স্মৃতিচারণ ও শ্রদ্ধাঞ্জলি

বাংলার শিক্ষক জনাব সাইফুল ইসলামের হাত ধরে আধুনিক বাংলা কবিতার সাথে আমার প্রথম সখ্যতা। দুর্বোধ্যতার কন্টকমুকুট শোভিত হয়ে, রক্ত-ঝরানো পথ হেঁটে আধুনিক বাংলা কবিতা শতদল মেলেছে তখন। আমার কিশোর বুদ্ধি ও মনন তখনও সেই মদিরা পানের জন্য ঠিক পরিপক্ব হয়ে উঠেনি। অথচ সীমাহীন আগ্রহ ও এক ধরণের মোহন ঘোরের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাই। কলেজ লাইব্রেরীর নীরব কিউবিকলে গোপন প্রেমপত্রের মতো করে চুপিসারে উল্টে যাই সুধীন কিম্বা বিষ্ণু দে। দুপুরের প্রেপ আওয়ারে ডরমিটরির জানালার গ্রীলের ফাঁক গলে দৃষ্টি কোন সুদূরে আটকে যায় মেঘের মিনারে। সুনসান খেলার মাঠের নিস্তব্ধতায় হেঁটে যাওয়া কাব্যদেবীর নূপুরে কখন কোন সুর বেজে উঠলো তা শোনার জন্য, বোঝার জন্য কান পেতে রই!

এরই মধ্যে জনাব সাইফুল ইসলাম বদলী হয়ে গেলেন সিলেটে। মন ভালো নেই, মন ভালো নেই, কবিতাকে কি ছুটিই দিয়ে দিতে হবে? ভেবে-চিন্তে নয়, অনেকটা ঘোরের বশেই সাইফুল ইসলামকে লিখলাম অধরা মাধবীর কথা। এরই মধ্যে চল্লিশ-পঞ্চাশ-ষাটের দশকের দুই বাংলার যে ক’জন কবির কাব্যগ্রন্থ আমাদের কলেজ লাইব্রেরীতে পদধূলি দিয়েছে, সেগুলো নেড়ে-চেড়েই দেখা হলো শুধু। কিন্তু জীবনানন্দ দাশ, প্রেমেন্দ্র মিত্র, অমিয় চক্রবর্তী, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, শহীদ কাদরী, ফজল শাহাবুদ্দিন, আবুল হাসান, নির্মলেন্দু গুণ, রফিক আজাদ, দাউদ হায়দার আমাকে লাইব্রেরীর বুকশেলফ থেকে শুধুই উপেক্ষার হিম ছুঁড়ে দিল। জনাব সাইফুল ইসলামকে সেকথা জানিয়ে চিঠি লিখলাম, আর ছিন্ন-বীণা হাতে বসে থাকলাম উত্তরের অপেক্ষায়। যথাসময়ে উত্তর এলো, বাজারের ফর্দের মত করে কাটা রুল টানা কাগজে তিনি লিখলেন, “পড়, শুধুই পড়, নিজেকে তৈরি কর, যোগ্য করে তোল নিবিড় পঠনে, সময় হলেই কাব্যদেবীর অপার কৃপাবর্ষণে তোমার চোখের সামনে কবিতার মায়াবী তোরণ খুলে যাবে”।

তখন আমি দশম শ্রেণীর ছাত্র। ক্যাডেট কলেজের আন্তঃ হাউস বাংলা কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় সেবছরের নির্বাচিত কবিতা শামসুর রাহমান রচিত ‘বিপর্যস্ত গোলাপ বাগান’। ধুম প্রাকটিস চলছে আমাদের হাউস টিউটরের তত্ত্বাবধানে। আবৃত্তিতে বিগত তিন বছরের শিরোপা আমাদের। দু’তিনদিনের প্রাকটিসেই কবিতাটি মোটামুটি আয়ত্তে এসে যায়। এরপর চলে নিজস্ব ধরণে কণ্ঠস্বর ওঠানো-নামানোর খেলা আর কবিতার পরতে পরতে স্বকীয়তা বুনে দেবার নিপুণ অনুশীলন। শব্দ-নদীর ভাঁজে ভাঁজে ছোট ছোট লহরী তুলে ভালোই এগুচ্ছিল তরী। হঠাৎ কেন জানি আনমনা হয়ে হারিয়ে যাই এই ক’টি চরণের মাঝে:

“নেরুদা আবার শিউরে ওঠেন

এখনি পঙ্গু ঈগল সাম্যবাদ

মাদ্রিদ আর চরাচর জুড়ে

লোরকা করেন কৃষ্ণ আর্তনাদ”

আমি যেন স্পষ্ট শুনি লোরকার আর্তনাদ। কলেজের লাইব্রেরী থেকে ইস্যু করা ‘পাবলো নেরুদার কবিতা’ আর তাঁর লেখা সেই স্মৃতিধর বিখ্যাত বইটি Confieso que he vivido: Memorias আগেই পড়েছিলাম, ‘অনুস্মৃতি’ নামে। কিন্তু পুস্তকায়িত লোরকা তখনো আমাদের লাইব্রেরীতে পদধূলি দেন নি। ছুটিতে এসে রংপুরের লাইব্রেরী পাড়ায় লোরকাকে খুঁজি, হঠাৎ আলোর ঝলকানি লাগা কোন এক বিকেল বেলায় তাঁকে পেয়ে যাই, মূলে নয়, অনুবাদে। সেই থেকে একান্ত আপন কোন নির্জন মুহূর্তে চকিতে আমার মাঝে লোরকা সুর তোলেন বিষণ্ণ গীটারের। সেই সুর আমার লেখার টেবিলে, দেরাজে, চালশে চশমার কাঁচে, আলো হারাবার দিনের গোধূলি বেলায়, এলোমেলো পথচলায় আজো প্রিয় সঙ্গী। এই প্রিয় সঙ্গীকে অনুবাদে তুলে আনার সাহস নেই, তাঁর জন্যে একটুকু ভালোবাসার শ্রদ্ধাঞ্জলি।

Lament for Ignacio Sanchez Mejias

 ইগনাথিও সাঞ্চেস মেহিয়াসের জন্য শোকোচ্ছ্বাস

1. Cogida and death

১. আলোড়ন ও মৃত্যু

At five in the afternoon.

It was exactly five in the afternoon.

A boy brought the white sheet

at five in the afternoon.

A frail of lime ready prepared

at five in the afternoon.

The rest was death, and death alone.

 

তখন ঘড়িতে বিকেল পাঁচটা বাজে।

কাঁটায় কাঁটায় বিকেল পাঁচটা বাজে।

সাদা থান নিয়ে অমল বালক এক

এলো ঠিক ঠিক বিকেল পাঁচটা বাজে।

ঝুড়ি ভরে রাখা আছে সাদা সাদা চুন

ঘড়িটা চলছে পাঁচটার গান গেয়ে

বাকি সবটুকু মৃত্যুতে গেছে ছেয়ে।

 

The wind carried away the cottonwool

at five in the afternoon.

And the oxide scattered crystal and nickel

at five in the afternoon.

Now the dove and the leopard wrestle

at five in the afternoon.

And a thigh with a desolated horn

at five in the afternoon.

The bass-string struck up

at five in the afternoon.

Arsenic bells and smoke

at five in the afternoon.

Groups of silence in the corners

at five in the afternoon.

And the bull alone with a high heart!

At five in the afternoon.

When the sweat of snow was coming

at five in the afternoon,

when the bull ring was covered with iodine

at five in the afternoon.

Death laid eggs in the wound

at five in the afternoon.

At five in the afternoon.

At five o’clock in the afternoon.

 

বাতাসে ওড়ায় পেঁজা তুলো ছিল যতো

ঘড়িতে তখন পাঁচটা বাজার সুর।

অক্সাইড ছাড়ে স্ফটিক-নিকেল কিছু

হলো বেলাবেলি, বিকেল পাঁচটা বাজে।

ঘুঘু আর চিতা সমানে লড়াই করে

পাঁচটার ক্ষণে, ঠিক পাঁচটার ক্ষণে।

একখানি উরু বিষণ্ণ শিং সনে

যুদ্ধে মেতেছে, ঠিক পাঁচটায়, রণে।

আর্সেনিকের ঘণ্টা এবং ধোঁয়া

পাঁচটায় জেনো, ঠিক ঠিক পাঁচটায়।

চারকোণে জমে স্তব্ধতা নির্বাক

ঘড়ির ডায়ালে ফোটে পাঁচটার আঁক।

বুনো ষাঁড় শুধু ভীষণ উল্লসিত!

পাঁচটা বেজেছে, ঘড়ির কাঁটায় মাপা।

যে সময়ে দেখা দিল তুষারের ঘাম

ঘড়িটা জপছে ঠিক পাঁচটার নাম,

যখন ঢেকেছে বুল-রিং আয়োডিনে

ঘড়ির কাঁটাটি পাঁচের ঘরটি ছোঁয়

ক্ষতের কোটরে মৃত্যু পেড়েছে ডিম

বিকেল পাঁচটা বিকেল পাঁচটা বাজে।

গুনে গুনে ঠিক বিকেল পাঁচটা বাজে।

 

A coffin on wheels is his bed

at five in the afternoon.

Bones and flutes resound in his ears

at five in the afternoon.

Now the bull was bellowing through his forehead

at five in the afternoon.

The room was iridiscent with agony

at five in the afternoon.

In the distance the gangrene now comes

at five in the afternoon.

Horn of the lily through green groins

at five in the afternoon.

The wounds were burning like suns

at five in the afternoon.

At five in the afternoon.

Ah, that fatal five in the afternoon!

It was five by all the clocks!

It was five in the shade of the afternoon!

 

চাকাঅলা এক কফিন শয্যা তাঁর

ঘড়ির ঘণ্টা পাঁচটার বোল তোলে।

হাড় আর বাঁশি তাঁর কানে বাজে ফের

সময় গড়ায় বিকেল পাঁচের কোলে।

এখন ষাঁড়ের গর্জন ভরা রোষ

ঠিক পাঁচটায় খুঁজে পায় যত জোশ।

রামধনু রঙে ঘর হলো জ্বালাময়

জানি পাঁচটায় বিকেলের হবে ক্ষয়।

বহুদূর হতে ক্ষতের পচন আসে

বিকেল পাঁচটা বুদ্বুদ তুলে কয়।

সবুজ কুচকি তূর্য ধ্বনিতে নাচে

ঘড়িতে তখন পাঁচটাই লেখা আছে। 

ক্ষত জ্বলে উঠে সূর্যের তেজ নিয়ে

বিকেলের বুকে পাঁচটি গোলাপ যেন

এবং জনতা ভাঙে জানালার কাঁচ

ঘড়ি হেনে গেল পাঁচটা বাজার বাজ।

পাঁচটা বেজেছে, বিকেল পাঁচটা ঠিক

বিকেল পাঁচটা বেজেছে দিগ্বিদিক

আহা, ভয়াবহ বিকেল পাঁচটা আজ

সব ঘড়িতেই প্রেতায়িত বাজে পাঁচ।

 

ঢাকা

২৯ অক্টোবর ২০১০

২,৬৬৫ বার দেখা হয়েছে

২৯ টি মন্তব্য : “স্মৃতিচারণ ও শ্রদ্ধাঞ্জলি”

  1. জিহাদ (৯৯-০৫)

    সাইফুল ইসলাম স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা। তিনি আপনার ভেতরে কবিতার এই সঞ্জীবনী শক্তি যে খুব ভালোমত ঢুকিয়ে দিয়েছেন তা' আপনার এই ব্লগের প্রতিটা শব্দ বলে দিচ্ছে। আপনার গদ্যও দারুণ ঝরঝরে, চমৎকার। পড়তে আরাম লাগে। স্পীড রিডিং এর ঘোড়ায় চেপে নয়, বরং থেমে থেমে চারপাশের সবকিছু দেখে দেখে হাঁটার মত উপভোগ্য আনন্দ পেলাম ব্লগটা পড়ে। নিয়মিত লিখতে থাকুন সিসিবিতে। নি:সন্দেহে আমার মত আরো অনেক গুণমুগ্ধ পাঠক জুটে যাবে আপনার 🙂


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
    • মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

      প্রিয় জিহাদ,
      তোমার জবাবখানা নার্সিসাসেরও মন গলাবে! সবখানে গতির রোলার-কোস্টার চড়া মূর্খতারই নামান্তর। আবার জীবন বাবুর কথা ধার করেই বলতে হয়,

      আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
      আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
      পৌঁছে অনেকক্ষণ বসে অপেক্ষা করবার অবসর আছে।
      জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
      অন্য সবাই বহন করে করুক; আমি প্রয়োজন বোধ করি না
      আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
      হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
      নক্ষত্রের নিচে।


      দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

      জবাব দিন
  2. ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

    সাইফুল ইসলাম স্যার আমাদের বাংলার শিক্ষক ছিলেন। আপনাদের কলেজ থেকে আমাদের কলেজে এসেছিলেন। বাংলা উচ্চারণে খুব জোর দিতেন স্যার। শুনেছি স্যার অবসর নিয়েছেন। স্যারকে শ্রদ্ধাঞ্জলি! কবিতা আমাকেও আলোড়িত করে। পাবলো নেরুদাও মনে দাগ কাটে। আনন্দ পেলাম আপনার লেখাটা পড়ে।

    জবাব দিন
    • মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

      মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ! আপনি ঠিক বলেছেন, উচ্চারণের ব্যাপারে তিনি রীতিমত পারফেকশনিস্ট ছিলেন। সেইসাথে তীক্ষ্মধার লেখনী ছিল তাঁর। নিভৃতচারী, নতুবা যে গানগুলো লিখে গেছেন, সেগুলো তাঁকে নির্দ্বিধায় দেশের একজন প্রথম সারির গীতিকারে পরিণত করতে পারতো। শব্দচয়নে, উপমা-রূপকের ব্যবহারে বাংলা গানের প্রথাগত কাঠামোকে ভেংগে দেবার প্রয়াসী ছিলেন তিনি। সে বিষয়ে আলাদা কোন পোস্টে আলোচনার ইচ্ছে রাখি।
      আলোচ্য পোষ্টটিতে দু'টি বিষয়ে আলোকপাত করেছি। প্রথমটি স্মৃতিচারণ, দ্বিতীয়টি শ্রদ্ধাঞ্জলি। প্রথম বিষয়টি জিহাদের মোক্ষম বাক্যপ্রয়োগে স্পষ্ট,

      স্পীড রিডিং এর ঘোড়ায় চেপে নয়, বরং থেমে থেমে চারপাশের সবকিছু দেখে দেখে হাঁটার মত

      তবে দ্বিতীয়টি সহজবোধ্য নয়। কারণ এই শ্রদ্ধাঞ্জলির পুরোটা জনাব সাইফুল ইসলামের জন্য নয়। পাবলো নেরুদা'র জন্যেও নয়। বরং বেশিটুকু ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা'র জন্যে। দুর্বোধ্য অংশটুকু হলো তাঁর কবিতাটি আর এর ম্রিয়মাণ অনুবাদ প্রচেষ্টা। সেটি কি পাঠকের নজর এড়িয়ে যাচ্ছে? যদি সে সম্ভাবনা গাঢ়তর হয় তবে বুঝে নিতে হবে প্রথম অংশটির প্রয়োজন ফুরিয়েছে। (সম্পাদিত)


      দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

      জবাব দিন
  3. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    ফাটাফাটি একটা অনুবাদ হয়েছে।
    পাশাপাশি পড়তে গিয়ে বুঝলাম, মূল সুর কতটা ব্যাঙময় অনুবাদে।
    অনুবাদক কতটা দায়বদ্ধ থাকতে চেয়েছেন মূলের।
    আবার আলাদা ভাবে পড়ার সময় মনেই হলো না এটা কোন অনুবাদ নয়।
    মনে হলো যেন এক মৌলিক কবিতা পড়ছি
    যা প্রথমবারেই বাংলায় লিখা।
    দারুন অভিজ্ঞতা।

    বুঝতে পারছি ভায়া, তুমি লম্বা রেসের ঘোড়া। যদি থেকে যাও আমাদের এই ব্লগোস্ফেয়ারে ভালই কাটবে ভবিষ্যৎ দিনগুলি।

    পুনশ্চঃ "যদি থেকে যাও" - কেন বললাম? ঝড়ের মত আরও অনেকে এসেছে আগে। তারপর কেন যেন গুটিয়ে নিয়েছে নিজেকে। বলেও নাই কখনো, কেন চলে যাচ্ছে বা যেতে হচ্ছে। আজকাল কাউকে তাই ঝড়ের মত আসতে দেখলে একটু উৎকর্নই হই বরং। ভাবি, "থাকবে তো???" (সম্পাদিত)


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
    • মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

      শ্রদ্ধাভাজনেষু,
      খুবই অনুপ্রাণিত হলাম। সেইসাথে স্প্যানিশে মূল লেখাটি যে আমি ভাষা না জানার সীমাবদ্ধতার কারণে পড়ে উঠতে পারিনি, সে দৈন্যতার কথা স্মরণ করে লজ্জ্বিত হলাম। আসলে বোধকরি শুধুমাত্র সাহিত্যের রসাস্বাদনের জন্যে হলেও পৃথিবীর প্রধান ভাষাগুলো জানা দরকার। ইংরেজি থেকে করা অনুবাদ প্রচেষ্টায় মূল সুরের অনুরণন ঘটানোর প্রচেষ্টা বাতুলতা মাত্র, সে কথা আমি বিলক্ষণ স্মরণে রেখেছি।
      পুনশ্চঃ আসা-যাওয়ার কথায় রবীন্দ্রনাথের গানের কলি স্মরণে আনি,

      ঘরেই যারা যাবার তারা কখন গেছে ঘরপানে,
      পারে যারা যাবার গেছে পারে;
      ঘরেও নহে, পারেও নহে, যে জন আছে মাঝখানে
      সন্ধ্যাবেলা কে ডেকে নেয় তারে।


      দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

      জবাব দিন
    • মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

      শ্রদ্ধাভাজনেষু,
      যে লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারবো না, সেই 'অসীমে প্রাণমন নিয়ে' আমি খুব বেশি দূরে যেতে চাই না। আমি আমার সীমিত সামর্থ্যের কথা জানি। তাই 'কোথাও দুঃখ, কোথাও মৃত্যু, কোথা বিচ্ছেদ নাই'- এই বোধ আমায় তাড়িত করে না। বরং আমি 'মাটি-পৃথিবীর টানে মানবজন্মের ঘরে এসে যে গভীরতর লাভ হয়েছে' তা বুঝেই পরিতৃপ্ত থাকতে চাই। কোন সমুজ্জ্বল ভোরের একটি রৌদ্র কিরণও যদি এই ক্ষণস্থায়ী শিশিরের শরীর ছুঁয়ে যায়, সেটাই তার পরম ভাগ্য। শুভপ্রীতি।


      দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

      জবাব দিন
  4. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    🙂 🙂 🙂 🙂

    আয়ান গিবসনের লেখা ফ্রেডেরিকো গারসিয়া লোরকাঃ আ লাইফ পড়েছিলাম আগেই। আর কি অবাক ব্যপার জানেন, ক'দিন আগেই মেধা বন্দ্যোপাধ্যায় এর কন্ঠে সুনীলের লোরকা শুনছিলাম। লোরকার জীবন, জীবনভাবনা আর কবিতা সবই মুগ্ধ করেছিল।
    Who showed you the road there,
    the road of the poets?

    জবাব দিন
    • মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

      আপনার ব্যাপক পাঠভ্যাসকে প্রণতি।
      আপনি কি সুনীলের 'কবির মৃত্যু'-র কথা উল্লেখ করেছেন? যদি অনুমানে ঠিক থাকি, তবে আমার বিবেচনায় সে এক অণু কাব্যনাট্য।
      সাহসে কুলোয় না যে লোরকার মত করে বলি,

      The fount and the stream of
      the song of the ages.

      বরং আমি বলি, আমার মা। 'লুকোচুরি' আর 'বীরপুরুষ' পড়িয়ে। (সম্পাদিত)


      দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

      জবাব দিন
  5. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    অপূর্ব । মুগ্ধ হলাম ।
    অনুবাদের প্রাঞ্জল্যে পড়তে পড়তে কেবলি প্রশন উকি দিয়ে যাচ্ছিলো মনে মনে । অনুবাদটি কার !
    প্রথম সপ্তকেই বাজীমাত ।

    অগণন শুভেচ্ছা থাকলো ।
    নিরন্তর পড়বার জেগে ওঠা আকাংখারা অপেক্ষারত থাকলো ।

    জবাব দিন
  6. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    সাইফুল ইসলাম স্যারের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি আর সেই সাথে স্মৃতিচারণ খুব ভালো লাগলো। একজন শিক্ষকের কাজ তার ছাত্রের মাঝে পড়ার আগ্রহ গড়ে তোলা, তিনি সেই কাজটিই করেছিলেন।
    অনুবাদ প্রয়াস ভালো হয়েছে।

    জবাব দিন
  7. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    সাইফুল ইসলাম স্যার অসাধারণ একজন শিক্ষক।
    স্যারের দুটো ছড়ার বই আমার সংগ্রহে ছিলো।
    একটার নাম ছিলো পানের ভিতর মরিচ বাটা।

    স্যার খুব সম্ভবত চৌরাস্তা সংলগ্ন কোথাও থাকেন মেবি শিক্ষকদের জন্য এইচ কিউ কিছু জমি কেনে সদরের দিকে যেতে ধান গবেষণার আগে সেখানবাড়ি করে থাকতে পারেন।

    দুঃখ হলো স্যার যখন আমাদের বিসিসি ছেড়ে চলে যান তখন বোধ হয় ক্লাস এইটের শেষদিকে। তাই কাব্য ইত্যাদি নিয়ে কোন কথা শোনার সু্যোগ হয় নি।
    যদিও আমাদের অন্যান্য বাঙলার শিক্ষক যেমন আখতার হোসেন স্যার, সৈয়দ রফিকুল হোসেন স্যার, আহসানুল কবির স্যার চমতকার পড়াতেন।
    আহসানুল কবির স্যার তো রীতিমত জীবনানন্দ বিশেষজ্ঞ ছিলেন, স্যারের বেশ কিছু বই ও আছে।
    স্যারের কারণে আমি পঞ্চ পান্ডব সম্পর্কে আগ্রহী হই।
    যদিও এদের বেশিরভাগ পড়েছি কলেজ থেকে বের হয়ে নিজের পয়সায় সমগ্র গুলি কিনে।
    তবে বিজ আতা তো বুনে দিয়েছিলেন স্যাররাই।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
    • মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

      ১। প্রত্যেক মানুষের ভেতরেই কোন না কোন অসাধারণত্ব থাকে। জনাব সাইফুল ইসলামও তাঁর ব্যতিক্রম নন।
      ২। ইলতুতমিশ নামে লিখতেন। ইদানীং বিশ্বের জ্যুভেনিল পোয়েট্রি নিয়ে মেতেছেন।
      ৩। নওগাঁয় থাকেন, মেয়েকে ঢাকায় রেখে পড়ান। বলেন, ওদের সোনালি ভবিষ্যতের জন্য আমি আমার আয়েশি বর্তমানকে লগ্নী করেছি।
      ৪। অযাচিত জ্ঞান দেবার স্বভাব তাঁর ছিলো না, তাই যারা যে বিষয়ে জানতে চেয়েছে, পরিমিতিবোধ বজায় রেখেই তাঁর নিজস্ব ভাবনার জানালা খুলেছেন। ব্রডকাস্ট করতেন না, তাই সত্যিকারের উৎসাহী না হলে তাঁর কাছ থেকে কাব্য নিয়ে জানার তেমন কোন সম্ভাবনা ছিল না।
      ৫। সহমত, প্রকৃতি কোন শূন্যস্থান রাখে না।
      ৬। হ্যাঁ, তাঁরা হেঁটে যান গোধূলির ছায়াপথে, যেতে যেতে ফেলে যান স্বপ্নবীজ, কিম্বা ধুলো-বালি-ছাই।
      ৭। অনুবাদ-প্রচেষ্টা পড়বার মতো যোগ্য হয় নি, তাই তো? (সম্পাদিত)


      দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।