আমার চারপাশ ০৩

০।
অনেকদিন ব্যস্ততার কারণে ব্লগে ঠিক মত নড়াচড়া করা হয় না। মাঝে মাঝে দুই তিন দিন পর ব্লগে ঢুকে অনেক সময় তাল রাখতে পারি না, কোথা থেকে যে কি হয়ে গেল বুঝতে সময় লাগে। মন্তব্য, প্রতিমন্তব্য পড়তে পড়তে বুঝি কোন পোস্টে বুঝি কিছু মিস করে গেছি। এইজন্য গত বৃহস্পতিবার রাতে পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবার পর থেকে মনযোগ দিয়ে পুরান ব্লগ গুলো পড়ার চেষ্টা নিচ্ছি। এই চেষ্টা নিতে নিতেই বুঝতে পারি ব্লগের লোকজন খুব খারাপ হয়ে গেছে, দুই তিন আগের পোস্ট এখনও প্রথম পাতায় রয়ে গেছে। লোকজন সব আইলসা হয়ে গেছে, কেউ আর তেমন একটা লেখে না আর লেখা যদি পড়েও তাইলে আর মন্তব্য করে না। তাই সমস্ত আইলসামী ছেড়ে দিয়ে ভাল মানুষ হবার প্রচেষ্টায় প্রায় দেড়মাস পর এই ব্লগর ব্লগর।

০১।
পরীক্ষা আসলেই কেন জানি মাথার ভিতর উলটা পালটা ভূত গুলো লাফঝাফ শুরু করে। এমনিতেও কিছু পারি না তার উপর যখন দুই তিন দিনের ভিতর সারা বছরের সিলেবাস পড়ার চেষ্টা করি তখন একসময় বোঝা যায় নাহ সম্ভব না, গাধা পিটায়ে ঘোড়া বানান সম্ভব না। তাই নতুন নতুন কিছু করার চেষ্টা করি তখন। এইসব জিনিসের জন্য রাত ভাল, যত গভীর হয় ততই ভাল । এমনিতে সিনেমা তেমন একটা দেখা হয় না তারপরে তা যদি হয় মারামারি মার্কা ধুমধাড়াক্কা সিনেমা। এতদিন পর্যন্ত ওয়েস্টার্ণ সিনেমা গুলি সম্পর্কে আমার ধারণা কেন যেন এরকমই ছিল কিন্তু গন্ডগোল বাধাল এক পরীক্ষা আগের রাত । পড়তে পড়তে টের পেলাম একসময় এই পরীক্ষা সিলেবাস আর শেষ করা সম্ভব না। পরের দিন দুপুরে পরীক্ষা তাই আর বাকী যা পড়া সম্ভব তা সকালে উঠে পড়াই ভাল তাই ভাবলাম ঘুমানোর আগে একটা সিনেমা দেখে ঘুমালে খারাপ হয় না। এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে একটা ডিভিডি আনছিলাম। আগে দেখা হয় নাই ভাবলাম এর মধ্যে দুই একটা দেখে ফেলি এই রাতে। তাই কম্পুর মনিটরে প্রথমে হাজির হল for a few dollars more আর তারপর সেই গভীর রাতেই আবার a fistful of dollars। তারপর রাত প্রায় চারটার দিকে ঘুমাতে যাবার আগে বিশাল সিলেবাসের বইটা ছুয়ে প্রতিজ্ঞা করলাম, নাহ এইবার থেকে ওয়েস্টার্ণ সিনেমাও দেখতে হবে। ব্যাপারটা তো আসলে তেমন একটা খারাপ না, কি বলেন জুনায়েদ ভাই?

০২।
মঞ্জুর খান সাহেব গত কয়েকদিন আগে ফোন দিল হঠাৎ। বলে- ফেসবুকে যাইস তো একটু, তোর জন্য একটা জিনিস আছে দেখিস। এরপর রাতের বেলা ফেসবুকে ঢুকে জিনিসটা দেখে আমিও অবাক হলাম, ভালই অবাক হলাম। আমার এমনিতেও ছবি-টবি তেমন একটা তুলা হয় না। তার উপর কলেজে আমার তোলা ছবির সংখ্যা তো আর দূর্লভ । কিন্তু খান সাহেব দেখি কোথা থেকে এক পুরান আফটার নুন প্রেপের ছবি যোগাড় করেছে, গেঞ্জী পরা অর্ধনগ্ন ছবি ।এই ছবি দেখতে দেখতে আফটার নুন প্রেপের বহু কাহিনী মনে পড়ল, দুপুর বেলার এই বদখত প্রেপের যে কত রকম কিসসা আছে তা কি আর গুনে শেষ করা যাবে । শুভ্রের পাগলামী, নাসিবুলের ঘুম কিংবা ফুয়াদের সংগীত প্রতিভা এসব কি আর ভুলা যায় । কলেজটাকে আসলে বেশী মিস করি নাইলে এই বদখত আফটার নুন প্রেপের এত গল্প কিভাবে স্মৃতির গলি ঘুপচিতে থেকে যায় ।

০৩।
ক্যাডেট কলেজ থেকে বের হবার পর একটা প্রশ্ন প্রচুর শুনতে হয়েছে- “রাশেদ তুমি আসলেই ক্যাডেট? তোমাকে দেখে তো বিশ্বাস হয় না”। প্রথম প্রথম শুনলে মেজাজটা একদম খারাপ হয়ে যেত কিন্তু এখন বেশ মজাই লাগে, কেউ প্রশ্নটা করলে বরং এখন একটা মুচকি হাসি দিই যার অর্থ করা যেত পারে দুনিয়াতে এখনও অনেক আজব ব্যাপার ঘটে। মাঝে একদিন একজন এই প্রশ্ন করতেই আমি চেপে ধরলাম, এইবার আমারে একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যেতেই হবে। কি করলে বুঝা যাবে আমি একজন ক্যাডেট? উত্তরও পেলাম, পেয়ে ভেবে দেখলাম নাহ কথা মিথ্যা বলে নাই। এইরকম পাটকাঠি একটা মানুষ যে কিনা লেখাপড়া, গান-বাজনা, খেলাধূলা কিছুতেই দূর্দান্ত না তারে প্রথম ক্যাডেট বলে বিশ্বাস করা একটূ কঠিন বৈকি। পালটা উত্তর দিতে আমি অবশ্য কখনই বেশী দেরী করি না তাই বলি- ঐ মিয়া, আপনার ভাষায় ক্যাডেট মানেই যদি স্পেশাল হয় তাইলে আমিও কিন্তু এক অর্থে স্পেশাল কারণ এরকম কোন কাজই ঠিক মতে করতে না পারা লোক কিন্তু সহজে খুজে পাওয়া যাবে না। তাই আমিও ক্যাডেট 😀

০০।
এই প্যারাটা হল এই ব্লগের সারমর্ম যার মানে হল, হেই সিসিবিয়ান্স আপনারা সব কোথায়? একসাথে সবার শীতনিদ্রা যাবার কি দরকার ছিল? তাই সবাই তার ঝুড়িটা একটু খুলে দেখেন কিছু আছে নাকি ঝুলিতে, দেওয়া যায় নাকি শত ব্যস্ততার মাঝে কিছু প্রথম পাতাকে। আর যদি দেওয়া যায় তাইলে আসেন সব মহান ব্লগার বৃন্দ, দ্রুত হাত খুলে যত দ্রুত সম্ভব এই আবজাব ব্লগর ব্লগর কে পাঠিয়ে দেন দ্বিতীয় পাতায় 🙂

৩,৮১৫ বার দেখা হয়েছে

৬৯ টি মন্তব্য : “আমার চারপাশ ০৩”

  1. রেজওয়ান (৯৯-০৫)

    দোস্ত তুই পুরা পাথরাস :thumbup:
    আসলেই আমার নিজেরই মেজাজ খারাপ হইয়া গ্যাছে গত ২ দিন ধইরা.......সবাই ঘুমাইয়া গেছে x-(
    এবার একটু হাক ডাক দেয়া দরকার... 😡
    কি বলেন সবাই ????? :party: :party: :party:

    জবাব দিন
  2. টিটো রহমান (৯৪-০০)
    বরং এখন একটা মুচকি হাসি দিই যার অর্থ করা যেত পারে দুনিয়াতে এখনও অনেক আজব ব্যাপার ঘটে।

    দারুণ লিখছ.....ব্লগর ব্লগর পড়তে সত্যি দারুণ লাগে


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাশেদ (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।