আন্টি: একজন মায়ের মুখ…..

ঘটনা-১:
বেশ ক’বছর আগে মুস্তাকিমের বাসায় ছুটিতে গেলে ঢুকতে ঢুকতেই ও বললো, আম্মা কিন্তু ফুল প্রফেসর হয়ে গেছেন…..আন্টি আনন্দমোহন কলেজের প্রাণিবিদ্যার শিক্ষক…….ডাইনিং টেবিলে বসে একথা ওকথার মাঝেই হঠাৎ বললাম, “আন্টি, কংগ্রাচুলেশন”……আন্টি মূহুর্ত কয়েক সময় নিয়ে কপট অভিমানের সুরে বললেন….আমার খবরটা ওরা কাউকেই আমার নিজের মুখে বলতে দিবেনা দেখতেছি…..

ঘটনা-২:
মুস্তাকিম বছর দুই আগে ফোন দিল, আম্মাকে তো ডেল্টা মেডিকেলে ভর্তি করছি, তোর বাসার কাছেই…..আমি অফিসফেরত সন্ধ্যায় গেলাম….একী….মলিন মুখে আন্টি বিছানায় শোওয়া……ক্যান্সার হয়েছে আন্টির…..মুস্তাকিমটা হঠাৎ বললো, ধুর মাথাটা ধরছে এমন….বলেই কী একটা ফোন আসলো….ও বাইরে গেল…..আপাও তখন ডাক্তারের কী একটা রিপোর্টের জন্য গেলেন…..আমি একা….হঠাৎ দেখি, আন্টি মাথাটা এদিক-ওদিক করে কী যেন দেখাতে চাইছেন…..আমি উঠে জিঞ্জাস করলাম কিছু লাগবে কিনা….আন্টি বললো কেকুল (মুস্তাকিমের ডাকনাম) ওরা কি বাইরে?? আমি হ্যাঁ বলাতেই উনি বললেন, রশিদ, দেখোতো বাব, আমার পায়ের কাছে ভ্যানিটি ব্যাগটা আছে….আমি তা তার কাছে আনতেই বললেন, একটু খুলে দেখোতো ওর ভেতর মাথাব্যথার ওষুধটা আছে….(নামটা ভুলে গেছি)…..কেকুল তো বললো ওর মথা ধরছে, আমি ওষুধের কথা বললে তো আবার রাগ-টাগ করবে যে আমি কেন এর ভিতর আবার এইসব চিন্তা করতেচি….তুমি ওষুধটা কর্ণার টেবিলে রাখো…..ও আসলে খেতে বইলো…..আমার একদম বুকফাটা কান্না চেপে রেখে দেখি ওরা চলে আসতেছে…..ওষহুধটা দেখে আপাই বললেন যে কেকুল তোর না মাথা ধরছে…..এইখানেই তো দেখি ওষুধটা আছে….নে নে খেয়ে ফেল…..আমি বললাম…..আন্টিও বললেন তখন…..আমি একটা ফোন আসছে ভান করে মোবাইল কানে চেপে বাইরে এসে দাঁড়ালাম……

…….

এই দিন দশেক আগে মুস্তাকিম যখন বললো আন্টির অবস্থা খুব খারাপ…..তারপর ও য্যবার ফোন দিয়েছে ততবারই আমার আত্মাটা ছ্যাৎ করে উঠেছে….কিন্তু চরম খারাপ খবরটা পেলাম গত বৃহস্পতিবার সকালে……গেলাম পি.জি.-তে…….

আমি যে মুস্তাকিমকে একটউ জড়ায়ে ধরবো তাও পারলাম না……আন্টির মুখটা দেখলাম….মনে হলো উনি সব কষ্ট, যণ্ত্রণার ঊর্ধে উঠে খুব মিষ্টি একটা বাচ্চা মেয়ের মতো ঘুমিয়ে আছেন…..আমার মনটা বলে উঠলো, আল্লাহ নিশ্চয়ই আন্টিকে খুব ভালো রাখছেন……

উনার বাসায়তো আমরা অনেকেই গেছি…..বাশাদ, মনসুর, আরিফ, কায়সার, রনি, শাহরিয়ার, কাদির, মেহেরাব সহ অনেকেই……আমরা জানি আন্টি আমাদের কাছে কতটা ছিলেন…..নিচে আমি আহসানের করা ই-মেইলটা তুলে দিলাম……যেটা পড়ে আমরা অনেকঈ কাঁদছি আর পরে ফোন করে আহসানও কেঁদে ফেলছে……

Dear Aunty,
I’m very sorry to know that you just joined the journey to the infinity. I was very busy during last few days and I came to know through Kekul’s facebook status that you were extremely sick. We tried our best through our prayers and mental strength to hold on…Unfortunately it wasn’t enough, we fell short. We know, we wouldn’t be able to see you again through our eyes. But we will see you through the window of our mind and will miss you since the moment you decided to hold off. Please bless us as you always do…Sleep well, and good bye.

Yours,
Ahsan

মুস্তাকিম আমি জানি আন্টিকে নিয়ে এর চেয়ে সুন্দর কোন কবিতা আমি লিখতে পারবো না……আমরা বিশ্বাস করি, আন্টিকে আল্লাহ নিশ্চয়ই খুব ভালো রাখছেন……

৩,৮৭০ বার দেখা হয়েছে

৪১ টি মন্তব্য : “আন্টি: একজন মায়ের মুখ…..”

  1. রেজওয়ান (৯৯-০৫)

    আল্লাহপাক নিঃশ্চয়ই এতগুলো ছেলের দোয়া ফেলে দেবেন না...
    আন্টি জান্নাতবাসী হউন এই দোয়া করি...
    and for all of u...plz pray for my dad....he had an operation today in his eyes...and the condition is not good.....i'm leaving for dhaka tonight...

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন। আল্লাহ ওনাকে বেহেস্তে নসিব করুক।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. মনসুর আহমেদ (৯৪-০০)

    রশিদ তোকে ধন্যবাদ আমাদের কস্ট টা সবার হয়ে বলে দেয়ার জন্য...
    ময়মন সিং চাকরির সুবাদে আমিই মনে হয় সবচেয়ে বেশি স্নেহধন্য ছিলাম
    শ্রদ্ধা জানাচ্ছি একজন মা’কে

    জবাব দিন
  4. রবিন (৯৪-০০/ককক)

    এই লেখাটায় অনেকবার এসেও কিছু লিখতে পারি নাই। ঐদিন সকালে কেকুল যখন ফোন দিলো, কিছুই বলতে পারি নাই ওকে। আমরা যারা ময়মনসিংহে আছি, তাদের সেই সেভেন থেকে অনেকটাই সময় আড্ডা কেটেছে কেকুলের বাসায়।
    আন্টির জন্য সবাই দোয়া করবেন।

    জবাব দিন
  5. টুম্পা (অতিথি)

    ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন।
    কি বলব বুঝতে পারছিনা! এইতো কিছুদিন আগেই তোহা'র বাসায় কেকুলের সাথে কথা হল!
    আল্লাহ আন্টিকে জান্নাত বাসী করুন - এই দোয়া করি।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রশিদ (৯৪-০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।