একটি “প্রায়” প্রেমের গল্প

বলেন তো বাংলাদেশের প্রত্যেক টা মফস্বল শহরের মধ্যে মিল কোথায় ? এক কথায় এর উত্তর হচ্ছে সুন্দরী , প্রত্যেক মফস্বল শহরে এমন কিছু সুন্দরী মেয়ে থাকে যাদের জন্য পুরা শহর পাগল থাকে । একেবারে ক্লাস সেভেন এর পিচ্চি পুচকি থেকে বড় ধামড়া কেও বাদ থাকে না । এরা প্রতি মাসে পাওয়া নীল খামের চিঠি গুলো বিক্রি করে নাকি মাস শেষে কটকটি খায় । এদের বাসার সামনে সকাল সাতটা থেকে রাত বারটা পর্যন্ত শহরের ফাউল থেকে ভাল সব রকম পোলাপাইন টহল দেয় ।

আমাদের শহরেও এরকম একজন ছিল , অন্তরা । কম বয়সী সব ছেলেপেলে অন্তরার অন্তর পাওয়ার জন্য মারামারিতে যত রক্ত দিল তার সামান্য খবর অন্তরার কাছে পৌছিয়েছিল কিনা তা কার জানা নেই । কিন্তু তাই বলে রক্ত দেওয়ার লোকের অভাব পরে নি । যদিও রক্ত আমি একটু ভয় পাই তাও অন্তরার জন্য দুয়েক ফোটা রক্ত দেওয়ার ইচ্ছা যে আমারো ছিল না তা কিন্তু নয় । আর তাই আমার ম্যাথ খাতা কবিতায় ভরে যায় । বিকেলে হাটতে গেলে হঠাত দেখি অন্তরা বাসার সামনের রাস্তায় দাড়িয়ে আছি যদিও যাওয়ার কথা উল্টা দিকে শিপলুদের বাসায় ।

তবে আমি ভাই ভীতু মানুষ তাই আমার নীল খাম আর অন্তরার কাছে যায় না বরং আমার বিছানার তলে জমা পরে । জমতে জমতে স্তূপ হয়ে যায় কিন্তু একই ক্লাসে পড়া এই মেয়ে কে আমার আর কিছু বলা হয় না । স্বপ্নে কত কথা হয় কিন্তু বাস্তবে ‘ভাল আছ ?’ এই কথার বেশি কিছু জিজ্ঞেস করা হয় না ।

সময় বড় খারাপ জিনিস তাই আমার কিছু না বলা হতেই সামনে এগিয়ে যায় । আর আমার আফসোসের দিনলিপি আরেক টু বড় হতে থাকে, সাথে বয়স । তাই একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছায় রঙ্গিন সব স্বপ্ন গুলো হাতে নিয়ে চলে আসি ঢাকায় কিন্তু অন্তরা পরে থাকে আমাদের ছোট্ট শহরে পুরান সেই কলেজে ।

ভর্তি পরীক্ষার চাপে আর সব স্মৃতি ঝাপসা হয়ে যায় কিন্তু একশ আটটা নীল পদ্ম হাতে হাটু গেড়ে বসা এই আমি প্রতিদিন হাজির হই অন্তরার সামনে আমার স্বপ্নে । সব আউলা লাগে আর তাই ম্যাথ খাতায় আমার কবিতা বাড়তে থাকে । বিছানার তল থেকে নীল খাম গুলো প্রাপকের কাছে পাঠাতে মরিয়া হয়ে উঠি । মনে মনে বলি যা থাকে কপালে। ঠিক এই সময় সুযোগ আসে । বাড়ি থেকে চিঠি আসে ভাইয়ের বিয়ে তাই তাড়াতাড়ি আস ।

একদিন সকালে বুকের বাম পকেটে একটা খাম নিয়ে রওনা হয়ে যাই । ট্রেন একটার পর একটা স্টেশন পার হয় আর আমি কালকের জন্য কথা সাজাই । কিন্তু আমার কথা সাজানো শেষ হবার আগেই আমাদের ছোট শহর এসে পরে । ভাইয়া ডাক দেয়- রাশেদ , এই যে এদিকে । স্টেশনের ভীড় বাঁচিয়ে আমরা হেটে বের হতে চাই এর মাঝে বুক চাপড়ে দেখে নিই চিঠিটা ঠিক জায়গায় আছে কিনা । হইচই এর মধ্যে ভাইয়া কে জিজ্ঞেস করি পাত্রী কে উত্তর আসে – কেন ? তোদের সাথে পড়ত যে ঐ অন্তরা ।

নিবিড়
nibir110@hotmail.com

৭৩ টি মন্তব্য : “একটি “প্রায়” প্রেমের গল্প”

  1. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)
    বাড়ি থেকে চিঠি আসে ভাইয়ের বিয়ে তাই তাড়াতাড়ি আস ।

    এই লাইনটা পইড়াই সন্দেহ করছিলাম..........বড় ভাইয়ের সাথে একটা গড়বড় না হয়ে যায় না।

    ভাবির কাছে কোন দাবি না করলেই হয়

    ভাবীর কাছে দাবী কোন পর্যন্ত যেন :-/ :-/ ?


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  2. তানভীর (৯৪-০০)

    রাশেদ, গল্প লেখার ভঙ্গীটা খুব ভালো লাগল। চমৎকার। :thumbup: :thumbup:

    এইরকম গল্প আগেই পড়েছি। তারেকের এরকম একটা গল্প আছে মনে হয়, নামটা ভুলে গেছি। 🙁

    চালিয়ে যাও ভাইয়া।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তাইফুর (৯২-৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।