কলেজ লাইফের ভূত-রসাত্মক কাহিনী ৪

এই কাহিনীটি সেই এস এস সি পরীক্ষার সময়ের। সেই সময় আমাদের রাত ১০ টার সময় ডাইনিং হলে চা-বিস্কিট দেয়া হতো। উদ্দেশ্য রাত জেগে পড়াশোনা করতে যেন সুবিধা হয়। কিন্তু সেই চায়ের এনার্জি পড়ালেখার চেয়ে বাঁদরামিতেই বেশি ব্যয় হতো। আর সেই কাঠের বিস্কিট?? আহা, এখনো মিস করি। ডাইনিং হল থেকে দু হাত ভর্তি করে প্রতিদিন বিস্কিট আনতে আনতে….. থাক সে কাহিনী আরেকদিন বলা যাবে। এখন মূল ঘটনায় চলে আসি।
কোন একদিন রাত দশটার ঘটনা। ডাইনিং হলে চা খেতে গেছি, দেখি ডিউটি বেয়ারা আশরাফ ভাইয়ের মুখটা থমথমে, কেমন ভয়ার্ত ভাব। মনে হচ্ছে, তিনি ডাইনিং হলে থাকতে ভয় পাচ্ছেন।উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,আপনাকে এমন লাগছে কেন? উনি প্রথমে কোন উত্তর দিলেন না। তারপর কিছুক্ষণ চাপাচাপির পর ঘটনাটি বলা শুরু করলেন।
ঘটনাটা এরকম,এর আগের দিন রাতের বেলায় তিনি ডাইনিং হলে একা ছিলেন। রাত দুইটার সময় তিনি কিছু একটার শব্দ পেয়ে উঠে যান। তিনি আস্তে আস্তে ডাইনিং হলে এসে দেখেন যে, কি যেন একটা,সাদা কাপড়ে ঢাকা, অশরীরী কিছু শূন্যে ভেসে ভেসে ঠিক ডিউটি ক্যাডেটের মত পুরো ডাইনিং হল প্রদক্ষিণ করছে। তারপর ঠিক ডিউটি ক্যাডেটের মত বেল বাজাচ্ছে। এ ঘটনা দেখার পর তিনি প্রচণ্ড ভয় পান ও ভিতরে ঢুকে যান।সারারাত ভয়ে তিনি ঘুমাতে পারেন নি।
পুরো ঘটনা শোনার পর অদ্ভূত একটা প্রতিক্রিয়া হল আমাদের মধ্যে। অনেকেই ঘটনাটি পুরো বিশ্বাস করলো। কারণ আশরাফ ভাই ছিলেন দাড়িওয়ালা বয়স্ক মানুষ, উনি কিভাবে মিথ্যা বলেন? আবার অনেকে ভাবলো এটা হ্যালুসিনেশন ছাড়া কিছুই নয়। মজার বিষয়, ওইদিনের ডিউটি মাস্টার স্যারও ঘটনাটি বিশ্বাস করলেন। তিনি ঘাড় নাড়তে নাড়তে বললেন, “ সামটাইমস সামথিং হ্যাপেন্স হুইচ ইজ বিয়ন্ড এক্সপ্লানেশন”। হাউজে আসার পর সবারই একই টপিক। ঘটনাটি আসলে কি? আশরাফ ভাইয়ের কথা কি আসলে সত্যি নাকি মিথ্যা! এটা নিয়ে তর্ক বিতর্ক হল অনেকক্ষণ।রাত ১২টার পর বিশ নম্বর রুমে শুরু হল জমজমাট ভূতের গল্পের আসর।রাত বেড়ে চললো আর আস্তে আস্তে সবার ঝোলা থেকে বিভিন্ন কাহিনী বের হতে লাগলো। কেউ একজন বলল, কোন গার্ডের কাছে নাকি শুনেছে এরকম যে, ভ্যাকেশনের সময় লাইব্রেরীতে হাঁটাহাঁটির আওয়াজ পাওয়া যায়,মাঝে মাঝে চেয়ার ঘসার শব্দ,মাঝে মাঝে বইয়ের পাতা উল্টানোর আওয়াজ,এগুলো। মানে অনেক মানুষজন থাকলে যেরকম আওয়াজ হয় আর কি,সে নাকি নিজের চোখে দেখেছে।আবার আরেকজন শুরু করলো অডিটোরিয়ামেও নাকি এরকম ঘটনা ঘটেছে। মধ্যরাতে , গীটারের মৃদু টুংটাং কিংবা কে যেন করুণ সুরে গান গায়,হারমনিয়াম কিংবা তবলার শব্দও শুনতে পাওয়া যায়। এরকম গল্প করতে করতে রাত বাড়তে থাকল আর সবার মধ্যেই কেমন যেন একটা শিহরণ তৈরি হল। কারণ গভীর রাত, চারিদিকে নিস্তব্ধ নিশ্চুপ। ঝি ঝি পোকার ডাক কিংবা বাতাসে পাতার ঘষার শব্দও মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। আর পাহাড়ে,জঙ্গলে শেয়ালের হুক্কা হুয়া পুরো কলিজায় গিয়ে লাগে। রাত আরো গভীর হতে থাকলো, এর মধ্যে একজন আবার মাদ্রাসার কাহিনী শুরু করলো। মানুষের রূপ ধরে মাদ্রাসায় জিনেরা পড়ালেখা করে। তারা অবশ্য কারো ক্ষতি করে না। সবার সাথেই বন্ধুর মত থাকে, কিন্তু তাদের পরিচয় ফাঁস হয়ে গেলে চলে যায়। ঠিক সেরকম ক্যাডেটদের মধ্যে এরকম জিন ক্যাডেট থাকতে পারে। আমরা অনুসিদ্ধান্তে আসলাম, হয়ত আমাদের ব্যাচমেটদের মধ্যেও কেউ আছে,কিন্তু আমরা কেউই জানি না,কে বলতে পারে? এটা শুনতে হয়ত ভয়ানক হাস্যকর লাগছে সবার কাছে,কিন্তু সেই সময়,সেই পরিবেশে এই হাস্যকর কথাটাই সবার মনে ভয়ের অনুভূতি তৈরি করে, গা ছমছম করতে শুরু করে,অন্ধকারে একজনের কাছে আরেকজনের চেহারা কেমন যেন পরাবাস্তব ঠেকে।
আড্ডার একপর্যায়ে আমার বন্ধু রাজীবকে ( ছদ্মনাম) প্রকৃতি ডাক দিলো। কিন্তু সেই সময়ে সে রুম থেকেই একা বের হতে ভয় পাচ্ছিলো আর টয়লেট তো অনেক দূর। কেউ তখন তার সাথে যেতেও চাচ্ছিলো না। বাধ্য হয়ে আমিই তার সাথে বেরিয়ে এলাম। সে তো আমার প্রতি চরম প্লীজড। টয়লেটে যাওয়ার সময় সে বারবার আমাকে প্রশংসার বন্যায় ভাসাচ্ছিলো। আমি নাকি খুব ভালো,আমি নাকি কারো রিকুয়েস্ট ফেলি না,এই সেই, হাবিজাবি। আমি খালি হাসছিলাম। ব্লকের শেষ মাথায় টয়লেটের সামনে এসে তার দিকে তাকিয়ে একটা রহস্যময় হাসি দিলাম।তারপর খুব ধীরে ধীরে বললাম, “আচ্ছা রাজীব, তুই একটা কথা বলতো, তুই কি শিওর আমি মানুষ??” সে কোন কিছু চিন্তা করার আর প্রয়োজন বোধ করলো না, প্রথমে আমার নাক বরাবর একটা ঘুষি দিলো,তারপর জোরে একটা চিৎকার,তারপর আমাকে জোরে ধাক্কা মেরে ফেলে সোজা দৌড়।
আমার খালি ওকে একটা কথাই বলতে ইচ্ছা করছিলো, “ ভাইরে, ধর আমি জিনই হইলাম,তাই বলে আমারে এমনে মারবি” ?
(কথায় আছে লেবু বেশি চিপলে তিতা লাগে,তাই এখানেই আপাতত শেষ করে দিচ্ছি। আরও কিছু কাহিনী মাথায় ছিলো কিন্তু আর লিখতে ইচ্ছে করছে না,পরে কোন একদিন, এই বিষয়ে আরও লিখতে ইচ্ছে হলে লিখতেও পারি আবার নাও পারি )

৯৭১ বার দেখা হয়েছে

৬ টি মন্তব্য : “কলেজ লাইফের ভূত-রসাত্মক কাহিনী ৪”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
    “ ভাইরে, ধর আমি জিনই হইলাম,তাই বলে আমারে এমনে মারবি” ?

    :)) :)) :))
    বাট দুনিয়ায় কি আর কোন নাম ছিলো না???
    রাজীব???


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সিয়াম (০৬-১২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।