গৃহবদল

দূরে কোথাও একটা রাত জাগা পাখি অবিরাম ডেকে চলেছে। আজ বোধহয় আকাশে চাঁদের পসরা নেই। কেমন শুনশান চারপাশ, ঐ লেজঝোলা পাখিটা ছাড়া বোধহয় বাইরে আর কেউই নেই।

নতুন জায়গায় বরাবরই ঘুমুতে অসুবিধে হয় জাহানারার। সেবার যখন চাঁটগাঁ যাওয়া হলো বড় ছেলেটার জন্য মেয়ে দেখতে, হোটেল ঘরের ঐ নরম বিছানাতেও ঘুম হয়নি। সহসা ঘর বদলে আজো সেই পুরানো বাতিকটাই চেপে বসেছে।

হঠাৎ করে নাতিটার কথা মনে পড়ে গেলো। রাতে তার পাশে শুয়ে ডালিমকুমার আর কিরণমালার গল্প না শুনলে ওর ঘুমই হয় না। একই গল্প প্রতিদিন শুনতে এওটুকুও বিরক্তি নেই খোকনের। যদিও কোন রাতেই পুরো গল্পটা ওর শোনা হতো না; মাঝপথেই ঘুমের রাজ্যে পঙ্খীরাজে চড়ে রাক্ষস খোক্ষসগুলোর নাস্তানাবুদ পর্ব শুরু হয়ে যেত। হেসে ওর গায়ে চাদর টেনে দিয়ে একটু চোখটা বুজবার চেষ্টা করতেন জাহানারা। পাগল ছেলেটা আজ ঘুমুচ্ছে তো ঠিক মতো? আসবার সময় খুব কান্নাকাটি করছিলো, ছেলের বউ এসে প্রায় জোর করেই ভেতরে নিয়ে গিয়েছে।

আজ প্রায় পঁচিশ বছর পর তিনি ‘স্বপ্নালয়’-এর বাইরে ঘুমুচ্ছেন। ‘স্বপ্নালয়’- ওটা তার স্বামীর দেয়া নাম, সুদীর্ঘ চাকরী জীবনের সঞ্চয়গুলো এক করে বাড়িটা দাঁড় করিয়েছিলেন। দোতলা বাড়িটাকে ঘিরে অনেক সুখস্মৃতি জড়িয়ে আছে। এখানেই ছোট ছেলেটার জন্ম। কাজল ছোট থাকতে মাঝেই মাঝেই বাড়ির পেছনের গিয়ে বসে থাকতো, কাঠগোলাপ গাছটার নিচে। কখনো নিচে পড়ে থাকা দু’একটা সাদা ফুল তুলে মুখে পুরে নিত। কী দস্যিটাই না ছিল। আটাশিতে যেবার বন্যা হলো, সেবার গাছটা মারা গেলো। ও জায়গায় অবশ্য বউমা এখন একটা অর্কিড লাগিয়েছে, নীলচে বেগুনী রঙের ফুল ফোঁটে তাতে; আগের ফুলগুলোর মতো ফ্যাকাসে সাদা নয়। পুরো বাড়িটা জুড়েই কেমন একটা মায়া মায়া আবেশ। অবশ্য দু’ছেলের আধুনিকায়নের পোষাকি দৃষ্টিতে তা খুব একটা মায়া বাড়ায় না। সনাতন ধাঁচে গড়া বাড়িটা নাকি যুগের সাথে খাপ খায় না। বাবা থাকতে হয়নি, তবে এবার বোধহয় ওরা ভেঙ্গেচুরে ঠিকই দালান তুলবে ওখানে; আটতলা, দশতলা……| বাগানের নীল অপরাজিতা গাছগুলো দুমড়ে মুচড়ে মাথা তুলবে ইট-কাঠের দানো। পুরানো আসবাবগুলোও বোধহয় বদলে যাবে; মানুষগুলোই যখন বদলে যাচ্ছে, ওদের আর কী দোষ।

একটু শীত শীত করছে। পাশ ফিরে শোবার চেষ্টা করলেন জাহানারা। খুব একটা জায়গা করতে পারলেন বলে মনে হয় না। সাড়ে তিন হাতের মাটির ঘরে আর কতটুকুই বা নড়েচড়ে শোয়া যায়।

[দ্রষ্টব্যঃ নেই কাজ তাই খই ভাজলাম :D; হজম না হলে একটা হাজমোলা খেয়ে নিবেন প্লীজ। 😐 ]

৭০ টি মন্তব্য : “গৃহবদল”

  1. মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)
    চোখ ঘুরিয়ে পাশের বৃদ্ধার দিকে চাইলেন জাহানারা বেগম। চুপচাপ চোখ বুজে ঘুমিয়ে আছেন। মাঝে মাঝেই ফুপিয়ে উঠছেন না কী; হবে হয়তো।

    এইটার সাথে সাড়ে তিন হাত মাটির এন্ডিংটা কি খাপ খায়???? আমি তো ভাবছিলাম, তুমি কোনো বৃদ্ধাশ্রমের কথা লিখবে ......

    জবাব দিন
  2. বন্য (৯৯-০৫)

    পুরোটুকুই খুব ভালো হইসে....কিন্তু একদম লাষ্টে আইসা ধরা খাইসস...হাজমোলার টাকা দে x-( x-(

    স্বপ্নচারী ভাইর সাথে একমত...এন্ডিংটা যায় নাই..বাকিটুকু :thumbup: :thumbup:

    জবাব দিন
  3. ফরিদ (৯৫-০১)

    এন্ডিংটা রাখার জন্য প্রয়োজনে শুরুর দিকের

    চোখ ঘুরিয়ে পাশের বৃদ্ধার দিকে চাইলেন জাহানারা বেগম। চুপচাপ চোখ বুজে ঘুমিয়ে আছেন। মাঝে মাঝেই ফুপিয়ে উঠছেন না কী; হবে হয়তো।

    এই লাইনগুলি বদলে দিতে পারো।

    জবাব দিন
  4. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    মইনুল ভাই যে লাইনটা একটু সরিয়ে দিস অথবা পাশের কামরায় কোনো আত্মীয়কে দেখাস(পারিবারিক গোরস্থান অর্থে)।

    আর এমনিতে লেখা জোশ হইছে...সাবলীল। :hatsoff:
    কয়েকটা আইডিয়া করে পরপর লিখে ফেল.....গল্পকার হয়ে যা :thumbup: :thumbup:


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  5. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    চাওয়ালা তোমার প্রতিভার এতো বহূর্মূখী প্রক্ষেপন দেখে আমি যারপর নাই বিস্মিত হচ্ছি। কিপ ইট আপ।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  6. মন্তব্যটি লেখার সাথে সম্পর্কিত নয়।

    আমি ক্যাডেট কলেজ ব্লগে একাউন্ট খুলেছি প্রায় ৪/৫ দিন আগে। একটা ইমেইল পেয়েছি ব্লগ অথরিটির পক্ষ থেকে যে, আমার একাউন্ট সক্রিয় না করা পর্যন্ত আমি লগ-ইন করতে পারবো না। ২য় কোনো ইমেইল এখনো পাইনি। লগ-ইনও করতে পারছি না। ওয়েবসাইটের কোথাও 'contact us' বা অনুরূপ কিছু খুঁজে পেলাম না। সবার একাউন্ট সক্রিয় করতেই কি এত দেরি হয় না কি আমারটায় কোনো সমস্যা হয়েছে- তা বুঝতে পারছি না। কার সাথে যোগাযোগ করবো জানালে খুব খুশী হবো। অগ্রিম ধন্যবাদ।

    আবিদ
    17th/RCC

    জবাব দিন
    • কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

      আবিদ ভাই, সিসিবি'র সিক রিপোর্ট সেগমেন্টটিই আসলে আমাদের সবার সাইট সংক্রান্ত সবধরণের জিজ্ঞাসার জায়গা। সচরাচর সমস্যায় পড়লে ওখানেই কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে দিলে এডজুট্যান্ট বা মডু স্যারেরা স্টেপ নেন। আশা করি আপনার সমস্যাটাও উনাদের চোখে পড়েছে এতদিনে।


      সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

      জবাব দিন
  7. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    ছোট, সাম্প্রদায়িকতা কিনা জানি না...তয়, তুই যাই লিখিস, পড়তে ভাল লাগে... 😀
    আর এই স্টাইলটা তো আমার খুবই প্রিয়... 🙂
    বলাইচাঁদ ছিলেন অন্যতম বস... :boss:
    তবে জহির রায়হানের 'একুশের গল্প' এই ঘরানার অন্যতম সেরা... :-B

    অনেক দিন পর আইলাম...
    উল্টা-পাল্টা কথায় কিছু মনে নিস না... 😛


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  8. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    লিখছিস চরম পিচ্চি,
    একদম হাছা কথা, আমি তোর পাঙ্খা হচ্ছি দিনে দিনে।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  9. জিহাদ (৯৯-০৫)

    আমি তোর পাঙ্খা হমু কীরে, তুই তাড়াতারি পাঙ্খা নিয়া আইসা বাতাস শুরু কর। বান্দরবান থিকা ক্রসকান্ট্রি দিয়ে আইসা হাপায় গেসি। জিরায় নেই আগে :grr:


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রকিব (০১-০৭)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।