপির ছেলেদের দাপট।একটি উদাহরণ না দিলেই নয়।তখন ১০ ক্যাডেট কলেজ পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন মেঃ জেঃ আমিন আহমেদ চৌধুরী।পরে ওমানের রাষ্ট্রদূত হয়েছিলেন।উনার এক ছেলে লুৎফুল আমীন আমাদের চার ব্যাচ সিনিয়র ছিলেন।আমাদের ব্যাচে ভর্তি হল ইফতেখার আমীন।আমাদের এন্ট্রান্স ডেতে প্যারেন্টস হিসেবে আসলেও স্বভাবতই উনাকে নিয়ে হৈচৈ।কিন্তু আমার মনে হয় উনি নিজেকে স্রেফ প্যারেন্টস ভাবতে চেয়েছিলেন।প্যারেন্টস ডেতে শুধু আন্টি আসতেন,আঙ্কেলকে দেখতামনা।১২ক্লাসের সময় আরেকবার দেখলাম হয়ত। :salute:
    আর ওরা দুইভাই সোজা মাটির ছেলে।ওদের বাবার পরিচয় জাহির করা দূরে থাক দেখলে বুঝা যায়না এখনো। :hatsoff:

    জবাব দিন
  6. নাজিব(২০০৩-২০০৯)

    দেখেন আসলে আমাদের(army officer এর বাচ্চা) দোষ দিয়ে লাভ নাই|সত্তি কথা বলতে আমরা একটু বেশি লাই পেয়েই মানুষ হই|এছাড়া বাইরের পরিবেশ এর সাথেও মিশা হয় না(ফার্ম এর মুরগি to :(( :(( ) |তাই cadet college এ প্রথম এ এসে আমরা মুটামুটি সবাই ই একটা ধাক্কা খাই|কিন্তু সময় এর সাতে সাতে সবাই মানায় নেই|কারণ বাস্তবতা বুজতে আমাদের একটু সময় লাগে(immatured তো)|তবে আমার মনে হয় senior হবার সাতে সাতে সবাই ঠিক হয়ে যাই|কারণ দিনের শেষে সমতাই আসল|

    জবাব দিন
    • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

      আমি ক্লাস নাইনে থাকতে যে ডর্মের ডর্মলিডার ছিলাম সেখানে সেভেনের সব আর্মি অফিসারদের বাচ্চারা থাকতো-যাদের সর্বনিম্ন র‌্যাঙ্ক ছিলো লেফটেনেন্ট কর্নেল।এদের একজনের বাবা ছিলেন যশোর ক্যান্টনমেন্টের সেকেন্ড সিনিয়রমোস্ট।একদিন প্যারেন্টস ডে তে সেভেনের ফর্মের পাশ দিয়ে যাবার সময় দৈবক্রমে এই ছেলে আর তার বাবার কথোপকথন শুনতে পেলামঃ

      ছেলেঃ বাবা,সিনিয়র ভাইয়েরা চড় দিলে কি করবো?
      বাবা(ব্রিগেডিয়ার জেনারেল)- তুমি তো চশমা পড়,সিনিয়র থাপ্পড় দেয়ার আগে পারমিশন নিয়ে চশমাটা খুলে পাশে রাখবা,যাতে সিনিয়রও হাতে ব্যথা না পায় আবার তোমার চশমাও না ভাঙ্গে।

      উলটো ঘটনাও যে একেবারে নেই তা বলছিনা,তবে আমার অভিজ্ঞতা বলে অনেক সিনিয়র আর্মি অফিসার তাঁর পুত্রকে নিয়ে যতটা বাড়াবাড়ি করেন(কখনও কখনও),সিনিয়রকে সন্তুষ্ট করতে কলেজের অথর্ব এ্যাডজুটেন্ট অথবা প্রিন্সিপাল তার চেয়ে দশ গুণ বেশি করেন।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই বাড়াবাড়ির কারণে ছেলেটাকে শিকার হতে হয়-"তোর বাপ তো আর্মি,তোর সাত খুন মাপ!" এরকম বক্রোক্তির।
      এরফলে দুটো ঘটনা ঘটে-১) ছেলেটা হীনমন্যতায় ভোগে অথবা ২) বীতশ্রদ্ধ হয়ে আসলেই পিতার ক্ষমতার অপব্যবহার করে ফেলে।

      অন্যদের কথা জানিনা,আমার ব্যাচে আর্মি/হাই অফিশিয়ালের ছেলেদের নিজ থেকে পিতৃপরিচয়ের অহংকার করতে একেবারেই দেখিনি।এ্টা সম্ভবত আমার সৌভাগ্য যে অনেক বড় মনের সহপাঠী পেয়েছিলাম যাদের মন বন্ধুত্ব করার সময় পারিবারিক আবহ দেখার মত কলুষিত হয়ে যায়নি। (সম্পাদিত)

      জবাব দিন
  7. নাজিব(২০০৩-২০০৯)

    "সিনিয়রকে সন্তুষ্ট করতে কলেজের অথর্ব এ্যাডজুটেন্ট অথবা প্রিন্সিপাল তার চেয়ে দশ গুণ বেশি করেন।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই বাড়াবাড়ির কারণে ছেলেটাকে শিকার হতে হয়-”তোর বাপ তো আর্মি,তোর সাত খুন মাপ!” এরকম বক্রোক্তির।"
    এক্কেবারে খাটি কথা বললেন ভাই |

    জবাব দিন
  8. নাজমুল (০২-০৮)

    ছোট ছোট শিশুদের কলুষিত করতে আমরা যারা বড় মানুষ তাদের মনে হয় জুড়ি নেই…কি দুঃখজনক,কতগুলো বাচ্চা ছেলেমেয়ে বন্দুক,টাকার “পাওয়ার” নিয়ে কথা বলছে!

    জবাব দিন
  9. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    আসলেই জটিল একটা সমস্যা।
    একদিনে তো আর সৃষ্টি হয় নাই এটা বরং কালে কালে জমা হওয়া পাপ।
    ধৈর্য্য ধরে মোকাবেলা করতে হবে যার যতটুকু সামর্থ আছে তা দিয়ে।

    পাঁচ বছর তো হলো। এখন এখন তো ওরা বড় হয়েছে।
    জানার চেষ্টা কি করা যায়, কি অবস্থা ওদের মন ও মানসিকতার???


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : নাজিব(২০০৩-২০০৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।