বনলতার চুলঃএকটি কনফেশন!!!

কয়দিন আগে ডক্টর’স ক্লাবে লাঞ্চ পূর্ববর্তী বিনোদন হিসেবে ক্যারম খেলতেছি! লাঞ্চের জন্য প্রচুর ডাক্তারদের আনাগোনা। অধিকাংশই সিনিয়র,ডাক্তার।দু একজন স্টুডেন্টস দের মধ্যে আমি একজন।
আমার চেয়ে ১৮ বছরের একজন এবং ১৩ বছরের একজন সিনিয়র এসে ক্যারম বোর্ডের পাশে দাঁড়ালেন। কথাবার্তায় বোঝা গেল পোস্ট গ্য্রাজুয়েশন লাইব্রেরি থেকে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত MBBS পরবর্তী উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের প্রস্তুতি হিসেবে একটানা পড়ালেখা করে লাঞ্চ ব্রেক এ আসছেন উনারা!
১৩ বছরের বড় ভাই : ভাই কি চা খাইয়াই আবার লাইব্রেরি দৌড় দিবেন নাকি? বইটই সব খুইলা ফালায়া আসছেন!!!
১৮ বছরের বড় ভাই : বই খুইলা রাখলে নাকি
শয়তানে পড়ে!!!?? একটু পইড়া দেহুক কিরকম লাগে!!!

হাসতে হাসতে গুটি মিস কইরা ফালাইলাম! 😀

বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষার ৩ টি ঘন্টা সময় কিছুতেই কাটতে চাইত না! বিশেষ করে ২০ নাম্বারের প্রবন্ধ রচনা লিখার সময় পুরা মাথাটাই ফাকা হয়ে যেত! পুর্ণ মনযোগ সহকারে সর্বোচ্চ চেষ্টায় নিরেট মস্তিষ্ক চিপেচিপেও একফোঁটা সাহিত্যরস বের হত না! ফ্যালফ্যাল করে ঘড়ির কাটার দিকে তাকায়ে থাকতাম! (ছোটবেলার স্বর্ণযুগের কথা আলাদা, যখন রচনা মানেই ছিল “গরু একটি অর্থকরী ফসল” আর “পাট একটি চতুষ্পদ প্রাণী” এই দুয়ের মধ্যে কনফিউশন। চোখ বন্ধ করে একটা লিখে আসলেই হত!
আরেক পার্টির কথাও আলাদা যারা অভূতপূর্ব মোজেজায় বড়বেলায়ও আস্ত রচনা মুখস্ত করে ফেলত! )

এখন কেউ রচনা লিখতে দেয় না! তবু দেশ জাতি এবং পৃথিবীর প্রতি অকৃত্রিম দায়িত্ববোধ থেকে স্বপ্রণোদিত হয়েই নিষ্ঠার সাথে রচনা লিখি! পড়ালেখা এবং অন্যান্য প্রোডাক্টিভ কাজকর্ম ফেলে রেখে ঘন্টার পর ঘন্টা ভেবে অগণিত উচ্চাঙ্গের নির্যাস নির্গত করি।তারপর অপু দশ বিশ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করি কোনটা আজ ফেসবুকে দিলে বেশি রেস্পন্স পাওয়া যাবে!!! অতঃপর আরো কয়েকঘন্টা পুড়ায়ে টাইপ করি বনলতার চুলের মত দীঘল স্ট্যাটাস!!অতীতের ৩ ঘন্টা কই হারায়ে গেল!!??

হায় মোটিভেশন!!! ইট রিয়েলি ক্যান ব্রিং আউট দ্য আনবিলিভেবল সেলফ অফ ইওরস!! সাধারণ জ্ঞানের নাম শুনলে আগে যেখানে ক্যাবলা হাসি দিয়ে সারেন্ডার করতাম,এখন দায়িত্বের সাথে সমকালীন সব ব্যাপারে আপডেটেড থাকি!!!! রাতে এইসব বিষয়ে আমার সযত্ন পর্যবেক্ষণ, বিচক্ষণ বিশ্লেষণ, ঈশপীয় উপদেশ ইত্যাদি অনুগ্রহ থেকে পৃথিবীর সন্তানেরা যাতে বঞ্চিত না হয় সেইজন্য জ্ঞানগর্ভ স্ট্যাটাস লিখি! তারমানে এই না যে আমি পত্রিকা পড়ছি বা নিউজ দেখছি! যাবতীয় জ্ঞানের বিশুদ্ধতম উৎস আমার ফেসবুক!! সারাদিন সবার অভিমত নিয়ে রাতে একটা জগাখিচুড়ি পাকায়ে কে কত রেস্পন্স পায় সেই মহান প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হই!!! আহ!!! তৃপ্তি!!! মানবজাতি এত্তগুলো লাকি!! আমার মত একজন বস পাবলিক পেয়ে!! 😀

১,১৮০ বার দেখা হয়েছে

৮ টি মন্তব্য : “বনলতার চুলঃএকটি কনফেশন!!!”

  1. আহমেদ ১৫২৯ (২০০৭-২০১৩) প.ক.ক

    ভাই আপনে কলেজেও বস আছিলেন এখন এইখানেও দেখতাছি :boss: চরম সত্য কথা :thumbup:


    বারে বারে অবাক হই, আর দেখি ফিরে ফিরে
    কতটা বদলে গেছি এই আমি প্রতিটি পদে পদে.....................

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : শিবলী (১৯৯৮-২০০৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।