সিসিবি পিকনিকঃ ২৫/১২/২০১৩

আজকের দিনটি ছিল খুবই ইউনিক একটা দিন। আগামী ১০০, ১০০০ বা ১০০০০ বছর পরেও এমন আরেকটি দিন আসবেনা। এই তারিখকে স্মরনীয় করে রাখতে নানা কর্মসুচীতে জড়িয়ে যাই। একই দিনে কলেজের ব্যাচের গেট টুগেদার আবার সিসিবি পিকনিক। দুইটার সময়ই দুপুরে। একেবারে কোনটা ছেড়ে নেব কোনটা অবস্থা। শেষমেশ কলেজের বন্ধুদের ভুজুং ভাজুং বুঝিয়ে গেট টুগেদারের সময় রাতে নিলাম আর এতদিন পর ক্যাডেট কলেজ ব্লগের গেট টুগেদার বা পিকনিকে অংশগ্রহণের সুযোগ পেলাম।

শেষের দিকের অনেক কিছুই মিস করব জেনে আজকে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে কিছু কাজকর্ম সেরেই তাড়াতাড়ি পল্লবীর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সাড়ে এগারোটার মধ্যেই লাবলুসে পৌঁছে গেলাম। কিন্তু বাকিরা আসতে দেরি করছিল। জিহাদ ভাইয়ের বাসায় অপেক্ষা করতে করতেই বরিশালের আমাদের ব্যাচের বন্ধুদের আগমন। সাথে মাহমুদুল ভাই। জমে উঠল আড্ডা। জামান ভাইয়ের সাথে এই ফাঁকে কিছুক্ষন ছোটবেলার আলাপচারিতা চলল।

আড্ডার যখন চরমে ঠিক তখন ওলন্দাজ নায়ক রেজা শাওন ভাইয়ের প্রবেশ। তার গ্ল্যামারের আলোকচ্ছটায় আমাদের তখন প্রায় আন্ধা আন্ধা অবস্থা। তিনি একদিকে তার প্রবাস জীবন যাপনের ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন আরেকদিকে পাবনার রেপুটেশন ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করছেন। চিপস আর কুক খেয়ে আমরা ভাবলাম নিচে যেয়ে দেখি কি অবস্থা। গিয়ে দেখি লাবলু ভাইয়ের ড্রয়িং রুম ভর্তি ক্যাডেট। আমাদের জন্য আর জায়গা নেই। এমতাবস্থায় লাবলু ভাইয়ের আদেশে সবাই ছাদে যেয়ে জমা হলাম। প্রথমেই মনে আসল শেষ যখন এই ছাদে ছিলাম পুর্নিমার আলোর সাথে মিফতাহ ভাইয়ের সুরে আচ্ছন্ন ছিলাম।

ইতিমধ্যে ব্যাটবল কিনে আনতে যাওয়া তৌহিদ ভাই আর তুষারের আগমন ঘটল। শুরু হল ছাদে ক্রিকেট খেলা। ছাদে বেশ কিছু সময় পার করার পর আমরা বেশ কয়েকজন গেলাম মাঠে। মাঠের খেলায় আমাদের দুইটি বলের একটি বল ঝোপের আড়ালে চলে গেল। ফিরে এল আরও একটি বলের সহিত। অতঃপর তিনজন বোলার, একজন ব্যাটসম্যান আর দুইজন ফিল্ডারের এইরূপ কম্বিনেশনে খেলা চলতে লাগল। খেলার মাঝেই সামিয়া আপুর বোম মারার হুমকিতে আমরা সবাই খেতে উপরে গেলাম।

এরপর শুরু হল খাওয়াদাওয়ার পর্ব। পেটে ঠেসে ঠেসে কাচ্চি ভরলুম। যারা আসেনাই তারা হয়ত কাচ্চি খেতে পারবে কিন্তু সিসিবির আবহের মধ্যে কাচ্চির স্বাদটা আসলে বেড়ে যায়। যারা আসবে বলেও আসেনাই তারা জানেনা তারা কি মিস করসে। খাওয়া শেষে একদল চলে গেল খেলতে আরেক দল শুরু করল সিসিবির পুরনো গল্প। গল্পে উঠে এল পুরনো সদস্যদের কথাও। একবার হাল্কা করে আসল শপথের কথা যেখানে শপথ করা হয় আমরা আবার সিসিবি কে জাগিয়ে তুলব কিন্তু শেষ পর্যন্ত কথা রাখা হয় না। আমরাতো রাজনীতি করিনা যে বারবার কথা দিয়ে কথা ভঙ্গ করব। তাই এইবার শপথ করা হল না।

এইবার আমার প্রথমবারের মত বেশ কিছু তারকা ব্লগারের সাথে পরিচয় হয়েছে। আমিন ভাই, রাব্বী ভাই, কামরুল তপু ভাই রেজা শাওন ভাইদের সাথে এবারই প্রথম দেখা। আমিন ভাই নাম জিজ্ঞেস করতে বললাম, রায়েদ। আমিন ভাই বললেন, “হুম চিনিতো। রায়েদ, ২০০২-২০০৮। সাদী নাম।” সামনা সামনি অনেক কথা বলতে পারিনা। আমিন ভাইয়ের ফটোফেস খারাপ। ভাইয়া সামনাসামনি দেখতে আরও ভাল। ফটোফেসের কথা যখন চলেই আসল রেজা ভাই ওরফে শাওন ভাই ওরফে সিদ্দিক ভাই ওরফে আব্দুল খালেক ভাইয়ের কথা না বললে কি হয়। তার ছবি কেন এত ভাল আসে তা আজ সামনাসামনি দেখলাম। ছবিতে শিল্প না থাকলে তার চলেই না। সেইটা ভাই যে ভূমিকাতেই থাকুক না কেন। এমনকি ভাইয়ের আশেপাশে যারা ছবি তুলবে তাদেরকেও কিছুটা শিল্পের সমঝদার হতে হবে। তবে রেজা ভাইয়ের বেশ গুন আছে। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমার ডিপার্টমেন্টের কথা। সবার সম্পর্কে তার বেশ ভাল পরিচয় আছে।

রাব্বী ভাইয়ের সাথে পরিচয় পর্বটা হয়েছে অন্যভাবে। আমিন ভাই আমাকে দেখিয়ে বললেন আমার সম্পর্কে কিছু বলতে। প্রথমে কিছু বলতে না পারলেও নাম শুনেই বলে দিলেন কোথায় বড় হয়েছি, কোন বিষয়ে লেখাপড়া করছি। এই ফাঁকে বলে নেই ভাইয়ের কথোপকথন সিরিজের আমি অনেক বড় ভক্ত। এইটা আরো চলা উচিত।

কামরুল তপু ভাইতো আবার কথা দিয়েছেন যে তার বকেয়া ব্লগগুলো পোস্ট করবেন। অপেক্ষায় রইলাম। আর ভাইয়াকে লিফটের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

তাড়াতাড়ি চলে যাওয়াতে পড়ে কেও এসেছে কিনা জানা হয়নি। আরেকজন তারকা ব্লগার তাইফুর ভাইয়ের সাথে দেখা হবে ভেবেছিলাম। দেখা হল না। জিহাদ ভাইয়ের কাছে শুনলাম কেক আর বিরিয়ানী নাকি খেয়ে শেষ করা যাচ্ছে না। মিরপুরবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সবচেয়ে জুনিয়র আশিক আমাকে হতাশ করেছে। ওর কাছে আরও এন্টারটেইনমেন্ট আশা করেছিলাম। ছোট রাব্বীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। আর একটা কথা আজ ফ্রিজ থেকে সত্যি সত্যি মিষ্টি খাওয়া হয়েছে। 🙂

একটা আক্ষেপ রয়েছে আজকের পিকনিক নিয়ে। ক্যাডেট কলেজ ব্লগে এইটা আমার চতুর্থ গেট টুগেদার। প্রতি গেট টুগেদারের পরেই আমি এসে গেট টুগেদার নিয়ে দেয়া ব্লগগুলো পড়ি। আজ এসে একটাও পেলাম না। খালি খালি দেখতে ভাল লাগছিল না তাই জিহাদ ভাইয়ের কথায় লিখেই ফেললাম।

শেষ করার আগে একটা প্রশ্ন। এই ব্লগে প্রথম কে ফ্রিজ থেকে মিষ্টি বের করে খেয়েছিল?

১,৮৫৫ বার দেখা হয়েছে

১৬ টি মন্তব্য : “সিসিবি পিকনিকঃ ২৫/১২/২০১৩”

  1. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    অনেকদিন পরে পোস্টে নিজের নাম দেখে লগিন করলাম(সব সময় এমনিতে থাকি)। নাহ পোস্টে নাম আছে বইলা না, আগে গেট টুগেদার হইলে সিসিবিতে পোস্টের ধূম পইড়া যাইত সেই রাম নাই সেই অযোধ্যাও নাই। যাক কইতেসিলাম নিজের নামের কথা। আমার নামে প্রথম কথাটা ভুল। আমি তারকা ব্লগার না। যেই দুজন তারকা ব্লগারের সাথে নাম নেয়া হইছে সেটা দেখে আরো বিব্রত। আর ফটো ফেস, এইটা নিয়া কলেজের কাহিনী মনে পড়লো। ইটির মাঠে স্টাফ খারাপ চেহারার উদাহরণ দিতে গিয়ে আমার রেফারেন্স টানতো। যার ফেইসের এই অবস্থা তার আবার ফটোফেস কি (যদিও আমি আমার কালো দ্রাবিড়ীয় ফেসে বেশ গর্বিত)।
    আজকে অনেকদিন পরে গেট টুগেদারে থাকলাম (লাস্ট ছিলো আগের পিকনিক)। লাবলু ভাইকে ধন্যবাদ আতিথ্যের জন্য আর জিহাদ রায়হান সামিয়াদের ধন্যবাদ এত অল্প সময়ে কষ্ট সাধ্য অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য।
    রাব্বী ভাইয়ের সাথে ছয়দিন আগেই দেখা হয়েছিল। তবে আড্ডাটা আজকে জমলো ভালো। রেজা শাওনরে দেখে আমার ইনিশিয়াল ইমপ্রেশন হইলো ও এতো বড় কেন? (আমি ওরে আরো ছোট খাটো আর পিচ্চি ভাবছিলাম)।
    কামরুল ভাইয়ের সাথে দেখা হইলো অনেকদিন পরে। ভালো লাগলো সিসিবির কবি মাহফুজ ভাইয়ের সাথে পরিচিত হতে পেরে। ভাইয়ের সানরাইজের ক্লাশের পাঙ্খা ছিলাম আগে। তপু দোস্ত কাম কলিগ সো ওর ব্যাপারে কিছু কমু না। রিবিন ভিই শেষ বেলায় ছলে আসলেন। শোয়েব ভাইয়ের সাথে সামনা সামনি পরিচয় হলো। পাবনার এম আই এস টি ভাইটার (৯৪-০০ )নামটা শুনা হয় নাই (ভাই পাঙ্গা দিয়েন না)। উনার রাব্বী ভাইরে রাশভারী ভাবে বলা "কোন ব্যাচ?" আজকের সেরা ডায়লগ। ভালো লেগেছে দেলোয়ার ম্যাডামের সাথে কথা বলেও। পুরা টাইম বন্ধু হাসান ক্রিকেট খেলায় থাকায় ওর সাথে আড্ডা হ্য নাই তেমন। শাওন ভাইরে আগে কমেন্টে চিনতাম এইবার সামনাসামনি পরিচয় হয়ে গেল। রাব্বী ভাই জ্যোতিষী রূপ নিয়ে চেহারা আর নাম দেখে যেমনে মানুষজনের কাজের বিবরণ দিল তাতে তার পর্যবেক্ষণের পুরা ফ্যান হয়া গেছি। তৌহিদ তারিক রায়েদ মুনতাসির আর অতি আবশ্যই আশিকের সাথে পরিচিত হয়েও ভালো লাগলো (কারো নাম বাদ পড়লে বিনীতভাবে দুঃখিত।)

    অতি অবশ্যই মিস করেছি, কমেন্টশিল্পী জুনা ভাই,চল্লিশোর্ধ যুবক কাইয়ুম ভাই, খেরোখাতার ফয়েজ ভাই, সাপ্তাহিক আহসান আকাশ, গেমস প্রিফেক্ট এহসান ভাই, রুমকীর বাবা তানভীর ভাই, ছন্দের জাদুকর টিটো ভাই, কবিরাজ ইমরান ভাই এবং মিষ্টির জন্য মোসাদ্দেক ভাইরে।

    সিসিবি পিকনিক রক করে ।

    জবাব দিন
  2. শাওন (৯৫-০১)

    কিরে আমার নাম টা বললিনা?

    কয়ঠা ফটুক পোষ্ট কর।

    আর শোন তাইফুর ভাই আসছিলো শেষ পর্যন্ত। আসর জমায় দিয়া ৫ মিনিট পর ই চলে গেছে। :boss: :boss: বেচারা ব্যাপক দৌড়ের উপর ছিলো (বাজার, চুল কাটানো)। ফ্রিজ খুইলা মিষ্টি খাওয়ার ও টাইম পায় নাই.. 😀


    ধন্যবাদান্তে,
    মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শাওন
    প্রাক্তন ক্যাডেট , সিলেট ক্যাডেট কলেজ, ১৯৯৫-২০০১

    ["যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি"]

    জবাব দিন
  3. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
    শেষমেশ কলেজের বন্ধুদের ভুজুং ভাজুং বুঝিয়ে গেট টুগেদারের সময় রাতে নিলাম আর এতদিন পর ক্যাডেট কলেজ ব্লগের গেট টুগেদার বা পিকনিকে অংশগ্রহণের সুযোগ পেলাম।

    :tuski:


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  4. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
    তার গ্ল্যামারের আলোকচ্ছটায় আমাদের তখন প্রায় আন্ধা আন্ধা অবস্থা। তিনি একদিকে তার প্রবাস জীবন যাপনের ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন আরেকদিকে পাবনার রেপুটেশন ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করছেন।

    😮


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  5. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    রায়েদ, জিটুজির লেখা ভালো হইসে 😀
    এতোই ভালো হইসে যে আমিন আর দেরী করেনাই, এক চান্সেই কমেন্ট দিয়া দিসে বিশাল 😛

    এতো সুন্দর মাহফিল হইলো, অথচ ব্লগ নাই সেই তুলনায়। কই রাখি এই দুঃখ!


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।