যে চিঠি লিখতে নেই!!

শাশ্বতী,
কেমন আছ জানি,ভাল নেই।
ভালবাস কিনা সেটা জানা হল না।বিশ্বাস করি ভালবাস। তবু মাঝেমাঝে জানতে ইচ্ছে হয়।কিন্তু জেনে ফেললেই তো সেটা আর বিশ্বাস থাকল না; বাস্তব,সিদ্ধ সত্য হয়ে গেল।
তাই থাকুক কিছু সংশয়।
সংশয়ে থাকুক বিশ্বাস,বিশ্বাসে ভালবাসা।
ভাগ্যিস বলে দাও নি! বলে দিলেই সিদ্ধ হয়ে যেত!
যেমন; “সূর্য পুবে ওঠে ” তেমনি “শাশ্বতী আমাকে ভালবাসে, অথবা বাসে না! ” কোন মজা হত? হত না।

সেদিন তোমার ভাললাগাগুলোর কথা বলছিলে রাতজাগা ভোরে।
সরি,আমি ঘুমায়ে গেছিলাম মাঝখানে। খুব ক্লান্ত ছিলাম তো! আর চড়ুইগুলো এমন চেঁচাচ্ছিল!তুমি বল গান নাকি গাচ্ছিল!
হয়ত অন্য কোন একদিন তোমার রাতজাগা বিলাসে আবার তোমার ভাললাগার গল্পে হারায়ে যাব।সারাদিন ঘুমায়ে নিব, প্রমিজ।
ওহ! আমিতো প্রমিজ করব না।কিভাবে করি বল?
কী যে অদ্ভুত তোমার আব্দার!
“প্রমিজ কর সিগারেট খাবে না, অ্যালকোহল ছোঁবে না! ” বোকা! তাই হয়?

তোমার পেপটিক আলসার শুনে সেবার ফাজলামো করেছিলাম মনে আছে?
“সিগারেট খাইলাম আমি আর আলসার হইল তোমার! প্রাকৃতিক ভারসাম্য বুঝলে! হেহে!” হেসেছিলাম।
তুমি বলেছিলে তুমি রাতে ঘুমুতেও পার না।
ইদানীং আমিও রাতে ঘুমুতে পারি না।
ঘুম আসে দুচোখ ভেঙে কিন্তু ঘুমুতে ইচ্ছে করে না,ভয় লাগে।
খাওয়াদাওয়াতেও অরুচি ভীষণ! আলসার? প্রাকৃতিক ভারসাম্য? কী বল?
এখন কি রাতে ঘুমুতে পার? এখন কি ঘুমুচ্ছ?
আমি জানি ঘুমুচ্ছ না।
কিছুক্ষণ পরই জেসমিনকে ডেকে বলবে “এই জেসমিন! হাঁটতে যাবা? চল হেঁটে আসি! ”
তারপর হয়ত একাই চলে যাবে মাঠের যেপাশটাতে অনেকদিন যাওয়া হয় নি সেখানে।
সেদিন আমার সাথে কথা বলতে বলতে যেমন চলে গেলে।
গুনগুনিয়ে গানও গাচ্ছিলে কি যেন!
আচ্ছা তুমি কি চাচ্ছিলে যেন আমি তোমাকে একটা গান গেয়ে শোনাতে বলি?
জানি চাচ্ছিলে। বুঝতে পারি নি।গাধা তো!
থপথপ করে হেঁটে যাওয়া দর্পভারী নির্বোধ ডাইনোসরদের মত প্রাচীন গাধা।
দর্পের দহনে পুড়ে বিলুপ্তিতে পরিণত গাধা।

জেসমিনের সাথে শিশির অলংকৃত ঘাসে কি হেঁটেছ পরে?
আমি নিশ্চিত আমার সাথে কথা বলেই ঘুমায়ে গেছ মন খারাপ করে।
বিদায় চাইতে বলেছিলে “কত কথা বলার ছিল,কিছুই তো বলা হল না! ”
তুমি কি জান না তোমার আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া কত সহস্র প্রেমিকা এই একই আক্ষেপ করে গেছে?
পূর্ববর্তীদের মত তুমিও ভুলে গেছ পৃথিবী বর্তুলাকার আর চন্দ্রসূর্যের ঘূর্ণন যুগান্তরী।
আর যুগান্তরে বেড়ে ওঠে ইতিহাস, যে ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে প্রাচীন ঘূর্ণনে।
যেমন তুমি ভুলে গেছ প্রত্যেক প্রেমই এক একটা ইতিহাস যেমন ইতিহাস তোমার প্রেমও।
তুমি শুধু খোঁজ নিও সেই নাম না জানা গাছটা সেই আগের যায়গাতেই আছে কি না!
আর তার নিচে দুজনের দাঁড়াবার মত যায়গা আছে কি না!
যদি থাকে তাহলে গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে দমকা বাতাস এলে
তার সবগুলো পাতা তোমার গায়ে ঝরাতে যেন সে না ভোলে।
নইলে পৃথিবীর সব নাম না জানা গাছ আমি চিরতরে উপড়ে ফেলব সমূলে।
ইতি
প্রাচীন গাধা।

৬৮৯ বার দেখা হয়েছে

৪ টি মন্তব্য : “যে চিঠি লিখতে নেই!!”

মওন্তব্য করুন : মামুনুর রশীদ খান(২০০১—২০০৭)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।