মেঘ হও! মেঘ হও!

সামনে পরীক্ষা। তাই ঘুরাফিরা,খেলাধুলা, কাজকর্ম সব বাদ দিয়ে দিয়েছি। এখন গায়ে রোদ জড়ায়ে সারাদিন বসে থাকি আর সিগারেট ফুঁকি। ঘুম থেকে উঠে গোসলের আগ পর্যন্ত,আবার গোসলের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। নিয়মিত দুই বেলা। গত দুইদিন রোদ নেই, তাই মনও ভাল নেই।

আজ রোদ উঠেছে, পরীক্ষা উপলক্ষে একটা ঘড়ি কিনে দিয়েছে বন্ধু পলাশ। আনন্দ সীমা অতিক্রম করার কথা। অথচ মন ভাল নেই। অনেক দূর থেকে ভেসে আসা একলা পাখিটার ডাকে ঘুম ভেঙেছে। তার পর থেকে পাখিটা একটানা ডেকেই যাচ্ছে! বিষণ্ণ,গহিন! “মেঘ হও! মেঘ হও! ”
পড়েছি, একলা নাকি থাকে না তারা। একলা হলেই গম্ভীর বিষাদে ডেকে যায় সঙ্গীকে “মেঘ হও! মেঘ হও! ”
একলা মেঘ হও মাছরাঙাটার শোকে আজ মন ভাল নেই। রুমের ভেন্টিলেটরের স্থায়ী বাসিন্দা চড়ুইগুলোর সুখে আজ মন ভাল নেই।
একজোড়া ছানা ফুটেছিল কয়েকমাস আগে। কঠিন অত্যাচার শুরু হয়েছিল তখন। ভোরবেলা চোখদুটো লেগে আসতেই শুরু হত তাদের আয়োজন। ছানাদুটোকে খাওয়ানোর আয়োজন। তারস্বরে ডাকাডাকি আর ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ ডানা ঝাপটানোর শব্দে আমার কাঁচা ঘুমের বারোটা বেজে যেত। ঘুম থেকে উঠে দেখতাম ফ্লোর,বিছানা,কাপড়চোপড়, আলমারি;সারাটা রুম জুড়ে ছড়ায়ে আছে খড়,বিচালি, বিষ্ঠা, ঝুল…। গত বছর তো এত বিরক্ত হলাম যে চড়ুইগুলোর বিরুদ্ধে অবরোধ ঘোষণা দিয়ে আগুন জ্বেলে দিলাম ভেন্টিলেটরে। একটা চড়ুই মারা গেল। ৭ দিন কারো দেখা পাই নি। সাত দিন আমিও ভাল থাকিনি। ৭ দিন পর আবার ফিরে এল তারা। আমি আরো বেশি অপরাধবোধে কুঁকড়ে গেলাম।
এবছর তাই বিছানা কামড়ে পড়ে ছিলাম। অনেক ঝুল,অনেক বিষ্ঠা, বিচালি জমেছে।অনেক ডানা ঝাপটানো, অনেক তারস্বরে চিৎকার হয়েছে। কিছু বলিনি। কেউ বলেছিল “ওদের সাথে এমন কেন কর? বন্ধু হতে পার না? ” কেউ ভাবেনি আমি কথা শুনবো! কথা আমি শুনিও নি! আমি বন্ধু হতে পারিনি।অবশ্য আমি শত্রুও নই আর। আমি কেউ না। !

ছানাগুলো উড়তে শিখে গেছে। এখন আর ভোরে ঘুমুতে অসুবিধা হয় না। নিঃশব্দ হাহাকারে ঘুম নামে টুপ করে। শুধু মন খারাপটুকু পড়ে থাকে বিছানায়,ফ্লোরে,কাপড়চোপড়ে,আলমারিতে; সারা রুম জুড়ে…। আমি কি কোলাহলটুকু মিস করছি? হয়ত!

চড়ুই ছানাগুলো বড় হবে,মেঘ হও মাছরাঙাটা তার সঙ্গী খুঁজে পাবে, তারপর আনন্দিত ঘুড়ির মত উড়ে বেড়াবে! এখানে আমার কি বলার আছে? আমি দুঃখবিলাসী মানুষ আক্ষেপে আনমনে গুনগুন করে উঠবো
“এমন যদি হত,
আমি পাখির মত,
উড়ে উড়ে বেড়াই সারাক্ষণ….! “

১,২০২ বার দেখা হয়েছে

৯ টি মন্তব্য : “মেঘ হও! মেঘ হও!”

  1. টিটো মোস্তাফিজ

    ছোটবেলায় প্রচন্ড গরমের দিনে একটা পাখির ডাক শুনতাম- ফু..টিক জল, ফু..টিক জল । বৃষ্টির জল ছাড়া নাকি ফটিক জল পাখি অন্য কোন জল খেতে পারে না। তাই এভাবে জল চায় । তোমার লেখাটা পড়ে সেই পাখির ডাক শুনতে পেলাম :clap: :clap:


    পুরাদস্তুর বাঙ্গাল

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মামুনুর রশীদ খান(২০০১—২০০৭)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।