“এই তো সেদিন”

২০ মে ১৯৯৩। এখন থেকে প্রায় ১৭ বছর আগের একটা সাধারণ দিন, পড়ন্ত বিকেলে অজানা সময় আর নতুনের শিহরন নিয়ে পা রেখেছিলাম বরিশাল ক্যাডেট কলেজের শক্ত জমিনে।তারপর,তারপর একে একে কেটে গেছে আরও ১৭ বছর।ছয় বছরের ক্যাডেট জীবন, দু’বছর বি এম এ আর তারপর এই আর্মি, আজ ত্রিশের ঘরে পৌঁছে সেই দিন টির দিকে ফিরে তাকালে কেবলই মনে হয় “এই তো সেদিন”।এক জীবনের অর্ধেক টা সময়ের ও আগের কোন একটা দিন কেন যে আজও “এই তো সেদিন” রয়ে গেল জানিনা। হয়তো সেইদিনটার সাথে এক সুতোয় গাথা পরের ছয়টা বছর অমন ছয়টা বছর ছিল বলেই,হয়তো সেদিনই পাওয়া ৫৪ টা নতুন বন্ধুরা চিরনতুন আর চিরকালীন হয়ে গেছে বলেই,কিম্বা হয়তো একজীবনে নিজের সাথে ক্যাডেট শব্দটাকে জড়িয়ে নেয়ার দিন বলেই সেই আটপৌড়ে সাধারণ দিনটা আজো “এই তো সেদিন” রয়ে গেছে। আমার, তোমার, আমাদের সবার কাছেই একটা চিরকালীন “এই তো সেদিন” আছে বলেই আমরা সবাই একটু অন্য রকম। সেই দিনটা আমাকে দিয়েছে অনেক,৫৪ টা বন্ধু, আগের পরের আর শ’ছয়েক প্রিয় মুখ, তীব্র কৈশোরের উদ্দাম আবেগ,মিশ্র স্বাদের ছয়টা সোনালী বছর,পায়ের নিচে শক্ত জমিন আর অদ্ভুত এক আত্মবিশ্বাস। সেদিন আর পরের দিনগুলোতে একটু একটু করে আমি আর আমরা বুঝতে শিখেছি চাইলেই এই পৃথিবীটা আর আমাদের হারিয়ে দিতে পারবে না, শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার কিম্বা নিজের মত করে গড়ে নেবার সাধ্যটুকু আমাদের আছে। সত্যি করে বলি, ক্যাডেট কলেজের ছয়টা বছরের কেবল অল্প কটা মাস ছাড়া আর কখনই অপ্রিয় লাগেনি আমার।আর ঐ অল্পকটা মাসও যে আমার অপ্রিয় ছিল তা নয়, ক্লাস নাইনের মাঝ থেকে টেনের শুরু- এই কটা মাস কেবল।এই সময়টায় রোজ আমি ছোট্ট একটা ব্যাগ গুছিয়ে রাখতাম যেকোনো সময় হারিয়ে যাওয়ার জন্য। এর পেছনে কলেজ কিম্বা আমার কোন দায় আজো আমি মেনে নিতে রাজী নই। সব দায় সেই সময়ের শাহরিয়ার কবির, সুনীল অথবা সমরেশের।হারিয়ে যাওয়ার ঠিকানা, হাত বাড়ালেই বন্ধু, আর নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড় পড়ে আমার তখন কেবলই হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করতো, উদাস দুপুর গুলোয় তখন শূন্যতার খা খা রোদ আর মনের ভেতর দ্রিম দ্রিম হাতুড়ির ভোতা আওয়াজ। কেবলই মনে হতো নেলী কিম্বা সোনিয়ার মত কোন এক অদ্ভুত কিশোরীর হাতে এক কুয়াশার ভোরে একটা শিশির মাখা লাল গোলাপ তুলে দিতে।যার কথায় শব্দ নয় , হবে বুকের ভেতর নরম রক্তক্ষরণ। কখনো কখনো নকশাল হয়ে যেতে ইচ্ছে করতো, কখনো মনে হতো হারিয়ে যাওয়া মানেই বুঝি অপার মুক্তি। যাই হোক—- হয়ে ওঠেনি, আমার প্রতিদিনের গোছানো ব্যাগটা গোছানোই থেকে গেছে,আমিও থেকে গেছি বিসিসির চার দেয়ালের গণ্ডীতেই।তবুও তার পরের দিনগুলোতে আর কখনো মনে হয়নি, পালাতে হবে।কলেজ জীবনের কথা নিয়ে লেখার সাধ্য আমার নেই, অজস্র ভালো লাগা, অনেক অনেক আনন্দ আর উচ্ছলতার রেণু মাখা সময়ের কথা লিখতে যেসব যোগ্যতার দরকার হয় তার কোনটাই আমার নেই বলে সে চেষ্টাই আমি করব না। আর সত্যি বলতে কি কলেজ জীবন নিয়ে লেখার মত এত অসামান্য সব লেখক এখানে আছে যে ওপথ না মাড়ানোই ভাল।সিসিবিতে বসে পড়তে পড়তে আমি শুধু ভাবি ,নুপুরদা, ফয়েজ ভাই, তাইফুর ভাই ,জিতু ,মাসরুফ, জুনায়েদ জিহাদ রা যদি এমন করে লিখতে পারে তাহলে আর কারো পারার দরকারই বা কি? আর তখনি মনে হয় আমার এই না পারাটা আসলে কোন ব্যাপারই না। অমন করে লিখতে বা বলতে না পারলেও ঠিক ওদের মত করেই আমি তো ওদের কথাগুলো বুঝতে পারি। ব্যাস, এতেই চলবে আমার।
আবারো সেই দিনটাতে ফিরে আসা। আসলে এই উপলব্ধির অনুভূতিটাও তো সেদিনেরই সৃষ্টি।কি অদ্ভুত একটা সাধারণ বিকেল, এক মুঠো রোদ্দুর মাখা সেই অলস বিকেলটাই আমাদের মতো কতোগুলো কিশোর কিশোরীকে টেনে নিলো একটা সোনাঝড়া সময়ের গহ্বরে। সেই বিকেলটাই ছয়টা বছর ধরে নেড়েচেড়ে বদলের গুড়ো মেখে একদিন উগড়ে দিলো আমাদের। কিন্তু ততদিনে———————

১,১৫৯ বার দেখা হয়েছে

১১ টি মন্তব্য : ““এই তো সেদিন””

  1. সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)
    কলেজ জীবনের কথা নিয়ে লেখার সাধ্য আমার নেই, অজস্র ভালো লাগা, অনেক অনেক আনন্দ আর উচ্ছলতার রেণু মাখা সময়ের কথা লিখতে যেসব যোগ্যতার দরকার হয় তার কোনটাই আমার নেই বলে সে চেষ্টাই আমি করব না।

    ঢং ঢাং একটু কম কর 😡


    You cannot hangout with negative people and expect a positive life.

    জবাব দিন
  2. তানভীর (98-04)

    আমি সবসময় আনন্দে থাকার চেষ্ঠা করি...what ever happens dosen't matter ,it'll get better soon. এই শিক্ষাটা আমি কলেজ থেকে পেয়েছি।
    কিন্তু আপনার লিখা পড়ে কোনভাবেই মনটা ভাল করতে পারছি না... এই রকম লিখা তবুও কেন জানি পড়তে ইচ্ছা করে...

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রেশাদ (১৯৯৩ -৯৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।