মনের চোখে

 

প্লাস্টিকের মলাটে বাঁধানো একটি খাতা । যদিও যত্নের কোন অভাব হয়নি তবু খাতাটির ধরণ-ধারণ দেখলে বোঝা যায় এর বয়স অনেক ।প্রায় ৩১-৩২ বছর তো হবেই । মনে মনে হিসেব করে আফসানা আহমেদ।  তার ১৩-১৪ বছর বয়স থেকে এটি তার সঙ্গী।আফসানার এক মামা থাকতেন লন্ডনে। প্রায়ই ভিউকার্ড পাঠাতেন তিনি । ইংল্যান্ডের দর্শনীয় সব জায়গার ছবিঅলা সুন্দর সুন্দর ভিউকার্ড। এই খাতার পাতায় পাতায় সেগুলো আঠা দিয়ে সেঁটে রাখতে রাখতে হয়ে গেল একটা স্ক্র্যাপবুক । বাবা কখনো কখনো পুরনো ইংরেজী ম্যাগাজিন কিনতেন । সেখানে কোন সুন্দর ছবি থাকলে সেটিও বাস্তুহারা হয়ে আফসানার স্ক্র্যাপবুকে ঠাঁই পেত। ধীরে ধীরে নেশা জমে উঠল ।পুরনো বই-পত্রের দোকানে কোন ম্যাগাজিনে ভাল ছবি পেলে দোকানীমামাকে কিছু বখশিশ দিয়ে সেই ছবিটা কেটে আনত ও । এমনিভাবে কেটে গেছে কৈশোরের  দুরন্তবেলা। যৌবনের প্রারম্ভে ছেদ পড়ল তাতে।বিয়ে-স্বামী-সংসার-মেয়ে সবকিছু সামাল দিতে গিয়ে স্ক্র্যাপবুকের নেশা কেটে গেল । চৈতন্য ফিরল।কৈশোরে ছবিগুলো সংগ্রহ করতে করতে বিশ্বভ্রমণের শখ হয়েছিল তার । সংগ্রহে ছিল নয়নাভিরাম টেমস নদী,কাশ্মীরের স্বর্গসমতুল পাহাড়ি উপত্যকা । ছিল ইরাকি মরুভূমিতে অস্তায়মান সূর্যের ইন্দ্রজাল। ছিল ফুলশোভিত মরূদ্যান কিংবা হাওয়াইয়ের গাঢ় নীল সমুদ্রতট আর ছায়াতরু।আরো কতশত  নাম না জানা সম্মোহনী জায়গার সব ছবি ছিল ।আফসানা জানত,তারা মধ্যবিত্ত,বিশ্বভ্রমণের স্বপ্ন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তবু একটা ক্ষীণ আশা ছিল,একটা দু’টো দেশ দেখা হতেই পারে-যখন লোকে বলে,প্রগাঢ়ভাবে কিছু চাইলে সেটা পূরণ হয় ! আফসানার বয়স এখন ৪৫ ছুঁইছুঁই। এখনো স্বপ্নের কণামাত্র পূরণ হল না ! আদৌ কি আর হবে। আর ক’বছর পর শরীরে বার্ধক্য ভর করবে। হাত-পায়ের জোর কমে যাবে। আর ধীরে ধীরে তার স্বপ্ন বরণ করবে স্বাভাবিক মৃত্যু। আফসানার স্বামী মারা গেছে সাত বছর আগে।স্বামীর মৃত্যুর পর একাকি দিনে ধীরে ধীরে স্ক্র্যাপবুকের ঘুমন্ত নেশা আবার জেগে উঠেছে।বিশ্বভ্রমণের নেশাটা  দাপাদাপি শুরু করেছে আবারও ।এসব ভাবতে ভাবতে ঘড়ির দিকে তাকায় আফসানা । দশটা। এখনো রাতের খাবার খাওয়া হয়নি।তরকারিগুলো গরম করতে করতে মেয়ের ঘরে উঁকি দেয় সে । মেয়ে মোবাইলের স্ক্রীনে কি যেন দেখছে আর হাসছে।ফেসবুক নিশ্চয়ই।ফেসবুকের খুব নেশা হয়েছে মেয়ের।একটু পরপর সেখানে ঢুঁ মেরে আসা চাই। নেশা তাড়াতে আফসানা একবার মোবাইল কেড়ে নিয়েছিল।ব্যস,মেয়ের নাওয়া-খাওয়া বন্ধ।বাধ্য হয়েই ফেরত দিতে হয়েছিল মোবাইল।

‘অর্পা,খেতে এসো।’

‘হুম্…আসছি।’

মা-মেয়ে খেতে বসে।কথা হয় খুব কমই। দুজনের দু’টো আলাদা জগৎ। একজন আরেকজনের জগতে অনাহূত।

খাওয়া সেরে থালাবাসন মেজে বিছানায় শুয়ে পড়ে আফসানা।ঘুম আসে না। এ পাশ আর ও পাশ। দিনের বেলা ভুলে থাকলেও রাতের বেলা মৃত স্বামীর কথা মনে পড়ে যায়।যদিও স্বামী তার অধিকাংশ শখই পূরণ করতে পারেনি,তবু তাকে নিয়ে কোন অভিযোগ নেই আফসানার। তিনি ছিলেন নির্বিবাদী,ঘরকুণো,মুখচোরা গোছের মানুষ।ভ্রমণ-ট্রমণের ব্যাপারে তেমন আগ্রহ ছিলনা। জীবনে উচ্চাকাঙ্ক্ষারও বড় অভাব ছিল।

আফসানা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।৩৮ বছর বয়সে স্বামীকে হারিয়েছে সে । এখনো জীবনের অনেকটাই বাকি পড়ে আছে। কিন্তু জীবনের কোন অর্থই খুঁজে পায়না আর। শৈশব-কৈশোরে জীবন সম্পর্কে কৌ্তূহল থাকে,অনেকরকম লক্ষ্য থাকে। কিন্তু তার জীবনে আর নতুন কি আছে । স্কুলের চাকরিটা চালিয়ে যাওয়া্‌, আর মেয়েটাকে মানুষ করা…মেয়েটার জীবনে তার কি কোন প্রয়োজন আছে ! মেয়ে এখন নিজের জীবনের স্বপ্নে বিভোর।মায়ের অনুপ্রবেশ সেখানে কাম্য নয়। এভাবে তার নিস্তরঙ্গ জীবন মৃত্যু পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া- যাতে নতুন কোন স্বাদ নেই,গন্ধ নেই। কেবল চর্বিতচর্বন।একসময় আফসানা টের পায় তার একাকিত্ব শুধু মনের নয়,শরীরেরও।শরীরজুড়ে হাহাকার।স্বামীসঙ্গের হাহাকার।

 

 

আফসানা যে স্কুলে চাকরি করে, সেখানে কন্সট্রাকশনের কাজ চলছে।একটা নতুন বিল্ডিং বসবে।প্রিন্সিপালের বন্ধু জাফর আলী সেটার আর্কিটেক্ট।তিনি মূলত একজন ফটোগ্রাফার,যদিও পড়াশুনা শুরু করেছিলেন আর্কিটেকচারে।কিন্তু ভবঘুরে স্বভাব আর ফটোগ্রাফির নেশায় পড়ে পড়ালেখা শেষ করতে পারেননি।তবু তার অন্যান্য আর্কিটেক্ট বন্ধুরা স্বীকার করেন তার ডিজাইনের হাত খুব ভাল,খুব কম আর্কিটেক্টই এমন সুন্দর ডিজাইন করতে পারেন।জাফর আলী আড্ডাবাজ মানুষ।প্রায়ই স্টাফ লাউঞ্জে আড্ডা দিতে আসেন।সেই সূত্রে তার তোলা ছবির সাথে পরিচয় হয় আফসানার।জাফর আলী অনেক দেশ ঘুরেছেন।আন্তর্জাতিক খ্যাতিও পেয়েছেন বেশ।বাংলাদেশের দুর্গম জায়গাগুলো তার নখদর্পনে।যেসব জায়গায় তিনি গিয়েছেন তার অধিকাংশই সাধারণ মানুষের অজানা।আফসানা তার তোলা প্রত্যেকটা ছবি সময় নিয়ে দেখে।একবার ছবির দিকে তাকায়,তারপর নিজেকে সেই জায়গায়টায় বসিয়ে দেয়।কখনো ঢাকা আর নরসিংদীর বাইরে পা না রাখা আফসানা এভাবে নিজেকে আবিষ্কার করে কেওক্রাডংয়ের চূড়ায়।কখনো সুন্দরবনে মৌ্যালদের মাঝে,কখনো আবার কখনো টোকিওতে চেরীফুলের রাজত্বে।ঘোরলাগা সব ছবি।জাফর আলী তার দেশ-বিদেশ ভ্রমণের কেচ্ছাকাহিনী বেশ নাটকীয় ভঙ্গিতে বলেন।শ্রোতাদের কাহিনীর ভেতরে ঢুকিয়ে ছাড়েন। আফসানা কখনো ব্যক্তিগতভাবে তার সাথে কথা বলে নি।কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ তার মনে হয় এই ভবঘুরে ভ্রমণপাগল মানুষটা তো তার জীবনসঙ্গী হতে পারত ! সে হত এই মানুষটার ছবি তোলার সঙ্গী।বনে-বাদাড়ে ঘুরে ঘুরে ছবি তুলত দু’জনে।এই ভাবনার পর প্রতিবারই নিজেকে ধিক্কার দেয় আফসানা-ছিঃ ! এত বড় মেয়ে আছে তার।চুলে পাক ধরছে কত বছর আগে।তার কি এখন কিশোরীদের মত  আবেগে ভাসা মানায় ! এখন আবার নতুন স্বপ্ন দেখা কেন ! সাময়িক মোহই বোধহয় এটা । বছর তিনেক আগে একবার এমন মোহের কবলে পরেছিল সে । তার স্বামীর এক সহকর্মী প্রায়ই আসতেন বাসায়।খোঁজ-খবর নিতেন।বন্ধুত্বপূর্ণ একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।আফসানা কিছুটা অনুরক্ত হয়ে উঠেছিল। তবে তা কেটে যেতেও সময় লাগেনি।

কিন্তু মানুষ তো স্বপ্ন ছাড়া বাঁচতে পারেনা।তাই আপাতত তার নিস্তরঙ্গ স্বপ্নহীন জীবনে জাফর আলী নাহয় এক খণ্ড স্বপ্ন হয়ে থাকুক।

 

 

আফসানা একটা সুদৃশ্য মাটির ব্যাংক কিনেছে।তার বয়সের পক্ষে মাটির ব্যাংকে পয়সা জমানো বেশ হাস্যকর।এ কাজটা সে করেছে তার ছেলেবেলাকে ভেবে,সে সময়ের আনন্দময় মুহূর্তগুলোকে আবার ফিরে পাবার ছেলেমানুষী আকাঙ্ক্ষা থেকে। একটা মাটির ব্যাংক ছিল তার । পুজোর মেলা থেকে কেনা।সিকি-আধুলি জমাত তাতে।ইচ্ছে ছিল এভাবে টাকা জমিয়ে লন্ডনে যাবে মামার কাছে  । টেমস নদী দেখবে।কে যেন চুরি করেছিল সাধের সেই মাটির ব্যাংক।এখন এই ব্যাংকটা কেনার পর টাকা জমাতে শুরু করেছে আবার ।২০ টাকা,৫০ টাকা কখনো আস্ত ১০০ টাকা । তার বাসা থেকে স্কুল রিক্সায় ত্রিশ টাকার পথ।আজকাল সেখান থেকে হেটেই ফিরছে সে। টাকা বাঁচাতে হবে।মাসের বাজার করবার সময় সবকিছু একটু কম কম করে কিনছে।টাকা বাঁচাতেই হবে।আফসানা হিসাব করে,প্রতিমাসে যদি ২৫০০ টাকা করে জমে,তবে বছর শেষে ত্রিশ হাজার টাকা জমে যাবে!ব্যাংকে তার স্বামীর জমানো টাকা আছে পনের লাখ।ত্রিশ হাজারের সাথে স্বামীর কিছু টাকা যোগ করে দিয়ে কি কোন দেশ থেকে ঘুরে আসা যায় না ?কিন্তু কে যাবে সাথে ? অর্পা ?

ছোটবেলার বান্ধবী কিরণকে ফোন দেয় আফসানা।কিরণও স্বামী হারিয়েছে বছর চারেক আগে। এ কথা ও কথার পর আফসানা আসল কথায় আসে।

‘কিরণ,তুই কখনো দেশের বাইরে গেছিস ?’

‘না রে ! সেই ভাগ্য কি ছিল!’

‘কিরণ তুই আমি দু’জনেই তো ঝাড়া হাত পা। চল না,দু’জনে কোন দেশ থেকে ঘুরে আসি।স্বামী মারা গেছে বলে কি আমাদের কোন সাধ-আহলাদ নেই !’

‘তোর মাথায় গণ্ডগোল হইছে নাকি ! কি বলিস!’

‘ আর সাত-আট মাসের মধ্যে আমার হাতে কিছু টাকা জমে যাবে।পৃথিবীটা তো দেখা হল না! ভাবছি কোন একটা দেশ থেকে ঘুরে আসি।ঢাকার ওয়েদার আর ভাল লাগে না।চেঞ্জ দরকার।’

‘তাহলে যা,তোর মেয়েকে নিয়ে ঘুরে আয়।’

‘ও হয়ত যাবে । কিন্তু বুঝিসই তো…ও তো ছোট মানুষ। সমবয়সী কেউ থাকলে…।’

‘না রে।আমি তো ভাবছি হজ্জে যাব এবার।বড় ভাইয়ের সাথে। তুইও হজ্জ্বটা করে আয়।তোর আমার জ়ীবনে আর কি আছে।এখন শুধু ছেলে-মেয়ের বিয়ে দেয়া আর আল্লাহ-আল্লাহ করে দিন কাটানো।তুইও যা।স্বামীর জন্য দোয়া করে আয়।’

 

 

কিরণের সাথে সেদিনের সেই কথোপকথনের পর আরও অনেক দিন চলে যায়।বিশ্বভ্রমণের বাসনার দাপাদাপি কমে।আফসানা টের পায় তার স্বপ্নগুলো পূরণের অযোগ্য ।কিছুদিন হাঁ-হুতাশ করে মনটাকে সে অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়।কোথায় যেন পড়েছিল সবসময় সবুজের সান্নিধ্যে থাকলে মন ভাল থাকে।বাড়িওয়ালার অনুমতি নিয়ে ছাদে একটা বাগান করেছে সে।কারো বাড়িতে নতুন কোন গাছে দেখলে তার একটা শেকড় বা ডাল সে নিয়ে আসবেই।আজকাল অন্যান্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারাও তার কাছ থেকে গাছের চারা নিয়ে যায়।সেই সূত্রে তাদের সাথে কিছুটা সখ্যতাও গড়ে উঠেছে।কেউ কেউ বাণিজ্যকভাবে নার্সারি করার পরামর্শও দিচ্ছে থাকে।

সেদিন ছাদে বসে সযতনে প্রিয় গাছগুলোর হলুদ পাতা সরিয়ে দিচ্ছিল আফসানা।দু’টো তরুণী হাসতে হাসতে ছাদে এল।আগে কখনো দেখেনি তাদের।হয়ত নতুন এসেছে।মেয়ে দুটো হাত ধরাধরি করে ঘুরে বেড়ায়।আফসানা ভাল করে লক্ষ্য করে দেখে একটা মেয়ে অন্ধ ! কিন্তু কি প্রাণোচ্ছল ! ওই মেয়ে দু’টো প্রায় প্রতিদিনই ছাদে আসে।ধীরে ধীরে আফসানার সাথে পরিচয় হয় তাদের।অন্ধ মেয়েটির নাম রোজা।জন্মান্ধ।পরিচয়ের পর ঘনিষ্ঠতা হতে দেরি হয় না । আফসানার গাছগুলো রোজা ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখে।ফুলের গন্ধ শোঁকে।হাতড়ে হাতড়ে গাছে পানি দেয়ার চেষ্টা করে। দু’জনের বয়সের পার্থক্য অনেক,কিন্তু তারা কেউই সেটা অনুভব করেনা।আফসানা রোজাকে বাসায় নিয়ে আসে একদিন।

‘রোজা,তুমি তো জন্ম থেকে চোখে দেখ না।তোমার কৌ্তূহল হয় না,আকাশ কেমন,নদী কেমন,আমার ফার্ন গাছটা,যেটা তুমি খুব পছন্দ কর সেটাই বা দেখতে কেমন ?’

‘আমি তো সবার মুখে ওসবের কথা শুনে শুনে একটা ছবি দাঁড় করিয়েছি।হয়ত আপনাদের সাথে সেটা একটুও মিলবে না।তবে,আমার কল্পনার ছবিগুলো বোধহয় বেশি সুন্দর।এই যে শুনতে পাই,পলিউশনের কারণে বুড়িগঙ্গা নদী একেবারে যাচ্ছেতাই হয়ে গেছে।কিন্তু আমার কল্পনার নদীগুলো আমার মর্জিমাফিক সুন্দর।’ মিষ্টি করে হাসে রোজা।

‘রোজা,আমার কাছে খুব সুন্দর সুন্দর কিছু ছবি আছে।বিচিত্র পৃথিবীর বিচিত্র কিছু ছবি।আমি খুব সুন্দর করে সেগুলোর বর্ণনা দিতে পারব কি না জানিনা।একবার চেষ্টা করে দেখি তোমাকে সেই জায়গাগুলোতে নিয়ে যাওয়া যায় কি না ।’

রোজাকে সামনে বসিয়ে আফসানা তার স্ক্র্যাপবুকের ছবিগুলোর বর্ণনা দেয়।তারপর নিজেও চোখ বোঁজে।ছবির জায়গাগুলো তাদের দু’জনেরই অজানা।তবু মনের চোখ ফুটিয়ে তারা সেখানে পৌঁছে যায়।

 

 

৭ টি মন্তব্য : “মনের চোখে”

মওন্তব্য করুন : আহমদ (৮৮-৯৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।