কলেজ লাইফের ভূত-রসাত্মক কাহিনী ২

আমাদের কলেজে সিনিয়রদের মজা করার একটা কমন ট্র্যাডিশন ছিলো প্রথমে ভুত-প্রেত অশরীরী আত্মার কাহিনি পিচ্চি পোলাপানের মাথায় শক্তভাবে গেঁথে দেওয়া এবং এরপর প্রাক্টিক্যালি ভয় দেখানো। তাই আমরা প্রায়ই রাতের বেলায় সাদা কাপড় পরা অশরীরীদের ব্লকে হাঁটতে দেখতাম,আমাদের জানালায় টোকা মারতে দেখতাম এবং ছাদে প্যারেডের ধুপধাপ আওয়াজ শুনতাম।এগুলো আসলে কারা করতো তখন বুঝতে পারি নাই।
যাইহোক, এরকম ঘটনা ঘটলে কি ক্লাস সেভেনের পোলাপান রাতে ঠিকমতো ঘুমাইতে পারে? আর এগুলার পিছনে রহস্য কি এত গবেষণা করার টাইম আছে? আর এমন বিষয় কারো কাছে সমাধান ও চাওয়া যায় না। তো একদিন যথারীতি রাতে ছাদে আওয়াজ হচ্ছিলো। আমিও ভয়ে অস্থির। তার উপর আমার বেড ছিল জানালার পাশে, তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম, নাহ এর একটা ব্যবস্থা নিতেই হবে। চার রুমমেট মিলে বৈঠক করলাম।ঠিক করলাম জানালার পাশের বেড দুইটা আমরা খালি রাখবো। মাঝখানের দুইটা বেডে ডাবলিং করে ঘুমাবো। এতে অন্তত ভয় কম লাগবে। এর পরে আবার মশারির সাইডে বেডসিট ঝুলিয়ে দিলাম যাতে কোন ভূত প্রেত বাইরে থেকে আমাদের ভয় দেখাতে না পারে। বৈঠকশেষে আমরা নিশ্চিন্তমনে ঘুমাতে গেলাম। আমি আর ‘অ’ এক বেডে আর ‘জ’ আর ‘র’ আরেক বেডে।
রাত আনুমানিক দুইটা। জানালায় প্রথমে মৃদু টোকা। পাত্তা দিলাম না। তারপর দরজায় ধাক্কা, সেটাও পাত্তা দিলাম না। এরপর প্রচণ্ড জোরে ধাক্কাধাক্কি আর চিল্লাচিল্লি। নিরুপায় হয়ে ভয়ে ভয়ে বেড থেকে নেমে দরজার কাছে গেলাম। দেখলাম ডিউটি মাস্টার স্যার, এএইচপি ও ডিউটি স্টাফ রুদ্রমূর্তিতে দাঁড়ানো। ভূত না আসল। আমরা চারজন রুমের বাইরে বের হয়ে এলাম। তিনজন তখন খেপে অগ্নিমূর্তি হয়ে গেছে। বুঝতেছিলাম না তাদের রাগের কারন। এ এইচ পি ভাই মুখ থেকে কামানের গোলা বের করা শুরু করলেন, “ স্যার, আমি এদের দেখতেছি, কি করতেছিলা তোমরা? ক্লাস সেভেনের এত্ত বড় সাহস?? সবগুলারে কলেজ আউট করা হবে। এখনি একবেডে পর্দা দিয়া………….”
তখন আমরা কেউই বুঝতে পারি নাই দুইটা ছেলে এক বেডে ঘুমাইলে কি এমন অপরাধ।ভয় পাওয়াটা কি অপরাধ? আর স্যারও এত খেপে আছেন কেন? অনেকক্ষণ ব্লকে পানিশমেন্ট খাওয়ার পর,ফ্রন্ট রোল, সাইড রোল,ফ্রগ জাম্প,ক্রলিং করার পর আমাদের এটুকু বোঝানো হইল যে আমাদের অপরাধ অনেক বিশাল কিন্তু অল্পের উপর দিয়ে পার পেয়ে গেছি। আমাদের ভাগ্য খুবই ভালো।
অনেকদিন পর বুঝতে পেরেছিলাম, আমাদের আসলে কি অপরাধে অভিযুক্ত করে পানিশমেন্ট দেয়া হয়েছিলো। (চলবে)

২,০৫১ বার দেখা হয়েছে

১৫ টি মন্তব্য : “কলেজ লাইফের ভূত-রসাত্মক কাহিনী ২”

  1. সামিউল(২০০৪-১০)

    লেখা পড়ে খুব মজা পাইলাম ভাই...... চালায়া যান।
    তয় ছোট মুখে একটা বড় কথা কই, মাইন্ড নিয়েন না............... 'র', 'অ' পড়লে গল্পের মজা থাকেনা। অন্য কোন নাম ব্যবহার করতে পারেন, যেমন কুবের, মন্তু ইত্যাদি...।


    ... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!

    জবাব দিন
  2. শাহরিয়ার (০৬-১২)

    আরেকজনের বেডে শুইয়া একবার "এটেম্পট টু গে" কেসে মামলা খাইছিলাম 🙁


    • জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব - শিখা (মুসলিম সাহিত্য সমাজ) •

    জবাব দিন
  3. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
    “ স্যার, আমি এদের দেখতেছি, কি করতেছিলা তোমরা? ক্লাস সেভেনের এত্ত বড় সাহস?? সবগুলারে কলেজ আউট করা হবে। এখনি একবেডে পর্দা দিয়া………….”

    :grr: :grr: :grr:


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মঞ্জুর (২০০২-২০০৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।