২০ জুলাই- এর গল্প

দিন তারিখের হিসেবটা বেশ কিছুদিন হলো সেভাবে রাখা হয় না, যেভাবে রাখতাম ক্লাশ সেভেন-এইটে। আমি আর তওসীফ ডাইরীর পাতায় পুরো টার্মে যতগুলো দিনছিল ততগুলি দাগ কাটতাম। এরপর দিন যায়, আর একটা করে দাগ লাল কালিতে কাটা পড়তো। ছেলেমানুষী করে প্রতিদিন সেই লাল কালিতে কাটা দাগগুলো গুনে গুনে দেখতাম আর কতটুকু সময় বাকী আছে। তওসীফ আবার আরো এক কাঠি সরেস, ওর হিসেব ছিল চুলচেরা ঘন্টার কাটায়। কী সব বকছি, বরং কাজের কথায় আসি। ২০ জুলাই, বছরের ২০১ তম দিনটা আর দশটা দিনের মতো ছিমছামই বটে। তবে কতগুলো ছোটখাটো কারণ এর তাৎপর্যকে বেশ ভরবহুল করে তুলেছে। আমি তার দুটোমাত্র বলি।

পায়ের নীচে চাঁদ
ছোট্টবেলায় মায়ের কোলে বসে চাঁদ মামার কাছ থেকে অনেকেই হয়তো টিপ ছিনিয়ে এনেছেন। আর ভালোবাসার রাজ্যে এই মাতুলের আবার নিদারুন প্রাচুর্য; “আমি চাঁদের সাথে দেবো না তোমার তুলনা 😡 ” -গানটা তো প্রায় সবারই জানা। অবশ্য সুকান্তের মত ঝলসে খাবার বাসনাও যে কদাচিৎ দেখা দেয় না তা কিন্তু নয়। এতকিছুর পরো মানুষের মাঝে এই কল্পনার অপ্সরীকে নিয়ে জল্পনার শেষ ছিল না। তাদের চূড়ান্ত কৌতূহল সকল প্রতিবন্ধকতাকে ছুড়ে ফেলে চাঁদের বুকে আপন পদচিহ্ন একে দিতে প্রত্যয়ী হয়ে উঠলো। নাসার তত্ত্বাবধানে চালু হলো প্রজেক্ট অ্যাপোলো। মহাকাশে পাড়ি দিলো একে একে চারটা মহাকাশযান। কোনটা হয়তো শুরুতেই আছড়ে পড়লো, কোনটা আবার ছবি আর প্রয়োজনীয় তথ্যের ভান্ডার চুরি করে নিয়ে এলো সূর্যের প্রেয়সীর কাছ থেকে। তাতেই কি আর সাধ মেটে, চাঁদকে যে ছুতে হবে। আর তাই মায়া ভরা এক রাতে উড়লো অ্যাপোলো-১১। দিনটা ছিলো ১৬ জুলাই, ১৯৬৯; ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্থানীয় সময় সকাল ৯:৩২ এ এই পুষ্পক রথের যাত্রা শুরু হয়। যাত্রী তিনজন; অধিনায়ক নেইল আল্ডেন আর্মস্ট্রং (বাহুবলও ডাকতে পারেন), কমান্ড মডিউল পাইলট মাইকেল কলিন্স এবং লুনার মডিউলের দায়িত্বে এডউইন বাজ অলড্রিন। বেশকিছু খুটিনাটি জটিল প্রক্রিয়া সম্পন্নের মধ্য দিয়ে ১৯ জুলাই মামাবাড়ির রাস্তায় (চাঁদের কক্ষপথে) ঢুকে পড়ে অ্যাপোলো-১১। দেখে নিতে থাকে অবতরণ স্থান এবং প্রতিবন্ধকতা। ওদিকে পৃথিবীর মানুষ তখন শ্বাস বন্ধ করে প্রহর গুনছে। অবশেষে ২০ জুলাই, কমান্ড মডিউল কলম্বিয়ার(মূল মহাকাশযান যা লুনার মডিউলসহ অন্যান্য সব বহন করছিল) নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে কলিন্সকে রেখে আর্মস্ট্রং আর অলড্রিনকে বুকে নিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে চাঁদের পথে একলা চলতে শুরু করে লুনার মডিউল ঈগল। ঈগলের মতই ছোঁ মেরে যেন ছিনিয়ে আনতে চলেছে মানব সভ্যতার বহুপুরানো লালিত স্বপ্ন। পেরিয়ে যায় বেশ কিছুটা সময়, সহসাই জ্বালানী স্বল্পতাজনিত সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে। বাধ্য হয়ে তড়িঘড়ি করে ২০:১৭ মিনিটে চাঁদের বুকে লাফ দিয়ে নেমে পড়ে ঈগল। খানিকটা সংশয়ের মধ্য দিয়েই মানব জাতির ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। অবশ্য তখনই মামাবাড়ির নিমন্ত্রণে নেমে পড়েননি অভিযাত্রীরা। চারপাশের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে এবং প্রইয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, ত্রুটি নির্ণয় করে নিতে আরো খানিকটা সময় চলে যায়। জুলাই ২১, সময় ২:৫৬; সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে তৈরী হয়ে নিলেন আর্মস্ট্রং আর অলড্রিন। জানা নেই, তবে কে আগে নামবে তা নিয়ে খানিকতা ঝুটঝামেলা হলেও হতে পারে তাদের মধ্যে। তবে যাই হোক না কেন, নেতাসুলভ ঝাড়ি দিয়ে বোধ করি আর্মস্ট্রংই জিতে গিয়েছিলেন। চাঁদের ধূসর বালুর বুকে নিজের পদচিহ্ন এঁকে দিলেন আর্মস্ট্রং; ঘোষণা করলেন মানব সম্প্রদায়ের সাফল্যকথা, “একজন মানুষের জন্য এটা হয়তো এক সামান্য পদচিহ্ন, কিন্তু সমগ্র মানবজাতির জন্য এ এক মহান পদক্ষেপ।” ইতিহাস নতুন করে জেনে নিলো মানবের জয়গান।
মার্কিনীদের চন্দ্র-অভি্যান নিয়ে আজকাল বহু গুঞ্জন, সন্দেহের ধোয়া উঠছে। জানি না কতটুকু সত্য, কতটুকুই বা মিথ্যা। এনিয়ে নাহয় আরেকদিন বলবো।

দুজন মহামতি ব্যক্তির ধরাগমন
দুজন বিশেষ ব্যক্তি এদিনে তারস্বরে চেঁচিয়ে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিয়েছিলেন। প্রথমজন হলেন, আলেকজান্ডার । খিস্টপূর্ব ৩৫৬ অব্দে মেসিডোনিয়ায় জন্ম নেন এই সফল সেনাধিনায়ক। অবশ্য আরো অনেকগুলো নামে তিনি পরিচিত- যুলকারনাইন, ইস্কান্দার, আল-ইস্কান্দার আল কাবের, সিকান্দার প্রভৃতি। প্রায় অর্ধেকের বেশি পৃথিবীবিজেতা কিন্তু মাত্র ১৬ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেছিলেন। শুরুটা বাইজেন্টাইন নামক ছোট্ট একটা গ্রীক রাজ্য দিয়ে শুরু হলেও অসাধারণ রণকৌশলের মাধ্যমে জিতে নেন একে একে বলকান, পারস্য, এবং সবশেষে ভারতের বেশ বড় একটা অংশ। শোনা যায়, মৌর্য বংশের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য আলেকজান্ডারের সেনাপতি ইউডিমাস এবং পিউথাসের তাড়া খেয়ে বেশ কিছুদিন পাহাড়ে আত্মগোপন করেছিলেন। অবশেষে এই মহাবীর খিস্টপূর্ব ৩২৩ অব্দে মাত্র ৩২ বছর বয়সে মারা যান। মৃত্যুর কারণ নিয়ে অনেক গুজব রয়েছে। কেউ বলেন বিষপ্রয়োগ, কেউবা সাধারণ টাইফয়েড আর ম্যালেরিয়াকে দায়ী করেন। কে জানে, হয়তো জেতার ক্লান্তিই তার জীবনকে অন্তিম স্পর্শ দিয়েছিল।

এবারে দ্বিতীয় মহাত্মনের গল্প বলি। ভদ্রলোককে বোধহয় আপনারা সবাই কমবেশি চেনেন। তিনি মাত্র দুবার জন্ম নিয়েছেন, একবার ১৯৮২ সালের ২০ জুলাই; আরেকবার খানিকটা পর ১৯৯৪ সালের ১২ মে। বোধহয় ধরে ফেলেছেন কার কথা বলছি। চুপ করবো, না থাক বলি। ভদ্রলোকের নাম টি.রহমান। থাকেন বনশ্রী, রামপুরা। আপাতত বোধহয় প্রতিশব্দ কমুনিকেশনেই তার দিনাতিপাত হয়। এই সাধারণ সাধাসিধে লোকটা কিন্তু অসাধারণ লিখতে জানেন। মাস্ফ্যু ভাই তো বলেই ফেলছিলেন, “একুশ কে নিয়ে পড়া আমার সেরা গল্প মানিক বন্দ্যেপাধ্যায়,শওকত ওসমান বা জহির রায়হানের কোন লেখা নয়-আপনার ওই গল্পটা।” বুঝুন তবে, কখনো চোখে দেখিনি, কিন্তু কিভাবে যেন মিশে আছেন আমাদের সাথে। দুষ্টু-মিষ্টি কথার বেড়াজালে মাতিয়ে রাখেন ব্লগের ছেলে বুড়ো (কাইউম ভাইকে নির্দেশ করে কিছু কই নাই কিন্তু ~x( ) সবাইকে। এই যে মাঝে মাঝে এই আপু, ঐ আন্টিকে নিয়ে দোকানে আসেন চা খেতে, ৫-১০ টাকা বখশিস দিয়ে যান। (১২৪০২ টাকা ৪৮ পয়সা যে বাকী আছে ঐটা কিন্তু কইতে চাই নাই।) গুণের বর্ণনা না হয় নাই দিলাম। দারুণ ক্রিয়েটিভ, আলাপী মানুষটা কিন্তু দারুন উৎসাহ দিতে পারেন। হাসতে আর হাসাতে উনার জুড়ি নেই, আর আড্ডায় কামরুল ভাইয়ের সাথে পাল্লা দিতে থাকেন। সবই তো বলে ফেললাম, না না, আসলে কিছুই বলা হয়নি।

আমাদের সবার প্রিয় টিটো ভাইয়ের আজ জন্মদিন, হ্যাপ্পি বাড্ডেএএএএএ। তাক ধিনা ধিন ধিন তাক তাক ধিনাক ধিনাক ধিন :party: :awesome: :guitar: ।
জন্মদিনে আপনার জন্য রইলো চায়ের কাপ :teacup: ভরা ভালোবাসা আর ধোয়া উঠা কেটলীর দুধ পাত্তি বেশি দেয়া শুভেচ্ছা। :hug: ঝাতির পক্ষ থেকে আপনার কাছে আমাদের প্রত্যাশা জন্মদিন উপলক্ষে বিশাল ভূড়িভোজ, অনন্য কিছু পোষ্ট, একখান ভাবী, গোটা পাঁচেক ভাতিজা-ভাতিজি, আর আমার বাকী টাকা কয়টা 😛 ।

………………………….
এবারে আমরা ডিরেক্টর কামরুল ভাইইয়ের মুখ থেকে কিছু শুনবোঃ

ঠিক কবে কোথায় প্রথম দেখা হয়েছিলো সেটা আজ আর মনে নেই। হয়তো কোচিং পালিয়ে সিগারেটের ধোয়া তোলা ফার্মগেটের চায়ের দোকানে অথবা বিকেলে সংসদ ভবনের জম্পেশ আড্ডায়। তবে এ কথা ঠিক মনে আছে তখন টিটো বাংলা-ফাইভ টানতো, আমিও।
তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ঘনিষ্টতা। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্পাসের এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ানো একটা দল থাকে। টিটো সেই দলের, আমিও।
কার্জন হল আর টিএসসি’র আড্ডায় সিগারেটের পর সিগারেট পোড়ে, মামার দোকানে বাকির খাতা আরো বড় হয় তারপরও কিছু ছেলে নিশ্চিন্তে দেশ উদ্ধার করে। টিটো সেই ছেলেদের দলে ছিলো, আমিও। পার্থক্য শুধু একটাই, টিটোর আশেপাশে সব সময় গুচ্ছগুচ্ছ বালিকা থাকতো, আর আমি অনাথের মতো ঘুরে বেড়াতাম।

বেশ ভালোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে ছিলো টিটো। লিটল ম্যাগ, ফিল্ম সোসাইটি, প্রপদ সবকিছুতে। আহসান , টিটো আর তারেক এই তিনজন তখন ফিল্ম সোসাইটির প্রাণ । মাঝে মাঝে ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল হয়, অন্ধকার অডিটোরিয়ামে টর্চ হাতে তারেক, টিটোরা টিকেট চেক করে, গেট থেকে সুন্দরী বালিকাদের হাতে ধরে এনে সিটে বসায়। তারপর দিনশেষে হিসেব করে কে ক’জনের হাত ধরতে পারলো। ওদের গল্প শুনে ইর্ষা হয়। শেষপর্যন্ত ফিল্ম সোসাইটির সভাপতিও হয়েছে টিটো। ওর সম্পাদনায় ফিল্ম সোসাইটি’র ছোট কাগজের অনেকগুলি সংখ্যা বেরিয়েছে। পড়ে মুগ্ধ হয়েছি প্রতিবার। সিনেমার প্রতি ওর ভালোবাসা, সিনেমা নিয়ে ওর ভাবনা মুগ্ধ হবার মতোই।

আবার এই টিটোকে দেখেছি মিছিলের সামনের সারিতে। সামসুন্নাহার হলের ছাত্রীদের উপর পুলিশী নির্যাতনের প্রতিবাদের উত্তাল হলো পুরো ক্যাম্পাস। আন্দোলন দমাতে না পেরে হল গুলি বন্ধ করে দেয়া হলো। ক্যাম্পাস মিছিলে মিছিলে সয়লাব। সেই মিছিলে টিটো, শরীরে পুলিশের লাঠির আঘাত কিন্তু গলায় জোর প্রতিবাদ। আহা কি দিন ছিলো !

বন্ধু-বান্ধবদের লেখা নিয়ে আমি বরাবরই একটু বেশি উচ্ছাসিত। কিন্তু টিটো’র লেখা নিয়ে আমার উচ্ছাস একটুও বাড়াবাড়ি নয়। কী দারুন কল্পনা শক্তি থাকলে মাত্র দু’দিনে ‘বউ কথা কউ’র মতো একটা গল্প লেখা যায় সেটা সিসিবির পাঠকরাও নিশ্চয়ই এতোদিনে আঁচ করতে পেরেছেন। এখনো মনে আছে, কার্জন হল থেকে তারেকের সম্পাদনায় বের হওয়া ‘যুযুধান’ নামে একটা ছোট কাগজে গল্পটা প্রথমবার ছাপা হয়েছিলো। তারেক পড়তে দিলো। প্রথমবার পড়ে অনেকক্ষণ থ মেরে বসে ছিলাম। এমন একটা গল্প লেখা শুধু টিটোর পক্ষেই সম্ভব।

শুভ জন্মদিন দোস্ত।
আমরা দু’জন আরেকটু বড় হইয়া তিন প্রহরের বিল দেখতে যামু ;;;

…………………………………….
(অফটপিকঃ মাস্ফ্যু ভাইয়ের মন খারাপ, পোষ্টটা উনি দেবার আগেই আমি দিয়া ফেলছি। :grr: )

৫,২৬১ বার দেখা হয়েছে

৮০ টি মন্তব্য : “২০ জুলাই- এর গল্প”

  1. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    (এটা লিখছিলাম টিটোর জন্মদিন পোস্ট হিসেবে। অর্ধেক লেখার পর দেখি ইতিমধ্যে রকিব পোস্ট দিয়ে দিয়েছে। তাই পুরোটা শেষ না করে যেটুকু লিখেছি সেটুকুই মন্তব্যে দিয়ে দিলাম। 😛 )

    ........................
    ঠিক কবে কোথায় প্রথম দেখা হয়েছিলো সেটা আজ আর মনে নেই। হয়তো কোচিং পালিয়ে সিগারেটের ধোয়া তোলা ফার্মগেটের চায়ের দোকানে অথবা বিকেলে সংসদ ভবনের জম্পেশ আড্ডায়। তবে এ কথা ঠিক মনে আছে তখন টিটো বাংলা-ফাইভ টানতো, আমিও।
    তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ঘনিষ্টতা। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্পাসের এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ানো একটা দল থাকে। টিটো সেই দলের, আমিও।
    কার্জন হল আর টিএসসি'র আড্ডায় সিগারেটের পর সিগারেট পোড়ে, মামার দোকানে বাকির খাতা আরো বড় হয় তারপরও কিছু ছেলে নিশ্চিন্তে দেশ উদ্ধার করে। টিটো সেই ছেলেদের দলে ছিলো, আমিও। পার্থক্য শুধু একটাই, টিটোর আশেপাশে সব সময় গুচ্ছগুচ্ছ বালিকা থাকতো, আর আমি অনাথের মতো ঘুরে বেড়াতাম।

    বেশ ভালোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে ছিলো টিটো। লিটল ম্যাগ, ফিল্ম সোসাইটি, প্রপদ সবকিছুতে। আহসান , টিটো আর তারেক এই তিনজন তখন ফিল্ম সোসাইটির প্রাণ । মাঝে মাঝে ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল হয়, অন্ধকার অডিটোরিয়ামে টর্চ হাতে তারেক, টিটোরা টিকেট চেক করে, গেট থেকে সুন্দরী বালিকাদের হাতে ধরে এনে সিটে বসায়। তারপর দিনশেষে হিসেব করে কে ক'জনের হাত ধরতে পারলো। ওদের গল্প শুনে ইর্ষা হয়। শেষপর্যন্ত ফিল্ম সোসাইটির সভাপতিও হয়েছে টিটো। ওর সম্পাদনায় ফিল্ম সোসাইটি'র ছোট কাগজের অনেকগুলি সংখ্যা বেরিয়েছে। পড়ে মুগ্ধ হয়েছি প্রতিবার। সিনেমার প্রতি ওর ভালোবাসা, সিনেমা নিয়ে ওর ভাবনা মুগ্ধ হবার মতোই।

    আবার এই টিটোকে দেখেছি মিছিলের সামনের সারিতে। সামসুন্নাহার হলের ছাত্রীদের উপর পুলিশী নির্যাতনের প্রতিবাদের উত্তাল হলো পুরো ক্যাম্পাস। আন্দোলন দমাতে না পেরে হল গুলি বন্ধ করে দেয়া হলো। ক্যাম্পাস মিছিলে মিছিলে সয়লাব। সেই মিছিলে টিটো, শরীরে পুলিশের লাঠির আঘাত কিন্তু গলায় জোর প্রতিবাদ। আহা কি দিন ছিলো !

    বন্ধু-বান্ধবদের লেখা নিয়ে আমি বরাবরই একটু বেশি উচ্ছাসিত। কিন্তু টিটো'র লেখা নিয়ে আমার উচ্ছাস একটুও বাড়াবাড়ি নয়। কী দারুন কল্পনা শক্তি থাকলে মাত্র দু'দিনে 'বউ কথা কউ'র মতো একটা গল্প লেখা যায় সেটা সিসিবির পাঠকরাও নিশ্চয়ই এতোদিনে আঁচ করতে পেরেছেন। এখনো মনে আছে, কার্জন হল থেকে তারেকের সম্পাদনায় বের হওয়া 'যুযুধান' নামে একটা ছোট কাগজে গল্পটা প্রথমবার ছাপা হয়েছিলো। তারেক পড়তে দিলো। প্রথমবার পড়ে অনেকক্ষণ থ মেরে বসে ছিলাম। এমন একটা গল্প লেখা শুধু টিটোর পক্ষেই সম্ভব।

    .....................

    শুভ জন্মদিন দোস্ত।
    আমরা দু'জন আরেকটু বড় হইয়া তিন প্রহরের বিল দেখতে যামু ;;;


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  2. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    শোনা যায়, মৌর্য বংশের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য আলেকজান্ডারের সেনাপতি ইউডিমাস এবং পিউথাসের তাড়া খেয়ে বেশ কিছুদিন পাহাড়ে আত্মগোপন করেছিলেন

    ঘটনা আসলে উল্টা।আলেকজান্ডারের সৈন্যরা ভারতে আসার আগে হাতি দেখে নাই তাই যুদ্ধে হাতি দেইখা প্রচন্ড ভয় পাইছিল।চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের ছিল বিশাল হাতির বাহিনী।হাতির মাইর খাইয়া আলেকজান্ডার সন্ধি করছিল-সহসা সেই মুখে পা বাড়ায় নাই।

    আর নন্দ বংশের রাজা ধননন্দের সাথে আলেকজান্ডারের এনকাউন্টার নিয়াও বড় চমকপ্রদ কাহিনী আছে এক্যার ঐতিহাসিক ভিত ভীষণ মজবুত।বিপাশা নদীর তীর পর্যন্ত আলেকজান্ডার আসার পর সেইখানে তাঁবু গাইড়া যখন বসলেন-মাত্র কয়েক ঘন্টা পরেই দেখেন যে নদীর অপর পাড়ে বিশাল এক বন দেখা যাইতেছে।ভূত-প্রেত আর সাপখোপের দেশ ভারতবর্ষে এই কাহিনী দেইখা তো উনার বিি মাথায় উঠার অবস্থা-পরে স্থানীয় এক লোক কইল যে এইটা কোন বন না-ধননন্দের সৈন্যবাহিনী তাকে বাধা দিতে আইসা হাজির হইছে।এইটা শুইনা তিনি আর এডভান্স করেন নাই-পত্রপাঠ তাঁর মাতৃভূমি মেসিডোনিয়ার দিকে রওয়ানা হইছিলেন।

    আমাদের আদিপুরুষ রাজা ধননন্দের এই হ্যাডম দেইখা আলেকজান্ডারের পলায়নের কাহিনী শুইনা বাঙ্গালি হিসাবে বড়ই গর্বিত হইছিলাম।

    অফ টপিক-রকিব রে,ব্লগে আইসা দেখি তুই আমার ভাত মাইরা বইসা আছস তাই মিজাজটাই গেল খিঁচড়াইয়া।এই কারণে মাইক্রোস্কোপ দিয়া খুঁইজা এই খুঁত বাইর করলাম :grr: :grr:

    ভাইসকল-আমার জীবনের সাধনা আজ পূর্ণ মনে হইতেছে-আমার অবর্তমানে সিসিবি ব্লগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জেপির(জন্মদিন প্রিফেক্টের) পোস্ট কেডা সামলাইবো সেইটা ভাইবা ভাইবা এতদিন অস্থির হইতাম-এখন দেখতাছি আমি চোখ বুঁজলেও সমিস্যা নাই-রকিব খুব ভালভাবেই সামাল দিতে পারবো।

    শুভ জন্মদিন টিটো ভাই,আশা করি আপনের নামের বানানে শেষের ট তে ও কার না দিয়া একবার নাম লিখছিলাম ভুলে সেইটা মাপ কইরা দিবেন ;;;

    আর রকিব্যারে ধন্যবাদ-অয় থাকায় আমার দুশ্চিন্তা দূর হইল O:-) O:-) েইবার আমি নিশ্চিন্তে চোখ বুঁজতে পারুম ;;) ;;) ;;)

    জবাব দিন
    • মাস্রুব্বাইরক্করে :thumbup:
      :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:
      ভাউরে, এই বিশালদেহী মানুষটার জ্ঞানের ভাণ্ডার দেইখা টাস্কি খাইলাম। ইদানিং inferiority complex এ ভুগি। আমি কিছুই পারি না ক্যান :((

      জবাব দিন
    • আহসান আকাশ (৯৬-০২)

      আলেকজান্ডার ভারতবর্ষে এসে বান্দরের সাথেও যুদ্ধ করছিল বলে শুনছিলাম :))


      আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
      আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

      জবাব দিন
    • রকিব (০১-০৭)

      মাস্ফ্যু ভাই(আকাশদার দেয়া নতুন নামটায় ডাকার সাহস পেলাম না 😛 ), আপনি ঠিকই বলেছেন। তবে আমার কথাটুকু আরো একটু পেছনের। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য নিজেই গ্রীক বাহিনীকে দাবড়ানি দিয়েছিলেন, তবে তা খিস্টপূর্ব ২২ অব্দে, আলেকজান্ডারের মৃত্যুর এক বছর পর। তারো বেশ খানিকটা আগে (সঠিক সময় বলতে না পারায় ক্ষমাপ্রার্থী) তখনো রাজতকমা তার গায়ে লাগেনি, সে সময় মগধরাজ নন্দের উপর ক্ষ্রীপ্ত হয়ে তিনি স্বয়ং আলেকজান্ডারের সাথে দেখাও করেছিলেন, এমনটাও কথিত আছে। আলেকজান্ডার তাকে সাহায্য করতে রাজি হননি, ওদিকে নন্দ ব্যাটাও ক্ষেপে যায়। তখন কিছুদিন তাকে আত্মগোপন করে থাকতে হয়, যদিও তখনো নিয়মিত যোগাযোগ ছিল সে সময় চাণক্যের সাথে। সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ৩১৫-৩১৯ এরমাঝামাঝি কোন সময়ে আলেকজান্ডার মিয়া ভারতবর্ষ ত্যাগ করেন। এবং সে সময়ই গড়ে ওঠে মৌর্যবাহিনী। আর খ্রিস্টপূর্ব ৩২২ অব্দে চাদঁ মিয়া আলেক মিয়ার সেনাপতিদের উলটো তাড়া করেন। (সময়গুলো খানিকটা স্মৃতির উপর ভর করে বলা।)
      তবে নন্দরাজের ঘটনাটা সঠিক বলেই জানি। হস্তিবাহিনীর ভয়েই আলেক মিয়া তার অভিযান স্থগিত করেছিল।

      ভাইয়া, আপনি জন্মদিনের পোষ্ট লিখলে ঐ লেখায় একটা অন্যরকম আমেজ থাকে, আমি গ্যাড়ায় ফেলছি। x-( :bash:


      আমি তবু বলি:
      এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

      জবাব দিন
      • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

        ধুর জন্মদিনের পোস্টে কি সব ইতিহাসের কচকচানি শুরু করলাম! 😡 😡

        ওই রকিব তুই ঠিক কইছোস।আলেক মামু পরথমে দাবড়ানি খাইছিল ধননন্দের কাছে বিপাশা নদীর তীরে-চাঁন সাহেব তখনো সম্রাট হন নাই।ধননন্দ মারা যাওয়ার পর চানক্যের সাহায্যে তিনি যখন সম্রাট হইলেন ততদিনে আলেক মামু দেশে ফিরা যাওয়ার পথে পটল তুইলা বইসা আছেন।ধননন্দের মিরিত্যুর অল্প আগে থিকা চাঁন সাহেবের সম্রাট হওয়ার মাঝামাঝি সময়ে তিনি একটু বাটে পড়ছিলেন যেইটা তুই কইলি-তখনই মনে হয় তাঁরে বনে বাদাড়ে পলাইতে হইছিল।আর আলেক মামা পটল তোলার পর ধন মিয়াও মারা গেলেন প্রায় কাছাকাছি সময়ে।চামে দিয়া বামে চাঁন সাহেব সম্রাট হয়া আলেক সাহেবের রাইখা যাওয়া সেনাপতি সেলিউকাসরে(সত্যি সেলুকাস কি বিচিত্র এই প্রতিপক্ষ এর সেলুকাস 😛 )ভালই সাইজ দিছিলেন-যেইটা তুই কইলি।

        যাউক-এইবার ভুলভাল হিস্টুরি জোড়াতালি দিয়া মনে হয় মোটামুটি একটা সলিউশন দাঁড়াইল।হোমো আলেক ব্যাটার কাছে আদি বাঙ্গালি ধন মামার দাবড়ানি খাওয়ার কাহিনীটা শুইনা পেট কিরকির কর্তাছিল তাই অতকিছু ল্যাকছি-এইটারে অন্যভাবে নিস না আবার।

        পুনশ্চ ১-ওই তোরে এস এম এস করার নাম্বার দে-তুই যেই নাম্বারে পাঠাস সেইটাতে এস এম এস এর রিপ্লাই যায় না।
        পুনশ্চ ২-এখানে ধন বলতে সম্রাট ধননন্দকে বুঝানো হইছে,কেউ যেন নেগেটিভলি না নেয় সেই দায়িত্ব তোর।
        পুনশ্চ ৩-এই ল্যাকা আমার চেয়ে যোজন যোজন গুন ভাল হইছে-আমেজের কথা কইয়া অমায়িক োদা গিরি করলে তোর খবর আছে 😡 😡 😡

        জবাব দিন
  3. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    আগের পোস্টে টিটো আর অর পার্টনার আলেকজান্ডারের সেইম চেহারা আর ড্যান্স দেইখাই সিওর হইছিলাম দুইডা একই দিনে কিছু না কিছু ঘটাইছে
    তাই টিটো আর আলেকজান্ডার দুইডারেই শুভেচ্ছা। খালি আফসুস, টিটোরে একবার কেক খাওয়াইছিলাম মাগার আলেকজান্ডার হালার ভাইরে জেবনেও কিছু খাওয়াইতে পার্লাম্না 🙁


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : টিটো রহমান (৯৪-০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।