একটি ঘাসফুল গাছের আত্মকাহিনী

কখন কিভাবে এবং কোথায় আমার জন্ম হয়েছে ঠিক বলতে পারব না তবে যখন থেকে পৃথিবীর আলোবাতাস বুঝতে শিখেছি তখন থেকে দেখছি আমি এক লম্বা করিডোরের এক রুমের সামনে এক টবের মধ্যে অবস্থান করছি। সামনের রুমের নাম্বারটা দেখা যায়। ৩২৯ নাম্বার রুম। আশেপাশে যারা চলাচল করে তাদের থেকে শুনেছি এটা হচ্ছে ওমর ফারুক হাউজ, কলেজের নাম রংপুর ক্যাডেট কলেজ। আর আমি যে করিডোরে আছি এটা হচ্ছে সিনিয়র ব্লক। এই ব্লকে শুধু মাত্র ক্লাস টুয়েলভ চলাফেরা করে। তবে বছরের শেষের দিকে ক্লাস ইলেভেন এই ব্লকে হাঁটার পারমিশন পায়। আমার আশেপাশে প্রতিটা রুমের সামনেই একটি করে গাছ আছে। তবে তারা আমার তুলনায় অনেক শক্ত সামর্থ্য।

আমি অতি সাধারন এক ঘাসফুল গাছ। অতি সাধারন বললাম কারন আমার স্বজাতিদের অনেক সুন্দর ফুল ফুটে কিন্তু আমার ফুলগুলো খুব ছোট, সাদা এবং এতো অল্প পরিমানে ফোটে যে কেউ খুব খেয়াল না করলে বুঝতেই পারবে না যে ফুল ফুটেছে। আমরা সবার অলক্ষ্যে জন্মাই আবার মারাও যাই সবার অলক্ষ্যে। কখনও কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে আমার ফুল নেয়া হয় না, কোন প্রেমিক তার প্রেমিকাকে কখনও আমার থেকে ফুল উপহার দেয় না। এক কথায় আমরা সর্বদা সবার অগোচরেই থেকে যাই। কিন্তু এটা নিয়ে আমার প্রজাতির কখনো কোন দুঃখ ছিল না। কিন্তু আমার দুঃখ আমার অবস্থান। প্রতি সপ্তাহে একদিন বড়জোর দুইদিন আমাকে পানি দেয়া হয়। আশেপাশের গাছগুলো বেশ সক্ত সামর্থ্য হওয়ায় তারা খুব সহজেই এই অল্প পানিতে দিন কাটিয়ে দিতে পারে কিন্তু আমি অতি দুর্বল এক লতানো গাছ। আমার প্রতিদিন অল্প অল্প করে একটু একটু পানি দরকার হয়। তার মাঝে আবার আমাকে যে পাত্রে রাখা হয়েছে তাতে অনেক বড় ফাটল আছে যেখান দিয়ে দেয়া পানির বেশিরভাগই বের হয়ে যায়। কিন্তু তাতেও কারো কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। এভাবে পানির অভাবে ধুঁকতে ধুঁকতে দিন কাটতে লাগলো। পাতাগুলো ঝরে যেতে লাগলো আস্তে আস্তে। আমিও মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকলাম। যেকোনো দিন আমাকে উপড়ে ফেলে নতুন কাউকে হয়ত লাগানো হবে এই টবে। কিংবা ভাঙ্গা টব বলে পুরো টব শুদ্ধোও ফেলে দিতে পারে কে জানে।

একসময় হটাত খেয়াল করলাম করিডোরে চলাচলকারি মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে। বুঝলাম একাদশ শ্রেণীও এই করিডোরে চলাচল করার অনুমতি পেয়েছে। পরেরদিন সকালে পিটির পর এক ছেলে গোসল করার পর বাতাস খাওয়ার উদ্দেশ্যে আমার পাশে দাঁড়ালো। খেয়াল করলাম তার হাতে মাঝারি আকারের পানির বোতল। হটাত পানি দেখে খুব ইচ্ছে করল পানির সংস্পর্শে আসতে। কিন্তু বালক আমার দিকে তাকিয়েও দেখছে না। দেখলে হয়ত কিছুটা পানি আমাকে দিত। সে নিজেই পুরোটা খেয়ে ফেলবে মনে হচ্ছে। একসময় রেলিং এর উপরের কিছুটা ময়লা তার হাতে লাগলো। সে হাত ধোয়ার জন্য বোতলের পানিটুকুই ব্যাবহার করল। আমি শুধু তাকিয়ে দেখি। যে পানির অভাবে আমার জীবন আজ অন্তিম মুহূর্তে সেই পানি বালক কিভাবে হাত ধোয়ার কাজে ফেলে দিচ্ছে। পানিগুলো আমার উপর ফেললেও হত। হয়তবা আর কিছুটা দিন বেচে থাকতাম। কিন্তু না বালক তিনতলা থেকে পানি নিচে ফেলছে। এবার বাশিতে ফু পড়ল। বালকেরও চলে যাওয়ার সময় হয়েছে। সারাদিনের ব্যস্ত সময় শুরু হবে তার। হটাত মনে হল বাশি না বাজলেই হয়ত ভাল হত। কখনও কেউ তো কোনদিন আমার পাশে এসে এভাবে দাড়ায়নি। আজ এক বালক এসে দাঁড়িয়েছে আর আমি কত কি ভাবতে পারছি তাকে নিয়ে। নিঃসঙ্গ জীবনে কিছুক্ষনের জন্য একজন সঙ্গী জুটেছিল। বালক চলে যাওয়ার সময় হটাতই কি মনে করে অবশিষ্ট পানিটুকু টবের উপর ঢেলে দিলো। তপ্ত মুমূর্ষু জীবনে যেন প্রাণ ফিরে পেলাম। আশেপাশের মানুষদের দেখি কেউ প্রচণ্ড খুশি হলে পাশে যে থাকে তাকে জড়িয়ে ধরে। জানি না এর মাঝে কি মহত্ত্ব লুকিয়ে আছে। কিন্তু আমার এই মুহূর্তে বালককে প্রচণ্ড আনন্দে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।

পরদিন সকালে আমি আবার অপেক্ষায় রইলাম কখন বালক আসে। পিটি শেষ হল। কিন্তু বালক আসে না। যদিও তার আরেকটু পর আসার কথা তবুও ভয় হচ্ছে যদি বালক না আসে?? কিন্তু না, বালক আসলো। আজকেও বোতল থেকে পানি খাচ্ছে। কে জানে আজকে আমার ভাগ্যে কি আছে। আজকে কি বালকের হাতে ময়লা লাগবে??? লাগলে যদি সম্পূর্ণ পানিই লাগে তার হাত পরিষ্কার করতে? না আজকে বালকের হাতে কোন ময়লা লাগলো না। কিন্তু সে বোতলের অবশিষ্ট পানি আমার গায়ে ঢেলে দিলো। সেই থেকে শুরু। বালক প্রতিদিন পিটির পর তার বোতলের অবশিষ্ট পানি আমার গায়ে ঢেলে যায়। আর আমিও ধীরে আমার প্রাণ শক্তি ফিরে পাচ্ছি। গায়ে নতুন পাতা গজাচ্ছে। লতানো দেহটা বেড়ে উঠছে ধীরে ধীরে। কিন্তু বালক কখনও আমার দিকে তাকিয়েও দেখে না। প্রথমে ভেবেছিলাম বালক হয়ত আমার যত্ন নিচ্ছে কিন্তু না। বালক কখনও আমার দিকে খেয়াল ও করে না। পানি ঢালার সময়ও তাকিয়ে দেখে না। আনমনে ঢেলে দিয়ে চলে যায়।তবুও আমি প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকি এই সময়টুকুর ।

ঠিক এরকমই একদিন সকালে বালক দাড়িয়ে আছে। তখন হাউজ বেয়াড়া বালককে বললঃ

-ভাই দেখছেন পানি দেয়াতে গাছটা কত সুন্দর হইয়া উঠছে। কতগুলা পাতা গজাইছে। কত সুন্দর লাগতেছে এখন এইটারে।

বালক প্রথমবারের মত আমার দিকে ভাল করে তাকিয়ে দেখল। কিছু বলল না কিন্তু মনে হল হটাত এরকম কিছু খেয়াল করে সে বেশ খুশি হয়েছে। তারপর থেকে বালক মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকিয়ে দেখে। কিন্তু কখনই কিছু বলে না। তবে একটা ব্যাপার ভাল হল। আগে ছুটির দিনগুলোতে বালক আসতো না। কিন্তু এখন ছুটির দিনেও একবার মনে করে এসে পানি দিয়ে যায়। দেখতে দেখতে অনেকটা দিন কেটে গেল। আমার আকারও বাড়তে লাগলো ধীরে ধীরে। একসময় সিনিয়র ব্যাচ চলে গেল। বালকেরও রুম ছেড়ে যাওয়ার সময় হল। বুঝলাম এবার আমার দিন হয়ত শেষ। তবে আমার আর কোন আফসোস নেই। এই ক্ষুদ্র জীবনে অনেক কিছু পেয়েছি।

কিন্তু বালক আমাকে অবাক করে দিয়ে আমাকে তার নতুন রুমের সামনে নিয়ে গেল। নতুন ঠিকানা ৩৩৬ নাম্বার রুমের সামনে। দিন যেতে লাগলো। কিন্তু একটা সমস্যা দেখা দিল। আগে করিডোরের এক প্রান্তে থাকায় আমার টবের ভাঙ্গা জায়গা দিয়ে যে পানি চলে যেত তা একদম নিচে যেত কিন্তু এখন দরজার সাথে থাকায় পানিতে করিডোর নোংরা হয়ে যায়। কয়েক জন বালককে কথাও বলেছে এটা নিয়ে। বালক হাউজ বেয়ারা কে নতুন টবের কথা বলে জানতে পারল হাউজে কোন টব খালি নেই।

এক রাতের কথা। কয়েকজন করিডোরে দৌড়াদৌড়ি করছে। তাদের এই ব্যাপারটা আমি বুঝি না। কোন কারন ছাড়াই শুধু মজা করার জন্য একে অপরকে এভাবে তাড়িয়ে বেড়াতে পারে??? পা আছে বলেই এতো ছুটাছুটি করতে হবে? ভাবতে না ভাবতেই একজনের পা ফস্কে পপাত ধরণীতল। আর বদ পোলাপান পড়বি তো পড় আমার উপরেই। আমার টবখানা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। এবার আর কোন আশা নেই। বালকের মনও খুব খারাপ। বালক টববিহীন অবস্থায় আমাকে এক কোনে রেখে দিলো। হটাত দেখি মাঝরাতে আমাকে নিয়ে টানাটানি। বালক কোথা থেকে একটা টব যোগার করে এনেছে। সেখানে একটা বেশ বড় গাছ আছে। সে একটানে সেটাকে উপড়ে ফেলল। তারপর প্রচণ্ড যত্ন নিয়ে সেখানে আমাকে স্থাপন করে দিল। মানুষ বড় অদ্ভুত। আমার মত এক লতানো গাছকে বাচাতে আরেকটা শক্ত সামর্থ্য গাছ উপ্রে ফেলতে সে একবারও দ্বিধা করল না।বালক কি ভেবে যে এই কাজ করল তা হয়ত আমি কখনই বুঝতে পারব না।

এবার বড় টব পেয়ে আমিও কিছুটা হাফ ছাড়লাম। এবার আর পানি টব ছেড়ে যাবে না কোথাও। দিন যেতে লাগলো। আমিও আরও বাড়তে লাগলাম। কিন্তু লতানো গাছ বলে কথা। খুব বেশিই বড় হয়ে গেলাম । বালক ব্যাপারটা খেয়াল করল। সে একটা কাচি নিয়ে এসে অতি মনোযোগের সাথে চারপাশ থেকে ছেঁটে দিল। যদিও কষ্ট লেগেছিল কিন্তু পরে বুঝলাম দেখতে এখন ভালই লাগছে। আমার দিনগুলো ভালই কাটতে লাগলো। শুধু সবাই যখন ছুটিতে চলে যায় তখন বেশ কষ্ট হয়। কষ্ট করে সেই দিনগুলো চালিয়ে দেই। বালক ছুটি থেকে এসে আবার যত্ন নেয়া শুরু করে।

ধীরে ধীরে শীত আসলো। শীত চলে গিয়ে বসন্ত ও শেষ হয়ে যাচ্ছে। বালকের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু। আর কয়েকটা দিন, তারপর বালক চলে যাবে। আর হয়ত কখনও দেখা হবে না বালকের সাথে। আর কেউ হয়ত এতো যত্ন করে আমার গায়ে পানি ঢালবে না। আবার হয়ত কেউ হোঁচট খেয়ে আমার উপর পড়বে। টব ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু কেউ আর সে টব বদলে দেবে না। আমাকে ছুড়ে নিচে ফেলে দিবে।

================================
================================

আজ সকালটা কেন যেন খুব বেশি বিষণ্ণ। সমস্ত কলেজে থমথমে পরিবেশ। আজ বালক আর তার সকল ক্লাসমেট বিদায় নেবে। বাদকদল পূর্ণ সাজে সজ্জিত হয়ে তৈরি বিদায়ের শেষ সুর বাজাতে। ক্যাডেটরাও সবাই তৈরি হয়েছে তাদের বিদায় দিতে। গতকাল রাতে তাদের ফেয়ারওয়েল ডিনার হয়ে গেছে। সকালে নাস্তা করতে সবাই নিচে গেল। সবার চোখের কোনেই পানি টলমল করছে। নাস্তা করে রুমে আসলো সবকিছু নিয়ে যেতে। শেষ। চলে যাচ্ছে সবাই। বালকও বের হল রুম থেকে। বালক এগিয়ে যাচ্ছে। আর আমি পিছনে থেকে তাকিয়ে আছি বালকের দিকে। হটাত বালক পেছনে ঘুরে রুমের দিকে আগাতে লাগলো। কিছু ফেলে গেছে সম্ভবত। সে আমার সামনে এসে থামল। তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। প্রাণপনে চেষ্টা করছে চোখের জল আটকে রাখতে। কিন্তু পারছে না। সহসাই সে নিচু হয়ে বসে হাত বুলিয়ে দিল আমার গায়ে। সে অনেক আদর যত্ন করলেও কখনও এভাবে হাত বুলিয়ে দেয় নি। ঈশ্বরের কাছে প্রানপনে আকুতি করলাম একটিবারের জন্য আমাকে কথা বলার সুযোগ দাও। বালককে একবার বিদায় বলি। কিন্তু ঈশ্বর আমার আকুতি রাখলেন না। বালক অশ্রুশিক্ত চোখে হন হন করে চলে গেল। নিচে স্টাফের বাশি শোনা যাচ্ছে। বালকের অনেক দেরি হয়ে গেছে আমার সাথে শেষ দেখা করতে।

২,৬৯৬ বার দেখা হয়েছে

১৮ টি মন্তব্য : “একটি ঘাসফুল গাছের আত্মকাহিনী”

  1. মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

    আমিও তোমার হাউসেই ছিলাম, সেজন্য অন্যরকম একটা আত্মীয়তা বোধ করছি।

    বোঝা গেল, তোমার ভেতরে একটি কোমল নরম মন আছে। সেই মনের যে পর্যাপ্ত সময় আছে এই পৃথিবীর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীব-জড়-উদ্ভিদের মনের গভীরে কান পাতার, সেটি বুঝে খুব ভালো লাগলো।

    তোমার গল্পটির পাঠ-প্রতিক্রিয়া লিখতে গিয়ে এবারে অন্য একটি গল্পের অবতারণা করি, ফিলিপ কিন্ড্রেড ডিক-এর লেখা।
    ছোটোগল্পটার নাম 'রুগ', একটা সত্যিকারের কুকুরকে নিয়ে। সত্যিকারের কুকুরটার নাম ছিলো স্নুপার। তার কাজ ছিলো খেয়াল রাখা, যাতে কেউ এসে তার মালিকের আবর্জনার পাত্র থেকে খাবার চুরি না করে। স্নুপার এই ভুল ধারণায় ভুগছিলো যে তার মালিক ঐ আবর্জনাকে মূল্যবান মনে করে। প্রতিদিন তারা কাগজের ঠোঙা ভর্তি সুস্বাদু খাবার বয়ে নিয়ে খুব সাবধানে একটা শক্ত ধাতব পাত্রের ভেতরে রাখে, তারপর ঢাকনাটা শক্ত করে এঁটে দেয়। হপ্তা যখন ফুরোয়, তখন পাত্রটা ভরে ওঠে--আর তখনই সৌরজগতের সবচেয়ে দুষ্ট সত্ত্বাগুলো একটা ইয়াব্বড় ট্রাকে চড়ে এসে সে খাবার চুরি করে। হপ্তার কোন দিন এটা ঘটে, স্নুপার সেটা জানতো, সবসময়ই শুক্রবারে ঘটে ব্যাপারটা। শুক্রবার ভোর পাঁচটার দিকে স্নুপার ডাকা শুরু করতো। লেখকের বউ আর লেখক চিন্তা করে দেখলেন যে, ঠিক ঐ সময়ই আবর্জনাকর্মীদের অ্যালার্ম ক্লক বাজতে শুরু করে। ওরা কখন বাড়ি ছাড়ে, স্নুপার সেটা জানতো। সে ওদের শুনতে পেতো। কী ঘটতে যাচ্ছে, একমাত্র সে-ই জানতো, বাকিরা কিছুই পাত্তা দিতো না। স্নুপার নিশ্চয়ই ভাবতো, সে পাগলে ভরা একটা গ্রহে বাস করে। তার মালিকরা, আর বার্কলির বাকি সবাই, শুনতে পেতো যে আবর্জনাকর্মীরা আসছে, কিন্তু কারুরই কোনো পাত্তাই ছিলো না। প্রতি হপ্তায় স্নুপারের ঘেউ ঘেউ শুনে লেখকের মাথা বিগড়ে যাওয়ার দশা, কিন্তু লেখক স্নুপারের যুক্তি নিয়ে যতোটা উদ্বেলিত ছি্লেন, তাদের জাগানোর ব্যাপারে তার উন্মত্ত চেষ্টা নিয়ে ততোটা বিরক্ত ছিলেন না। লেখক নিজেকে প্রশ্ন করলেন, এই কুকুরটার চোখে দুনিয়াটা কেমন? মানুষেরা যেভাবে দেখছে, ও নিশ্চিত সেভাবে দেখছে না। সে নিজের একটা পূর্ণাঙ্গ বিশ্বাস দাঁড় করিয়ে নিয়েছে, ওর জগদ্দর্শন মানুষের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন, কিন্তু যেসব প্রমাণের ওপর ও সেটা দাঁড় করিয়েছে, সেগুলোর কথা ভাবলে, সে জগদ্দর্শন যৌক্তিক।

    তোমার লেখায় লতানো গাছটিরও তেমনি জগদ্দর্শনের একটা নিজস্ব পদ্ধতি থাকা প্রয়োজন। যে পদ্ধতি প্রয়োগ করে সে হাউস বেয়ারাকে তার মত করে চিনতে পারবে, একাদশ শ্রেণি, দ্বাদশ শ্রেণি তার কাছে অন্যরকম প্রতিভাত হবে, পিটি-ড্রিল-বোতল-টব-পানি এসব কিছুরই তার কাছে যৌক্তিক কিছু ভিন্নতর অর্থে থাকবে। মানুষের নয়, গাছের চোখে চারপাশটা দেখে গল্পটি লিখ, চমক লাগিয়ে দিতে পারবে।

    সক্ত, শুদ্ধোও, হটাত, ব্যাবহার, বেচে, যোগার--অনেক অনেক টাইপো। বড় চোখে লাগে!

    আজকে কি বালকের হাতে ময়লা লাগবে???

    যে কথা হক-কে ইতিপূর্বে বলেছিলাম, এবার তোমায় তা বলি। একাধিক বিস্ময়সূচক চিহ্ন দিয়ে কি বিস্ময়ের মাত্রার তারতম্য আনতে চেয়েছ? প্রয়োজন আছে কি? কারণ তোমার লেখা পড়ে বিস্মিত তো হব আমরা, পাঠকেরা। কতটুকু বিস্মিত হব, সেটি কিন্তু আমাদের সংবেদনশীলতার উপরেও নির্ভরশীল। বিস্ময়চিহ্নের পুনঃ ব্যবহারে তোমার ভেতরের বিস্ময়টা প্রকাশ পায় বেশি, পাঠকের বিস্মিত হবার ক্ষেত্রে অনুঘটক হিসেবে তেমন কাজ করে না।


    দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

    জবাব দিন
    • রায়হান (২০০৭-২০১৩)

      লেখার সময় লতানো গাছের জগদ্দর্শনের একটা নিজস্ব পদ্ধতির ব্যাপারে আবু ইসহাকের লেখা "মহাপতঙ্গ" গল্পের কথা মনে হয়েছিল কিন্তু কোনটার কিভাবে বর্ণনা দিব সেটা মিলাতে পারছিলাম না তাই আর সেভাবে লেখা হয় নি। টাইপোগুলোর জন্য দুঃখিত। ইনশাআল্লাহ পরবর্তীতে আরও সতর্ক থাকব।

      একাধিক প্রশ্নবোধক চিহ্ন আসলে কোন বিস্ময়ের মাত্রার তারতম্য বুঝানোর জন্য না। আসলে আমিও খেয়াল করি নি যে বেশকিছু জায়গায় প্রশ্নবোধক চিহ্ন একাধিকবার হয়ে গেছে।

      পরিশেষে ভাইয়া আপনার সুন্দর নির্দেশনার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। মাত্র কিছুদিন যাবত টুকটাক লেখালেখি শুরু করেছি। আশাকরি আপনার মূল্যবান নির্দেশনাগুলো ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারব।

      জবাব দিন
  2. সাইদুল (৭৬-৮২)

    লেখাটা ভালো লেগেছে। বেশ ভালো, ঘাস ফুল কি লতানো গাছে হয়? আমি জানিনা
    সে যেমনই হোক তাতে গল্পের কিছু যায় আসেনা


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
  3. সাদাত (৯১-৯৭)

    আহা, ওমর ফারুক হাউসের বৃষ্টি ভেজা এক ঝলক ঠাণ্ডা বাতাস যেন এসে চোখে মুখে ঝাপটা দিয়ে গেল......... দারুণ লিখেছ ভাই, সিনিয়র ব্লকের সেই পুরনো দিনগুলোতে কয়েক মিনিটের জন্য বেশ ঘুরে এলাম.........

    জবাব দিন
  4. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    ভাল লাগলো।
    আগ্রহ নিয়ে পড়লাম।
    সবার প্রথম লিখা এতটা আগ্রহ নিয়ে পড়া হয় না।
    আর হ্যাঁ, সিসিবিতে স্বাগতম।

    বাই দ্যা ওয়ে, প্রথম লিখায় :frontroll: :frontroll: :frontroll: কি উঠে যাচ্ছে নাকি???


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  5. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    সিসিবিতে স্বাগতম রায়হান। দারুন একটা লেখা দিয়ে শুরু করলে। আশা করি নিয়মিত লেখা পাব।

    হ্যাপি ব্লগিং 🙂


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রায়হান (২০০৭-২০১৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।