যখন কয়েকজন বালক তাদের হৃদয় হারিয়েছিল

০১।
সব জিনিস বুঝতে যেহেতু আমার একটু টাইম লাগে। তাই কলেজে যাবার আগে যাবতীয় দুষ্ট কাজ সম্পরকে আমার ধারণা ছিল শূণ্যের কোঠায়। কিন্তু এরকম হলে কিন্তু অসুবিধারও শেষ থাকে না। যেমন কলেজে যাবার দিন দুই বা তিনেক পর রাতে লাইটস অফের আগে দিয়ে রুমের বাইরে বের হয়েছি, ঠিক এই সময় দেখি জুনিয়র হাউস প্রিফেক্ট ফেরদৌস ভাই ডাক দিল- এই ক্লাস সেভেন ডাবল আপ। দৌড়ে কাছে যাবার পর দেখি আর কিছু ক্লাস ইলাভেন দাড়িয়ে আছে (তবে এদের মাঝে তানভীর ভাই বা তারেক ভাই এর মত ভাললোক ছিলেন কিনা খেয়াল নেই) 😉

নিন্তাতই নাবালক আমার জন্য প্রথম প্রশ্ন- ফর্ম কোনটা?
-ভাইয়া “বি”
এইবার ভাইয়াদের মাঝে ফিসফিস গুঞ্জন, পাইছি একটা। তাই পরের প্রশ্ন- ফর্ম মাস্টার কে?
-ভাইয়া ‘অমুক’ ম্যাডাম
এইবার একটু চাপাহাসি, তারপরের বাণ- ম্যাডাম কে তোমার কেমন লাগে?
– ভাইয়া ম্যাডাম তো খুবি ভাল মানুষ
এইবার আরেক চোট হাসির সাথে প্রশ্ন- আরে না, ম্যাডাম কে তোমার কেমন লাগে? বুঝলা না???(আবারো হাসি)
আমিতো অবাক একি কান্ড! এইখানে বুঝা না বুঝার কি আছে। ম্যাডাম দারুন ভাল মানুষ।
এইবার ভাইয়ারা একটু নিরাশ হয়ে- ফেরদৌস এরে ছাইড়া দে, এইটা পুরা নাট বল্টু।

রুমে এসে অবাক হয়ে এই কাহিনি যখন অমিতাভ ভাইরে বললাম তখন শুনে মিচকা একটা হাসি দিয়ে ভাইয়ার উত্তর- ম্যাডাম কে উনার দারুন ভালা পায় 😀 এই প্রথম অবাক আমি জানলাম দুষ্ট বালকদের মনে ম্যাডামদের জন্য অনেক চিন্তাই থাকে :dreamy:

০২।
এইভাবে আস্তে আস্তে অনেককাল চলে গেল। চলে গেল তারেক ভাই, তানভীর ভাই, সাইফ ভাই কিংবা পিরা ভাইদের যামানা সাথে শেষ হয়ে গেল ‘অমুক’ ম্যাডামের কাল। আমরা তখন বাচ্চা মানুষ আর সেইসব বাচ্চাদের মাঝে আমি নিতান্তই নাবালক। আর আমার সেই নাবালক সময়ে আগমন ঘটল ভূগোলের এক ম্যাডামের। ডাইনিং এর টেবিলে টেবিলে তখন দারুন সব গল্পের আভাস। চোখ বড় বড় করে আমরা বাচ্চারা সেইসব গল্প খালি গিলি। আর ভাবি- দেখিস একদিন আমরাও……

কিন্তু আমাদের সে আশা পূরণ হয় না। তাই ম্যাডাম হাসের বাচ্চাদের দেশে চলে যায়। কিন্তু ঐযে বলে- এক আশার শেষ মানে নতুন আশার শুরু।

০৩।
আমার কাজের কোন কথাই ঠিকঠাক মনে থাকে না। যেমন এখন ঠিক মনে করতে পারছি না ব্যাপারটা কি কেন্ডিডেটস টাইমের এ্যাথলিটিক্সে না ক্লাস ইলাভেনের এ্যাথলেটিক্সের সময়ের ঘটনা। যাই হোক কোন এক এ্যাথলিটিক্সের সময় আমার মত কিছু হাবিজাবি পার্টি হাউজ টেন্টের পিছনে বসেছিল। ঠিক সেই সময়ে আমি একদম তব্দা খাইলাম। রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকা অন্যসব হাবিজাবি পার্টিদের প্রশ্ন করলাম- কিরে এইটা আবার নতুন কোন স্যারের মেয়ে। এইবার সমস্বরে উত্তর- শালা টিউবলাইট এইটা ইংলিশের নতুন ম্যাডাম। টিউবলাইট বলায় সেই সময় আমি কিন্তু ক্ষেপি নাই কারন তখন আমার মনে খালি ঘুরছে নীল শাড়ি, সেই নীল শাড়ি।

০৪।
সেই নীল শাড়ীর জ্বালায় আমি যখন অস্থির ঠিক তখনি একই কারনে অস্থির আর গুটিকয়েক বালক। কিন্তু তা জানতে আমার তখনো ঢের বাকী। তাই যখন একদিন এক বালক কে বললাম ( ধরা যাক তার নাম রোকন) জানিস নতুন ম্যাডাম কে না আমার দারুন সুইট লাগে। রোকন তখন দেখি লাজুক একটা হাসি দিয়ে বলে- আমারো। বুঝলাম এই লাইনে লোক আর আছে।

লাইনে যে আর আর লোক আছে তা বুঝতে অসুবিধা হয় না এক বৃহস্পতিবারের ফ্রী নাইটে। রাতে লাইটস অফের পর গল্প চলছে। একদল ১৬/১৭ বছরের বালক এক জায়গায় গল্প করলে তা অবধারিত ভাবে কোন না কোন ভাবে বালিকা সংক্রান্ত ব্যাপারে যাবেই যাবে। কে কেমন মেয়ের সাথে প্রেম করতে চায় এই বিষয় উঠতে না উঠতেই রোকন শালা বলে উঠে- ইস ম্যাডাম যদি ১০/১২ বছর পরে জন্ম নিত তাইলে এমন কি ক্ষতি হইত? সাথে সাথে চারপাশ থেকে কয়েকটা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শোনা যায়।

আমাদের মধ্যে এমন কিছু বালক ছিল যারা সারা কলেজ জীবনে কয়টা ইংলিশ ক্লাস মনযোগ দিয়ে করছে তা হাতে আঙ্গুলে গুনে দেওয়া যায়। কিন্তু ম্যাডামের দেওয়া প্রেপ টাস্ক করতে যখন এদের বইয়ের পর বই ঘাটতে দেখা যায় তখন প্রতিদন্দ্বীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে আমাদের কয়েকজনের হিংসায় চোখ ছোট হয়ে আসে, বিশেষ করে রোকনের।

০৫।
এইভাবে দিনের পর দিন চলে যায়। ম্যাডাম বাচ্চাদের মত ক্লাসে ছোটাছুটি করে আমাদের ইংলিশ শিখায়। আর আমরাও ম্যাডামের কাছে ভাল হবার আশায় নতুন নতুন গ্রামার বই কিনে দেবার জন্য বাসায় চিঠি পাঠাই। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না বরং প্রতিদন্দ্বীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে আমাদের চোখ প্রায় বন্ধ হয়ে আসে।

কিন্তু হঠাৎ এক ভ্যাকেশন শেষে কলেজে আর সেই নীল শাড়ী দেখা যায় না। ঢাকার এক নামকরা প্রাইভেট ভার্সিটির প্রতি রাগ হয় কিন্তু কিছুই করার থাকে না আমাদের। রাগে আমরা বলতে থাকি- গেছে ভালই হইছে। খালি সারাদিন প্রেপটাস্ক নিয়ে ফাউল ক্যাচাল। বাকীরাও আমাদের সাথে বলতে থাকে- ঠিক ঠিক।

কিন্তু তারপরেও কোন এক বৃহস্পতিবারের ফ্রী নাইটে আমাদের মধ্যে কেও একজন বলে উঠে- দোস্তরা ঠিক করলাম ইন্টারের পর প্রাইভেটেই পড়ব।

৪,৪৪০ বার দেখা হয়েছে

৬৮ টি মন্তব্য : “যখন কয়েকজন বালক তাদের হৃদয় হারিয়েছিল”

  1. রবিন (৯৪-০০/ককক)
    তবে এদের মাঝে তানভীর ভাই বা তারেক ভাই এর মত ভাললোক ছিলেন কিনা খেয়াল নেই

    :))

    চলে গেল তারেক ভাই, তানভীর ভাই, সাইফ ভাই কিংবা পিরা ভাইদের যামানা

    x-(

    জবাব দিন
  2. রকিব (০১-০৭)

    রাশেদ ভাই তাইলে বড হয়ে খারাপ হইছেন 😛 😛
    আমরাও স্বপ্ন দেখতাম :dreamy: , খালি মাঝে মাঝে আদনান ভাই, মাস্ফ্যু ভাই রাবণের মতো আইসা সীতাহরণ করতো x-( x-(


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
    • রাশেদ (৯৯-০৫)

      হুম...... ভূগোলের ম্যাডাম পরে আমার হাউজের প্রথম হাউজ গেমস প্রিফেক্টের বাধনে আটকা পড়ছিলেন 🙂
      আর ইংলিশের ম্যাডাম বাধা পড়ছিলেন আপনাদের কলেজের এক সিনিয়রের সাথে 🙁
      অফটপিকঃ ভাই সেইসব দিনের কথা উঠলে আমিও উদাস হইয়া যাই :dreamy:


      মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

      জবাব দিন
  3. আন্দালিব (৯৬-০২)

    হায়! আমাদের কলেজেও শেষের দিকে এসে বৃহস্পতিবার নীল শাড়ির প্রচলন হলো! আমরাও ধীরে ধীরে বুঝলাম, ক্লাস সেভেনে এই প্রথাটা শুরু হলে কতোই না ভাল হতো! :dreamy: :dreamy:

    লেখা চমৎকার হয়েছে! :clap: :clap:

    জবাব দিন
  4. রাজীউর রহমান (১৯৯৯ - ২০০৫)

    চরম হইছে।

    তখন ক্লাস সেভেনে। নভিসেস ড্রিল ও হয় নি। টিউব লাইট একটু আধটু আমিও ছিলাম। ফলইনে দাড়িয়ে অতি পাকনা এক ক্লাশমেট বলেছে " আহারে **** ম্যাডামটা না খুব *****"

    আমি হতবাক, ছেলে বলে কি? মায়ের বয়সী ম্যাডামকে অশ্রদ্ধা :grr: :grr: :grr:

    ইলেভেন টুয়েলভে এক ম্যাডামের সাথে হালকা পাতলা খাতির জমাইতে পারছিলাম। :shy: :shy: :shy:

    আর আমাদের কপাল খারাপ। সেরকম পছন্দ করার মত কাউকে ৬ বছরে পাই নি।

    জবাব দিন
  5. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    আমি এইবার একটা মহিলা কলেজের জুক্স কই। এইডা অবশ্য আমাদের ২১তম ব্যাচের গ্রুপ মেইলে বন্ধু মহামান্য রাজা'র (জিয়াউল) পাঠানো।

    মহিলা কলেজের বাংলা ক্লাসের স্যারের প্যান্টের চেন খোলা দেখে মেয়েরা জোরে জোরে হাসতে লাগল; স্যার তা বুজতে না পেরে ছাত্রীদের উদ্দেশ্য বলল "বেশি হি.. হি.. করলে বাইরে বের করে খাড়া করে রাখব ।"

    হাসি না পাইলে জোর কইরা হাইসো না!! B-) B-) B-)


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  6. তাই ম্যাডাম হাসের বাচ্চাদের দেশে চলে যায়।

    ভুগোলের কোন ম্যাডাম? সে তো আমাগো কলেজ থিকাই তোগো কলেজে আইছিল।
    ম্যাডাম্রে আমি কেলাশ সেভেনে খুব ভালা পাইতাম, একখান বেশি জোশ স্বপ্ন দেইখা ফলইনে সেইডার কাহিনী কৈবার লাগছিলাম পোলাপানরে। কোইথেকে এক সিনিয়র ভাই আইসা যেই পাংগানি ডা দিছিল... তবু প্রেমের জন্য মানুষ কত্ত কিছু করে... ভাইবা সান্ত্বনা।

    আমি কলেজ বাসে না গিয়া নিজ ব্যবস্থায় বাসায় যাইতাম। ক্লাস সেভেনের থার্ড টার্মে আমি আর ম্যাডাম একই বাসে উঠলাম কালিয়াকৈর পর্যন্ত। দুইটা সীট খালি হৈলে ম্যাডাম আমারে ডাক দিয়া কৈলো, অ্যাই তুহিন, তুমি এখানে এসে বস। কোথায় যাবা... আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত পারফিউমের গন্ধে বিভোর ... ... আর মনের ভেতর বেজে চলেছে... এই পথ যদি না শেষ হয়... আহারে...

    উদাস হইয়া কত্ত বড় কমেন্ট কৈরা ফেল্লাম...

    জবাব দিন
  7. খুবই ভাল লেখা। যদিও ক্যাডেট না হওয়ার কারণে 'স্মৃতিকাতর' হতে পারলাম না, বা সেই সম্পর্কিত ঘটনাগুলো বুঝলামও না সেভাবে, তবে লেখাটা উপভোগ করতে সেটা কোন বাধা হতে পারেনি। ক্যাডেটজীবন শেষে আর কোন ম্যাডামের জন্য মন আনচান করেনি? অথবা কোন কচিকাঁচার জন্য?

    এরকম দারুণ উপভোগ্য আরো অনেক লেখা পড়ার আশায় থাকলাম।

    জবাব দিন
  8. আদনান (১৯৯৭-২০০৩)

    আহ্‌ ... আমাদের সেই না.ই.লু. ম্যাডাম! যখন টিচার হয়ে আসলেন, টগবগে ২৫!!! :dreamy: কিন্তু ভাগ্য খারাপ, আমরা তখন মোটে 8, আর দিন হল 12-এর ভাইদের। ম্যাডামও কম যেতেন না... প্রেপের সময় তার সাথে আমাদের প্রেপ গার্ড ভাই-এর ইটিশ পিটিশ একটা উপভোগ্য বিষয় ছিল 😀 সেই সুদর্শন ভাইটির piercing দৃষ্টিকে উপেক্ষা করতে না পেরে ম্যাডামের নেশাতুর চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকা... আফসোস হতঃ ইস ক্যান যে আর ৪টা বছর আগে ঢুকলাম না কলেজে!

    আর সেই শেষ ম্যাডামটা (ভূগোল-এর, নাম বললাম না ঝামেলা আছে)... যার জন্য নীল শাড়ি আর লাল-পাড় সাদা শাড়ি যাই হোক না কেন, মোটামুটি সব ক্যাডেট-ই উতলা থাকত। পরে অবশ্য গল্প শুনেছি, জুনিয়ররা বেশি উতলাগিরি দেখাতে গিয়ে এডজুটেন্ট এর কাছে ধরা খেয়ে... সে এক ডিজুস কাহিনী!!!

    জবাব দিন
  9. সামি হক (৯০-৯৬)

    আমাদেরও একবার এক নতুন ইংরেজীর ম্যাডাম আসছিল কিন্তু তখন আমরা মাত্র নতুন ক্লাস ৯ তাই কিছুই তেমন করতে পারি নাই। আর ম্যাডাম এর দিকে শুধু ক্যাডেট না তখনকার এডুর ও নজর ছিল। ম্যাডাম একদিন চাকুরী ছেড়ে দিয়ে চলে গেলেন, তখন কলেজে গুজব উঠেছিল ম্যাডাম এডুর হাত থেকে বাচতে চলে গিয়েছিলেন। এরপর বেশ কিছুদিন এডু ছ্যাকা খাওয়া মুডে ছিলেন।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাশেদ (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।