আমাদের স্বাধীনতার গল্প

লেখকঃ  উখ্যইনু (১৫১৩) মাওয়া (১৫১৫) হৃদিতা (১৫১৬) জান্নাত (১৫৩১) তাসনিয়া (১৫৩৯) আশিফা (১৫৪৬) নুঝাত (১৫৫৭) সাবাবা (১৫৬১)। কলেজ ম্যাগাজিনে ছাপা হওয়া লেখাটিকে এই চার বছর পর ডক ফাইলে এ রুপান্তর করেছেন জান্নাত (১৫৩১)।

(কলেজের শেষ বছর কলেজ ম্যাগাজিনের জন্য আমরা আট জন মিলে লিখেছিলাম “আমাদের স্বাধীনতার গল্প”। মূলত, স্মৃতিচারণ করতে করতেই লিখে ফেলেছিলাম এটি। গল্পের নাম স্বাধীনতার গল্প হবার পেছনের অন্যতম কারন হচ্ছে আমাদের ক্যাডেট কলেজে পদার্পণ করি পঁচিশে মার্চ।
আমাদের সবার গল্পই ভিন্ন, গল্পের চরিত্রগুলো ও ভিন্ন; অনেকের কাছেই লেখাটি সামঞ্জস্যপূর্ণ লাগবে না হয়তো। তার জন্য আন্তরিক ভাবে ক্ষমা চাইছি।
বিশেষ দ্রষ্টব্ঃ গল্পের কোন চরিত্রই কাল্পনিক নয়। উক্ত লেখার সাথে কারো ব্যাক্তিগত জীবনের মিল খুঁজে পেলে লেখকবৃন্দ সম্পূর্ণভাবে দায়ী থাকবে।)

২৫ মার্চ, ২০০৬! হঠাৎ নিরস্ত্র নিরীহ(!) ৪৮টি কচি প্রাণ বন্দী হল এক “জলপাই সবুজ” অন্ধকার ভয়াল কারাগারে। অতর্কিতে শুরু হল হামলা। সে রাতেই অ্যাজুডেন্ট স্যারের সামনে ছুরি ও কাটা চামচ নিয়ে যুদ্ধ প্রশিক্ষণে অকস্মাৎ ভুমিস্যাৎ হল নবীন সৈনিক প্রজ্ঞা।
অতঃপর ২৬ মার্চ। শুরু হল ২৮তম ব্যাচের স্বাধীনতা সংগ্রাম। প্রথম দিনই জানা গেলো আমাদের প্লাটুন কমান্ডার নাকি “উখিচুনু” নামের একটি মেয়ে (হালিমা ম্যাডাম ভুলে বলে ফেলেছিলেন, আসলে ওর নাম উখ্যইনু)। এ আবার কেমন নাম? চলতে লাগলো গাইডদের কাছে নিরন্তর নিয়মকানুন শেখা, বলা হল, “এমনভাবে শান হতে হবে যেন হাতের ফাঁক দিয়ে একটা পিঁপড়াও না যেতে পারে”। আর মাথা? যত নিচু করা যায় ততই ভালো, ইত্যাদি আরও কত কী। আর “পাঙ্গানি” খাওয়ার বিসমিল্লাহ করলো আমাদের “সাল্লু আনিকা”। পাঁচ meal এর মতই রুটিন মাফিক চলতে লাগলো- এযাবৎ কালের শেখা সব দোয়া আওরাতে আওরাতে- সিনিয়র ব্লকের সিংহীদের গুহায় আমাদের যাত্রা। সাত দিনের মাথায় প্রদর্শিত হলো আমাদের সকলের “সুপার ট্যালেন্ট”। সেই সুবাদে সদা জিজ্ঞাসু নাজমিনকে আমরা পেয়েছিলাম “রোমিও সিদ্দিক” হিসেবে। আর শুনেছিলাম নেকো ত্যানার (ফারহা)বাঁশি ডাকাতির গান।
ট্যালেন্ট শো শেষ হল। দিন যেতে লাগলো। ইতিমধ্যে পতন ঘটলো দুই সৈনিকের- সায়মা ও শারমিন। আর ক্যাডেট কলেজের আলো দেখলো চার নবজাতক- তাসনিয়া, সামীহা, রোমানা ও মেরিনা। এই শিশুদের আমরা পুরাতন ৪৬জন মাতৃত্বের ছায়ায় আগলে রাখার চেষ্টা করতে লাগলাম, কিন্তু আজ বুঝতে পারছি “আমাদের চেষ্টায় অতিকায় হস্তী লোপ পাইয়াছে ঠিকই- কিন্তু আমরা ৫০জন আজও একত্রে টিকিয়া আছি”।
ওস্তাদজীর প্রশ্ন, “পা পড়বে কোথা থেকে”? আমাদের সমস্বরে গলা ফাটানো চিৎকার, “আকাশ থেকে”, কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে মাথাত উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া পাখিটির মনে হয়তো ছিল অন্য কিছু। অবশেষে নভিসেসের মাধ্যমে হলাম “পূর্ণাঙ্গ ক্যাডেট”।
ঘড়ির কাঁটা ঘুরতে লাগলো। জুনিয়র মোস্ট ক্লাসের ধাপ পেরিয়ে উঠলাম “sandwich class” ক্লাস এইটে। সিনিয়র সিনিয়র ভাব, কিন্তু এপুলেটে দাগের বড়ই অভাব। তবুও বিরামহীনভাবে আবিষ্কার করতে লাগলাম জুনিয়র সাইজ করার একশো একটি অব্যর্থ উপায়। সেই সাথে চলতে লাগলো ব্লক সিনিয়র হিসেবে মধ্যরাতে লুকিয়ে কারণে অকারণে party করা। আর class function এর সুবাদে auditoriumটা যেন পরিণত হয়েছিল আমাদের disco floor এ। এই ক্লাস এইটেই পরিচয় পেয়েছিলাম যারীনের মমতাময়ী মাতৃরুপের, যে কিনা আমাদের সকল্কে কলেজ প্রিফেক্টের পানিশমেন্ট থেকে রক্ষা করতে চেয়েছিলো নিজের ঘাড়ে অপরাধের বোঝা নিয়ে!
বছর শেষে এপুলেটে আরও একটি নতুন দাগের সংযোজন আর এর মাধ্যমেই আমরা উঠলাম পাখা গজানোর ক্লাস “ক্লাস 9” এ। সেই সাথে সিনিয়রদের অদম্য চেষ্টা চলতে লাগলো আমাদের সেই পাখা কর্তনের। আর ব্যান্ড মাস্টার নাফিয়ার নেতৃত্বে কলেজ প্রাঙ্গণে চলতে লাগলো আমাদের বাদক দলের দৃপ্ত পদচারনা।
এবার উঠলাম সিনিয়র ক্লাস- ক্লাস টেন এ। পড়াশোনার বোঝাটা অনেকখানি বেড়ে গেলো, কিন্তু সবারই তখন চলছিলো sweet sixteen, মনে লেগেছিল দোলা আর চোখে পড়েছিলাম রঙিন চশমা। যাই হোক আসলো এসএসসি-এর পালা, এবং অনুধাবন করলাম “বন্ধু আছে পরীক্ষার হলে আর কি লাগে”। আল্লাহর অশেষ রহমতে প্রথম মিশনে ৫০জন সৈনিকই সফলভাবে উত্তীর্ণ হলাম জিপিএ ৫ নিয়ে।
এসএসসি-এর ছুটি শেষে টগবগে ফুটন্ত রক্ত নিয়ে পুনরায় পদার্পন করলাম এমজিজিসি-এর জলপাই সবুজ চত্বরে। এবার আর আমরা সেই নিরীহ নিপীড়িতদের দলে নেই, এবার আমরা করবো শোষণ আর নিপীড়ন। আমাদের সকলের রক্তেই বইছিলো একই মন্ত্রণা “First year, damn care”, কিন্তু…বেইমান রাজাকার নুঝাত, সেহেলি, রাশনাদের মতো কতিপয় ব্যাচদ্রোহী তাদের একাডেমিক ক্যারিয়ারে লাগতে দিলো না কোনো লাল দাগের আঁচড়। কিন্তু ওদের সেই প্রভাব গায়ে না লাগিয়ে, বইখাতা শিকেয় তুলে তিন হাউজের থার্ড ব্লক হয়ে উঠলো পঞ্চাশটি হিটলারের গ্যাস চেম্বার।
অতঃপর ১৯ অক্টোবর, ২০১০। সেভেন থেকে লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে এবং আমাদের গ্যাস চেম্বার থেকে জুনিয়রদের সাময়িক মুক্তি দিতে আমরা সবাই পাড়ি জমালাম কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। কলেজ লাইফের (হয়তো জীবনের) সবেচেয়ে আনন্দময় মুহূর্তগুলোর সাথে স্মৃতি হয়ে থাকলো আশেকার ওয়াজ, জেরিন-তাসনিয়ার বাচ্চামি, আর তৌহিদার আলমগীর বিহীন ববিতা সেজে নাচ। স্মৃতির পাতায় অক্ষুণ্ণ হয়ে থাকবে বাসে সবার বিচিত্র ভঙ্গিতে ঘুম, BMA তে সাবাবার ঘোড়া থেকে পড়ে যাওয়া, আর Sanmar এ কেনাকাটার ধুম। স্মৃতির এই লম্বা সারিতে আরও জায়গা করে নিয়েছে Foys Lake এর প্রাণবন্ত মুহূর্তগুলো, সমুদ্রস্নানের উত্তেজনা বা গলফ ক্লাবের সরু পাহাড়ি রাস্তায় পূর্ণিমার আলোতে একসাথে হাত ধরে হেঁটে যাওয়া। এই মুহূর্তে খুব মনে পড়ছে camp fire শেষে ক্লাসমেটদের উদ্দেশ্যে নাফিসার দেওয়া আবেগপূর্ণ ভাষণ। শত আনন্দের মাঝেও কথাগুলো শুনে সবারই চলছিলো অশ্রু গোপনের ব্যর্থ প্রচেষ্টা। “Give me some sunshine, give me some rain” গানের সুরেই শেষ হলো স্বপ্নময় সাতটি দিনের।
এভাবেই হাটিহাটি পা পা করে এসে পৌঁছালাম কলেজ জীবনের শেষ অধ্যায়ে। সেভেনের সেই ক্ষুদে সৈনিকেরা আজ সেনাপতির ভূমিকায়। টুয়েলভের বস্তা বস্তা পড়ার চাপ থেকে দুইদিনের জন্য মুক্তি মিলল ২৪-২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১ তে। মনে পড়ে চ্যানেল আই স্টুডিও দেখার অসাধারণ অভিজ্ঞতা, নভোথিয়েটারের ঘুম, স্মৃতিসৌধ ও বিজ্ঞান জাদুঘর ভ্রমণ, আর ক্যান্ট. পাবলিকের অডিটোরিয়ামে দুই-দুইটা ব্ল্যাক ফরেস্ট দিয়ে আফিফার বার্থডে উদযাপন। শুধু তাই নয় ভুলতে পারবো না এমসিসির সুস্বাদু খানাপিনা, নুঝাত (অপু বিশ্বাস), ফারহা (শাকিব খান), আশিফা (আসাদুজ্জামান নূর) এবং ফারহিন (কম্পিউটার জী)-দের “কে হবে কোটিপতি”-র মঞ্চায়ন, এবং সবশেষে সন্ধ্যাবেলায় নন্দন পার্কের সবুজ ঘাসে পা ছড়িয়ে water dance দেখার অনন্য মুহূর্তগুলোকে।
কলেজ লাইফের ৬টি বছর পেরিয়ে, শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে মনের ক্যানভাসে সেই সাদাকালো স্মৃতিগুলো আজ বারাবার রঙিন হয়ে উঠছে। চোখে ভেসে উঠছে ক্লাস সেভেনের প্রথম ফর্ম লিডার হিসেবে নাইমা- ইয়াসমিনকে, একাডেমিক ব্লকে হাস্যকর ঝগড়া, বি-ফর্মের প্রেপ টাইম ভলি (যেখানে মেইন প্লেয়ার থাকতো আমাদের মকরা রুফাইদা), আর এ- ফর্মে নুসরাতের পার্মানেন্ট ফর্ম লিডারশীপের অত্যাচার।মনে পড়ছে তামান্নার শাণিত কথার ঝলসানি লাগানো অটল যুক্তি, মিস করবো আমাদের ব্যাচের বড়দি সুদীপ্ত দীপার (হৃদিতা)আদর সোহাগ, মনে পড়বে আমাদের মিতু (ফারজানা)আর আঁখির (শারমিন)প্রেপে ননস্টপ স্টাডি, সম্পা (কার্নিস)-ইরিনার ফেভিকল ফ্রেন্ডশিপ, লুলুর (লুবনা) প্রেপ গার্ডের কাছে পারমিশন নেওয়ার সময় হাসি লুকাতে গিয়ে বিচিত্র মুখভঙ্গি এবং ফলশ্রুতিতে পুরো ফর্মের একসাথে পানিশমেন্ট খাওয়া অথবা JCC- র অডিটোরিয়ামে ছোট্ট মুন (জান্নাত) পাখির জি.কে. কম্পিটিশনের উত্তেজনায় ডানা ঝাপটানো।
আনমনে হেসে ফেলি, যখন মনে পড়ে ক্লাস সেভেনে আমাদের দস্যি নাফিসা তার বাবাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ক্রস বেল্টটা সে অর্জন করবেই, আর তা শুনে সাবাবা জিজ্ঞেস করেছিল, “নাফিসা, ক্রস বেল্ট কি?” সেই সাবাব-ই কিনা আজ আমাদের কলেজ অধিনায়িকা। আরও মজা লাগে চিন্তা করলে ক্লাস (সেভেন- এইট)-এ হাতে লাল ফিতা বেঁধে ডিসপ্লে করা মাওয়াই গত অ্যাথলেটিক্সে হাতে মশাল নিয়ে তীব্র বেগে দৌড়িয়েছে। যে সানজানা ক্লাস সেভেনে রেসিটেশন কম্পিটিশনে প্রায় পুরো কবিতাই ভুলে গিয়েছিল, সেই কিনা ICLMM-এ রেসিটেশনের হ্যাট্রিক করা ফার্স্ট পজিশন হোল্ডার আর আমাদের বর্তমান কলেজের কালচারাল প্রিফেক্ট। নুঝাতের ব্যাগের ভিতরে সানজানার বেল্ট থাকায় চুরির দায়ে হ্যান্ড পুলার (H.P.) উপাধিটি তার কপালে ভালমতোই জুটেছিল। আর আজকে সেই নুঝাতই আমাদের লাল হাউসের H.P. (House Prefect). এদিকে “আমি একটা রাজাকার” বলা তৌহিদাই যে একদিন নীল হাউসের দায়িত্ব কাঁধে নিবে কে জানতো? কেই-বা বুঝেছিল ২৮তম ব্যাচের সবচেয়ে নরম মেয়ে নাফিয়াই হবে সবুজ হাউসের অন্যতম গরম হাউস প্রিফেক্ট? আর আজীবন stage-এ ঢং করে নাচা গলতু বব (তাসনিয়া)আজ কিনা মসজিদ আর ডাইনিং হলের মতো পবিত্র স্থানের দায়িত্বে।
আজ সাঁঝের বেলায় খুব মনে পড়ছে প্রেপ গুলতে আমাদের ব্যাচের খ্যাপা পাগলা গুলো্র- মেরিনা, কানিজ, তারিন, ফাতেমা, নিগারের কারণে অকারণে ফুঁসে ওঠা। অথবা নাফসুর(নাফিসা) ননস্টপ ব্রেকিং ড্যান্স কিংবা ডি.জে. নূরুর (নূরেন) কীর্তিকলাপ। মিস করবো আফটারনুন প্রেপে নাফিসা-তাসনিয়া-নূরেন (যারা ব্যাসিকালি ড্যান্সার)দ্বারা পিঁপিঁ গলায় সৃষ্ট “অবক্তব্য সঙ্গীত সমস্যা”। এই MGCC অডিটোরিয়ামে হয়তো আর কখনোই দেখব না ফারহিন- শ্রাবণীর তবলার তালে ইসরাত, নুঝাত, প্রজ্ঞা অথবা হৃদিতার মন ভোলান গান। মনের এক কোণে সবসময় বাজবে নাফিয়া- নূরেন, নাইমা-তৌহিদার ঘুঙুরের রিনিঝিনি, কিংবা আমাদের ‘গ্যালিভার’ সাবাবার তুখোর ডিবেট।
লেখার শুরুতে ভেবেছিলাম হয়তো দু-তিন পাতায় শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু এখন দেখছি স্মৃতিগুলো যেন কাগজ-কলমের ফ্রেমে বন্দী হবার নয়। কি করে ভুলে থাকবো টিজে-এর (তাহারাত) সেই ধুমধাড়াক্কা ড্রামস পিটানো, আর কুস্তিগির আবুল ওরফে তৃষার আমাদেরকে পেটানো। কিংবা চামুর (মনিরা) ইমোশনাল অত্যাচার, ডাগর ডাগর চোখে চপলা নীতির পিংপং চাহনি, বিধ্বংসী সাবি’র (সাবিকুন) ভাংচুরের কথাআর জারিনের বিশ্রি খামচি খাওয়ার ব্যাথা। জানি না, Adieu-র দিনে মাহামুদার কি হবে, গোটা ছ’বছরই যে বিভিন্ন সময় “ক্লাসমেটস, তোদের অনাকে মিস করবো”- বলেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারত না!
এত দ্রুত যে আমাদের এ যাত্রা ফুরোবে তা কখনো ভাবিনি। এ মুহূর্তে এসে সময়টাকে বড় নিষ্ঠুর মনে হচ্ছে। ২০০৬-এ শুরু হওয়া সেই স্বাধীনতা সংগ্রাম আজ এই ২০১২ তে এসে শেষ হতে চলেছে। কিন্তু খুব আশ্চর্য লাগছে যে, যদিও বা স্বাধীন জীবনে পা রাখতে যাচ্ছি তবুও এখন ছয় বছরে ফেলে আসা সংগ্রামের দিনগুলোকে অনেক বেশি মধুর মনে হচ্ছে। যেই আমাদের প্রতিটি হৃদ স্পন্দন একসাথে চলতো সেই আমরা একে অপরকে ছেড়ে কিভাবে চলে যাবো।
চিরকাল মনে রাখব আমাদের এই যাত্রার পাথেয় শ্রদ্ধ্যেয় প্রয়াত খাদেমুল হক স্যার, প্রয়াত জায়েদ স্যার, প্রয়াত রাবেয়া ম্যাডাম, প্রয়াত রকিমুন্নেসা ম্যাডাম, হাসান স্যার, সুবহানী স্যার, তোফায়েল স্যার আর ইকরাম স্যারদের মতো মানুষ গুলোকে। আর বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমাদের মায়ের মতো নাসিমা ম্যাডাম আর বাবার মতো এনায়েত স্যার ও সারোয়ার স্যারের প্রতি। ধন্যবাদ জানাচ্ছি কলেজের সকল স্যার-ম্যাডামদেরকে তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্যে। লেখাটাকে আর না বাড়িয়ে, পরিশেষে ক্লাসমেটস তোদের উদ্দেশ্যেই বলছি। প্রথমত, যা না বললেই নয়, তোদের জন্যেই আমরা (খ্যো, অত্রি, দীপা, বব, মুন, শাইনী, পরমা, নোশিন) কলেজ জীবনের শেষ পিকনিক বর্বাদ করলাম এই লেখাটা লিখতে গিয়ে (দেখ আমরা কত মহান!!!)। আর দ্বিতীয়ত, Stunning, Pulsive 28-এর দল, তোদের অনেক বেশি মিস করবো। গত ছ’বছরে তোদের সাথেই হাসি কান্নায় মেতেছি, তোদের সাথেই সব সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিয়েছি, জানি না কলেজের বাইরে গিয়ে কার সাথে শেয়ার করবো। তোদের ক্যামনে ভুলে থাকবো, বল? তোরা যেখানেই থাকবি যেন অনেক ভালো থাকবি এই কামনায় করি। নিজের অজান্তেই কেন যেন চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে উঠছে। হয়তো আমরা পরস্পরকে ছেড়ে চলে যাবো অনেক দূর কিন্তু একসাথে মিলে নেওয়া আমাদের সেই লাল-সবুজের শপথ মনে লালন করবো চিরকাল। একদিন দূরের সীমানাটাকে পেরিয়ে ঐক্যের পথে হাতে হাত ধরে এগিয়ে যাবো আর ওড়াবো আমাদের স্বপ্নের বাংলার বিজয়কেতন। আর এই স্বপ্নকে সত্যি করে হয়তো আবার কোন একদিন আমরা প্রানের মেলায় মেতে উঠবো এই জলপাই সবুজ চত্বরে।
এই কামনায় আমাদের স্বাধীনতার গল্পের ইতি টানছি।
৪,০২৮ বার দেখা হয়েছে

৬ টি মন্তব্য : “আমাদের স্বাধীনতার গল্প”

  1. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    পড়তে পড়তে গানটা শুনতে ইচ্ছা হলো।
    খুজে বের করে শুনতে হলো।
    আমার মতো আর কারো শুনতে ইচ্ছা হয়ে যেন খোঁজাখুঁজি করতে না হয়, তাই এখানে এমবেড করে দিলাম:

    বাই দ্যা ওয়ে অনেকে মিলে তৈরী করা লিখাটা আবেগে ঠাসা হলেও ছুঁয়ে গেল।
    ভাল লেগেছে.........


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : লুৎফুল (৭৮-৮৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।