স্মৃতি ফিরে পাবার পরের পোষ্টঃ শোন গো দক্ষিণা হাওয়া………

(গতকাল রাতে কোথা কোথা থেকে যেন আমার স্মৃতি হারান পোষ্টের খোঁজ পেয়ে এক মেয়ে রাত সাড়ে বারটায় ফোন দিল । বিরক্ত হয়ে ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে মেয়ে বলে- কিরে , ভালই তো লিখিস । আমি বলি- হুঁ । মেয়ে বলে- তা বাকি ইতিহাস লিখবি না । আমি বললাম-না পারমিশন নাই । তখন মেয়ে বলে- যা তোকে পারমিশন দিলাম । ঠিক তখনি আমার মনে পড়ল – চিনি , আমি ইহাকে চিনি । আর তাই আজকের এই পোষ্ট )

আগেই বলেছি লজ্জা আর অস্বস্তি কাটিয়ে কিভাবে কিভাবে যেন আমি বন্ধুত্বের সীমানা পেরিয়ে মেয়ের দিকে অনুভূতির সুক্ষ দোলাচালে ঝুলতে থাকলাম । এইভাবে দিন যায় সাপ্তাহ যায় মাস যায় । আমার অনুভূতির দোলাচাল আর গাড় ভাবে কোন একদিকে হেলে যায় । আমি মনে মনে বলি ব্যাপার টা তো খারাপ না ।
কিন্তু মেয়ে আমাকে কিছুদিন পরপর মনে করিয়ে দেয় সাবধান , তুই কিন্তু ভুলেও আমার প্রেমে পরিস না । আমি বরাবরের মত বলি- ছিঃ, তোর কি আমাকে এই রকম মনে হয় । কিন্তু মনে মনে শয়তান বলে – দেখ ভেবে , ব্যাপার টা কিন্তু খারাপ না ।
সময় প্রবাহমান । তাই আমরা বিকাল বেলা ফুচকা খাই, সন্ধ্যায় ক্লাসিক সিনেমা দেখার জন্য কালচারাল সেন্টার গুলোতে ঘুরাঘুরি করি আর দিনের বেলা দেশ ও জাতির জটিল সমস্যা নিয়ে আলোচনা করি । আমাদের দেখলে বাকিরা বলে তোদের জুটি ভাল মানিয়েছে । শুনে মেয়ে ক্ষেপে যায়, বলে- পুরুষতান্ত্রিক সমাজ । আমি বলি- নাহ পোলাপাইনের মন মানসিকতা চেঞ্জ হইল না । কিন্তু মনে মনে বলি- ব্যাপার টো তো খারাপ না ।
একদিন আড্ডায় সবার সাথে কথায় কথায় মেয়ে বলে আমার প্রেমিক হবে দারুন হ্যান্ডসাম । সবাই বলে প্রেমিক হবে কিরে, এখন তাইলে কি চলে ? আমি তাড়াতাড়ি বলি- না না, আমরা শুধুই বন্ধু । আর সবার সামনে আমাদের বন্ধুত্ব প্রমান করার জন্য আমি হাটু সমান লম্বা শার্ট পড়ি, চূল গুলো আর আউলা ঝাউলা করে দিই , সবার সামনে আর বোকা বোকা কথা বলি । কিন্তু প্রতি রাতে ঘুমানোর সময় ঠিক করি আর না এই লম্বা শার্ট , কালকে থেকেই আমি হ্যান্ডসাম হয়ে যাব ।
কথায় আছে সময়ের কাজ সময়ে করতে হয় । আর তাই মেয়ের চারপাশে নতুন পাখিরা ভীড় করে , দারুন সব গল্প বলে । সে সব শুনে মেয়ে হেসে গড়িয়ে পরে আর পাশে বসে আমি হিংসায় চোখ ছোট করে সমাজ দর্শনের উপর কিনা নতুন বইয়ে ডুবে থাকার ভান করি ।
পহেলা ফাল্গুনের টিএসসির ভিতরে অনুষ্ঠানে মেয়ে যখন বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে আসে তখন আমার একটা হার্টবীট মনে হয় মিস হয় । মনে মনে শয়তান বলে ব্যাপার টা কিন্তু খারাপ না । মেয়েকে বলি – তোকে দেখলে আজকে যে কোন ছেলের মাথা ঘুরায়ে যাবে । মেয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আমাকে বলে- কিরে আমার প্রেমে পড়লি নাতো আবার । আমি বলি- আরে না না, আমি অন্য ছেলেদের কথা বলছিলাম ।
দিন যায় মাস যায় আমার অনুভূতির দোলাচাল আর একদিকে হেলে যায় । তাই মেয়ে কে একদিন রাতে ফোন দিই । ফোন ধরেই মেয়ে আমাকে ঝাড়ি মারে কিরে এত রাতে ফোন দিছিস কেন ? আমি হঠাত ভয় পেয়ে বলি- না মানে কালকের পরীক্ষার সিলেবাস জানি কি? মেয়ে বলে এই তোর কি মাথা খারাপ হইছে নাকি । তোর আর আমার কি ডিপার্টমেন্টে এক ? আমি বলি ও তাইতো, ভুল হয়ে গেছে । মেয়ে বলে কালকে পরীক্ষা আর রাত একটার সময় তুই মানুষের কাছ থেকে সিলেবাস জানতে চাস, তোর হইছে কি ? আমি আর ভয় পেয়ে হঠাত ফোন রেখে দিই । মন থেকে কে যেন বলে শেষ, সব শেষ ।
আর তাই পরের কয়েকদিন আমি ফোন বন্ধ রাখি, মেয়েকে এড়িয়ে চলি । কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয় না । কলাভবনের সিড়িতে মেয়ে আমাকে একদিন পাকড়াও করে ফেলে । বলে ঐদিন যা হবার হইছে । তুই ভুইলা যা আমিও যাচ্ছি । আমিও খুশিতে বলি সরি দোস্ত আর এরকম হবে না । কিন্তু শয়তান মনে মনে বলে- হইলে কিন্তু ব্যাপার টা খারাপ হইত না ।
এইভাবে কিভাবে যেন আস্তে আস্তে একটা বছর শেষ হয়ে আরেকটা বছরের মাঝামাঝি এসে গেল । এইসময় একদিন সকাল আটটার ক্লাস করছি সবচেয়ে ডেঞ্জারাস স্যারের। এর মাঝে দেখি মেয়ে বারবার ফোন দেয় । আমি স্যারের ভয়ে বারবার কেটে দিই । মেসেজ পাঠালাম দোস্ত আমি ক্লাসে । ফিরতি মেসেজ আসল প্লীজ একটু তাড়াতাড়ি টিএসসির সামনে আয় । আমি দাড়িয়ে স্যারকে বলি- স্যার, আমার এক বন্ধুর এক আত্মীয়ের জন্য রক্তের দরকার । আমার রক্ত দিতে যাওয়া খুবি জরুরী । স্যার বলে তাই নাকি বাবা ? তাইলে যাও তাড়াতাড়ি যাও । আমি বলি জ্বী আচ্ছা স্যার । এক দৌড়ে পৌছে যাই টিএসসি।
গিয়ে দেখি মেয়ের চোখ ফোলা ফোলা । আমি বলি কিরে সারা রাত ঘুমাস নাই । মেয়ে বলে না একটা চিন্তায় সারারাত কেটে গেল । আমি বলি- হুম বুঝছি । তা এত সকালে ডাকাডাকি কেন ? মেয়ে বলে- একটা কথা আছে । আমি বলি- বলে ফেল । মেয়ে বলে- আমি তোরে এতদিন মিথ্যা বলছি । আমি বলি- কি বলস এইসব ? বুঝি না । মেয়ে বলে- আমি আসলে তোরে লাইক করি । আমি পুরা বেকুব হয়ে বলি- কি বললি? আবার বল । মেয়ে বলে- আমি আসলে তোকে ভালবাসি । এইবার মনের ভিতর কে যেন গেয়ে উঠে শচীন দেব বর্মনের গান – শোন গো দক্ষিণা হাওয়া প্রেমে পরেছি আমি ।

৭,১২০ বার দেখা হয়েছে

৭৪ টি মন্তব্য : “স্মৃতি ফিরে পাবার পরের পোষ্টঃ শোন গো দক্ষিণা হাওয়া………”

  1. শাওন (৯৫-০১)

    এইটা যদি সত্যি হয়...তবে আমি বলবো...সাব্বাস...চালিয়ে যাও হে ভায়া......এভাবে সত্য প্রকাশের অভাবে যে কত প্রেমের মৃত্যূ ঘটে।।আর না হয় না ই ঘটল......।।


    ধন্যবাদান্তে,
    মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শাওন
    প্রাক্তন ক্যাডেট , সিলেট ক্যাডেট কলেজ, ১৯৯৫-২০০১

    ["যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি"]

    জবাব দিন
    • রাশেদ (৯৯-০৫)

      শাওন ভাই শুনেন নাই বিখ্যাত ফিলসোফি- দুনিয়াতে সবি আপেক্ষিক । তাই এই পোষ্ট সত্য না মিথ্যা ব্যাপার টা পুরা আপেক্ষিক 🙂
      হুম...... বুঝছি আপ্নের কোন লুকান কাহিনি আছে । বলে ফেলেন, তাড়াতাড়ি বলে ফেলেন 🙂


      মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

      জবাব দিন
  2. শাওন (৯৫-০১)

    রাশেদ, আমারটাও আপেক্ষিক......।হেহেহেহেহেহে 😀 :))


    ধন্যবাদান্তে,
    মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শাওন
    প্রাক্তন ক্যাডেট , সিলেট ক্যাডেট কলেজ, ১৯৯৫-২০০১

    ["যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি"]

    জবাব দিন
  3. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)

    রাশেদ,
    অসম্ভব ভালো লাগসে লেখাটা...
    সাথে কিছুটা ঈর্ষিত!!...

    আমি পুরা বেকুব হয়ে বলি- কি বললি? আবার বল । মেয়ে বলে- আমি আসলে তোকে ভালবাসি ।

    কেউ কোনদিন আমারে তো বেকুব বানাইলো না :((


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন
  4. বন্য (৯৯-০৫)

    এইটা পুরা বানাইন্যা কাহিনী..আমি শিউর... 😀
    ১.

    তুই কিন্তু ভুলেও আমার প্রেমে পরিস না

    এই কথাটা নরমালি রাশেদ মেয়েদের বলে...
    ২.

    আর তাই মেয়ের চারপাশে নতুন পাখিরা ভীড় করে , দারুন সব গল্প বলে । সে সব শুনে মেয়ে হেসে গড়িয়ে পরে আর পাশে বসে আমি হিংসায় চোখ ছোট করে সমাজ দর্শনের উপর কিনা নতুন বইয়ে ডুবে থাকার ভান করি

    এইটাও পুরা উল্টা কথা কইসে...রাশেদের পাশেই বরং অলওয়েজ ১০-১২ টা পাখি থাকে সবসময় x-( x-(
    ৩.

    আমি আসলে তোরে লাইক করি

    এরকম ক্ষ্যাত রাশেদের সাথে যায়ই না.. B-)
    আর কইলাম না...তয় গল্প ভাল হইসে,,,দারুন.. 😀

    জবাব দিন
  5. গেল রে গেলে, আরেকটা পুলা ফাইট করতে গিয়া শহীদ হইয়া গেল।

    প্রেম্পিরিতি খুব খ্রাপ জিনিস,
    খিয়াল কৈরা, খুব খিয়াল কৈরা।

    দোস্ত, এই রকম আর কোন জাস্ট ফ্রেন্ড পাইলে জানাইস আমারে... আমিও ফাইট দিপো.. 😡 😡 😡

    জবাব দিন
  6. রকিব (০১-০৭)

    এই জীবনে মুনে হয় আর ফাইট দিয়া হইবো না 🙁 🙁

    তয় গল্পটা (মনে হয় আত্মজীবনী অবলম্বনে) কিন্তু চ্রম হয়েছে... :hatsoff: :hatsoff: :thumbup:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  7. তাইফুর (৯২-৯৮)

    প্রথম পর্ব পড়ার সময়ই মনে হচ্ছিল, পোলা মাইয়ার প্রেম দিয়াই কাহিণী শেষ হইব ...
    কাহিণী যদি নিজের জীবন থেকে নেয়া হয় তাহলে লেখাটা ৪ তারকা, আর যদি মনে সাজানো হয় তাহলে ৫ তারকা।
    রাশেদ এরকম আরও কিছু তাজা লেখা ...


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  8. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    পুরাটা ঘাইটা দেখলাম, লেখাটা নিয়া কিছু কই নাই।

    কল্পনা এবং বাস্তব দুইডাই জোস। চালাইয়া যা বেডা (পিঠি চাপড়ের কুনু ইমো নাই কেন?) :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
    • রাশেদ (৯৯-০৫)

      তারেক ভাই এই লেখাটা আগেই পড়া । তবু আবার পড়লাম । ভাই আপনাদের কাহিনি পড়লে হিংসা লাগে । লাইফ টাই একটা সিনেমা আপনার । কঙ্কাবতী আপু আর আপনি দুই জনেই ভাল থাকুন । আর আপ্নারা দুই জনেই এত কম লেখেন আজকাল আর কি বলব ।


      মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তাইফুর (৯২-৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।