প্রেম নয়

চাকুরী জীবনের শুরুর দিকে বেশ কয়েকটা দিন আমার কেটেছে শিলছড়ি নামের একটা প্রত্যন্ত ক্যাম্পে। শিলছড়ির আকাশ ছোয়া পাহাড়,বহুরুপী পাহাড়ী ছড়া ,একদল সহজ সরল মানুষ, একটা ছোট্ট বাজার তাতে দিনমান নাপ্পির গন্ধ, দেবযানী, কৈশল্য আর রঙহীন গোধূলিতে করতালের শব্দে মাতাল চিয়ানজলের সুর—এইটুকু নিয়েই আমার পাহাড় বিলাস।সেইদিনগুলি বড্ড অন্য রকম ছিলো। মনের ভেতর তখন ফেলে আসা সমতলে লাজুক কিশোরীর আধো আধো প্রেম, খাতার ভেতর লম্বা চিঠির দীর্ঘ শব্দমালা, চোখ ভরতি রঙ্গিন স্বপ্ন ।কত কত সুন্দর তখন ঘিরে ছিল আমাকে অহরনিষ। ভাবনায় বুদ হয়ে শব্দের জাল বোনা আর ঘন কালো বৈচিত্র্যহীন পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে নিত্য নতুন সুন্দরে ডুবে যাওয়া। তখনো ছোয়া হয়নি সেই আধো বলা কিশোরীর লাজুক অধর, ভাবনা তখন কেবলি রঙ্গিন,মুগ্ধ কল্পনা তখন কেবল ঐ আপাত দৃশ্যমান লক্ষ্যের দিকেই ছুটে চলে, কুমিরের শিয়ালের বাচ্চা দেখানোর গল্পের মতই আমার সব ভাবনা তখন কিশোরীতে আর আরো নিশ্চিত করে বললে কিশোরীর অধরে গিয়ে শেষ হয়। ক্যাম্পের বারান্দায় বসে দিনভর বিড়ি ফুকি আর নিচের বাজারে হঠাৎ আসা দু একজন পাহাড়ির পথচলা দেখি।পাহাড়ের পায়ে ঘর বাধা কৈশল্যকে দেখি দিনমান মহুয়া মাতাল হয়ে পড়ে থাকতে আর দেখি দুখিনী দেবযানীর প্রতিনিয়তের জীবন যুদ্ধ। সত্যি করে জানিও না কার কি নাম। শুধু প্রতিদিনের অভ্যস্ত চোখে ভাবনার সুবিধা নিতে নিজের মনেই ওদের এই কল্পিত নামকরণ।সন্ধ্যারাতে মহুয়ার সাথে চিয়ানজলের মোহময় সুর,হয়ত কিছুই নয়, তবু ঐ অন্যরকম অন্ধকারে সেই সুর যেন বহুদুর——- বহুদুর—- নিয়ে যেতে চায়।বুদ্ধদেব আর সমরেশ পড়ে ততদিনে মহুয়া আমার গোপন ফ্যান্টাসী, একলা পাহাড়ে বেশ অনেকটা করতিত্ত নিয়ে নিজেকে বুদ্ধদেবের রাজরষি ভেবে নিতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি আমার। ঋতি আর রাজরষির দেখা হওয়া বিকেলে শ্যাম্পেনে বুদবুদ ওঠা আর অন্য আলোয় ঋতি দেখা নিয়ে ভাবতে কতবার যে অদ্ভুত ভাল লেগেছে, আজ মনেও নেই।আমি আর সেই আধো বলা কিশোরীতো ঠিকই করে ফেলেছিলাম জীবনে একবার হলেও শ্যাম্পেন চেখে দেখব, হয়ে ওঠেনি। দুঃখ নেই। ভাবনার সেই রংগিন সময়ে যা হবে ভেবে শিহরিত সুন্দর সময় কাটিয়েছি তা হয়নি ভেবে আজ একটু খানি বিষাদ যদি চলেও আসে সুন্দর সময়টার তাতে কিই বা এসে যায়?

১,৫৫২ বার দেখা হয়েছে

২৬ টি মন্তব্য : “প্রেম নয়”

  1. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    ভাই দারুণ। পুরা পাঙ্খা হয়া গেলাম আপনার লেখার।
    সহজ অথচ ছান্দিক এবং কিছুটা কাব্যিক। লেখা পড়তে পড়তে পাহাড়ের নিচে বসবাসকারী কারিনীদের দেখতে পেলাম এমন বোধ এনে দিলেন।
    চলতে থাকুক এমন লেখা।

    জবাব দিন
  2. শাহরিয়ার (২০০৪-২০১০)

    পাহাড়!!!সদ্য কৈশোরের অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল.... রোমান্স না...এডভেঞ্চার ছিল...বুনো ঘ্রাণ...আলোছায়ার খেলা...পথ হারানো...অনেক অনেক রহস্য!...

    লেখা চ্রম হইসে ভাইয়া... :just: :hatsoff:


    People sleep peaceably in their beds at night only because rough men stand ready to do violence on their behalf.

    জবাব দিন
  3. রিয়াজ (৯৮-০৪)

    রেশাদ ভাই,ভাল হয়েছে।আমার চাকরি জীবনের শুরুও পাহাড়ে,those scenes are amazing


    জানি সত্য নয়,শুধু কল্পনায়...ইচ্ছের ঘুড়ি আমরা ওড়াই...স্বপ্ন গুলো সত্যি হবে তারি অপেক্ষায়

    জবাব দিন
  4. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)

    রেশাদ, আমি তোর একটা লেখা পইড়াই পুরা পাংখা হয়া গেসি...

    শিলছড়ির আকাশ ছোয়া পাহাড়,বহুরুপী পাহাড়ী ছড়া ,একদল সহজ সরল মানুষ, একটা ছোট্ট বাজার তাতে দিনমান নাপ্পির গন্ধ, দেবযানী, কৈশল্য আর রঙহীন গোধূলিতে করতালের শব্দে মাতাল চিয়ানজলের সুর—এইটুকু নিয়েই আমার পাহাড় বিলাস

    জাস্ট, উরাধুরা!
    আমার চোখের সামনে পাহাড়...


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রেশাদ (১৯৯৩ -৯৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।