হ্যালো, স্লামলিকুম! দৈনিক উন্মাদ থেকে বলছিলাম।

Prank – শব্দটির সাথে পরিচয় ছিলোনা সে সময়। কিন্তু এর পিছনে সময় না দেওয়াটা অসম্ভব একটা ব্যাপার ছিলো। কিন্তূু আমি ছিলাম নেহাতেই চুনোপুটি। এ লাইনে পি এইচ ডি করা বড় বড় ওস্তাদ লোকজনের অভাব ছিলোনা। এরকম একজন ছিলো মোতাকাব্বের ওরফে মোবারক।

উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষার রেজাল্ট দিছে সেদিন। পরিক্ষায় সেই রকম ডাইল মারছি। উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পরিক্ষার নম্বরের পার্থক্য হোলো ১৭২ নম্বর। সূতরাং ১ ঘন্টার মধ্যে বাপের প্যাদানির ভয়ে এক বস্ত্রে বাসা ছাড়লাম। পকেটে মনে হয় ১২ বা ১৩ টাকা ছিলো। নতুন নতুন বিড়ি খাবার অভ্যাস হইছে ঐ বয়সে। পাচটা বিড়ি কিনা ফেললাম।
কই যাওয়া যায়?কই যাওয়া যায়? কাফরুল যাই, মোবারকের মেসে।

“পিচ ঢালা এই পথটাকে ভালো বেসেছি…।”

মোবারকের বাসায় ঢুকতেই ওর বড় ভাইয়ের সাথে দেখা। হাসি মুখে বড় ভাই বললো, “আল্লা বাচাইছে। হারামজাদা পাশ করছে।”
বলে রাখা ভালো মোবারক উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষার পর ডিক্লেয়ার দিছিলো, রাখালের (রাখাল চন্দ্র ধর স্যার, কেমিস্ট্্রির টিচার) বাপও তারে পাশ করাতে পারবে না।

মোবারক খাটের উপর খুব আয়েশ করে খোশ মেজাজে বসে আছে। আমি ঢুকতেই চিৎকার কইরা বলে

“দোস্ত, গুলি তো কানের পাশ দিয়া বাহির হইয়া গেলো। সেকেন্ড পেপারে গ্রেস দিছে ৫ মার্ক। আমি কইছিলাম না, পাশ হইবো না; হিসাব কইরা দেখছোস গ্রেস ছাড়া পুরাই যে ফেল করছিলাম।”

আমি খুব বিরক্ত মুখে বললাম,

“এগুলা প্যাচাল বাদ দে। বাসা থাইকা পালাইছি। তোর এখানে থাকমু কয়েকদিন।”

মোবারক বলে:
“সাবাস বেটা। ভালো কাম করছোস। আইচ্ছা, পোচু আর গুরু রে খবর দেই। মজা হইবো”

আমি বললাম
“পোচুরে দে। গুরু মনে হয় আইবো না। শালায় তো বোর্ডে থার্ড না ফোর্থ হোইছে। ফোটুক তুলবো পোজ দিয়া বাপ মার লগে।”

আমি আর আলাপ না বাড়িয়ে বিছানা্য় শুয়ে ঘুম দিলাম। ঘুম ভাংগলো বিকালের দিকে। দেখি খাটের পাশে মোবারক আর গুরু আবজাব আলাপ করতেছে। আমি উঠতেই গুরু বলে,
“পালাইছিস নাকি শুনলাম। আচ্ছা চল, বাইরে গিয়া হাটাহাটি কইরা আসি।”

নিচে নেমে টং -এ বসলাম। চা আর বিড়ি ধরাইলাম শুকনা মুখে।

মোবারক: “ওই, বালটা আমার, এমনে মুখ শুকনা কইরা বইসা আছোস ক্যান? পাশ করছোস, এইটাই বড় ব্যাপার। আইচ্ছা, আমাদের কলেজ থাইকা কয়টা স্ট্যান্ড করছে ের? ”

গুরু: “সাইন্স পার্টি ১২-১৩ টা, আর আর্টস পার্টি ্থাইকা খালি কাছিম, বক্স-ফক্স আর ডিপজল বাদ পরছে মনে হয়।”

মোবারক: ” চল, এক কাম করি, স্ট্যান্ড পার্টির বাসায় ফোন করি। ”

আমি: “ফোন কইরা?? ….”

মোবারক: “ফোন কইরা কমু সাক্ষাৎকার নিতে চাই। পত্রিকা থাইক্যা ফোন দিছি কমু।”

আমি: “তো? ..কি লাভ হইবো।”

মোবারক: “দেখোস না ব্যাটা কি করি। মজা হইবো”

গুরু: ” ধরা খাবি তো। ”

আমি: ” আবার একটা গ্যান্জাম পাকাবি তো।”

মোবারক: “কিচ্ছু হইবো না, তোরা খালি ফোন করার সময় হাসাহাসি করিস না”।

এখানে বলে রাখা ভালো, ২০০১ সালে মোবাইল ফোনের চল ছিলোনা মধ্যবিত্তদের ব্যবহারের জন্য; টিনটি ফোনের কলার আইডিও ছিলোনা।

ফোন আলাপন: পর্ব -১

মোবারক: স্লামালিকুম। নুরুজ্জামানকে চাচ্ছিলাম।

অপর পাশ থেকে: বলছি। কে বলছিলেন?

মোবারক: আমি বাংলা বাজার পত্রিকা থেকে বলছিলাম। আপনি তো ঢাকা বোর্ডে ২য় হয়েছেন? আপনাকে বাংলা বাজার পত্রিকার পক্ষ থেকে অভিনন্দন।

নুরুজ্জামান: হে হে। আমার বাবা মা আর কলেজের টিচাররা আসলে এসবের জন্য অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।

মোবারক: ওনাদেরকেও বাংলা বাজার পত্রিকার পক্ষ থেকে অভিনন্দন। আগামীকালকে সকাল ১০ টায় আপনার একটা সাক্ষাৎকার নিতে চাচ্ছিলাম। আপনার বাসার ঠিকানাটা একটু বলবেন।

ফোন আলাপন: পর্ব -২ (২০ মিনিট পরে)
মোবারক: স্লামালিকুম। জামান আছে? আমি মোতাকাব্বের।

নুরুজ্জামান: কিরে দোস্ত? কি খবর?

মোবারক: এই তো। আচ্ছা, কালকে ১০.৩০ এর দিকে পোলাপান গেট টুগেদার করতেছে। তুই ১০ টার মধ্যে চইলা আয়।

নুরুজ্জামান: দোস্ত কালকে এই সময়ে বাসায় মেহমান আসবে। আসতে পারবো না।

মোবারক: ১০টায় আবার কিসের মেহমান? মেহমান তো দুপুরের দাওয়াতে আসে। ও আচ্ছা, তুই তো এখোন পত্রিকার লোকজনদের কে সময় দিবি, স্ট্যান্ড করছোস, তোর ছবি হেরা ছাপাইবো। আমগো লাইগা সময় দেওয়ার সময় তো তোর নাই। বাদ দে।

নুরুজ্জামান: বিশ্বাস কর। আমি এগুলা পত্রিকা টত্রিকার সাথে নাই। আতলামি করার মানে নাই। কিন্তু কালকে আসলেই মেহমান আসবে, নইলে আসতাম।

মোবারক: এক কাম করি। তোর বাসায় আমরা আইসা পরি। তুই যেহেতু বাহির হইতে পারবি না। আন্টিকে বেশি কইরা রান্না করতে বল।

নুরুজ্জামান: দোস্ত কালকে আমারে মাফ কর। পি্লজ। কালকে বাদ দে।

ফোন আলাপন: পর্ব -৩

মোবারক: স্লামালিকুম। আদনান আহসান খন্দকারকে চাচ্ছিলাম; মানবিক বিভাগ থেকে ১ম স্থান অধিকার করেছেন।

অপর পাশ থেকে: ওলাইকুম সালাম। কর্ণেল খাইরুল বলছি।….

মোবারক: সরি, আংকেল। রং নাম্বার।

আমরা দ্রুতো ফোন, ফ্যাক্স এর দোকান থেকে বের হয়ে আসলাম। কারণ কর্ণেল খাইরুল ডিজিএফআই এর লোক, যিনি আমাদের চেহারা দেখেই বলে দিয়েছিলেন আমরা নাকি আস্তা ক্রিমিনাল ।

যাই হোক। আমরা পরদিন আবারও বসছিলাম ফোন নিয়ে। সেই গল্প বলবো পরের পর্বে। (চলবে)

১,৯৪০ বার দেখা হয়েছে

১০ টি মন্তব্য : “হ্যালো, স্লামলিকুম! দৈনিক উন্মাদ থেকে বলছিলাম।”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    :)) :)) :)) দারুন মজা পেলাম, পরের পর্ব তো আর আসলো না রেদওয়ান ভাই...


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাহমুদ (১৯৯৮-২০০৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।