ICCLMM-2011:একটি অজানা ভালোলাগার গল্প(২য় পর্ব)

প্রতিযোগিতা থেকে বাসায় গিয়ে ধরলাম ঢাকার বাস। খোঁজ নিয়ে জেনেছি সে ঢাকায় থাকে। তাই অগত্যা কোন উপায় না দেখে আমার ছুটির শান্তি নষ্ট করে ছুতে গেলাম ঢাকা অভিমুখে। ঢাকায় থাকার অন্যান্য সহস্র সমস্যার মধ্যে প্রধান সমস্যা হল – ০১। সকালের অতি আদরের ঘুম বিসর্জন করা ও ০২। মিরপুর-১ থেকে ফার্মগেট গিয়ে পড়া। অবশ্য তাতেও রাজি শুধু যদি পূরণ হয় সে আশা যার জন্য এত জলাঞ্জলি, এত কষ্ট স্বীকার করা। বাসের অপেক্ষায় দাড়িয়ে অনেকক্ষণ।

মিরপুর-১ হতে ফার্মগেটের বাস ধরতে হবে। সকালে দেরীতে ঘুম থেকে উঠার বদভ্যাসটা যায়নি বলে আজ ৮.৩০ য়ের বিহঙ্গ পাবলিক বাসটা মিস করেছি। এখন ঘড়িতে বাজে ৯.১০। এতক্ষণে অর্ধেক রাস্তা চলে যাওয়া যেত। আরো ০৫ মিনিট। এই সময় এমনিতেই জায়গা পাওয়া যায় না। অফিস আওয়ার। রাস্তাতেও প্রচুর জ্যাম। তবে এই ০৫ মিনিটকে যেন অনাদিকালের অপেক্ষার প্রহর বলে মনে হচ্ছে। এত তাড়াহুড়োর প্রয়োজনীয়তাটা অবশ্য ভিন্ন। আজ এত সকালে ছুটছি শুধুই তার সে অপরূপ রূপ, আমার নেশার দ্রব্য ঐ গভীর কালো দুনয়ন একবার দেখার জন্য। ছুটিতে এসেছি প্রায় ০৩ দিন হল, আজ ০৩ দিন পর দেখা করার সুযোগ হল। মাঝের দিনগুলি ওর সম্পর্কে খোঁজ নিতেই কেটে গেছে। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই বাস এলো।

ছোটখাটো একটা কুরুক্ষেত্রের মহাযুদ্ধ শেষ করে বাসে স্থান পেলাম বটে তবে বসার উপায় নেই অগত্যা দাঁড়িয়েই শুরু হল “তাহারও পানে আমারও এই পথচলা”। গাড়ি চলছিল আর ভাবছিলাম তাকে দেখার শেষ দিনগুলোর কথা। আন্তঃ ক্যাডেট কলেজ সাহিত্য ও সংগীত প্রতিযোগিতা-২০১১, ওর সাথে দেখা করার জন্য করা পাগলামির কথা আগেই বলেছি। তবে সবচেয়ে নিগূঢ় এবং খাঁটি সত্যি কথা হল এতসব কিছুর সে কোন কিছুই জানেনা। আর এও জানিনা জানলে সে এগুলোকে কি ভাবে নেবে? তাকে জানাইনি ভয় ছিল, শুধু পাশ থেকে ভালোলাগাকে ভালোবাসায় রূপান্তরিত হতে দেখেছি। এসব ভাবতে ভাবতেই আসাদগেট স্টপেজে এসে সীট পেলাম বসার। আমার ঝিমুনি তখন থামেনি। কোনমতে ঝিমোতে ঝিমোতে এসে উপস্থিত হলাম তার কোচিংয়ের সামনে। সেখানে ক্লাস ১০টায়।

দেখা করার বলতে শুধু তাকে কোচিংয়ের দরজা দিয়ে ঢুকতে দেখা আর ঘণ্টা খানেক বাদে বেরিয়ে যেতে দেখা। কারণ আগেই বলেছি যে আমি খোঁজ নিয়ে এসেছি সে কথায় পরে। এতক্ষণে অবশ্য ৯.৪৫ বাজা সাড়া এবং মোটামুটি না পুরোপুরি সুনিশ্চিত আজ আর তাকে প্রথম বেলায় দেখা হচ্ছে না। আর এখন হাতে শুধু দ্বিতীয় সুযোগটাই বাকি রইল। তাই ব্যর্থ মনোরথেই আজকের সকল পরিশ্রমের অর্ধেকটা নষ্ট হওয়ার কষ্ট নিয়ে ফিরে যেতে হবে। এই ভেবে যেই না উল্টো ঘুরেছি, দেখি একটা রিকসা থামল কোচিংয়ের সামনে। আর রিকসার আরোহী আর কেউ নয় আমারই ভালোবাসার মানুষ(যদিও এক পক্ষীয়)। লালের উপর কালো ছিটের ছাটের কাপড়ে তৈরি সালোয়ার কামিজ। ডান কাঁধে ঝোলানো কালো বইয়ের ব্যাগ। আর চোখে চিরচেনা রিমলেস কালো ডাঁটের চশমা। চোখে তাড়াহুড়োর ভাব স্পষ্টতই ফুটে উঠেছে। হুরমুর করে রিকসা থেকে নামলো (প্রায় লাফিয়েই বলা চলে)। তাকে নামতে দেখে পাশে থাকা ল্যাম্পপোস্টের আড়ালে সরে এলাম।

চোখ ফিরিয়েই দেখি কি নিয়ে জানিনা তার মুখটা পাংশুবর্ণ ধারণ করেছে।এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করব কিনা সেই সিদ্ধান্তে উপনীত হবার জোর চেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু কেন জানিনা সাহসে কুলোচ্ছেনা। যাই হোক সব শেষে কিছুটা সাহস সঞ্চার করে এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করলাম-“ এক্সকিউজ মি মিস। কোন সমস্যা”? রিমলেস চশমার কোনা দিয়ে অপাঙ্গে তাকিয়ে বলল-“সরি আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না?” আমি বললাম-“মুখ দেখে মনে হল সমস্যায় পড়েছেন, তাই সাহায্য করতে চাইলাম। মানুষের বিপদে আপদে সাহায্য করতে যে আমাকে পরিচিতি সনদ নিয়ে আসতে হবে তা জানা ছিল না। জানলে অবশ্যই নিয়ে আসতাম।” আমার কথায় বিব্রতবোধ করলো। আর তা কাটিয়ে উঠতে একটু হাসতে চাইলো। কিন্তু তার হাসিতে বিব্রত হওয়ার ভাবটার পুরোটাই বোঝা গেল। তারপর বলল- “না, মানে আসলে তা নয়। আপনার ফেইসটা চেনাচেনা লাগলো কিনা তাই বললাম। একটা প্রশ্নের উত্তর দিবেন আপনি কি ক্যাডেট?” এবার আমি হেসে বললাম- “আচ্ছা ক্যাডেট হলেই আমার সুবিধা কি? আর না হলেই বা অসুবিধাটা কোথায়?” বিব্রত হবার ভাবটা ধরে রেখেই বলল-“না মানে আপনার মত কাউকে হয়তো দেখেছিলাম আগেই বলেছি তাই। আর সমস্যা হল খুচরা নেই। রিকসা ভাড়া ২৫ টাকা, আছে ৫০ টাকার নোট কিন্তু রিকসায়ালার কাছে ০৫ টাকার ভাংতি নেই।” বললাম- “ঠিক আছে, আমি দিয়ে দিচ্ছি।” সে তাড়াতাড়ি করে বলে উঠলো-“আরে না আপনি দিবেন কেন? পারলে ভাংতি করে দিন।” আমি বললাম-“ আমার কাছেও ভাংতি নেই তবে একটা ০৫ টাকার কয়েন আছে। আর তাছাড়া সমস্যা কোথায়? আমি নিজেও তো ক্যাডেট আর আমাকেই দেখেছিলে এলএমএময়ের সময়। এখন তো আর কোন সমস্যা নেই, তাইনা?”

তার যেন দ্বিধা কাটছেনা।, যেন আমার কথা তার বিশ্বাস হচ্ছে না, বলল- “তাই নাকি? আপনি আমাকে চেনেন তার মানে? এলএমএময়ে ছিলেন নাহ! বলুনতো আমি কোন কলেজ আর আমার ইভেন্ট কি ছিল?” মানিব্যাগ থেকে টাকাটা বের করে রিকসায়ালাকে দিয়ে বললাম-“ নাদিয়া, ১০টা বেজে ০৫ মিনিট। তুমি এমনিতেই ০৫ মিনিট লেট, যাও তাড়াতাড়ি করো।” বলেই আমি উল্টো ঘুরে আমার মত হাটা ধরলাম, একবারের জন্য পিছে ফিরে তাকিয়ে দেখি হতবাক, বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে আছে আমার চলা পথের দিকে, সে চোখে লুকানো সহস্র প্রশ্ন। আমি তাড়াতাড়ি চোখ ফিরিয়ে নিলাম কারণ চাইনা তার কোন প্রশ্নের জবাব দিতে। যদিও মন চাইছিল ফিরে যাই, শুনে আসি কি বলতে চায়। তবে তৎক্ষণাৎ মনকে বোঝালাম-“আরে অবুঝ মন, আজকের জন্য এইতো অনেক। বাকিটা না হয় অন্য আরেকদিন হবে। কিছু সুন্দর সময় অনাগত ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চিত থাক।”

ছুটির প্রথম দিনের ঐ ঘটনার পর মনে হচ্ছিলো পুরো ছুটিটাই অসাধারণ। একে তো কুরবানির ঈদের ছুটি, খুবই অল্পদিনের তাই তার মাত্র তৃতীয় দিনের মাথায় এতো কিছু পাওয়া। এরপর থেকে প্রতিদিন শ্রেণীতে হাজিরা দেয়ার মতো গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম তার কোচিংয়ের সামনে। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সে ঐ কয়টি দিন তার কোচিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকত। হয়তো কারো জন্য অপেক্ষা করত।

আমি যদিও দূর থেকে দেখেই ক্ষান্ত থাকতাম, কখনো সামনে যাওয়ার সাহসও করিনি। এভাবেই কোচিংয়ে ক্লাস শুরুর ০৫ মিনিট আগ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকে পরে সে ভিতরে ঢুকত। এই দাঁড়িয়ে থাকা সময়টুকু তার গভীর কালো চোখ দু’টি চারিদিক যেন এফোঁড় ওফোঁড় করে ফেলত। খড়ের গাদায় সুঁই খোঁজা আর লোকে লোকারণ্য এ ফার্মগেটের চত্বরে কাউকে খোঁজা একি কথা। তবে কেন জানিনা তার চোখে কোন ক্লান্তির ছাপ দেখতে পাইনি। শুধুই শেষবেলায় আরো একটা দিন নিরাশ হওয়ার মুখখানি দেখা ছাড়া।

কখনো কখনো মনে হতো আমাকেই খুঁজছে। পরে মনকে বুঝ দিতাম, যদিও তা অনেক কঠিন ছিল। মনকে বলতাম- “ ভালোবাসা দূরত্বের সমানুপাতিক, LOVE ∞ DISTANCE.” দূরত্ব যত বজায় থাকে ভালোবাসার টানও তত বাড়ে। যেন আকাশের চাঁদের মতো, চোখে দেখেও কাছে পাওয়া যায়না তবুও চাঁদের প্রতি ভালোবাসা কমেনা বৈ কি আরো বাড়ে। এই কথাগুলো শুধুই আমার জন্য প্রযোজ্য। তবে তার ক্ষেত্রে ঠিক কি হবে আমার জানা নেই। এভাবে পাঁচদিন কাটলো। ষষ্ঠ দিনে অনেক সাহস নিয়ে ওর সামনে দিয়ে এমন ভাবে হেটে যাচ্ছিলাম, যেন খুব ব্যস্ত আর তাড়াহুড়োর মধ্যে আছি তাই কাউকে খেয়ালই করছিনা পথে। তখন সে আমাকে পিছন থেকে ডাকলো- “হেই, ক্যাডেট ভাইয়া, ব্ল্যাক টি-শার্ট।” তখন আমার গায়ে ছিলো টমস টেইলরের কালো টি শার্ট আর সাধারণ ধূসর একটা জিনস, কাঁধে ইভাস পাওয়ারের ব্যাগে পাঠ্য বই। এমনভাবে থমকে দাঁড়ালাম যেন কিছু একটা শুনতে পেয়েছি, আমাকে থামতে দেখে নিজেই দু কদম এগিয়ে এলো, বলল- হ্যাঁ ভাইয়া আপনিই।

মুখের ভাবটা ওহ আচ্ছা চিনতে পেরেছি ভাব করে বললাম – হাই, কি খবর? কেমন আছো? মুখে একটা প্রশান্তির হাসি একে বলল – ভালো, যাক অবশেষে আপনার দেখা মিলল। এখানেই পড়েন অথচ দেখাই পাওয়া যায়না, ছয়দিন লাগলো আপনাকে খুঁজতে। মুখে অবাক হবার ভঙ্গিমা আর মনে ধিন তা না না করতে করতে বললাম – আমাকে খুঁজছিলে? কেন? কোন দরকার? সে বলল – আরে না, দরকার কি? আপনার টাকাটা দিতে হবেনা। আমি ভুলে গেছি এমন একটা ভাব নিয়ে বললাম -ও আচ্ছা, কত টাকা যেন। সে বলল – ২৫ টাকা। এই নিন বলেই ওর হাতটা এগিয়ে দিলো। আমি আমার হাতটা পকেটে ভরে বললাম – তা কতদিন হল? একটু ভ্যাবাচেকা খাওয়ার মতো অবস্থায় বলল – আজ ধরে ৬ দিন কেন? আমি বললাম – ৬দিন পর সুদ বাদে শুধু আসলটা ফেরত দেয়া হচ্ছে না? ও আমার কোথায় হেসে ফেললো বলল – ছি! আপনি সুদ নেন। তা কত দিতে হবে বলি, সাহায্য নিয়েছি যখন ঋণ তো শোধ করতেই হবে । আমি বললাম – না আর কারো বেলায় নিতাম না, কিন্তু এখন যদি আমি টাকাটা নিয়ে চলে যাই বাকি সময়টুকু তোমাকে এখানে একা দাঁড়িয়ে কাটাতে হবে। তারচেয়ে কি এটাই ভালো না, আমার পাওনা টাকা আর সুদের টাকা মিলে দুজনের জন্য দুকাপ কফি নিয়ে বাকি সময়টা পার করে দেয়া। এমনিতেও আমার কোন কাজ নেই। যদি তোমার সমস্যা না থাকে শুধু তাহলেই। আর সামনে থাকা কফি শপটাও আকর্ষণ করছে। অনেকদিন কফি শপে কফিও খাওয়া হয়না। তাই যদি তুমি রাজি থাক সময়টা আশা করি মন্দ যাবেনা। তো তোমার কি সিদ্ধান্ত? একলা দাঁড়িয়ে থাকবে না আমার পিছে পিছে আসবে? সে একগাল হেসে উঠলো। মুক্তোর মালা কেটে গেলে যেভাবে চারিদিকে ছড়িয়ে পরে, তেমনি করে ঝলমল করে উঠলো তার মুক্তোর মতো সাদা দাঁতগুলো, ঐ অপূর্ব সুন্দর চেরি ফলের মতো লাল টুকটুকে ঠোঁটের ফাঁক মেলে। তারপর বলল – তা আপনার যখন এই ইচ্ছে আর আমাকেও আমার ধার শোধ করতে হবে আর কোন পথ তো খোলা রাখেননি আমার জন্য। তবে তার আগে আপনার নাম জানতে চাই। বললাম – নাম দিয়ে কি হবে বল? নাম জানলে, জানতে ইচ্ছে করবে মানুষটা কেমন ? তারপর শুরু হবে ভালোমন্দের যাচাই বাছাই। ভালো না খারাপ, ভদ্র না অভদ্র? তখন আবার প্রশ্ন জাগবে মেশা ঠিক হচ্ছে কিনা? আর একগাদা ফ্যাসাদ। কি দরকার বোলো এতো ঝামেলা করার? জীবনে কিছু কিছু কাজ Just করে ফেলতে হয়। তার ফলাফল কি হবে তা নিয়ে না ভেবে। তবে এরপরও যদি জানতে চাও হাতে এখনো ২৮ মিনিট সময় আছে। অনেক সময় একজনের নাম ঠিকানা জানার জন্য। – আপনি অনেক গুছিয়ে কথা বলেন কিন্তু একটা কথা কি নাম জানার জন্য হয়তো ২৮ মিনিট অনেক বেশি কিন্তু কারো সাথে বসে ২৮ মিনিট পার করার জন্যও একটা পরিচয় লাগে। আমি বললাম – আমাদের সবচেয়ে বর পরিচয় কি আমরাই নই, তুমি আর আমি। তুমি একজন ক্যাডেট আমিও একজন ক্যাডেট এর চেয়ে বেশি মনে হয় এখন আর না হলেও চলবে ওটা বাকি ২৭ মিনিটের জন্য রাখা যেতে পারে।

তারপর হার মেনে বলল – আপনার সাথে কথায় পারবোনা, চলুন যাওয়া যাক। দু’জনে হেটে রাস্তার ওপারে থাকা কফি শপটায় গিয়ে বসলাম। অর্ডার দিয়ে এসে বললাম- গান তো ভালোই গাও শুধু দমটা ধরে রাখতে পারলেই নির্ঘাৎ ১ম পুরষ্কার। হেসে উঠে বলল – ধন্যবাদ আমার এতো তারিফ করার জন্য মনে হচ্ছে আমার একজন ফ্যান হয়ে গেছে মন্দ না। তা আপনি কোন ইভেন্টে যেন ছিলেন? বললাম- ভুলে গেছ যখন তখন আর মনে করে কি হবে, মনে করলেই ব্রেইনের কিছুটা জায়গা খরচ হবে। অযথা একটা বিষয় মনে করে মূল্যবান মস্তিষ্কের জায়গা নষ্ট করার দরকার নাই। কিছুটা বিরক্তই বোধ করলো আমার সস্তা কৌতুকে, তারপর বলল – তা না বললে জোর করবোনা, কিন্তু আপনি আমার নাম, কোচিংয়ের সময় এইগুলো কি করে জানলেন? আমি হেসে বললাম – সত্যি বলব না মিথ্যে…। সে বলল – অবশ্যই সত্যি। আমি বললাম- ঠিক আছে দুইটাই শোনো, মিথ্যেটা হল

স্বপনে দুই পরী এসে পাড়লো

আরেক পরীর গল্প সেইখানেই

কান পেতে শুনেছিলাম

কি যেন অল্প স্বল্প।

ব্যস তাই দেখতে এলাম,

বাস্তবতা কি সত্য নাকি অন্য।

বলে ওর দিকে তাকালাম ঠিক কি বলবে ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলনা। তা দেখে বললাম – সিরিয়াস হওয়ার কিছুই নেই, ICC তে আধুনিক গানের সময় চেহারা চিনেছি, আর দেশাত্মবোধকের সময় নাম। এতো গেলো নাম আর তোমাকে চেনার ব্যাপার। আর বাকি প্রশ্নের উত্তর হলো, তখন ১০ টা বাজছিলো আর তোমার তাড়াহুড়ো করা দেখে মনে হল তুমি ১০টার ব্যাচের, ব্যস ২ x ২ = ৪ বানিয়ে ফেললাম। এইতো। এইভাবেই প্রশ্ন উত্তর, পাল্টা প্রশ্ন পাল্টা উত্তরে কেটে যাচ্ছিলো সময়। ঘড়িতে চোখ পড়তেই দেখি আর ১০ মিনিট বাকি ১০টা বাজতে। শেষ প্রশ্ন করে টার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আর অপেক্ষা না করে উঠে এলাম, জানিনা সে কতক্ষণ সেখানে বসে ছিল কিংবা আদৌ ছিল কিনা। তাকে বললাম – ছয়দিন ধরে আমার জন্য অপেক্ষা একবার যদি মন থেকে চাইতে বা ডাকতে পারতে তো এতো অপেক্ষা করতে হতোনা। পিছন থেকে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলো – আপনি দেখেছেন? না আপনি জানতেন আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, তাহলে সামনে এলেন না কেন? তার দিকে মুখ ফিরিয়ে বললাম – মনকে অনেক বুঝিয়েছি “ভালোবাসা দূরত্বের সমানুপাতিক” কিন্তু আজ আর মন কিছুতেই মানতে চাইলো না, তাই……। সে যাক গে যাও, আজ আর দেরী করোনা। ক্লাস শুরু হয়ে যাবে টাইমস আপ। গত সপ্তাহেই দেরি করেছ আজ আবার বাসায় ফোন গেলে কিন্তু বিপদ হবে, ভালো থেকো আর অগ্রীম ঈদ মোবারক। যখন বেরিয়ে এলাম সে হতভম্বের মতো বিস্ময় মেশানো চোখে চেয়েছিল, কিছুটা অবাক কিছুটা কিংকর্তব্যবিমূঢ়। বিনিময়ে শুধুই মুচকি হেসে চলে এলেও তার ঐ অবাক চাহনিতে আর একবার আমার মনটাকে ঘায়েল হতে দেখলাম।

২,৫৫৮ বার দেখা হয়েছে

৯ টি মন্তব্য : “ICCLMM-2011:একটি অজানা ভালোলাগার গল্প(২য় পর্ব)”

মওন্তব্য করুন : আহমদ (৮৮-৯৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।