ভোট

মাহফুজ , শালা একটা পুরা বাটপার । ঐদিন আমার থেকে সত্তর টাকা নিল । নেওয়ার সময় বলে কিনা ঈমানদারের এক কথা তোর টাকা আমি কালকেই ফেরত দিব । কিন্তু কিসের কি । আজ কাল করে প্রায় দুই সাপ্তাহ চলে গেল কিন্তু টাকা দেবার নাম নাই । যতই বলি দোস্ত টাকা , ততই বলে- আজকে নাইরে , কালকে নিস ।

তাই আজকে খাওয়া শেষে সবাই যখন বিল দেওয়ার জন্য টাকা বের করতেছিল তখন আমি ভাবলাম এই চান্স । আমি বললাম- মাহফুজ , আমার ভাগে তো ত্রিশ টাকা আসছে তো তুই তোর টার সাথে আমার বিল টাও দিয়ে দে । শুনে শালা বলে কিনা – কেন ? তোর টাকা আমি দিমু কেন ? আমি বললাম কেন আমি যে তোর থেকে সত্তর টাকা পাই খেয়াল নাই নাকি ? ও বলে ছি তুই এত ছোটলোক এইটা বুঝলে আমি আগে তোর থেকে টাকা নিতাম না । আমি বললাম- হায় আল্লাহ আমি আমার টাকা চাইছি এতে ছোটলোক এর কি আছে ? ও বলে তুই আমারে অপমান করার জন্যই আজকে সকল বন্ধু বান্ধবের সামনে আমার কাছে টাকা চাইছস । বুঝেন একবার অবস্থা টা । আমার প্রাপ্য টাকা ফেরত চাওয়াতে আমি হয়ে গেলাম ছোটলোক । মাহফুজ হারামজাদাটা কত বড় বাটপার বুঝেন এইবার ।

অবশ্য আমাকে ছোটলোক বলাতে যে খুব ক্ষতি হইছে তা কিন্তু না । কারন আমাদের বন্ধু বান্ধবদের সবাই মাহফুজ এর সম্পরকে ভাল করেই জানে । সবাই জানে শালা একটা বাটপার । কিন্তু শালা এমন ধুরন্ধর যে এর সাথে কথায় কেও পারে না । আর সব কথা শেষে বলবে- আমার কিন্তু এক কথা আর জানস তো ঈমানদারের এক কথা । আসলেই পুরা বাটপার ।

বাটপার গুলা কেমনে জানি সব সময় টাকার গন্ধ পায় । সামনে নির্বাচন তাই চারদিকে টাকার ছড়াছড়ি । সারাদিন বাড়িতে বাড়িতে ক্যাম্পেইন করলে বিকেলে দেয় ৫০০ টাকা । আমরা খালি শুনি কিন্তু আর টাকার দেখা পাই না কিন্তু এর সাথে মাহফুজ এর ও আর তেমন একটা দেখা পাই না । মাঝে মাঝে দেখি দিনের বেলা ধানের শীষ ধানের শীষ বলে স্লোগান দেয় আবার রাতের দিকে নৌকার পোষ্টার ঝুলায় । আরেকদিন দেখি আসলাম ভাইরে বলে বস আপনার চাচা কে ভোট না দিলে আমি আর কাওকেই ভোট দিমু না । আসলেই শালা পুরা বাটপার । মাঝে একদিন জুম্মার শেষে মসজিদের সামনে দেখা আমি বলি কিরে থাকস কই তুই এই কয়দিন । শুনে বলে- বুঝনা দোস্ত এখন টাকাই টাকা । তাই টাইম পাই না । আমি মনে মনে বলি শালা পুরা একটা বাটপার ।

আস্তে আস্তে শীত বাড়ে সাথে সাথে ভোটের আমেজ বাড়ে । আমরা কেও ধানের শীষ কেও নৌকা নৌকা বলে গলাবাজি করি । কিন্তু মাহফুজ দেখি কিছুই বলেনা । আবার দেখি সবার সাথেই ভাও রাখে । কারে ভোট দিবি জিজ্ঞেস করলে দেখি খালি হাসে । সালাম বলে শালা বলবে না । বললে তো আর দুই পার্টি থেকে টাকা খাইতে পারব না তাই শালা কিছু কইব না । আমরা সবাই বলি আসলেই শালা পুরা বাটপার ।

ভোটের দিন সকাল সকাল ভোট দিয়ে এসে মোড়ের বিউটি হোটেলে চা খেতে খেতে আমরা সবাই আবার ধানের শীষ না নৌকা এই নিয়া আবার ক্যাচাল বাধাই । এই সময় দেখি মাহফুজ দোকানে ঢুকছে । আমাদের দেখে টেবিলে এসে বসতেই আমি বললাম- কিরে ভোট দিছস নাকি ? শুনে বলে – হ্যা , ঈমানদারের এক কথা ভোট আমি দিমুই । আমি বললাম – আসছে একেবারে ঈমানদার । শালা তুই না সবার থেকে টাকা খাইলি ভোট দিবি বইলা । মাহফুজ বলে- হ্যা খাইছি । আমি বললাম – ঐদিন আবার দেখলাম আসলাম ভাই কে বলতাছস যে তার চাচা কে ভোট না দিলে তুই আর কাওকেও দিবি না , তাইলে ভোট তুই কারে দিছস ? নাকি তোর জন্য পাঁচটা ব্যালট ছিল । মাহফুজ এইবার হাসতে হাসতে বলল- আমি আসলাম ভাই কে বলছি তার চাচা কে ভোট না দিলে আর কাওকেও দিব না ।ঈমানদারের এক কথা , তাই আমি না ভোট দিছি ।

৩৪ টি মন্তব্য : “ভোট”

  1. তাইফুর (৯২-৯৮)

    লেখক আসলেই ছোটলোক ...
    মাত্র ৭০ টাকার শোকে মাহফুজ চরিত্রটিকে কালিমা লেপে ব্লগ লিখে ফেলেছেন ...


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তাইফুর (৯২-৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।