বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ড ওয়ানডে সিরিজঃ আমার প্রেডিকশন

বাংলাদেশের সবগুলো মানুষকে একই সূতাই গেঁথে ফেলার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ক্রিকেট। দেশের বর্তমান অচলাবস্থায় একমাত্র ক্রিকেটই পারে মনে একটু শান্তির পরশ বুলিয়ে দিতে। বাংলাদেশ গত কয়েকটি সিরিজে ওয়ানডেতে খুব ভালো পারফর্ম করছে। তাছাড়া প্রতিপক্ষ যখন নিউজিল্যান্ড প্রত্যাশাটা তখন এমনি একটু বেশি হয়ে যায়। তবে নিউজিল্যান্ড কিন্তু খুবই ভালো দল। বিশেষ করে ওয়ানডেতে। ২০১০ এ আমাদের কাছে ৪-০ তে হারলেও ওরা কিন্তু ঠিকই ২০১১ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে গিয়েছিল। বৃষ্টি যদি কোন প্রভাব না ফেলে তবে এবারও আশা করি টাইগাররা সিরিজ জিতবে। তবে নিউজিল্যান্ড একটা ম্যাচ জিততে পারে। আমার প্রেডিকশন বাংলাদেশ এই সিরিজ ২-১ এ জিতবে।

কেন উইলিয়ামসন এই সিরিজে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে যাচ্ছে। তবে ওয়ানডে সিরিজে ওর ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ওর বোলিংটাকেও হুমকি হিসেবে দেখছি আমি। নিউজিল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে যোগ হচ্ছে টিম সাউদি। তবে পেস বোলাররা আশা করি তেমন কোন বিপদের কারণ হবে না। ভেট্টরি এবার নেই এইটা বাংলাদেশের জন্য বিরাট সুবিধা হিসেবে দেখা দিবে ওয়ানডেতেও। বাংলাদেশের কন্ডিশনে রান আটকে রাখার জন্যেও স্পিন খুবই উপযোগী। নিউজিল্যান্ডের এইদিকে বিরাট ঘাটতি রয়ে গেছে। যদিও বলেছি পেসাররা তেমন চিন্তার কারণ হবেনা কিন্তু নিল ওয়াগনার মিরপুর টেস্টের পর নিশ্চয় খুব আত্মবিশ্বাসী। ওকে একটু দেখে খেললে ভালো। ফর্মে থাকা প্লেয়াররা সবসময়ই বিপজ্জনক।

তবে আমাদের উচিৎ ওদের নিয়ে এত মাথা না ঘামিয়ে নিজেদের নিয়ে চিন্তা করা। নিজেদের খেলা খেলতে পারলে নিউজিল্যান্ডের দুই একজন পারফর্ম করলেও ম্যাচটা আমাদের হাতেই থাকবে ইনশাআল্লাহ। কেমন হওয়া উচিৎ বাংলাদেশ একাদশ আর কেমনই বা খেলবে বাংলাদেশ। আমার ভাবনাটা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।

অনেকদিন পর সাকিব, তামিম, মাশরাফি ৩ জনই খেলছে বাংলাদেশ দলে। সচরাচর ৩ জনকে একসাথে পাওয়া মুশকিল। তার উপর পারফরমার এবার বেড়ে গেছে অনেক বেশি। মুশফিক, নাসির, রাজ্জাকরাতো আগে থেকেই আছে। সাথে মুমিনুল হক আর সোহাগ গাজীরাও। নিজেকে প্রমানের চেষ্টায় থাকা আনামুল আর মাহমুদুল্লাহরাও হয়ে উঠতে পারে যে কোন ম্যাচের নায়ক।

তামিম ইকবালঃ
১ নম্বরে তামিম ইকবাল অটোমেটিক চয়েস। টেস্ট সিরিজে সেঞ্চুরির কাছে গিয়েও ফিরে এসেছে। ৩ বছর টেস্টে সেঞ্চুরি নেই। সেই জ্বালাটা হয়ত ওয়ানডে দিয়ে পুষিয়ে দিতে চাইবে। আর তাতে বাংলাদেশেরই মঙ্গল। তামিমের কাছে প্রত্যাশা থাকবে একটা ভাল শুরু এনে দেয়া যেটা সে প্রায়ই এনে দেয়। এই সিরিজে একটা সেঞ্চুরি আসলে মন্দ হয়না। আমার অনুমান তামিমের রান ১৩০+ থাকবে এই সিরিজে।

আনামুল হকঃ
তামিমের ওপেনিং পার্টনার খোঁজা হচ্ছে অনেকদিন থেকে। আনামুলের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি সেই সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে। কিন্তু টেস্ট সিরিজের খারাপ পারফরম্যান্সে ওর উপর একটা প্রশ্ন উঠে গেছে। শামসুর রহমানকে খেলানোর কথা হচ্ছে। কিন্তু আনামুল খারাপ খেলেছে টেস্টটা ওয়ানডের মত খেলতে যেয়ে। ওয়ানডে স্টাইলে খেলার দোষে নিশ্চয় ওয়ানডে থেকে বাদ দেয়াটা উচিৎ হবেনা। এছাড়া সাদা বল লাল বল থেকে মুভও করে কম। আর ফিল্ডিংও অনেক রক্ষণাত্মক হয়। যেইটা আনামুলের খেলার সাথে ম্যাচ করে। ফুটওয়ার্ক নিয়ে কিছু সমস্যা আছে কিন্তু পারফর্ম করলে ওইটা কারও চোখে পড়বেনা। তবে আনামুলের যা করার মিরপুরেই করতে হবে তা নাহলে শামসুর রহমানও একটা সুযোগ ডিজার্ভ করে।

মুমিনুল হকঃ
এই জায়গাটাতে খেলে আফতাব আহমেদ বা আশরাফুলের বিশ্বসেরা হওয়ার কথা ছিল। অনেকদিন আফসোসও ছিল। কিন্তু আশা করি আর আফসোস থাকবেনা। মুমিনুল টেস্টে যেমন খেলেছে আশা করি ওয়ানডেতেও সেটা ধরে রাখতে পারবে। গ্যাপ বের করার যেই ক্ষমতা তার আছে সেইটা খুব কাজে লাগবে এই পজিশনে। টেস্ট সিরিজে লেগ সাইডে নেয়া তার শটগুলো ছিল দারুন। নিউজিল্যান্ডতো একটা সময় লেগ সাইডেই ৬ জন ফিল্ডার রেখেছিল। তারপরও গ্যাপ খুঁজে বের করে ৪ মারলো মুমিনুল। এখনো নাকি কিছুটা অসুস্থ সে। আশা করি ওয়ানডে ম্যাচের আগে সম্পুর্ন ফিট হয়ে উঠবে। আর বোলিঙয়েও তার কাছ থেকে অল্প প্রত্যাশা রইল।

মুশফিকুর রহিমঃ
বাংলাদেশ অধিনায়ক বেশ দায়িত্ব নিয়ে খেলে। ব্যাটিং উইকেটকিপিং সবদিক দিয়েই নিজেকে ধীরে ধীরে পারফেকশনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে নিজেকে। মুশফিকের কাছে প্রত্যাশা থাকল যেই একটা ম্যাচে বাংলাদেশের দ্রুত ২ উইকেট পড়ে যাবে ঐ ম্যাচে সুন্দর একটা ইনিংস খেলার। আর উইকেট না পরলেতো আরও ভালো।

মুশফিকের কাছে এই সিরিজ বাদেও কিছু প্রত্যাশা আছে। প্রত্যেক দেশেই একসময় এমন কিছু অধিনায়ক আসে যে দেশের পারফরম্যান্সকে অনেকটুকু এগিয়ে নিয়ে যায়। অধিনায়ক হিসেবে প্রথমে আমার তেমন পছন্দ না হলেও এখন মুশফিকের মধ্যে আমি সেই সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। আমাদের এখন পারফরমার বেড়েছে। পুরো দলকে এক করে এই দলটাকে ৫-৬ বছর পর দারুন কিছু করতে দেখলে খুব খুশি হব এখন যেমন করছে সাউথ আফ্রিকা আর ইংল্যান্ড।

সাকিব আল হাসানঃ
কোন রকম সন্দেহ ছাড়াই বর্তমান বিশ্বের সেরা ক্রিকেটার। অন্তত ওয়ানডেতে। জ্যাক ক্যালিসের নাম আসবে হয়ত। কিন্তু ক্যালিস সাকিবের চেয়ে ব্যাটিংয়ে এগিয়ে থাকলেও বোলিংয়ে সাকিব অনেক এগিয়ে। তাছাড়া দলের প্রতি অবদান দেখলেও সাকিব অনেক এগিয়ে থাকে। আর বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আমার ধারনা সাকিবই সবচেয়ে বেশি শট খেলে। মাঝের ওভারগুলোতে সাকিবের ব্যাটিং আর বোলিংই ঠিক করে দিবে সিরিজের গতিপথ। এইবারও সাকিবই হবে ম্যান অফ দ্যা সিরিজ এই আমার অনুমান।

নাসির হোসেনঃ
ফিনিশিংয়ে বাংলাদেশের যেই দুর্বলতা ছিল তার অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে নাসিরের আগমনে। অসাধারণ এই ফিল্ডার মাঝে মাঝে সহজ ক্যাচ ফেলে দেয়। আশা করি এমন কিছু দেখা যাবেনা। মিস্টার কনসিসটেন্ট তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে আর শেষের ওভারগুলোতে বাংলাদেশকে সঠিক ঠিকানায় পৌঁছে দিবে। আর জুটি ভাঙ্গার ক্ষেত্রে তার কার্যকারিতাও বজায় থাকবে।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদঃ
বাংলাদেশের সহঅধিনায়ক এর দলে জায়গা নিয়েই অনেক প্রশ্ন। কিন্তু সর্বশেষ হোম সিরিজে ওয়েস্টইন্ডিজের বিপক্ষে মুশফিক ম্যান অফ দ্যা সিরিজ হলেও আমার কাছে নায়ক ছিল রিয়াদ। সাকিবের অনুপস্থিতি ঢাকা যেমন তেমন কথা না। কী ব্যাটিং কী বোলিং মাহমুদুল্লাহ অসাধারণ পারফর্ম করেছিল। তাছাড়া লেজের দিকে মাহমুদুল্লাহর ব্যাটিংও ভালই। এই পজিশনে তার প্রতিদন্দ্বী হতে পারে জিয়াউর রহমান। তবে তার ব্যাটিং আমার খুবই অপছন্দ। আমার মনে হয়না জিয়া রিয়াদের চেয়ে ভালো কিছু করতে পারবে।

সোহাগ গাজীঃ
বাংলাদেশে ভালো পেসার উঠে আসছেনা কিন্তু ভালো স্পিনার কিন্তু নিয়মিত উঠে আসছে। গাজী এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম কিছুটা। সে ডানহাতি অফস্পিনার। নিউজিল্যান্ড সিরিজে সাকিব, রাজ্জাক আর মাশরাফীদের ভিড়ে উইকেট পাওয়াটা তার জন্য এত সহজ নাও হতে পারে আবার দেখা যাবে ওরা রান আটকে রাখছে আর এইদিকে গাজী টপাটপ উইকেট ফেলছে। পাশাপাশি প্রয়োজন হলে ব্যাট হাতে দারুন কিছু করতে পারে।

মাশরাফী মর্তুজাঃ
ডেথ ওভার গুলো ছাড়া মাশরাফী কখনোই হতাশ করেনি। গত নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচে সেই অধিনায়ক ছিল। পড়ে ইঞ্জুরিতে পড়ে। আশা করি জীবনের পরের ম্যাচগুলোতে ইনজুরি ছাড়া মাশরাফীকে দেখব। পরবর্তী বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডে। আমাদের মাশরাফী ছাড়া আর বলার মত পেসার নাই। এই সময়টাতে আর ইনজুরিতে না পরলে দলের জন্যেও অনেক ভালো হত। এই সিরিজে শুরুতেই তার কাছে ২টি করে উইকেটের প্রত্যাশা রইল। 🙂

আব্দুর রাজ্জাকঃ
মিরপুরে ওয়ানডেতে আব্দুর রাজ্জাকের মত ভয়াবহ বোলার কমই আছে। সাকিব আর সোহাগ গাজীর সাথে ভয়ঙ্কর এক স্পিনত্রয়ী তৈরি হবে এই সিরিজে তার প্রত্যাশা থাকল। রাজ্জাক তার আর্মারে নিউজিল্যান্ডের লেজ গুটিয়ে দিবে এমন দৃশ্য দেখার জন্য প্রস্তুত থাকুন। আশা করি ব্যাটিঙয়ে নামা লাগবেনা। বোলিং দিয়েই সিরিযে অবদান রাখতে হবে।

রুবেল হোসেন/ আল আমিন/ জিয়াউর রহমানঃ
এইখানেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। রুবেল মাঝের ওভারগুলোতে দারুন বল করে। তবে উইকেটের ব্যাপারে খানিকটা দুর্ভাগা। যদিও ওয়ানডেতে বেশ কয়েকবার ৪ উইকেট নিয়েছে। নিউজিল্যান্ডের গত সফরের শেষ ম্যাচটাতেও রুবেল ভালো বল করেছিল। ম্যাচ জয়ে তার অবদান ছিল অনেকটুকু। জিয়াউর রহমানকে রেখেছি বাংলাদেশ তাকে নিলে নিতেও পারে এই ভেবে। জিয়াউর রহমান খেললে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপটা ১০ পর্যন্ত হয়ে যায়। মাশরাফী আমার খুব পছন্দ ব্যাটসম্যান হিসেবেও। আর রাজ্জাক নাকি নিজেকে ব্যাটসম্যান ভাবে। তাইলে তো ১১ জন ব্যাটসম্যান হয়ে যায়। জিয়াউর রহমানের বোলিং পারফরম্যান্স ভালো। তবে পাওয়ার প্লেতে ওর বোলিং কোন কাজে আসবে না হয়ত। তবে পাওয়ার প্লেতে বোলিং করার জন্য রাজ্জাক আর গাজীতো আছেই। সেই হিসেবে খুব একটা মন্দ হয়না। আল আমিনের অভিষেক মিরপুর টেস্টে। ভালোই বল করেছে। এবারের প্রিমিয়ার লীগেও আবাহনীর হয়ে ভালো পারফর্ম করেছে। কিন্তু চাপে পড়লে হয়ত ভালো নাও করতে পারে। এইবারে প্রিমিয়ার লীগে চিগুম্বুরা এক ওভারেই ওকে যে মার মেরেছে তাতে ডেথ ওভারে ওকে দিয়ে বল করানোটা একটু রিস্কি। তাই সব কিছুর পর এই জায়গায় আমার পছন্দ রুবেলকেই।

বাংলাদেশ কখনো এর চেয়ে শক্তিশালী হয়ে কোন দলের বিপক্ষে খেলতে নেমেছে কিনা জানা নেই। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের যত ওয়ানডে টীম এসেছে আমার কাছে এইটাকেই সবচেয়ে শক্তিশালী মনে হচ্ছে। দেখা যাক মাঠে এর কতটুকু প্রতিফলন হয়। আরেকটি ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। খেলা দেখতে ভুলবেননা। বাংলাদেশ দল আর সবার জন্য শুভকামনা রইল। 🙂

১,২০৬ বার দেখা হয়েছে

৮ টি মন্তব্য : “বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ড ওয়ানডে সিরিজঃ আমার প্রেডিকশন”

মওন্তব্য করুন : রায়েদ (২০০২-২০০৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।