আর্কেডিয়া

(উৎসর্গঃ কবি রফিক আজাদ শ্রদ্ধাভাজনেষু)

ভুল করে তুমি একদিন নেমেছিলে বুঝি ভুল জলে
অথবা সে ভুল নয়, হৃদয়ের প্রিয় অপচয়,
কারুচারীর জন্মগত অভিশাপে!
শরীরের বাঁকে বাঁকে কে করেছিল একদিন মরণের খোঁজ
আরক্ত নবীন প্রেম, দুর্দান্ত প্রবল প্রতাপে!

সর্বগ্রাসী ক্ষুধার জ্বালায় একদিন ভাত দে বলে
চেঁচিয়ে কে উঠেছিল? করেছিল মানচিত্র ছিঁড়ে-খুঁড়ে
জটিল ক্ষুন্নিবৃত্তির সন্ধান!
প্রিয় শাড়ীগুলো দেখে সে-ই ফের উঠেছিল গান গেয়ে
অথবা কালের ঘুংঘুর বেঁধেছিল অসম্ভবের পায়ে!

তবু তার মিটে নাই তৃষা ওইটুকু সীমাবদ্ধ জলে
তাই বুঝি চলে গেল না ফেরার পথে কোন ছলে
ঘুমাও এখন কবি কবরের সীমিত সবুজে
চুনিয়াকে চিনে নাও গভীর আমোদে চোখ বুঁজে!

৩,৭৯৫ বার দেখা হয়েছে

৫ টি মন্তব্য : “আর্কেডিয়া”

  1. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    বহুদিন পর তোমার কোন লেখা এখানে দেখতে পেয়ে যারপরনাই প্রীত হ'লাম, মোস্তফা। তোমার আকস্মিক প্রস্থানের পরে সিসিবি'র পাতা বেশ কিছুকাল ধরে কেমন খালি খালি লাগতো। আশাকরি এ পুনরাবির্ভাব ক্ষণস্থায়ী হবে না।
    প্রয়াত কবির প্রতি এ অসাধারণ শ্রদ্ধাঞ্জলির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। সম্ভব হলে ও সময় পেলে কবি সম্পর্কে আরো দু'চার কথা গল্প বা প্রবন্ধ আকারে লিখো।
    কবিতার প্রতিটি স্তবক চমৎকার হয়েছে।
    ঘুমাও এখন কবি কবরের সীমিত সবুজে
    চুনিয়াকে চিনে নাও গভীর আমোদে চোখ বুঁজে!
    -- সমাপ্তিটাও খুব সুন্দর হয়েছে।

    জবাব দিন
  2. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    ভাত দে হারামজাদা কবিতা নিয়া পাবলিকের চিল্লাপাল্লা দেখে মনে হচ্ছিলো ভাত দে হারামজাদা ছাড়া রফিক আজাদ আর কোন কবিতা লিখেন নি। যেভাবে প্রায় অনেকেই রফিক আজাদ, ভাত দে হারামজাদা র কবি বলে উল্লেখ করছিলো গত কয়েকদিন তাতে প্রচন্ড রাগ হচ্ছিলো। আমার ধারণা এদের অনেকেই ভাত দে হারামজাদা কবিতাটাও পুরো পড়ে দেখেননি। ঐ এক লাইন দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন।
    বাঙলাদেশে থাকলে তার সমগ্রটি খুলে একের পর এক উৎকৃষ্ট কবিতা তুলে দিতাম।
    ০১
    যদি ভালবাসা পাই
    যদি ভালবাসা পাই আবার শুধরে নেব
    জীবনের ভুলগুলি
    যদি ভালবাসা পাই ব্যাপক দীর্ঘপথে
    তুলে নেব ঝোলাঝুলি
    যদি ভালবাসা পাই শীতের রাতের শেষে
    মখমল দিন পাব
    যদি ভালবাসা পাই পাহাড় ডিঙ্গাবো
    আর সমুদ্র সাঁতরাবো
    যদি ভালবাসা পাই আমার আকাশ হবে
    দ্রুত শরতের নীল
    যদি ভালবাসা পাই জীবনে আমিও পাব
    মধ্য অন্তমিল।
    ০২ চুনিয়া আমার আর্কেডিয়া
    স্পর্শকাতরতাময় এই নাম
    উচ্চারণমাত্র যেন ভেঙে যাবে,
    অন্তর্হিত হবে তার প্রকৃত মহিমা,-
    চুনিয়া একটি গ্রাম, ছোট্ট কিন্তু ভেতরে-ভেতরে
    খুব শক্তিশালী
    মারণাস্ত্রময় সভ্যতার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।
    মধ্যরাতে চুনিয়া নীরব।
    চুনিয়া তো ভালোবাসে শান্তস্নিগ্ধ পূর্ণিমার চাঁদ,
    চুনিয়া প্রকৃত বৌদ্ধ-স্বভাবের নিরিবিলি সবুজ প্রকৃতি;
    চুনিয়া যোজনব্যাপী মনোরম আদিবাসী ভূমি।
    চুনিয়া কখনো কোনো হিংস্রতা দ্যাখেনি।
    চুনিয়া গুলির শব্দে আঁতকে উঠে কি?
    প্রতিটি গাছের পাতা মনুষ্যপশুর হিংস্রতা দেখে না-না ক’রে ওঠে?
    – চুনিয়া মানুষ ভালোবাসে।
    বৃক্ষদের সাহচার্যে চুনিয়াবাসীরা প্রকৃত প্রস্তাবে খুব সুখে আছে।
    চুনিয়া এখনো আছে এই সভ্যসমাজের
    কারু-কারু মনে,
    কেউ-কেউ এখনো তো পোষে
    বুকের নিভৃতে এক নিবিড় চুনিয়া।
    চুনিয়া শুশ্রুষা জানে,
    চুনিয়া ব্যান্ডেজ জানে, চুনিয়া সান্ত্বনা শুধু-
    চুনিয়া কখনো জানি কারুকেই আঘাত করে না;
    চুনিয়া সবুজ খুব, শান্তিপ্রিয়- শান্তি ভালোবাসে,
    কাঠুরের প্রতি তাই স্পষ্টতই তীব্র ঘৃণা হানে।
    চুনিয়া গুলির শব্দ পছন্দ করে না।
    রক্তপাত, সিংহাসন প্রভৃতি বিষয়ে
    চুনিয়া ভীষণ অজ্ঞ;
    চুনিয়া তো সর্বদাই মানুষের আবিষ্কৃত
    মারণাস্ত্রগুলো
    ভূমধ্যসাগরে ফেলে দিতে বলে।
    চুনিয়া তো চায় মানুষের তিনভাগ জলে
    রক্তমাখা হাত ধুয়ে তার দীক্ষা নিক্।
    চুনিয়া সর্বদা বলে পৃথিবীর কুরুক্ষেত্রগুলি
    সুগন্ধি ফুলের চাষে ভ’রে তোলা হোক।
    চুনিয়ারও অভিমান আছে,
    শিশু ও নারীর প্রতি চুনিয়ার পক্ষপাত আছে;
    শিশুহত্যা, নারীহত্যা দেখে-দেখে সেও
    মানবিক সভ্যতার প্রতি খুব বিরূপ হয়েছে।
    চুনিয়া নৈরাশ্যবাদী নয়, চুনিয়া তো মনেপ্রাণে
    নিশিদিন আশার পিদ্দিম জ্বেলে রাখে।
    চুনিয়া বিশ্বাস করে:
    শেষাবধি মানুষেরা হিংসা-দ্বেষ ভুলে
    পরস্পর সৎপ্রতিবেশী হবে।।
    ০৩
    নত হও, কুর্নিশ করো
    “হে কলম, উদ্ধত হ’য়ো না, নত হও, নত হতে শেখো,
    তোমার উদ্ধত আচরনে চেয়ে দ্যাখো, কী যে দু:খ
    পেয়েছেন ভদ্রমহোদয়গণ,
    অতএব, নত হও, বিনীত ভঙিতে করজোড়ে
    ক্ষমা চাও, পায়ে পড়ো, বলো: কদ্যপি এমনটি হবে না, স্যার,
    বলো: মধ্যবিত্ত হে বাঙালী ভদ্রমহোদয়গণ,
    এবারকার মতো ক্ষমা করে দিন…
    বলো হে কলম, হে বলপেন, হে আমার বর্বর প্রকাশ-ভঙিমা-
    এই নাকে খত দিচ্ছি আর কখনো গালমন্দ পারবো না,
    আপনাদের ভন্ডামিকে শ্রদ্ধা করতে শিখবো,
    আপনাদের অপমান হজম করার অপরিসীম ক্ষমতাকে সম্মান করবো,
    আর কোনদিন এমনটি হবে না, হে মহামান্য মধ্যবিত্ত রুচিবোধ,
    আপনাদের মতো সব অপমান হ’জম করে, এখন থেকে,
    নাইট সয়েল বানিয়ে ফেলে দেবো শরীরের বাইরে-
    হে বন্য লেখনী, হে অমোচনীয় কালি, হে ইতর বলপেন,
    নত হও, নত হতে শেখ..
    শান্ত হও, ভদ্র হও ভদ্রলোকের মতো
    আড়াল করতে শেখো অপ্রিয় সত্যকে,
    প্রিয় মিথ্যা বলা শিখে নাও, বিক্রি করে দাও তোমার বিবেক-
    উচ্চারন কোরো না এমন শব্দ, যা শুনে আহত হবেন তাঁরা-
    নত হও, নত হ’তে শেখ;
    তোমার পেছনে রয়েছে যে পবিত্র বর্বর মন ও মস্তিস্ক
    তাকে অনুগত দাসে পরিণত হ’তে বলো,
    হে আমার অবাধ্য কলম, ক্রোধ সংবরণ করো,
    ভদ্রলোকের মতো লেখো, ভদ্রলোকদের দ্বারে ধর্না দিও-
    শিখে নাও সাজানো-গোছানো প্রভুপ্রিয় বাক্যাবলি…
    হে কলম, এইবার নত হও, নতজানু হও,
    ০৪ প্রতীক্ষা
    এমন অনেক দিন গেছে
    আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থেকেছি,
    হেমন্তে পাতা-ঝরার শব্দ শুনবো ব’লে
    নিঃশব্দে অপেক্ষা করেছি বনভূমিতে-
    কোনো বন্ধুর জন্যে
    কিংবা অন্য অনেকের জন্যে
    হয়তো বা ভবিষ্যতেও অপেক্ষা করবো...
    এমন অনেক দিনই তো গেছে
    কারো অপেক্ষায় বাড়ি ব’সে আছি-
    হয়তো কেউ বলেছিলো, “অপেক্ষা ক’রো
    একসঙ্গে বেরুবো।”
    এক শনিবার রাতে খুব ক্যাজুয়ালি
    কোনো বন্ধু ঘোরের মধ্যে গোঙানির মতো
    উচ্চারণ করেছিলো, “বাড়ি থেকো
    ভোরবেলা তোমাকে তুলে নেবো।”
    হয়তো বা ওর মনের মধ্যে ছিলো
    চুনিয়া অথবা শ্রীপুর ফরেস্ট বাংলো;
    -আমি অপেক্ষায় থেকেছি।
    যুদ্ধের অনেক আগে
    একবার আমার প্রিয়বন্ধু অলোক মিত্র
    ঠাট্টা ক’রে বলেছিলো,
    “জীবনে তো কিছুই দেখলি না
    ন্যুব্জপীঠ পানশালা ছাড়া। চল, তোকে
    দিনাজপুরে নিয়ে যাবো
    কান্তজীর মন্দির ও রামসাগর দেখবি,
    বিরাট গোলাকার চাঁদ মস্ত খোলা আকাশ
    দেখবি,
    পলা ও আধিয়ারদের জীবন দেখবি,
    গল্প-টল্প লেখার ব্যাপারে কিছু উপাদান
    পেয়ে যেতেও পারিস,
    তৈরী থাকিস- আমি আসবো”
    -আমি অপেক্ষায় থেকেছি;
    আমি বন্ধু, পরিচিত-জন, এমনকি- শত্রুর
    জন্যেও
    অপেক্ষায় থেকেছি,
    বন্ধুর মধুর হাসি আর শত্রুর ছুরির জন্যে
    অপেক্ষায় থেকেছি-
    কিন্তু তোমার জন্য আমি অপেক্ষায়
    থাকবো না,
    -প্রতীক্ষা করবো।
    ‘প্রতীক্ষা’ শব্দটি আমি শুধু তোমারই
    জন্যে খুব যত্নে
    বুকের তোরঙ্গে তুলে রাখলাম,
    অভিধানে শব্দ-দু’টির তেমন কোনো
    আলাদা মানে নেই-
    কিন্তু আমরা দু’জন জানি
    ঐ দুই শব্দের মধ্যে পার্থক্য অনেক,
    ‘অপেক্ষা’ একটি দরকারি শব্দ—
    আটপৌরে, দ্যোতনাহীন, ব্যঞ্জনাবিহীন,
    অনেকের প্রয়োজন মেটায়।
    ‘প্রতীক্ষা’ই আমাদের ব্যবহার্য সঠিক শব্দ,
    ঊনমান অপর শব্দটি আমাদের ব্যবহারের
    অযোগ্য,
    আমরা কি একে অপরের
    জন্যে প্রতীক্ষা করবো না ?
    আমি তোমার জন্যে পথপ্রান্তে অশ্বত্থের
    মতো
    দাঁড়িয়ে থাকবো-
    ঐ বৃক্ষ অনন্তকাল ধ’রে যোগ্য পথিকের
    জন্যে প্রতীক্ষমান,
    আমাকে তুমি প্রতীক্ষা করতে বোলো
    আমি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবো অনড় বিশ্বাসে,
    দাঁড়িয়ে থাকতে-থাকতে
    আমার পায়ে শিকড় গজাবে...
    আমার প্রতীক্ষা তবু ফুরোবে না...
    ০৫
    আমাকে খুঁজো না বৃথা
    আমাকে খুঁজো না বৃথা কাশ্মীরের স্বচ্ছ ডাল হ্রদে,
    সুইৎসারল্যান্ডের নয়নলোভন কোনো পর্যটন স্পটে,
    গ্রান্ড ক্যানালের গন্ডোলায়ও নয়,
    খুঁজো না ফরাসি দেশে পারীর কাফেতে,মধ্যরাতে;
    রাইন বা মাইনের তীরে, সুবিস্তীর্ণ ফলের বাগানে. . .
    আমাকে খুঁজো না জাম্বো জেটে,
    দ্রুতগামী যাত্রীবাহী জাহাজের কিংবা কোনো
    বৃহৎ সমুদ্রগামী যাত্রীবাহী জাহাজের ডেকে. . .
    ভুল করে অন্ধ গলি-ঘুঁজি পার হয়ে, যদি এই
    আঁধার প্রকোষ্ঠে আসো
    দেখবে উবুড় হয়ে বাংলার এই মানচিত্রে
    মুখ থুবড়ে প'ড়ে আছে চল্লিশ বছর. . .
    আমার তৃষ্ণার্ত ঠোঁট ঠেকে আছে
    পদ্মার ওপর
    এবং আমার দু'চোখের অবিরল ধারা বয়ে গিয়ে
    কানায়-কানায় ভ'রে দিচ্ছে সব ক'টি শুষ্ক নদী,
    এবং দেখতে পাবে
    শ্যামল শস্যের মাঠ
    আমার বুকের নিচে আগলে রেখেছি. . .
    ০৬
    তোমার কথা ভেবে
    তোমার কথা ভেবে রক্তে ঢেউ ওঠে—
    তোমাকে সর্বদা ভাবতে ভালো লাগে,
    আমার পথজুড়ে তোমারই আনাগোনা—
    তোমাকে মনে এলে রক্তে আজও ওঠে
    তুমুল তোলপাড় হূদয়ে সর্বদা…
    হলো না পাশাপাশি বিপুল পথ-হাঁটা,
    এমন কথা ছিল চলব দুজনেই
    জীবন-জোড়া পথ যে-পথ দিকহীন
    মিশেছে সম্মুখে আলোর গহ্বরে…।
    ০৭
    ভালোবাসার সংজ্ঞা
    ভালোবাসা মানে দুজনের পাগলামি,
    পরস্পরকে হৃদয়ের কাছে টানা..
    ভালোবাসা মানে জীবন ঝুঁকি নেয়া,
    বিরহ- বালুতে খালিপায়ে হাঁটাহাঁটি...
    ভালোবাসা মানে একে অপরের প্রতি খুবকরে ঝুঁকে থাকা...
    ভালোবাসা মানে ব্যাপক বৃষ্টি,
    বৃষ্টির একটানা ভিতরে-বাহিরে দুজনেরহেঁটে যাওয়া..
    ভালোবাসা মানে ঠান্ডা কফির পেয়ালারসামনে অবিরল কথা বলা...
    ভালোবাসা মানে শেষ
    হয়ে- যাওয়া কথার পরেও
    মুখোমুখি বসে থাকা।
    ০৮
    প্রতীক্ষা
    এমন অনেক দিন গেছে
    আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থেকেছি,
    হেমন্তে পাতা-ঝরার শব্দ শুনবো ব’লে
    নিঃশব্দে অপেক্ষা করেছি বনভূমিতে-
    কোনো বন্ধুর জন্যে
    কিংবা অন্য অনেকের জন্যে
    হয়তো বা ভবিষ্যতেও অপেক্ষা করবো...
    এমন অনেক দিনই তো গেছে
    কারো অপেক্ষায় বাড়ি ব’সে আছি-
    হয়তো কেউ বলেছিলো, “অপেক্ষা ক’রো
    একসঙ্গে বেরুবো।”
    এক শনিবার রাতে খুব ক্যাজুয়ালি
    কোনো বন্ধু ঘোরের মধ্যে গোঙানির মতো
    উচ্চারণ করেছিলো, “বাড়ি থেকো
    ভোরবেলা তোমাকে তুলে নেবো।”
    হয়তো বা ওর মনের মধ্যে ছিলো
    চুনিয়া অথবা শ্রীপুর ফরেস্ট বাংলো;
    -আমি অপেক্ষায় থেকেছি।
    যুদ্ধের অনেক আগে
    একবার আমার প্রিয়বন্ধু অলোক মিত্র
    ঠাট্টা ক’রে বলেছিলো,
    “জীবনে তো কিছুই দেখলি না
    ন্যুব্জপীঠ পানশালা ছাড়া। চল, তোকে
    দিনাজপুরে নিয়ে যাবো
    কান্তজীর মন্দির ও রামসাগর দেখবি,
    বিরাট গোলাকার চাঁদ মস্ত খোলা আকাশ
    দেখবি,
    পলা ও আধিয়ারদের জীবন দেখবি,
    গল্প-টল্প লেখার ব্যাপারে কিছু উপাদান
    পেয়ে যেতেও পারিস,
    তৈরী থাকিস- আমি আসবো”
    -আমি অপেক্ষায় থেকেছি;
    আমি বন্ধু, পরিচিত-জন, এমনকি-
    শত্রুর জন্যেও অপেক্ষায় থেকেছি,
    বন্ধুর মধুর হাসি আর শত্রুর ছুরির জন্যে
    অপেক্ষায় থেকেছি-
    কিন্তু তোমার জন্য আমি অপেক্ষায়
    থাকবো না,
    -প্রতীক্ষা করবো।
    প্রতীক্ষা’ শব্দটি আমি শুধু তোমারই
    জন্যে খুব যত্নে
    বুকের তোরঙ্গে তুলে রাখলাম,
    অভিধানে শব্দ-দু’টির তেমন কোনো
    আলাদা মানে নেই-
    কিন্তু আমরা দু’জন জানি
    ঐ দুই শব্দের মধ্যে পার্থক্য অনেক,
    অপেক্ষা’ একটি দরকারি শব্দ—
    আটপৌরে, দ্যোতনাহীন, ব্যঞ্জনাবিহীন,
    অনেকের প্রয়োজন মেটায়।
    প্রতীক্ষা’ই আমাদের ব্যবহার্য সঠিক শব্দ,
    ঊনমান অপর শব্দটি আমাদের ব্যবহারের
    অযোগ্য,
    আমরা কি একে অপরের
    জন্যে প্রতীক্ষা করবো না ?
    আমি তোমার জন্যে পথপ্রান্তে অশ্বত্থের
    মতো
    দাঁড়িয়ে থাকবো-
    ঐ বৃক্ষ অনন্তকাল ধ’রে যোগ্য পথিকের
    জন্যে প্রতীক্ষমান,
    আমাকে তুমি প্রতীক্ষা করতে বোলো
    আমি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবো অনড় বিশ্বাসে,
    দাঁড়িয়ে থাকতে-থাকতে
    আমার পায়ে শিকড় গজাবে...
    আমার প্রতীক্ষা তবু ফুরোবে না...
    ০৯
    নগর ধ্বংসের আগে
    নগর বিধ্বস্ত হ’লে, ভেঙ্গে গেলে শেষতম ঘড়ি
    উলঙ্গ ও মৃতদের সুখে শুধু ঈর্ষা করা চলে।
    ‘জাহাজ, জাহাজ’ – ব’লে আর্তনাদ সকলেই করি -
    তবুও জাহাজ কোনো ভাসবে না এই পচা জলে।
    সমুদ্র অনেক দূর, নগরের ধারে-কাছে নেই:
    চারপাশে অগভীর অস্বচ্ছ মলিন জলরাশি।
    রক্ত-পুঁজে মাখামাখি আমাদের ভালবাসাবাসি;
    এখন পাবো না আর সুস্থতার আকাঙ্খার খেই।
    যেখানে রয়েছো স্থির – মূল্যবান আসবাব,বাড়ি;
    কিছুতে প্রশান্তি তুমি এ-জীবনে কখনো পাবে না।
    শব্দহীন চ’লে যাবে জীবনের দরকারী গাড়ি -
    কেননা, ধ্বংসের আগে সাইরেন কেউ বাজাবে না।
    প্রোথিত বৃক্ষের মতো বদ্ধমূল আমার প্রতিভা -
    সাধ ছিল বেঁচে থেকে দেখে যাবো জিরাফের গ্রীবা।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  3. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    মোস্তফাকে যে একেবারে হারিয়ে ফেলেছিলাম। অনেকদিন পির পেলাম। আমি নিজেও ভীষণ অনিয়মিত হয়ে পড়েছে বহুদিন ধরে।
    তোমার নৈবেদ্য আমাকেও মনে করিয়ে দিলো অনেক স্মৃতির পুরোনো খাতার কথা। ধন্যবাদ।
    মন্তব্যের অংশে রাজীবের তুলে আনা কবিতাগুলো অনেক বইথেকে একলাফে চলে এলো এখানে হাতের নাগালে। তাকেও ধন্যবাদ।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : লুৎফুল (৭৮-৮৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।