জন্মদিন পোস্টঃ শরীফুর রহমান মজুমদার

যেই ছেলেটাকে নিয়ে লিখব তার সাথে কলেজ জীবনে খুব কমই বনিবনা হয়েছে। ক্লাস সেভেনে যখন তিতাস হাউজে আসি তখন আমরা একই রুমেই ছিলাম। ওর সাথে আমার প্রথম ঝগড়া ছিল খুব সম্ভবত রুমের কর্তৃত্ব নিয়ে। এরপর আরও অনেক কিছু ছিল ঝগড়ার বিষয়। মাঝেমধ্যে জুনিয়রের সামনেও দুই একবার ঝাড়ছি রাগ সামলাতে না পেরে। কিন্তু সব কিছুর পর যখনই কিছু দরকার হয়েছে ওর কাছেই গিয়েছি। এখনও যাই।

যখনই মনে হয় কোন কিছু নিয়ে জানা দরকার তখন আর কেউ না জানুক শরীফ ঠিকই জানবে আর সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করবে। শরীফ যে কতটা কাজপাগল আর পরিশ্রমী সেইটা শরীফকে যারা দেখেছে শুধু তারাই জানে। যাই হোক এইসব নিয়ে আর বেশি প্যাচাল পারবোনা শুধু শরীফকে নিয়ে করা একটা উক্তি আর একটা ঘটনা শেয়ার করব সবার সাথে।

প্রথমেই ওকে নিয়ে করা উক্তিটা বলে নেই। আমাদের বন্ধু পনির শরীফ সম্পর্কে বলেছেন, ” শরীফ যদি হোয়াইট হাউসে বাবুর্চি হয়েও ঢুকে তারপর ও প্রেসিডেন্ট হয়ে বের হয়ে আসবে।”

এইবার শরীফকে নিয়ে ঘটা ঘটনা।

আমরা যখন ক্লাস সেভেনে প্রথম অ্যাথলেটিক্স দেখি তখন কলেজের সেরা লং রানার ছিল আমাদের অল্টারনেট সিনিয়র কাউসার ভাই। বন্ধুদের কাছে শুনি তাকে বলা হত ফুসফুসহীন মানব। ৩০০০ মিটার স্টীপল চেজে উনি যখন শেষ চক্কর দেন ২য় স্থানে অবস্থান করা ভাইয়ার তখনও ২ চক্কর বাকি। কাওসার ভাই তখন উলটা দৌড় দিয়ে বুঝিয়ে দেন বাকিদের চেয়ে তিনি কত এগিয়ে। আমরা কচিকাচা ক্লাস সেভেন রাতে হাউসে এসে চিন্তা করি ভাইয়ের কি আসলেও ফুসফুস আছে কিনা?

এরপর প্রায় ৩ বছর পরের ঘটনা। আরও একটি অ্যাথলেটিক্স। আমরা তখন নিউ টেন। আমার গল্পের নায়ক শরীফ পাখির চোখ করল স্টীপল চেজকে। কারণ এই একটা জায়গা যেখানে সে তার স্ট্যামিনা দিয়ে বাকিদের হারিয়ে দিবে। শরীফ কঠিন প্র্যাক্টিস শুরু করল। একবার ৩০০০ মিটারের কলেজ রেকর্ড ও ভাঙল প্র্যাক্টিসে। কলেজে তখন সবাই কানাঘুষা করছে যে এইবার শরীফই প্রথম হবে। একদিন বিকালে ৪০০ মিটারের ট্র্যাকে সেই যে দৌড়ানো শুরু করল আর থামার নাম নেই। ১০০০০ মিটার দৌড়ের পর যখন আমরাও পাশাপাশি দৌড় শুরু করলাম তখন থামল।

এইবার আসল মঞ্চের ঘটনা। ৩০০০ মিটার স্টীপল চেজ নিয়ে সেইবার সবার আগ্রহ। কারণ হয়ত কলেজের কোন রেকর্ড এইবার ভাঙতে যাচ্ছে। শরীফ সেইবার কলেজের রেকর্ড ভেঙ্গেছিল। কিন্তু ওর সাথে ভেঙ্গেছিল আরও ৭ জন। শরীফ হয়েছিল ৪র্থ। শরীফ হয়ত সেবার প্রথম হতে পারেনি কিন্তু কলেজের লংরানের যেই মান ছিল সেইটাকে অনেক উপরে শরীফই নিয়ে গিয়েছিল। ওর মনে হয়না ১ম না হতে পেরেও খুব খারাপ লেগেছিল। কারণ রেকর্ডটা ভেঙ্গেছিল আমাদেরই আরেক বন্ধু শিবলী। যেই ৮ জন আগের রেকর্ড সময়ের আগে এসেছিল তাদের ৫ জনই ছিল আমাদের ব্যাচের।

শরীফ এরকমই। সবসময় পার্শ্বনায়ক হয়ে থাকে। কিন্তু নেপথ্যে ওর অবদান আসল নায়ক থেকেও বেশি থাকে। ক্যাডেট কলেজে পড়ে সব ক্যাডেটেরই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বন্ধু। কিন্তু শরীফ মাঝেমধ্যে বন্ধু থেকেও বেশি। ও হয়ত সবচেয়ে কাছের বন্ধুটি হয়না কিন্তু প্রয়োজনের সময় সবচেয়ে কাছের মানুষটি হয় শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও।

শুভ জন্মদিন বন্ধু। জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।

১,৫৭৬ বার দেখা হয়েছে

১৪ টি মন্তব্য : “জন্মদিন পোস্টঃ শরীফুর রহমান মজুমদার”

মওন্তব্য করুন : নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।