ইতিহাসের ভিন্নপাঠ।। চেঙ্গিস খান

“চেঙ্গিস খান ছিলেন শক্তিমান, প্রজ্ঞাবান, কুশলী, সম্ভ্রম-জাগানিয়া, কসাই, ন্যায়বান, দৃঢ়চেতা, শত্রুর বিনাশকারী, অকুতোভয়, আশাবাদী ও নির্মম এক মানুষ। ’’

– পারসিক এক ইতিহাসবিদ

১.
গত ২০ বছরে তথ্যের জগতে অবিশ্বাস্য একটা পালাবদল হয়েছে। যেকোনো ব্যাপারে জানতে চাইলে গুগল সার্চবারে লিখলেই চিচিং ফাঁক। চোখের নিমেষে হাজারটা তথ্য (কিংবা অপতথ্য) আপনার সামনে হাজির হয়ে যাবে। কিন্তু, অজ্ঞানতা খানিকটা কমল কি ? পৃথিবীশুদ্ধ পাঠশালায় সবাই শিখছে মধ্যযুগে জ্ঞান-বিজ্ঞানের কোন বালাই ছিল না। এটা সত্যি যে সেসময় ইউরোপ চরম অন্ধকার, কুসংস্কার ও বর্বরতায় ডুবে ছিল, তার মানে তো এই না যে, পৃথিবীর অন্য কোথাও কেউ জ্ঞানের মশাল জ্বালে নি। ইতিহাস বইয়ে লিখা থাকলেই কোনোকিছু সত্য হয়ে যায় না। পুরনো দিনের ধুলো সরিয়ে সত্যিকারের ছবিটা দেখার আগ্রহ থাকলে সভ্যতারই বিকাশ ঘটে। আজকের লেখাটা দুর্ধর্ষ চেঙ্গিস খানকে নিয়ে।

দিগ্বিজয়ী বীর সেনাপতিদের মহিমা বর্ণনা করার জন্য অভিধানে অসংখ্য বিশেষণ থাকলেও চেঙ্গিস খানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত করা হয় ‘বর্বর’, ‘নিষ্ঠুর’, ‘নির্দয়’- জাতীয় শব্দগুলো। কিন্তু, মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এই দিগ্বিজয়ীর কাছ থেকে শেখার কিছুই কি নেই আমাদের ? এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই যে, মোঙ্গলবাহিনী দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় কিছু যুদ্ধাভিযান ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। কিন্তু, যেকোনো ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব বা ঘটনাকে পর্যবেক্ষণ করতে হলে তৎকালীন আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ কি আমলে নেয়া উচিত নয়?

২.
মোঙ্গল ভাষায় রচিত সবচেয়ে প্রাচীন গ্রন্থ ‘The Secret History of The Mongols’ থেকে জানা যায়, চেঙ্গিস খানের জন্ম ১১৬০ সালের দিকে মঙ্গোলিয়ার বর্তমান রাজধানী উলানবাটর থেকে প্রায় ২০০ মাইল উত্তরপূর্বে ওনোন নদীর তীরে। যাযাবর গোত্রপতি পিতা পুত্রের নাম রাখেন তেমুজিন। কিংবদন্তি বলে, জন্মের সময় তার হাতের তালুতে রক্তের দলা লেগে ছিল।
দ্বাদশ শতাব্দীর শেষভাগে জন্ম, তার মানে তখনো মধ্যযুগ ফুরোয়নি। সেইসময়ের পৃথিবী কেমন ছিল? সেকালের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল-
১. যুদ্ধবিগ্রহে জর্জরিত মধ্য- এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ
২. ধর্মীয় (বা ভিন্নমতের প্রতি) অসহিষ্ণুতা
৩. পরাধীনতার শক্ত শিকলে বন্দী নারী
৪. স্বাধীন মত প্রকাশের ও মুক্তচিন্তার প্রতিকূল পরিবেশ
(গত ৯০০ বছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জগতে চোখ- ধাঁধানো উৎকর্ষতা অর্জিত হয়েছে । কিন্তু মানবিক (নৈতিক) গুণাবলির কোন বিকাশ ঘটেছে কি ? একদিন হয়ত তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে বাঁদর উপরে উঠে যাবে, আমরা তখনো ব্যস্ত থাকব কিভাবে আরো আধুনিক সব মারণাস্ত্র দিয়ে একে অপরকে ধ্বংস করা যায় সেই চেষ্টায় । )

এখন মূল আলোচনার পালা। মধ্যযুগের প্রেক্ষিতে চেঙ্গিস খানের চরিত্র বিশ্লেষণ করা যাক।

৩.
প্রশ্ন ১- নেতা হিসেবে কেমন ছিলেন চেঙ্গিস খান?

চেঙ্গিস খানের সবচেয়ে বড় অর্জন যাযাবর ও বহু ভাগে বিভক্ত মঙ্গোল গোত্রগুলোকে একত্রিত করে মধ্যযুগের সবচেয়ে বড় পরাশক্তিতে পরিণত করা। তাঁর জন্মের সময় মঙ্গোলিয়া ছিল অন্তত ৩০টি গোত্রে বিভক্ত একটা দেশ। ধীরে ধীরে বিবাদে লিপ্ত গোত্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনেন চেঙ্গিস। ১২০৬ সালে তিনি ‘খান’ উপাধি নেন ও গোত্রের প্রতি আনুগত্য বিলোপ করে সবাইকে মঙ্গোল জাতিসত্তার প্রতি অনুগত হওয়ার আহ্বান জানান। মঙ্গোলরা একচ্ছত্র নেতা হিসেবে তাকে স্বীকার করে নেয়। নতুন শক্তিতে উজ্জীবিত মঙ্গোলরা অসম্ভবকে সম্ভব করে। রোমানরা তাদের ৪০০ বছরের ইতিহাসে যখন সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল, তখন তাদের সাম্রাজ্যের যে আয়তন ছিল, চেঙ্গিস মাত্র পঁচিশ বছরে তার চেয়ে ৪ গুণ বড় এক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেন । এর আয়তন দাঁড়ায় ১ কোটি ২০ লাখ বর্গমাইলে। মঙ্গোলদের অধীনে বাস করত প্রায় ত্রিশ কোটি মানুষ। বিস্ময়কর হলেও সত্যি, মঙ্গোলদের মোট জনসংখ্যা তখনো মাত্র বিশ-পঁচিশ লাখের বেশি না। এবং, চেঙ্গিসের সৈন্যসংখ্যা কখনোই এক লাখ পেরোয়নি (মোটামুটি মাঝারি আকারের স্টেডিয়ামে পুরো বাহিনী ধরে যাবে)।
রূপকথার মতই বিখ্যাত ‘সিল্ক রুট’ সংলগ্ন বিচ্ছিন্ন রাজ্যগুলো এক ছাতার নিচে নিয়ে আসেন চেঙ্গিস খান। নির্মাণ করেন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ‘মুক্তবাণিজ্য এলাকা’।

তাঁর দ্বিতীয় অর্জন, নানা জাতির সমন্বয়ে এক পেশাদার ও দুর্ধর্ষ সেনাবাহিনী গঠন। দুঃসাহসী, স্বাধীনচেতা এই যোদ্ধাদের নিঃশর্ত আনুগত্য লাভ কোন চাট্টিখানি কথা নয়। মেধা ও যোগ্যতার যথার্থ স্বীকৃতি দেয়ার ব্যাপারে চেঙ্গিস খান কখনো কার্পণ্য করেননি। উচ্চপদে যেতে হলে বংশপরিচয় বা অতীত আনুগত্য নয় বরং দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার প্রমাণ দিতে হত মঙ্গোল সেনাপতিদের। এরকমও ঘটেছে যে মঙ্গোলদের হাতে যুদ্ধবন্দী তার মেধাকে কাজে লাগিয়ে পরে সেনাপতি হয়ে গেছে । ১২০১ সালে তাইজুত গোত্রের সাথে ভয়ংকর লড়াইয়ে চেঙ্গিস খান অল্পের জন্য মৃত্যুকে এড়াতে সক্ষম হন। জয়ী হওয়ার পর বন্দীদের তার সামনে আনা হয় এবং খান জানতে চান কে সেই নরাধম যে তাকে তীর নিক্ষেপ করেছিল। এক সৈন্য দাঁড়িয়ে জবাব দেয় সে করেছে এই কাজ। তার দুঃসাহসে মুগ্ধ হয়ে চেঙ্গিস তার নাম দেন ‘জেবে’ বা ‘তীর’।
এই জেবে পরবর্তীতে মঙ্গোল সেনাবাহিনীর অন্যতম প্রধান সেনাপতির মর্যাদা লাভ করেন। ইউরোপ আক্রমণে মূল ভূমিকা তাঁরই ছিল।

অবশ্য, বীরের মর্যাদা চেঙ্গিস সবসময়ই দিয়েছেন। মঙ্গোল আক্রমণে দিশেহারা হয়ে খাওয়ারিজম সুলতান যখন কাপুরুষের মত পালাতে ব্যস্ত, যুবরাজ জালাল-উদ-দিন তখন শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান আফগানিস্তানের কাছে। চেঙ্গিস তার বিশ্বস্ত এক সেনাপতিকে পাঠান জালালকে শায়েস্তা করতে। জালাল শোচনীয়ভাবে তাকে পরাস্ত করেন। এবার খান নিজেই নেতৃত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মঙ্গোল বাহিনীর উপর একের পর এক দুঃসাহসী আক্রমণ চালিয়েও যখন মঙ্গোল ব্যূহ ভেদ করতে ব্যর্থ হলেন, তখন অকুতোভয় জালাল-উদ-দিন সিন্ধুনদে ঝাঁপ দেন ও সাঁতার কেটে অপর পাড়ে গিয়ে পৌঁছান । চেঙ্গিস তাঁর তীরন্দাজদের তীর ছুঁড়তে নিষেধ করেন ও মুগ্ধ হয়ে বলে উঠেন, “ প্রত্যেক পিতারই এরকম পুত্র থাকা উচিত!”

রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবেও চেঙ্গিস দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। সেকালের অন্যান্য সম্রাটরা যেখানে সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখতে ব্যস্ত, চেঙ্গিস সেখানে মঙ্গোলদের মাঝে যুদ্ধ থেকে পাওয়া সম্পদ বণ্টন করে দিতেন। করের বোঝা চাপিয়ে দেননি দেশের মানুষের উপর। বরং, শিক্ষক, চিকিৎসক, ধর্মযাজক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কোন কর দিতে হত না। নিয়মিত আদমশুমারি ও ডাকবিভাগ ( সম্ভবত বিশ্বের প্রথম আন্তর্জাতিক ডাকবিভাগ ) চালু করেন।

প্রশ্ন ২- চেঙ্গিস খান কি ধর্মীয় সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছেন?
“People conquered on different sides of the lake should be ruled on different sides of the lake.”
– Genghis Khan
খোলাফায়ে রাশেদীনের পর উমাইয়া বংশ মুসলিম বিশ্বের কর্তৃত্ব লাভ করে। তারা ধর্মের নামে নির্যাতন ও অবিচারের জন্য কুখ্যাত হয়ে আছে। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পরও একজন অনারবের কাছ থেকে জোরপূর্বক অন্যায্য কর আদায় করা হত। ইমাম আবু হানিফা এর তীব্র প্রতিবাদ করায় তাঁকে কারাবন্দী করা হয়। সামাজিক কাঠামো অনেকটা পিরামিডের আকার ধারণ করে। যার শীর্ষে ছিল মুষ্টিমেয় আরবদের অবস্থান। বেশিরভাগ সুযোগসুবিধা তারাই ভোগ করত। যেমনঃ খোরাসান ও ইরানে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের সকল উচ্চপদ শুধুমাত্র আরবদের জন্য নির্দিষ্ট থাকত। প্রশাসনে দুর্নীতি মহামারীর মত বিস্তৃত ছিল। এমনকি গভর্নর নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে মেধা বা দক্ষতা নয়, কত নিষ্ঠুরভাবে সেই অঞ্চলকে বশে রাখতে পারবে তা ছিল যোগ্যতার প্রধান মাপকাঠি। এর ফলে জাতিগত বিভেদ ও সামাজিক বৈষম্য চরম আকার ধারণ করে।

এবার আসা যাক ইউরোপে। ইউরোপজুড়ে ক্যাথলিক আর প্রটেস্টান্টদের রক্তাক্ত যুদ্ধ কয়েকশ বছর ধরে চলেছে। ধর্মীয় বিভেদ কোন পর্যায়ে পৌঁছায় তা রাজা ফিলিপ দ্বিতীয়-র বোন ডোনা ইসাবেলার ঘটনা থেকে বুঝা যায়। প্রটেস্টান্ট হওয়ার অপরাধে ক্যাথলিকরা ৭ মাসের গর্ভবতী ইসাবেলাকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারে। ‘Holy Spanish Inquisitor’ রা যে রোমহর্ষক অত্যাচার চালিয়েছে তা বহুল আলোচিত । ১৪৫০ থেকে ১৭৯২ সাল পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষকে ডাইনি/ বিধর্মী হওয়ার অভিযোগে চরম নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। অবশ্য, রিফরমেশনের পর পরিস্থিতির উন্নতি হয় (কিছুটা)।
প্রটেস্টান্টরা ‘অপরাধী’দের ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে মারত। অন্য ধর্মের প্রতি তারা যে সহিষ্ণু ছিল তারও কোন প্রমাণ নেই। ১৪৮৪ থেকে ১৫৩০ সাল পর্যন্ত ভ্যালেন্সিয়া ও বার্সেলোনাতে অভিযুক্তদের ৯০ শতাংশ ইহুদী- বংশদ্ভুত ছিল। (১)

ধর্মান্ধতা যেখানে মধ্যযুগের প্রচলিত প্রথা ছিল, সেখানে মোঙ্গল শাসনাধীন এলাকা সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ ছিল। সবাই যেন স্বাধীনভাবে যার যার ধর্ম পালন করতে পারে সেজন্য চেঙ্গিস খান আনুষ্ঠানিক ফরমান জারি করেন। চেঙ্গিস খানের দরবার সব ধর্মের অনুসারীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। শিয়া-সুন্নি মুসলিম, নেস্টরিয়ান- রোমান ক্যাথলিক- বাইজেনটাইন খৃস্টান, বৌদ্ধ ভিক্ষু ও হিন্দু পণ্ডিতরা শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতেন (বাঘের ভয়ে কবে গরু-মহিষ এক ঘাটে জল খায় নি?)।
এমনকি ধর্মীয় বিষয়ে বিতর্ক হত স্বয়ং খানের উপস্থিতিতে। তাঁর উত্তরসুরিরা চীনে গির্জা নির্মাণে, ইরানে প্যাগোডা ও রাশিয়াতে কোরআন শিক্ষাদানের স্কুল প্রতিষ্ঠায় পৃষ্ঠপোষকতা করে।

তাই চেঙ্গিস খানের প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক এডওয়ার্ড গিবন লিখেছেন,
“The Catholic inquisitors of Europe, who defended nonsense by cruelty, might have been confounded by the example of a barbarian, who anticipated the lessons of philosophy and established by his laws a system of pure theism and perfect toleration.”

প্রশ্ন ৩- চেঙ্গিস খান কি নৃশংস এক যুদ্ধোন্মাদ ছিলেন?

বিভিন্ন কারণে এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা বেশ বিপদজনক। প্রশ্নকারীর ইতিহাসজ্ঞান নিয়ে সন্দেহ তো জাগবেই, সেই সাথে তার মানসিক সুস্থতাও প্রশ্নবোধ্য হয়ে যাবে।
চেঙ্গিসের নেতৃত্বে মঙ্গোল যোদ্ধারা কি করেছে, সে আলোচনায় যাওয়ার আগে আবারো একটু মধ্যযুগের আরব ও ইউরোপিয়ান সম্রাট/ সেনাপতিরা যুদ্ধের সময় বা যুদ্ধজয়ের পর কি করতেন সেটা জানা উচিত।

উমাইয়াদের উৎখাত করে মুসলিম দুনিয়ায় আব্বাসিয় শাসন শুরু হয় অষ্টম শতাব্দীতে। এরপর যা শুরু হয় তাকে একমাত্র ‘নারকীয় তাণ্ডব’ বলা যায়। বিজয়ী হওয়ার পর আব্বাসিয় সেনাবাহিনীর হাত থেকে কোন উমাইয়া পুরুষ রেহাই পায় নি। তাদের চিরুনি অভিযান চালিয়ে খুঁজে বের করে হত্যা করা হয়। উমাইয়া বংশের মৃত শাসকদের কবর খুঁড়ে হাড়-গোড় পুড়িয়ে ফেলা হয়। (২) দামাস্কাসে বিজয়ী সেনাপতি আব্দুল্লাহ বিন আলী ৮০ জন উমাইয় যুবরাজকে দ্বন্দ্ব ভুলে সম্প্রীতির আহ্বান জানিয়ে নৈশভোজে আমন্ত্রণ করেন। যখন তারা খেতে ব্যস্ত, দড়ি দিয়ে বেঁধে গালিচায় মোড়ানো হয়। তারপর তাদের পিটিয়ে মেরে ফেলে আব্বাসিয় সৈন্যরা । এরপর উমাইয় রাজপরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করা হয়।

পৃথিবীর ইতিহাসে যত ধর্মীয় যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, সবচেয়ে দীর্ঘকালব্যাপী, নির্মম, রক্তাত্ত ও উন্মত্ত হল ক্রুসেড। ২০০ বছর ধরে এশিয়া মাইনর ও পূর্ব- ভূমধ্যসাগরের উপকূলে ইউরোপিয়ানরা আক্রমণ চালিয়েছে আরবদের উপর। ক্রুসেডারদের নৃশংসতা সুদূরতম মানবিক চিন্তা ও বোধশক্তিকে হার মানায়। জেমস ডেভিড বারবার তাঁর ‘The Book of Democracy’ তে লিখেছেন ‘ক্রুসেডের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল জেরুজালেম ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা হতে আরবদের (হোক সে মুসলিম হোক কিংবা ইহুদী) নির্মূল করা। ১০৯৬ সালে ক্রুসেডার পিয়েরে আরমিটের বাহিনী বসফরাস অতিক্রম করে তুরস্ক আক্রমণ করে। তারা শুধু মুসলিমদেরকেই নির্মমভাবে হত্যা (শিশুদের জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার নজির পাওয়া যায়) করে নি, বরং গ্রীক চার্চের অনুসারী খৃস্টানদের গণহারে জবাই করত। বাইজেনটাইন সম্রাট আলেক্সিয়াস এর কন্যা আনা কমনেনার বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়- পিয়েরের সৈন্যরা মানুষ মেরে স্তূপ করে পাহাড় বানাত এবং শিশুদের হাত-পা ছিঁড়ে আগুনে ঝলসে রোস্ট বানিয়ে খেয়ে ফেলত। ১০৯৯ সালে জেরুসালেম জয়ের পর ক্রুসেডাররা প্রায় ৭০ হাজার মুসলিম ও ইহুদী অধিবাসীকে হত্যা করে। বিখ্যাত সলোমন মন্দিরের পাদদেশে প্রায় ১০ হাজার ইহুদী গণহত্যার শিকার হয়। (৩)

তাই বলা যেতে পারে, সেইযুগে যুদ্ধকালীন সময়ে কোন শাসকই ( সুলতান সালাউদ্দিনের মত ব্যক্তিত্বরা নিতান্তই ব্যতিক্রম) প্রতিপক্ষের উপর নির্মম হতে পিছপা হননি।

মঙ্গোলদের কাছে একমাত্র আরাধ্য ছিল যুদ্ধে বিজয়লাভ। যত দ্রুততার সাথে তারা আক্রমণ ও দখল করত, তত দ্রুতই বিজিত এলাকায় শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করত। কোন রাজা তাঁর বশ্যতা মেনে নিলে, চেঙ্গিস খান সেখানে লুণ্ঠন বা হত্যাকাণ্ড করার নির্দেশ দিয়েছেন সে নজির বিরল। এরকম ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতি আমরা ‘সভ্য- আধুনিক’ যুগের নাগরিক হিসেবে অবশ্যই সমর্থন করতে পারি না, কিন্তু এটাই কি জগতের স্বাভাবিক নিয়ম নয়? আর ‘অশ্বমেধ যজ্ঞ’ চালিয়ে সমুদ্রগুপ্ত যেখানে ‘রাজাধিরাজ’ কিংবা দেশের পর দেশে হামলা চালিয়ে অ্যালেক্সান্ডার ‘মহামতি’ হয়ে গেলেন, সেখানে একই কাজ করে অপরাধী কেবল চেঙ্গিস খান ?

মঙ্গোলরা অলঙ্ঘনীয় কূটনৈতিক কবচে বিশ্বাস করত। শত্রুদেশ থেকেও যদি কোন দূত আসে, সে সম্পূর্ণ নিরাপদ ও সম্মানিত অতিথি। এবং দূতহত্যা তাদের দৃষ্টিতে ছিল জঘন্য অপরাধ। মঙ্গোলরা যেসব দেশ আক্রমণ করেছে তাদের অনেকেই এই নিয়ম লঙ্ঘন করার কারণে শাস্তি পেয়েছে। যেমন তৎকালীন মধ্য- এশিয়ার প্রধান পরাশক্তি খাওয়ারিজম সালতানাত(বর্তমান তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরানের সিংহভাগ)।
পারসিক ইতিহাসবিদ আতা-মালিক জুভাইনির ‘চেঙ্গিস খানঃ দিগ্বিজয়ীর ইতিহাস’ থেকে পাওয়া যায়-
‘চেঙ্গিস খান পারস্পরিক বাণিজ্যের প্রস্তাব দিয়ে খাওয়ারিজম সুলতান মুহাম্মাদ এর জন্য মূল্যবান উপঢৌকনসহ ৪৫০ জন বণিকের এক দল প্রেরণ করেন। সীমান্তবর্তী গভর্নর গুপ্তচর সন্দেহে তাদের সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। সুলতান এতে সায় জানান। স্বাভাবিকভাবেই ক্ষিপ্ত চেঙ্গিস খান সেই গভর্নরের শাস্তি চেয়ে এবার রাজদূত পাঠান। সুলতান মুহাম্মাদ দূতের মাথা কেটে চেঙ্গিসের কাছে পাঠিয়ে দেন।’

খাওয়ারিজম আক্রমণের জন্য যুদ্ধপ্রস্তুতি শুরু করেন খান। সৈন্য সাহায্য চেয়ে অনুরোধ জানান মঙ্গোল বশ্যতা মেনে নেয়া ঝি জি (মাঞ্চুরিয়া) সম্রাট ঝুয়ানজংকে। খুব দ্রুত তারা বার্তা পাঠায় ‘ যদি চেঙ্গিসের যথেষ্ট সৈন্যই না থাকে, তবে আর খান হয়ে কি লাভ?’ সম্ভবত মাঞ্চুরিয়াতে তখন বাল্যকালে ‘পিপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে’ এই ছড়া শেখান হত না।
১২১৯ সালে খাওয়ারিজম অভিযানে বের হন চেঙ্গিস। অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সাথে ছিন্নভিন্ন করে দেন বিশাল সুলতান মুহাম্মাদের সাম্রাজ্য। আমুদরিয়া নদীর দক্ষিণে আরাল সাগরের তীরে ১ লাখ শত্রু সৈন্য কে হত্যা করে মঙ্গোলরা। মারভ, বলখ, নিশাপুরকে তছনছ করে দেয় তারা। মঙ্গোল সেনাপতি সুবেদেই ও জেবে সুলতান মুহাম্মাদকে ইরান হয়ে কাস্পিয়ান সাগর পর্যন্ত ধাওয়া করে। বিধ্বস্ত সুলতান সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।

ধ্বংসযজ্ঞ যে হয়েছে তা কেউ অস্বীকার করছে না, কিন্তু সত্যিই কি নিরস্ত্র মানুষকে সারিবদ্ধ করে জবাই করত মঙ্গোলরা ? মঙ্গোল ইতিহাসের উপর বিশেষজ্ঞ ল্যারি মোজেজ জানাচ্ছেন, “যেকোনো প্রতিপক্ষ শত্রুবাহিনীকে মঙ্গোলরা নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। কিন্তু, বিজিত নগরের নিরস্ত্র মানুষকে নির্মূল করেনি তারা। কারণ, তাদের লাটবহর বহন ও রসদ সংগ্রহের জন্য জনবল প্রয়োজন হত।” আবার অনেকসময় ইচ্ছা করেই নির্মমতার গুজব ছড়ানো হয়েছে। যেন শত্রুরা আত্মসমর্পণ করে ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার সাহস না পায়। তরবারির কোপে ঢালাওভাবে নিরস্ত্র মানুষের গর্দান উড়িয়ে দেয়া অতিরঞ্জন। চমৎকারভাবে এর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন আরেকজন পণ্ডিত মরিস রোসাবি, “সম্ভাব্য প্রতিপক্ষকে সতর্ক করার জন্য কিছু নগরকে ধ্বংস করা হয়েছিল। এটা তাদের একটা মনস্তাত্ত্বিক কৌশলমাত্র।” (৪)
৪.
যাযাবর এক জনগোষ্ঠীতে বেড়ে ওঠা নিরক্ষর চেঙ্গিস ছিলেন অসাধারণ এক সংগঠক ও আইন প্রণেতা। মধ্যযুগের অন্যতম ন্যায়পরায়ণ ও বিচক্ষণ শাসক। সেই মধ্যযুগে তাঁর সাম্রাজ্যে তিনি নারী-স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলেন। অথচ, পশ্চিমা ইতিহাসবিদরা বরাবরই চেঙ্গিস খানকে চিত্রিত করেছেন রক্তপিপাসু এক নরঘাতক হিসেবে।

আমরা ভুলে যাই উন্নত বিশ্বের ঝাঁ চকচকে নগরেরও একটা কালিমাখা চেহারা থাকে। যা সে সবার কাছ থেকে সযত্নে লুকিয়ে রাখে। আবার দরিদ্র-অবহেলিত দেশেরও থাকতে পারে গর্ব করার মত ঐতিহ্য । রঙিন চশমা দিয়ে তাকালে তাই দুনিয়ার আসল রূপ কখনো স্পষ্ট হয় না। সেটা দেখতে চাইলে চশমা নামিয়ে চোখ মেলে তাকাতে হয়। আবার তাকালেই কি দেখা যায় ? মনে পড়ে বুদ্ধদেব গুহ-র সেই কালজয়ী উক্তি, “ জ্ঞানের সীমা চিরদিনই ছিল, অজ্ঞানতার সীমা কোনোদিনই ছিল না।” (৫) জানার পিপাসা তাড়িত করুক আমাদের সবাইকে।।

তথ্যসুত্রঃ
১. The Spanish Inquisition: A Historical Revision, হেনরি কামেন, ইয়েল ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৯৯
২. The Cambridge History of Iran, এড রিচার্ড, কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৭৫, পৃঃ ৬২
৩. American Holocaust : The Conquest of the New World, ডেভিড ই স্ট্যানার্ড , অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস,১৯৯৩
৪. Lord of The Mongols: Genghis, মাইক এডওয়ার্ডস, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, ডিসেম্বর ১৯৯৬, পৃঃ ৩২
৫. চাপরাশ, বুদ্ধদেব গুহ, আনন্দ পাবলিশার্স, ১৯৯৮, পৃঃ ২৭৩

৩,৩৪৪ বার দেখা হয়েছে

১২ টি মন্তব্য : “ইতিহাসের ভিন্নপাঠ।। চেঙ্গিস খান”

  1. আন্দালিব (৯৬-০২)

    ইতিহাসের ভিন্ন পাঠ ভাল লাগলো। ইতিহাস সর্বদাই বিজয়ীদের পক্ষে একটু পক্ষপাতী হয়ে থাকে। চেঙ্গিস খান, আলেকজান্ডার ইত্যাদি conquerer-দের স্তুতিমূলক ইতিহাসের বয়ান তাই সন্দেহের চোখে দেখা ভাল।

    চেঙ্গিস খানের নৃশংসতাকে আমাদের দেশের শিক্ষাদীক্ষায় কিছুটা হলেও গ্লোরিফাই করা হয়। এত নিষ্ঠুর শাসকের নিষ্ঠুরতাই যেন শ্রদ্ধার ব্যাপার! কোন ইতিহাসের বইয়ে এমন টোন দেখলে আমার ভাল লাগে না। ওই যুগের রাজনীতির ধারাটাই ছিল জাতিগোষ্ঠীর দখল > অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা কেড়ে নেয়া। এজন্য নানান conquerer নানা পদ্ধতি ব্যবহার করতো। কেউই নিষ্পাপ না, কারো হাতই কম রক্তাক্ত না। একটা বিশেষ কারণে চেঙ্গিসকে অন্যান্য conquerer-দের চেয়ে বেশি নেতিবাচক ভাবি, সেটা হলো সে অসংখ্য জনপদের সংস্কৃতি এবং জ্ঞান ধ্বংস করে দিয়েছিল। সেসব জনগোষ্ঠী হয় বিলুপ্ত হয়ে গেছে, বা টিকে থাকলেও সাংস্কৃতিক দেউলিয়াত্বের শিকার হয়েছে। চেঙ্গিসের চেয়ে এদিক দিয়ে অন্যান্য অধিপতিরা কম নিষ্ঠুর বা বেশি সেনসিটিভ ছিল।

    জবাব দিন
  2. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    চমৎকার লিখা ছিল।

    চেঙ্গিস খান নিয়ে বেশী পড়াশোনা করা হয় নাই। তালিকায় মূল সম্বল ভাসিলি ইয়ানের চেঙ্গিস খান। সাথে খুচরা কিছু পড়াশোনা। এইচএসসির বাঙলা বইয়ে পড়েছিলাম সম্ভবত ভাসিলি ইয়ানের এই বইটি ঐতিহাসিক উপন্যাসের দিক দিয়ে সবচাইতে সঠিক। হয়তো নয়। তবে উপরে আন্দালিব ভাইয়ের সাথে আমিও একমতঃ ১) ইতিহাস বিজয়ীদের মহিমান্বিত করবে এটাই স্বাভাবিক, ২) রক্ত সবার হাতেই ছিল কিন্তু চেঙ্গিস খানের হাতে ধ্বংস হয়েছে বসরার মত যুগের চাইতে আধুনিক শহর, গ্রন্থাগার, শত বছরের পুরোনো বই, পান্ডুলিপি।


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  3. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    বিবিসি তে চেঙ্গিস/ গেঙ্গিস খান কে নিয়ে বেশ ভালো একটা ডকুমেন্টারি দেখেছিলাম।
    এছাড়া একটা মুভিও আছে গেঙ্গিস খান কে নিয়ে। ওমর শরীফ লিড রোল করেছিলেন।

    চীন দখল বা রাজপ্রাসাদ অবরোধ করে রাখার কাহিনী ভয়ংকর।

    তখন সময় ছিলো রাজ্য দখলের, সীমানা বাড়াবার। সেই হিসাবে গেঙ্গিস অন্যদের চাইতে ভিন্নতর নন। যে অল্প সময়ে খান সাহেব বিশাল ভুখন্ড নিজের অধীনে এনেছিলেন তা সত্যি বিস্ময়কর।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
    • কৌশিক(২০০৪-২০১০)

      খান সাহেব একটা বিস্ময়। সবচেয়ে বেশি Shock পেয়েছিল পূর্ব ইউরোপিয়ানরা। তারা তো এশিয়ার ( বিশেষ করে মধ্য- এশিয়া) বেশিরভাগ জাতি সম্পর্কে কিছুই জানত না। উল্কার মত অজানা এক অঞ্চল থেকে এসে সব লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গিয়েছিল খান সাহেবের বাহিনী ।

      জবাব দিন
  4. মুজিব (১৯৮৬-৯২)

    আসলে খুন-খারাবীর ব্যাপারটা ছিল সেই যুগের প্রচলিত প্রথা। ও লাইনে কেউ ই কারোর চেয়ে কম ছিলেন না। ের বাইরে আরও অনেক ক্ষেত্র আছে যেখানে তিনি অন্য সবার চেয়ে আলাদা। সেকুলারিজম, প্লুরালিসমকে ওনার আগে কেউ রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কিনা নিশ্চিত নই। সব মিলিয়ে ওনার প্রতি আমার পছন্দের পাল্লাটাই বেশী ভারি। এখানে বংশপ্রীতির প্রভাবও একটু-আধটু আছে বৈকি।
    চমৎকার লেখার জন্য ধন্যবাদ। প্রিয়তে রাখলাম। :clap: :clap:
    তাঁকে নিয়ে বানানো বিবিসির ডকুমেন্টারি এবং Mongols (২০০৭) সিনেমাটি দেখার জন্য আমি সবাইকে উৎসাহ দেব। আর অল্প সময়ে চেঙ্গিস খান সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্রাশ কোর্সের এই ১১ মিনিটের youtube ভিডিওটির জুড়ি নেই। (সম্পাদিত) (সম্পাদিত)


    গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।

    জবাব দিন
  5. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    "জ্ঞানের সীমা চিরদিনই ছিল, অজ্ঞানতার সীমা কোনোদিনই ছিল না"
    সীমাহীন অজ্ঞানতা কিছুট হলেও কমাবার চেষ্টা তো করা গেল.........
    :clap: :clap: :clap:


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।