চায়ের সাথে (ছবি)টা

[ইহা একটি জগাখিচুড়ি পোষ্ট। ভালো লাগার পংতিগুলোর সাথে নিজের জমানো কিছু কথা মিশিয়ে একটা যেমন তেমন ঘণ্ট বানাই, জোর করে গেলাবার জন্য সাথে ছেড়ে দেই গোটা কয়েক ফটুক। বদহজম অবশ্যই কাম্য নয়; তবে হয়ে যাওয়াটাকেও কাকতাল ধরে নেব না। লিখবার অপারগতা থেকেই এমন বিদঘুটে কুইনাইনের সৃষ্টি। :brick: ]

একটু ভেবে বলুন তো, শেষ কবে বাবার কাঁধে চেপে বসেছিলেন। আচ্ছা ওটা না হয় বাদই দিলাম। কোলে উঠে বসেছিলেন কবে বলতে পারবেন? ছোট্ট একটা ঘটনা মনে আছে এখনো (স্মৃতি না বরং, মনে থাকার ক্রেডিটটা পুরনো ছবির অ্যালবামগুলোর প্রাপ্য); মিরপুরে চিড়িয়াখানায় প্রায় অর্ধদিবস ঘুরে তিন বছর বয়সী আমি বেজায় ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। বাবা এরপর কাঁধে করে আমাকে বাকীটা ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলেন। স্মৃতিগুলো বেজায় মিষ্টি।

ক’দিন আগেই TIFF (টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল) এ সিনেমা দেখে বের হয়ে দেখি রাস্তা জুড়ে লোকজন ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে তারকাদের দেখবে বলে। প্রচণ্ড ভিড়ে সামনে নিরাপত্তা-বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়া তারকাদের দেখবার কোন সুযোগ পাইনি। এর মাঝেই চোখে পড়লো বাবার কাঁধে চেপে ব্রাড পিটকে দেখতে আসা এক পিচ্চি বালকের উপর। অদ্ভুত মায়াময় দৃশ্য; আদরমাখা শৈশবের গল্প নিমিষেই মনে করিয়ে দেয়।

পিতা-পুত্র


____________________________________________________________________

শেষ বিকেলের মেয়ে

চাই না জ্ঞেয়ান, চাই না জানিতে
সংসার, মানুষ কাহারে বলে।
বনের কুসুম ফুটিতাম বনে
শুকায়ে যেতাম বনের কোলে!

(বনফুল- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

গ্রীষ্মের গল্প


____________________________________________________________________

মানুষ বেশ অদ্ভুতুড়ে। একা থাকতে ভয় পায়; আবার কখনো জোর করেই একা থাকতে চায়। একাকীত্বের ধরনটারও আবার রকম ফের আছে। এসব আগডুম-বাগডুম রোগগুলোর কারণ জানা নেই। অবশ্য রাশেদ ভাই বলেছিলেন, একে নাকী বলে নাগরিক বিষণ্ণতা। আমিও চোখ বুজে মেনে নিয়েছি, অভিজ্ঞজনের বাক্যালাপ ভুল না হবারই কথা। 😛
মানুষ বোধহয় আদতেই একাকী; এজন্যই বোধহয় আবুল হাসান নীরবে জানান দেনঃ

“অবশেষে জেনেছি মানুষ একা !
জেনেছি মানুষ তার চিবুকের কাছেও ভীষণ অচেনা ও একা !
দৃশ্যের বিপরীত সে পারে না একাত্ম হতে এই পৃথিবীর সাথে কোনোদিন।”

এক ঘর ভর্তি মানুষের মাঝেও তাই আমি হয়তো একা হয়ে পড়ি। চেনা চোখের চাহনিতে নিমিষে অচেনা হয়ে ওঠে যায় চারপাশ। নিজের অজান্তেই আওড়াতে থাকি–

সকল লোকের মাঝে বসে
আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা?
আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আমার পথেই শুধু বাধা?
জন্মিয়াছে যারা এই পৃথিবীতে
সন্তানের মতো হয়ে —
সন্তানের জন্ম দিতে দিতে
যাহাদের কেটে গেছে অনেক সময়
কিংবা আজ সন্তানের জন্ম দিতে হয় যাহাদের ;
কিংবা যারা পৃথিবীর বীজক্ষেতে আসিতেছে চলে
জন্ম দেবে —জন্ম দেবে বলে;
তাদের হৃদয় আর মাথার মতন
আমার হৃদয় না কি? —
তাহাদের মন আমার মনের মতো না কি?
–তবু কেন এমন একাকী?
তবু আমি এমন একাকী!

বুঝে ফেলি, জীবনবাবু ভুল বলেননি।

আমার একলা থাকার অভ্যেস


____________________________________________________________________

কলেজ জীবনের বন্ধুদের কথা বলতে গেলে কাকে ছেড়ে কাকে নিয়ে পড়বো বুঝে উঠতে পারি না। সবাই খুব কাছাকাছি ছিলাম; এখন হয়তো দূরত্ব বেড়েছে, কিন্তু আত্মিক দূরত্বটা এখনো প্রকট হয়নি। বরং বলবো বন্ধুতা এখন অনেক বেশি পরিণত হয়েছে।

পুরনো কথা মনে পড়লো। তৌসিফ ছিলো আমার ক্রাইম পার্টনার। সবচেয়ে বেশি আড্ডা, জম্পেশ ডর্ম পার্টি, কিংবা নতুন নতুন গানের প্যারোডি- এই নাদুস নুদুস ছেলেটাকে ছাড়া চিন্তা করাও অসম্ভব ছিল। জীবনে এক পাতা বায়োলজী না পড়েও (ওর চতুর্থ বিষয় ছিল কম্পিউটার, পরে টি.ডি.) ব্যাটা আমার এস,এস,সি-এর সবগুলো বায়োলজী প্রাকটিক্যালের ছবি এঁকে দিয়েছিল। বিনিময়ে অবশ্য টি টাইমের প্যাটিসগুলো হাপিশ করতো (এইখানেও একটু সূক্ষ্ম রাজনীতির মারপ্যাঁচ আছে, প্যাটিস খুব একটা খেতাম না আমি :P)। একবার কোন কারণে ওর সাথে বেশ এক চোট ঝগড়া হয়ে গেল। কেউ কারো সাথে কথাবার্তা বলি না, একই ফর্মে সিট হলেও কেউ কারো মুখটাও দেখবো না বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এভাবে প্রায় ৩ দিন চলে গেছে। তো পরদিন আমার জন্মদিন; আমি রাতে কমন রুম থেকে এসে ঘুমিয়ে পড়েছি। সকালে উঠে বিছানা ঘুছাতে গিয়ে দেখি বালিশের নিচে একটা বাড্ডে কার্ড, ভেতরে তৌসিফের নাম লেখা। সেই ১৬-১৭ বছরের আমি, সেদিন একটা জিনিস ঠিকই বুঝে নিলাম। জীবনে বহু কিছু হয়তো পাওয়া হবে, কিন্তু জীবনের সেরা প্রাপ্তিগুলো বেছে নিতে বললে- আমি বোকার হদ্দের মতো হাসি দিয়ে বলবো- এত বাছাবাছির কি আছে! আমার বন্ধুগুলোকেই বাক্সে পুরে দাও; ওতেই আমার চলে যাবে 😀 ।

বন্ধুতা


____________________________________________________________________

ভালোবাসা ভালো নয়; আর যাহা ভালো নয় তাহাতেই আমাদের আসক্তি সেই আদ্যিকাল থেকে 😛 ! কি আর করা যাবে বলুন; এ যেন একই ফুলের বহুরূপী রঙ।
এই যেমন ধরুন, হাফিজ সাহেব তো রাগ করে বলেই ফেললেনঃ

“আমি নাহয় ভালবেসে ভুল করেছি, ভুল করেছি
নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে
পাঁচ দুপুরে নির্জনতা খুন করেছি, কি আসে যায়?

এক জীবন কতটা আর নষ্ট হবে,
এক মানবী কতটা আর কষ্ট দিবে?”

আবার জীবন বাবুর কলমে কদাচিৎ অন্য সুরও ভেসে উঠতোঃ

“হাজার বছর ধ’রে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্তু প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দু-দন্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।”

আর ধরুন গিয়ে যারা নায়ক রেজা শাওনের মতো একাকীত্বের কষ্টে বিনিদ্র রজনী পার করেন, তাদের মনের কথা তো বহুকাল আগেই গুণ বাবু গুনগুন করে জানিয়ে দিয়েছেনঃ

“আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভেতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য।
বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত।”

অবশেষে নিরীহ নিষ্কর্মা আমি যাহা বুঝিলাম তাহা হইলো, প্রেম-প্রীতি-ভালুবাসা বুঝিতে হইলে মাস্ফ্যুদার শর্টকোর্স ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
(এই ছবিটা তোরেই উৎসর্গ করলাম দোস্ত; মাইর দিস না আবার :P)

ডিম্ব পরিণয়


____________________________________________________________________

তোমার সাথে প্রতিটি কথাই কবিতা, প্রতিটি
মুহূর্তেই উৎসব-
তুমি যখন চলে যাও সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর
সব আলো নিবে যায়,
বইমেলা জনশূন্য হয়ে পড়ে,
কবিতা লেখা ভুলে যাই।
তোমার সান্নিধ্যের প্রতিটি মুহূর্ত রবীন্দ্রসঙ্গীতের মতো
মনোরম
একেটি তুচ্ছ বাক্যালাপ অন্তহীন নদীর কল্লোল,
তোমার একটুখানি হাসি অর্থ এক কোটি বছর
জ্যোৎস্নারাত
তুমি যখন চলে যাও পৃথিবীতে আবার হিমযুগ
নেমে আসে;
তোমার সাথে প্রতিটি কথাই কবিতা, প্রতিটি গোপন কটাক্ষই
অনিঃশেষ বসন্তকাল
তোমার প্রতিটি সম্বোধন ঝর্নার একেকটি কলধ্বনি,
তোমার প্রতিটি আহ্বান একেকটি
অনন্ত ভোরবেলা।
তাই তুমি যখন চলে যাও মুহূর্তে সব নদীপথ
বন্ধ হয়ে যায়
পদ্মার রুপালি ইলিশ তার সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলে,
পুষ্পোদ্যান খাঁখাঁ মরুভূমি হয়ে ওঠে;
যতোক্ষণ তুমি থাকো আমার নিকটে থাকে
সপ্তর্ষিমণ্ডল
মাথার ওপরে থাকে তারাভরা রাতের আকাশ,
তুমি যতোক্ষণ থাকো আমার এই হাতে
দেখি ইন্দ্রজাল
আঙুলে বেড়ায় নেচে চঞ্চল হরিণ;
তুমি এলে খুব কাছে আসে সুদূর নীলিমা
তোমার সান্নিধ্যের প্রতিটি মুহূর্ত সঙ্গীতের
অপূর্ব মূর্ছনা
যেন কারো অবিরল গাঢ় অশ্রুপাত;
তোমার সাথে প্রতিটি বাক্য একেকটি কবিতা
প্রতিটি শব্দ শুভ্র শিশির।

(তুমি ও কবিতা – মহাদেব সাহা)

কপোত-কপোতী


____________________________________________________________________

নায়াগ্রা জলপ্রপাতটা গ্রীষ্মে বেশ জমজমাট হয়ে ওঠে পর্যটকদের ভিড়ে। এপারে কানাডা আর ওপারে আম্রিকা; অবশ্য এই দৌঁড়ে ওবামা একটু পিছিয়ে পড়েছে। যতদূর জানি, বড় প্রপাতটা কানাডার ভাগে; আর নীচের ছোটটা আম্রিকার। লাফিয়ে ওঠা জলকণাদের সাথে আলোর লুকোচুরিতে প্রায় দিনের সবটা সময়ই কম বেশি রংধনুর বিচ্ছুরণ চোখে পড়ে।

এই সামারে অবশ্য একটা দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে নায়াগ্রাতেই। এক্সচেঞ্জ স্টুডেন্ট হিসেবে আসা এই চৈনিক তরুণী রেলিঙ্গে পা ঝুলিয়ে বসেছিল ছবি তুলবার জন্য। হঠাৎ ভারসাম্য হারিয়ে নিচে পড়ে যায়। প্রায় চার দিন পর নায়াগ্রা নদীর পারে মৃতদেহ ভেসে ওঠে। হয়তো নিয়তিই টেনে নিয়েছে। 🙁

নায়াগ্রা জলপ্রপাত

ওবামার নায়াগ্রা

এইটা বোনাস, পানি পড়া দেখতে দেখতে গান শুনেন—

২২ টি মন্তব্য : “চায়ের সাথে (ছবি)টা”

  1. রাব্বী (৯২-৯৮)

    এই সময়ে তোর পোষ্ট দেখে আমার কোমলমতি মনে কিঞ্চিৎ সন্দেহের উদ্রেক ঘটলো 😀

    অক্টোবর সিক্স। প্রভিন্সিয়াল ইলেকশন। গো রকিব্বা গো! 😛

    নায়াগ্রার মেইড অব মিস্ট নৌকাভ্রমনটা সেরম একটা মনে রাখার মতো ব্যাপার। যাউজ্ঞা, মাস্ফ্যুদার শর্টকোর্সে কি এখনো সিট খালি আছে? আমারেও সাথে নিস। শেখার কি কোন বয়স আছে :shy:

    লেখা ফাঁকিঝুকি মুচমুচে। ছবিগুলি মনোরম 🙂


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন
    • রকিব (০১-০৭)

      এখনো তো বয়সই হলো না ভোট দেবার। আর আপনার কী আর শেখার বয়স আছে। আপনে বরং ফ্যামিলি প্ল্যানিঙ্গের কোর্স করেন 😛


      আমি তবু বলি:
      এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

      জবাব দিন
      • রাব্বী (৯২-৯৮)

        ফ্যামিলি পিলানিং বলতে একাধিক বেগমসহ সুখে শান্তিতে দিন গুজরান করা - এটার জন্য কোর্স করা লাগবে না। এমনেই পারবো এনশাল্লাহ। তারচেয়ে মাস্ফ্যুদার শর্টকোর্স করলে কিছু আর্ট-কালচার আয়ত্ত্ব করতে পারতাম :shy:

        আর বয়স লুকায়া কতদিন। এবার ভোটটা দিয়ে ফেল 😀


        আমার বন্ধুয়া বিহনে

        জবাব দিন
  2. সামিয়া (৯৯-০৫)

    কি সুন্দর ছবিগুলা!! কত্ত সুন্দ কত্ত কত্ত কত্ত সুন্দর!

    তুই ইরাম বান্দর হয়েও কবিতা পড়িস?? আমার ধারণা ছিল শুধু ভাল ভাল ছেলেরা যারা পাঞ্জাবী পরে, দাড়ি রাখে তারাই কবিতা পড়ে 😛

    কি চমৎকার লেখা, আর কি চমৎকার ছবি, পুরাটাই উসুল হয়ে গেল (বেশি প্রশংসা করে ফেললাম, x-( এখন পার্ট নিবে খালি পোলাটা)

    জবাব দিন
  3. লেখা সুন্দর হইছে বাচ্চু। তবে বেশী কবিতা পড়লে সমস্যা আছে, কাচা-বাজারে গেলে মাথা ঘুরে।

    আমার এখন মনে হয়, রোমান্টিক কবিরা কোনদিন কাচা-বাজারে যায় নাই, আর গেলেও পচা মাছ কিনে আনছে, বউ এর গালি খাইছে। আমরা ধারনা, এরা সব সময় পার্কের আশে-পাশে কিংবা সুন্দর সুন্দর শপিং কমপ্লেক্সে ঘুরাঘুরি কইরা সময় কাটাইছে।

    জবাব দিন
  4. ইফতেখার (৯৯-০৫)
    জীবনে বহু কিছু হয়তো পাওয়া হবে, কিন্তু জীবনের সেরা প্রাপ্তিগুলো বেছে নিতে বললে- আমি বোকার হদ্দের মতো হাসি দিয়ে বলবো- এত বাছাবাছির কি আছে! আমার বন্ধুগুলোকেই বাক্সে পুরে দাও; ওতেই আমার চলে যাবে

    :thumbup: কথাটা ব্যাপুক মনে ধইরেছে। লেখা দারুণ হইসে। চালায়া যা 🙂

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সামিয়া (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।