আমার সৌভাগ্য

২০০৮ সাল। আমি তখন ক্লাস ১২ এ পড়ি। সেদিন ছিল প্যারেন্টস ডে| সেই ক্লাস সেভেন থেকেই আমার প্যারেন্টস নিয়মিত আসে না। আসলেও অনেক দেরী করে আসে। আমিও বুঝি সেই মংলা থেকে কুমিল্লায় প্যারেন্টস ডে’গুলোতে আসা কতটা কষ্টকর। তাই আমি নিজেই মাঝে মাঝে আসতে নিষেধ করতাম। কখনো খুব বেশি খারাপ লাগে নি। এমনকি আমাদের এস,এস,সি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে যখন আর সবার বাবা মা এসেছে। তখন অভিভাবক শূন্য হয়ে আমার খুব বেশি খারাপ লাগে নাই। বরং আব্বু আম্মু যে এতদূর কষ্ট করে আসে নি সে জন্য ভালো লাগছিল। কিন্তু প্রায় সাড়ে ৫ বছর কলেজে কাটিয়ে দেয়ার পর কেন জানি ঐদিন নিজেকে খুব অভিভাবকশূন্য মনে হচ্ছিল। খুব কষ্ট হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল আমার জন্যও কারো আসা উচিত ছিল। তখন বাজে ১১টার বেশি। আর মাত্র ১ ঘন্টা বাকি প্রিয় কোনো মানুষের সাথে দেখা করার জন্য, কথা বলার জন্য। কাকে আসতে বলব আমি? আমার বাবাতো আর superman নয়। হঠাৎ করে এই কষ্টের কথা বলে আর কষ্টও দিতে চাচ্ছিলাম না। কিন্তু কাউকে না বললে, কারো সাথে দেখা না করলে যে আমার মনটায় কেমন একটা কষ্ট হচ্ছিল। একথা কিভাবে বোঝাব যে কারো সাথে দেখা করাটা কতটা জরুরী তখন আমার জন্য। নাহলে কষ্টটা আরো কষ্ট দিবে, যে এমন কেউ নেই, যে আমাকে এসে একবার দেখে যাবে। চিন্তা করলাম কে আছে আমার সবচেয়ে কাছে, যে আমাকে খুব আপন মনে করে। চকিতে মনে পড়ল, আব্দুল্লাহ ভাইয়ের কথা। তখন তিনি আছেন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে। তাকে বললে হয়ত আসতে বেশিক্ষণ লাগবে না। কিন্তু সময়তো বেশি নেই। আর বলার সাথে সাথে যে তিনি আসতে পারবেন তার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। তারপর ও ছোট ভাইয়ের আবদার নিয়ে একটা ফোন দিলাম ভাইয়াকে। বললাম আজকের দিনের এই parent’s dayতে কেউ না আসায় আমার কেমন কষ্ট হচ্ছে। শুনে ভাইয়া দিলেন এক ঝাড়ি। কেন আগে বললাম না যে আজকে parent’s day. তাহলে তো তিনি অনেক আগেই চলে আসতেন। এখন কিছু ঝামেলা আছে সেইগুলা সেরে এই অল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে আসবেন বুঝতে পারছিলেন না। তারপর ও বলেছিলেন চেষ্টা করবেন আসতে। তখনই আমি বুঝে গিয়েছিলাম আমার অন্যতম প্রিয় এক মানুষের সাথে আমার দেখা হতে চলেছে।

সময় শেষ। ক্যাডেটরা যার যার বাবা মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হাউসের দিকে রওনা দিয়েছে। আর আমি অপেক্ষা করছি কখন আসবেন আব্দুল্লাহ ভাই। তিনি এসেছিলেন। রসমালাই সাথে করে। আমার সব কষ্ট দূর করতে। আমাকে জানাতে, আমি একা নই। আমার এমন একজন আছেন, যাকে বললে, তিনি তার সর্বোচ্চ উপায়ে চেষ্টা করবেন আমার সাথে দেখা করতে। সেই ৪৫ মিনিট এই বিশ্বাসে বসে থাকা যে তিনি আসবেন, সেই মুহূর্ত যখন আমি বুঝেছি আমার বিশ্বাস সম্পূর্ণই সঠিক, সেই অল্প কিছুক্ষণ কলেজে তার অবস্থানকাল, যা আমাকে দিয়েছে অসহনীয় আনন্দ, আমার জীবনের অন্যতম আনন্দময় সময়। যা আমি বোধহয় চাইলেও ভুলতে পারব না অবস্য কখনো ভুলতেও চাইব না সে ব্যাপারে ১০০০% গ্যারান্টি দেয়া যায়।

আব্দুল্লাহ ভাইকে বোঝানোর মত শব্দভান্ডার আমার কাছে নেই। কামরুল ভাইয়ের কাছ থেকে ধার করা লাগবে। তাছাড়া এ ব্যাপারে ৯৮-০৪ এর ভাইয়ারা সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন। অসাধারণ জনপ্রিয় এই ভাইয়ের ছোট ভাই হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে খুব গর্ববোধ হয়।

আর গর্ববোধ হচ্ছে, আজ তার জন্মদিনে তাকে নিয়ে ব্লগ লিখতে পারছি বলে। এটাকে আমি আমার সৌভাগ্য হিসেবেই মানছি। আমি আর কিছু বলব না, যা বলার তার বন্ধুরাই বলবেন বলে আশা করছি। শুধু বলব:

শুভ জন্মদিন ,আব্দুল্লাহ ভাই

অ.ট.: কেক্কুক চাই না। ভাবীরে জলদি দেখতে চাই। 😀

৫,৬৪২ বার দেখা হয়েছে

৬৯ টি মন্তব্য : “আমার সৌভাগ্য”

  1. আব্দুল্লাহ্‌-আল-আমীন (৯৮-০৪)

    ......ঠাণ্ডার রাতে আরাম করে ঘুমাইছি। ঘুম থেকে উঠেই স্বভাবমত সিসিবিতে একবার নজর দিতে দেখি ছোট ভাই রায়েদ ইবনে আহসান এর নয়া পোস্ট। অলরেডী লেট, তার পরেও ভাবলাম শেষ করে যাই। টপিক দেখে তো আমি মোটামুটি লস্ট। 😮

    ......রায়েদ, তোর এই লেখায় আমি বিমোহিত, সম্মানিত এবং একই সাথে লজ্জিত। আসলে আমার মত নগন্য একজনকে নিয়ে সিসিবির মত বড় পরিসরে পোস্ট আসতে পারে, কল্পনাও করি নাই।

    জবাব দিন
  2. কিবরিয়া (২০০৩-২০০৯)

    শুভ জন্মদিন আব্দুল্লাহ :grr: :grr: (ভাই)

    কেক্কুক চাই না। ভাবীরে জলদি দেখতে চাই। 😀


    যেমন রক্তের মধ্যে জন্ম নেয় সোনালি অসুখ-তারপর ফুটে ওঠে ত্বকে মাংসে বীভৎস ক্ষরতা।
    জাতির শরীরে আজ তেম্নি দ্যাখো দুরারোগ্য ব্যাধি - ধর্মান্ধ পিশাচ আর পরকাল ব্যবসায়ি রূপে
    - রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

    জবাব দিন
  3. রকিব (০১-০৭)

    লেট হয়ে গেলো, বেটার লেট দ্যান নেভার।
    শুভ জন্মদিন আবদুল্লাহ ভাই। কেক্কুক+ভাবী+ভাতিজা/ভাতিজি- চাই।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  4. মাহবুব (২০০০-০৬)

    অসাধারণ জনপ্রিয় এই ভাইয়ের ছোট ভাই হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে খুব গর্ববোধ হয়।

    🙂 🙂 🙂

    আমি আরেকটু বলব

    অসম্ভব রকম ভালো এই ভাইয়ের ছোট ভাই হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে খুব গর্ববোধ হয়।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।